X
রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪
১৫ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচনের ফলাফল রাজনীতিতে সরকারকে এগিয়ে রাখবে

ড. প্রণব কুমার পান্ডে
০৯ জানুয়ারি ২০২৪, ২১:০১আপডেট : ০৯ জানুয়ারি ২০২৪, ২১:০১

প্রত্যাশিতভাবেই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করেছে। দেশের অগ্রগতির জন্য এই নির্বাচনের ফলাফল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ যেকোনও দ্বন্দ্বমূলক নির্বাচন রাজনৈতিক পরিবেশের গতিশীলতাকে বদলে দিতে পারতো। নির্বাচনের শুরু থেকেই নির্বাচন কমিশন (ইসি) এবং সরকার দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন পরিচালনার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিল। নির্বাচনের ফলাফলের মাধ্যমে নির্বাচনের অংশগ্রহণমূলক এবং বিশ্বাসযোগ্য প্রকৃতি উঠে এসেছে। কারণ, উল্লেখযোগ্য সংখ্যক স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয় লাভ করেছেন। গত কয়েক বছর ধরে ভোটারদের মধ্যে যে উদাসীনতা তৈরি হয়েছিল তা উপেক্ষা করে বিপুল সংখ্যক ভোটার তাদের ভোটদানের অধিকার প্রয়োগ করার মাধ্যমে দেশে গণতান্ত্রিক অনুশীলনকে শক্তিশালী করেছে। 

আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক দলের পক্ষ থেকে  নির্বাচনি প্রক্রিয়া নিয়ে তাদের সন্তুষ্টি প্রকাশ করা হয়েছে। অতএব নির্বাচনের পুরো পরিবেশ বিবেচনা করে বলা যেতে পারে যে উদযাপনের পরিবেশে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ এবং বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে দেশে।

এটি বলার অপেক্ষা রাখে না যে দেশের নাগরিক সমাজের একটি অংশ, কিছু শিক্ষাবিদ এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর জোট এই নির্বাচনকে অংশগ্রহণহীন হিসাবে আখ্যায়িত করেছে। তাত্ত্বিকভাবে, তারা যুক্তি দিতে পারে যে উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক বিরোধিতা ছাড়া নির্বাচনে প্রকৃত অংশগ্রহণের অভাব রয়েছে। তবে কোনও রাজনৈতিক দল যদি তাদের অযৌক্তিক দাবি অর্জনের জন্য নির্বাচন বর্জন করতে থাকে, তাহলে কে দায়ী হবে? নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে বিএনপির সিদ্ধান্ত নির্ভর করেছিল তারা নির্বাচনে জয়লাভ করে সরকার গঠন করতে পারবে কিনা সেই বিষয়ের নিশ্চয়তার ওপর। এই বিষয়টিতে নিশ্চয়তার জন্য তারা তাদের বাইরের বন্ধুদের ওপর নির্ভর করেছিল যারা দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করেছিল নির্বাচনের আগে। 

সরকারের পক্ষ থেকে বাইরের কোনও শক্তির কাছে মাথা নত না করার কারণে দলটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত ছিল। পরিবর্তে, তারা নির্বাচন প্রতিহত করার অভিপ্রায় ঘোষণা করে এবং চলমান ধর্মঘট ও অবরোধের পাশাপাশি অগ্নিসংযোগের কাজে লিপ্ত হয়েছিল।

গত ৫ জানুয়ারি রাতে ঢাকার গোপীবাগে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা দেশের অধিকাংশ নাগরিকের অনুভূতিতে গভীর প্রভাব ফেলেছে। নির্বাচনের আগে অগ্নিসংযোগের অনেক ঘটনা ঘটেছে। অসংখ্য যানবাহনেও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এসব ঘটনার জন্য বিএনপিকেই দায়ী করা হবে। কারণ তারা যেকোনও পরিস্থিতিতে নির্বাচন প্রতিরোধ করার অভিপ্রায় স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছিল। এসব ভয়াবহ অগ্নিসংযোগের ঘটনায় সুশীল সমাজের সদস্য ও বুদ্ধিজীবীদের প্রতিক্রিয়া কী- তা দেশবাসী জানতে চায়। বেশ কয়েকজন প্রবাসী বুদ্ধিজীবী ধারাবাহিকভাবে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের সমালোচনা করে চলেছেন। কিন্তু, বিএনপির এই ধরনের নিন্দনীয় কর্মকাণ্ডে তাদের কাছ থেকে সমালোচনা শোনা যায়নি। এই ধরনের আচরণ শিক্ষাবিদদের নিকট থেকে প্রত্যাশিত নয়।

এর অর্থ এই নয় যে ক্ষমতাসীন দল সব ধরনের সমালোচনার ঊর্ধ্বে। নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে তাদের পারফরম্যান্স সন্তোষজনক ছিল না। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে বাংলাদেশের জনগণ সরকারের কাছে দুর্নীতিমুক্ত এবং আরও জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতার বৈশিষ্ট্যযুক্ত শক্তিশালী শাসন ব্যবস্থা দেখতে চেয়েছে দেশে। এক্ষেত্রে সরকারের কিছু ব্যর্থতা থাকলেও বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠায় বর্তমান সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা স্বীকার করা জরুরি। তা সত্ত্বেও, এই শিক্ষাবিদরা বর্তমান সরকারের কোনও ইতিবাচক অর্জন দেখতে পাচ্ছেন না। অন্যদিকে, তারা সবসময় ব্যস্ত রয়েছেন সরকারের সমালোচনা করায়।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বর্তমান সরকারের জয় জনগণের প্রত্যাশা পূরণের জন্য সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে। নির্বাচনের আগে, ক্ষমতাসীন দল শাসনব্যবস্থা শক্তিশালী করা, দুর্নীতি হ্রাস করা এবং বাজারের মূল্য নিয়ন্ত্রণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ফলে, তারা ভোটারদের কাছে নিবিড় পরিবীক্ষণের মধ্যে থাকবে। জনগণ প্রত্যাশা করে যে সরকার গঠনের পর সরকার তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণের জন্য সক্রিয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

সরকার গঠনের পরে নতুন সরকার কিছু অর্থনৈতিক চাপের মধ্যে পড়তে পারে কারণ নির্বাচনের আগে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা কিছু আন্তর্জাতিক সংস্থা দেশের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা প্রদান করতে পারে। তাছাড়া বিএনপি ও তার আন্তর্জাতিক মিত্ররা সরকারকে অর্থনৈতিক প্রতিকূলতার দিকে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রাখবে। অতএব, সরকারের প্রতিটি পদক্ষেপে বিচক্ষণতা অবলম্বন করা উচিত। সরকারের জন্য সুবিধা হলো বিএনপি সাধারণ জনগণের কাছ থেকে কোনও সমর্থন পায়নি। বাংলাদেশের নাগরিকদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত রাখার জন্য তাদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও তারা জনগণকে ভোটদানে বিরত রাখতে পারেনি।

একটি অপ্রতিরোধ্য সংখ্যাগরিষ্ঠতা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য একটি উল্লেখযোগ্য হুমকি তৈরি করতে পারে। যেহেতু শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার টানা চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণ করতে চলেছে, তাই আগামী পাঁচ বছরে তারা সব ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করবে বলে জনগণ আশা করে। তাছাড়া, আমাদের প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন ধরনের চাপকে কার্যকরভাবে মোকাবিলা করার মাধ্যমে রাজনৈতিকভাবে যথেষ্ট পরিপক্বতা অর্জন করেছেন। নতুন সরকারের উচিত সব ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট পদের জন্য উপযুক্ত ব্যক্তিদের নিয়োগ করার সময় সতর্কতা অবলম্বন করা। পূর্ববর্তী সরকারের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী নিজেদের কর্মক্ষমতা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছিলেন। অনুপ্রবেশকারীরা কেন্দ্রীয় থেকে স্থানীয় স্তর পর্যন্ত সব গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছিল। অনুপ্রবেশকারীদের উত্থান দলের প্রতি নিবেদিত দলীয় কর্মীদের রাজনৈতিক মূলধারার থেকে দূরে সরিয়ে রেখে প্রান্তিক করে দিয়েছিল। অতএব, নতুন সরকারকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে এই সমস্যাগুলির সমাধান করতে হবে।

কিছু ব্যক্তির সমালোচনা সত্ত্বেও নির্বাচন কমিশন (ইসি) দেশব্যাপী একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন সফলভাবে আয়োজনের জন্য প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিশ্চিত করতে কমিশন অত্যন্ত কঠোরতার সঙ্গে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ছিল না মর্মে অভিযোগ করেছেন- এমন উদাহরণ খুব কমই পাওয়া গেছে। ফলে, আমরা আশা করি এবারের নির্বাচন আমাদের নির্বাচনি ব্যবস্থাকে শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ করার ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে।

লেখক: অধ্যাপক, জনপ্রশাসন বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় 

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
মেসির জোড়া গোলে মায়ামির আরেকটি জয় 
মেসির জোড়া গোলে মায়ামির আরেকটি জয় 
কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলার ৫ ইউনিয়নে চলছে ভোট গ্রহণ
কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলার ৫ ইউনিয়নে চলছে ভোট গ্রহণ
যাদের স্যালাইনে বাঁচে প্রাণ, তাদের মজুরি বাড়ে না
১৬ শ্রমিকের উৎপাদিত স্যালাইন দিয়ে চলছে ৯ জেলার হাসপাতালযাদের স্যালাইনে বাঁচে প্রাণ, তাদের মজুরি বাড়ে না
সিলেটে ট্রাকের ধাক্কায় ৩ মোটরসাইকেল আরোহী নিহত
সিলেটে ট্রাকের ধাক্কায় ৩ মোটরসাইকেল আরোহী নিহত
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ