X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

উচ্চ আদালতের সর্বস্তরে বাংলা ভাষা কার্যকর হবে কবে?

মুহাম্মদ শফিকুর রহমান
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৭:০৯আপডেট : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৭:১৩

মুহাম্মদ শফিকুর রহমান রাষ্ট্র ভাষা আন্দোলনের ও মানচিত্র অর্জনের ক্ষেত্রে যারা নিজেদের উৎসর্গ করেছিলেন, তাদের স্মরণ করে বলছি, রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে বাংলাকে আজও সর্বস্তরে চালু করা  হয়নি।
বাংলাদেশের সংবিধানের ৩ অনুচ্ছেদে স্পষ্ট বলা হয়েছে যে, ‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রভাষা হইবে বাংলা’। সংবিধানের এই বিধান যথার্থভাবে কার্যকর না হওয়ায় ১৯৮৭ সালের ৮ মার্চ, ‘বাংলাভাষা প্রচলন আইন’ প্রণয়ন করা হয়। এই আইনের ৩(১) ধারায় বলা হয়েছে, ‘এ আইন প্রবর্তনের পর বাংলাদেশের সর্বত্র তথা সরকারি অফিস-আদালত, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান কর্তৃক বিদেশিদের সঙ্গে যোগাযোগ ছাড়া অন্য সব ক্ষেত্রে নথি ও চিঠি-পত্র, আইন আদালতের ছওয়াল-জওয়াব এবং অন্য আইনানুগ কার্যাবলী অবশ্যই বাংলায় লিখতে হবে’। উপরন্তু আইনের ধারায় বলা হয়েছে, ‘৩(১)-এ উল্লিখিত কোনও কর্মস্থলে যদি কোনও ব্যক্তি বাংলা ভাষা ব্যতীত অন্য কোনও ভাষায় আবেদন বা আপিল করেন, তাহা হইলে উহা বেআইনি ও অকার্যকর বলিয়া গণ্য হইবে’। তারপরও হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের রুল এবং দেওয়ানি ও ফৌজদারি কার্যবিধির দোহাই দিয়ে আদালত বাংলা ভাষা ব্যবহারকে ঐচ্ছিক বিষয়ে পরিণত করে ধারাবাহিকভাবে ভিনদেশি ভাষায় আবেদন-নিবেদন, আপিল, ডিক্রি ও রায় দিয়ে যাচ্ছেন। এতে আইন ও আদালত জনবিচ্ছিন্ন হয়ে সমাজ ও রাষ্ট্রে আস্থাহীনতার সুযোগ সৃষ্টি করছে।

এখানে উল্লেখ্য, সংবিধানের ১৫২ অনুচ্ছেদের ব্যাখ্যায় স্পষ্ট করেই বলা আছে যে, ‘আদালত অর্থ সুপ্রিম কোর্টসহ যেকোনও আদালত’।

হাইকোর্ট বিভাগের রুলে ৪র্থ অধ্যায়ের ১নং বিধিতে বলা হয়েছে, হাইকোর্টে দাখিলকৃত দরখাস্তগুলোর ভাষা হবে ইংরেজি। তবে পঞ্চম অধ্যায়ের ৬৯ নং বিধিতে বলা হয়েছে, হাইকোর্ট কর্তৃক প্রদত্ত আদেশ এবং ডিক্রি আদালতের ভাষায় প্রস্তুত করতে হবে। আদালত মনে করছেন, রাষ্ট্রভাষা’র অর্থ হলো, নির্বাহী বিভাগ, আইন বিভাগ ও নিম্ন আদালতে ব্যবহৃত ভাষা। মানে সরকারি কার্যক্রম যে ভাষায় চলবে, তা ‘সরকারি ভাষা’ আর আদালতের কার্যক্রম যে ভাষায় চলবে তা ‘আদালতের ভাষা’।

দেওয়ানি কার্যবিধির ১৩৭ ধারায় আদালতের ভাষা নির্ধারণ করতে গিয়ে ১৩৭(৩) অনুচ্ছেদের উল্লেখ করা হয়েছে, ‘কোন আদালতে সাক্ষ্য লিপিবদ্ধ করা ব্যতীত অন্য কিছু লিখিতভাবে সম্পাদন করার জন্য অত্র কোর্ট আদেশ যা অনুমোদন করে তা ইংরেজিতে লেখা যাবে’। একইভাবে ১৩৮(১) ধারায় বলা হয়েছে, ‘হাইকোর্ট বিভাগ সরকারি গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে কোনও নির্দিষ্ট বিচারক বা তা না হলে বিজ্ঞপ্তিতে ঘোষিত কোনও শ্রেণির বিচারককে এ মর্মে আদেশ দিতে পারেন যে, যে সব মোকদ্দমায় আপিল চলে, সে সব মোকদ্দমার সাক্ষ্য ইংরেজি ভাষায় ও নির্ধারিত পদ্ধতি অনুসারে লিপিবদ্ধ করতে হবে’। একইভাবে ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৬৭(১)-এ বলা হয়েছে, ‘সকল রায় অত্র বিধির অন্য কোথাও আলাদাভাবে বিবৃত না হলে আদালতে বিচার পরিচালনাকারী কর্মকর্তা স্বহস্তে অথবা তার শ্রুতলিপিতে আদালতের ভাষায় অথবা ইংরেজীতে লিখতে হবে’। আশার কথা এই যে হাইকোর্টের রুলে বাংলা ভাষার কোনও উল্লেখ না থাকলেও সুপ্রিম কোর্টের রুলে আদেশ নং ১১(২) তে বলা হয়েছে, ‘এ আদালতের সম্মুখে পরিচালিত বিচার কার্যে বাংলা অথবা ইংরেজি ভাষা ব্যতীত অন্য কোনও ভাষায় কোনও দলিল প্রদর্শিত বা ব্যবহৃত হবে যতক্ষণ পর্যন্ত তা এ বিধি অনুযায়ী অনূদিত না হয়’।

অথচ দেওয়ানি কার্যবিধির ১৩৭(২)-এ বলা হয়েছে, ‘আদালতের ভাষা কী হবে এবং কোন রীতিতে সে আদালতসমূহে আবেদনপত্রসমূহ এবং আদালতের কার্যবিবরণী লিখতে হবে, তা ঘোষণা করার অধিকার সরকারের থাকবে’। ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৬৬(১) ধারায় বলা হয়েছে, ‘যে কোন ফৌজদারি আদালতের বিচারিক রায় আদালতের ভাষায় অথবা অন্য কোনও ভাষায়, যা আসামি অথবা তার আইনজীবী বুঝতে সক্ষম, সে ভাষায় ঘোষণা অথবা উক্ত রায়ের বিষয়বস্তু লিপিবদ্ধ করতে হবে’। সুপ্রিম কোর্টের রায়েও বাংলা ভাষায় রায় দেওয়ার সুযোগ বিবৃত হয়েছে।

এ পরিস্থিতিতে দেখা যায় স্বাধীনতার ৪৯ বছর পরেও একজন ন্যায় বিচারপ্রার্থী মানুষ আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকে অসহায়ের মতো। যে ভাষায় বিচারকের সঙ্গে তার আইনজীবীরা কথা বলেন, সে তা বুঝতে অক্ষম। যে ভাষায় বিচারক রায় দিচ্ছেন সে তা-ও বুঝতে অক্ষম। তার প্রতি ন্যায় বিচার করা হলো কি-না সেটাও তাকে বুঝতে হচ্ছে তার আইনজীবীর দেহভঙ্গি দেখে বা তার কাছ থেকে শুনে। এখন কিছু কিছু শুনানি ও রায় বাংলায় লেখার প্রবণতা তৈরি হয়েছে। তারপরও সেটি সবজায়গায় সব আদালতে নিশ্চিত করা যায়নি।জাতীয় জীবনের এই লগ্নে প্রশ্ন তুলতে চাই, উচ্চ আদালতের সর্বস্তরে বাংলা কার্যকর করা হবে কবে?

লেখক: আইনজীবী ও চেয়ারম্যান, হিউম্যানিটি ফাউন্ডেশন

 

/এসএএস/এমএনএইচ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
ভোট গণনা প্রক্রিয়ায় কোনও পরিবর্তন হবে না: ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট
ভোট গণনা প্রক্রিয়ায় কোনও পরিবর্তন হবে না: ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট
ঘোড়াঘাটে মালবোঝাই দুই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে ২ জন নিহত
ঘোড়াঘাটে মালবোঝাই দুই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে ২ জন নিহত
নির্বাচনের সময় জাপায় কী হয়েছিল, জানাবেন জিএম কাদের
শনিবার জাতীয় পার্টির বর্ধিত সভানির্বাচনের সময় জাপায় কী হয়েছিল, জানাবেন জিএম কাদের
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ