X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

পৃথিবী বাঁচাতে উন্নত দেশগুলোকে অবশ্যই দায়িত্ব নিতে হবে

শেখ হাসিনা
২১ জানুয়ারি ২০১৬, ১৩:১৭আপডেট : ২১ জানুয়ারি ২০১৬, ১৩:২২
image

প্যারিস সম্মেলনের পর জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বাস্তবতা নিয়ে যুক্তরাষ্টভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ‘ইউএস নিউজ অ্যান্ড ওয়ার্ল্ড রিপোর্ট’ নামের সংবাদমাধ্যমে একটি নিবন্ধ লিখেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নিবন্ধে প্যারিস সম্মেলনকে ঘিরে বাংলাদেশের অবস্থান, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বাংলাদেশের অবস্থা এবং ধরিত্রীকে রক্ষা করতে উন্নত দেশগুলোর ভূমিকা কী হওয়া উচিত তা নিয়ে নিজের মতামত দিয়েছেন শেখ হাসিনা। বাংলা ট্রিবিউনের পাঠকের জন্য তার সেই নিবন্ধের হুবহু ভাষান্তর তুলে ধরা হলো।

বাংলাদেশের অবস্থান দক্ষিণ এশিয়ার নিম্নভূমির ব-দ্বীপ অঞ্চলে, যেখানে সমুদ্র সমতল থেকে সর্বোচ্চ উচ্চতা ৩০ ফিটের বেশি নয়। এখানকার পাললিক ভূমি যথেষ্ট সমৃদ্ধ হলেও তা ভঙ্গুর। বন্যা ও  খরার মতোন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ভাঙনের কবলে পড়ে এখানকার মাটি। কেবল ২০০৯ সালের আইলা নামের সাইক্লোনেই অন্তত ১৫ হাজার মানুষ বাস্তুহারা হয়ে পড়েন।

বৈশ্বিক জলবায়ু ঝুঁকি (গ্লোবাল ক্লাইমেট রিস্ক) ইনডেক্স অনুযায়ী, বাংলাদেশ রয়েছে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ১০টি দেশের মধ্যে। প্রতি বছর বৈশ্বিক পরিবর্তনে এ দেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ২ থেকে ৩ শতাংশ হ্রাস পায়। গত ৩৫ বছরে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে ঝড়সহ অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৯ লাখ বাংলাদেশি।

ধরে নেওয়া হচ্ছে ২০৫০ সালের মধ্যে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ২ থেকে ৩ ফিট বৃদ্ধি পাবে। এতে বাংলাদেশের ১৭ শতাংশ ভূমি ডুবে যাবে, বিপন্ন হয়ে পড়বে ৩ লাখ ৫০ হাজার মানুষের জীবন। এই হুমকির ফলেই বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সামিল হতে চায়। এ দেশের নাগরিকের জীবন রক্ষাকে নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সমান গুরুত্বের সঙ্গেই দেখা হচ্ছে।

এ কারণেই বাংলাদেশ গত মাসে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ আয়োজিত জলবায়ু সম্মেলনের বিষয়ে আগ্রহী, যদিও পুরোপুরি সন্তুষ্ট নয়। অংশ নেওয়া দেশগুলো যে উষ্ণতা বৃদ্ধির মনুষ্যসৃষ্ট কারণ হিসেবে কার্বন নির্গমন নিয়ে একযোগে কাজ করতে সম্মত হয়েছে তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

নির্দিষ্টভাবে বললে, ধনী রাষ্ট্রগুলোকে অবশ্যই দরিদ্র রাষ্ট্রগুলোর প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। এমন প্রযুক্তি সরবরাহ করতে হবে যেন তারা আরও বেশি শক্তি উৎপাদনে সমর্থ হতে পারে ও শক্তির উৎসগুলোকে বারংবার ব্যবহারযোগ্য করে তুলতে পারে। সমৃদ্ধ রাষ্ট্রগুলোর পক্ষ থেকে আরেকটি সহায়তা হতে পারে গবেষণা খাতে। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় তারা সহায়তা করলে শক্তি উৎপাদনে আরও কার্যকর ও সস্তা উপায় উদ্ভাবন সম্ভব। ছোট বড় সকল দেশকেই এই হুমকি মোকাবেলায় হাত বাড়িয়ে দিতে হবে।

জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নিবন্ধ

প্যারিস ইতিবাচক গতি তৈরি করেছে- নতুন এই চুক্তি অর্থায়নে সাম্যাবস্থার সম্ভাবনা দেখিয়েছে, ধনী রাষ্ট্রগুলো দরিদ্র ও উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলোকে এই লড়াইয়ে আর্থিক সহায়তা দেবে। এ ছাড়াও বিশ্বনেতারা এ বিষয়েও একমত হয়েছেন যে, উন্নত দেশগুলো অনুন্নত দেশগুলোকে শক্তির স্থায়ী উৎসগুলো(যেমন সৌরশক্তি ও বায়ু)কাজে লাগাতে সাহায্য করবে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশসহ অনেক উন্নয়নশীল রাষ্ট্রই জলবায়ু পরিবর্তনে কাজ করে যাচ্ছে। এ বিষয়ে বৈজ্ঞানিক সত্য, কার্যকর কৌশল ও রাজনৈতিক সদিচ্ছা সহকারে কী কী করা যেতে পারে তা আমরা প্রকাশ করছি।

বাংলাদেশ ২০১২ সালে পার ক্যাপিটা নির্গমন উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলোর গড় নির্গমনের চেয়ে কম রাখার বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিল। আমরা চার মিলিয়নের বেশি সোলার সিস্টেম স্থাপন করেছি যা ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম। এখন বাংলাদেশের ১৫ মিলিয়ন মানুষ সৌরবিদ্যুতের সুবিধা ভোগ করছে। বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা বন্যা, খরা ও লবণাক্ততা নিরোধী ধান তৈরি করেছে যা সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে গিয়ে মাটিকে লবণাক্ত করে তুললে সেই নতুন প্রতিবেশেও কাজে আসবে। বাংলাদেশ প্রতি বছর ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (যা এদেশের জিডিপির ১ শতাংশের চেয়েও বেশি) জলবায়ু পরিবর্তন খাতে ব্যয় করে থাকে। আমরা ২০০৯ সালে সম্পূর্ণ নিজেদের খরচে ৪০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমানের জলবায়ু তহবিল গঠন করেছি।

একই সঙ্গে সকল নিম্নআয়ের উন্নয়নশীল দেশগুলোকে জনগণের জীবনযাত্রার মান ও জীবিকার স্থায়িত্ব বাড়াতে জীবাশ্ম জ্বালানির ওপরও নির্ভর করতে হবে।

সমৃদ্ধ রাষ্ট্রগুলোকে কার্বন নির্গমন কমাতে দায়িত্ব নিতে হবে। একই সঙ্গে দরিদ্র ও উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলোও যেন কার্বন নির্গমন কমাতে পারে সে জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে হবে। কোন ধরনের সহায়তা ছাড়াই কার্বন নির্গমন বিষয়ক কঠোর আইন দরিদ্র রাষ্ট্রগুলোর ওপর আরোপ করলে তা হবে বাড়তি চাপ, এতে পুরো জলবায়ু পরিবর্তনের বৈশ্বিক লড়াইয়েও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিবন্ধ

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মানবাধিকার, ন্যয়বিচার ও মৌলিক স্বাধীনতা রক্ষার দিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে, বিশেষত তলার মানুষদের ক্ষেত্রে। শান্তি, স্থায়িত্ব ও সমৃদ্ধিকে হুমকিতে না ফেলে আরও বিস্তৃত বয়ানে জলবায়ু পরিবর্তনকে দেখতে হবে।

বাংলাদেশ ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর থেকেই সামাজিক ও অর্থনৈতিক রুপান্তরের কারণে বিশ্বের কাছে পরিচিত। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় ব্যর্থ হলে এই সকল সাফল্য ঝুঁকিতে পড়ে যাবে। বাংলাদেশিরা স্বাধীনতার জন্য, গণতন্ত্রের জন্য, নারী অধিকারের জন্য এবং জঙ্গিবাদ ও উগ্রপন্থার বিরুদ্ধে নিজেরাই লড়াই করেছে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে একা যুদ্ধ করা সম্ভব নয়।

প্যারিস জলবায়ু সম্মেলন চলে গেছে। এই লড়াইয়ের প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের কিছু কিছু আমাদের কাছে রয়েছে- যদিও সব নেই। বাংলাদেশ এই লড়াইতে অংশ নিয়ে নিজেদের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে কাজ করবে। আমরা আশা করি পৃথিবীর সমৃদ্ধ রাষ্ট্রগুলোও তাদের দায়িত্বটুকু পালন করবে।

মূল প্রবন্ধ-  http://www.usnews.com/news/the-report/articles/2016-01-18/climate-change-after-paris

ভাষান্তর: উম্মে রায়হানা  

/ইউআর/বিএ/         

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
তিন নম্বরে থেকে সুপার লিগে মোহামেডান
তিন নম্বরে থেকে সুপার লিগে মোহামেডান
মুখ থুবড়ে পড়েছে ইউক্রেনের অস্ত্র খাত
মুখ থুবড়ে পড়েছে ইউক্রেনের অস্ত্র খাত
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
লোকসভা নির্বাচন: মণিপুরে ভোটকেন্দ্রে সংঘর্ষ
লোকসভা নির্বাচন: মণিপুরে ভোটকেন্দ্রে সংঘর্ষ
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ