X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতা যা চেয়েছিলেন

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা
০৩ নভেম্বর ২০২১, ১৪:৫১আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০২১, ১৪:৫৯

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা

বাংলাদেশের রাজনীতি বঙ্গবন্ধু যুগ থেকে আজ শেখ হাসিনা যুগে এসে পৌঁছেছে। জাতির পিতার কন্যার হাতে আজ শাসনভার। টানা তৃতীয়বারের মতো তিনি এখন ক্ষমতায়। কিন্তু পথটি বড় বন্ধুর ছিল বাংলাদেশের জন্য এবং এখনও তাই। অনেক পরিবর্তন এসেছে সমাজে, রাজনীতিতেও। একটা ব্যাপার এর মধ্যে স্পষ্ট– আজকের নেতৃত্ব যতটা না স্বতঃস্ফূর্ত, তার চেয়ে অনেক বেশি কৌশলের।

১৯৭৫ সালের পনের আগস্টের নির্মম হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে সেই যে পাকিস্তানের দিকে ফিরিয়ে নেওয়ার প্রকল্প শুরু হয়েছিল, তার সমাপ্তি এখনও হয়নি। যদিও ১৯৯৬ সালে এবং এখন বঙ্গবন্ধুর কন্যার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল দেশ পরিচালনা করছে। আজ জেলহত্যা দিবসে এসে আমরা দেখছি, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে রাজনীতির বাতাসে যেভাবে ধর্মকে প্রবেশ করানো হয়েছে তা থেকে সহসা আর মুক্তি মিলছে না। ১৫ আগস্টের পর তিন মাসেরও কম সময়ের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম বীরসেনানী ও চার জাতীয় নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এএইচএম কামারুজ্জামান এবং ক্যাপ্টেন মনসুর আলীকে ১৯৭৫ সালের আজকের দিনে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের অভ্যন্তরে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।

জাতি মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম চার এই জাতীয় নেতাকে যথাযথ শ্রদ্ধা প্রদর্শনের মাধ্যমে দেশের ইতিহাসের অন্যতম বর্বরোচিত কালো অধ্যায়টিকে স্মরণ করছে। প্রতিবারের মতো এবারও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন সশ্রদ্ধচিত্তে যথাযথ মর্যাদা ও বেদনার সঙ্গে শোকাবহ দিবসটি স্মরণ ও পালন করছে। এগুলো সবই আনুষ্ঠানিকতা। বঙ্গবন্ধু, জাতীয় চার নেতা হত্যার বিচার হয়েছে। খুনিদের অনেকের সাজা হয়েছে, অনেকে পালিয়ে আছে। কিন্তু তারা যে বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন তা থেকে অনেকদূরে দেশ এখন।

পনের বছরেরও বেশি আগের একটি গান। বহুবার গাওয়া হয়েছে। তখন ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী ও বিএনপি ক্ষমতায় ছিল। তখনও সেই গান গাইতে সমস্যা হয়নি। ধর্মীয় সম্প্রীতির কথা গানের লিরিক্সে থাকায় আজ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি ক্ষমতায় থাকার পরও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে ‘মেঘদল’ ব্যান্ডের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। গত ২৮ অক্টোবর ব্যান্ডটির সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন ইমরুল হাসান নামের এক আইনজীবী। অবাক করা বিষয় হলো, ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মইনুল ইসলাম মামলাটি নিয়ে এর তদন্তভার দিয়েছেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই)।

শুধু রাজনীতি নয়, হঠাৎ করে পুরো সমাজ ব্যবস্থাই যেন হয়ে উঠেছে ধর্মময়। যতই দিন যাচ্ছে, রাজনীতি ও সমাজের গতি যেন ততই বেশি করে ধর্মনির্ভর হয়ে পড়ছে। তথাকথিত ধর্মের হাওয়া, অনুভূতির হিংস্রতায় সংকুচিত হয়ে পড়ছে সংস্কৃতির পরিসর। একটা আগুন লেগেছে এবং সেই আঁচে সবাই পুড়ছি, কিন্তু ব্যবস্থা নিচ্ছি না আমরা।

আওয়ামী লীগ উদার ও অসাম্প্রদায়িক দল হিসেবে পরিচিত। কিন্তু দলে যেমন করে সাম্প্রদায়িক ব্যক্তির প্রবেশ ঘটেছে, দলের নিজস্ব মনস্তত্ত্বেও ধর্মাশ্রয়ী গোষ্ঠীর সঙ্গে একটা আপসের কৌশল শক্ত অবস্থান নিয়েছে। বাম দলগুলোর অবস্থা আরও করুণ। ক্ষমতায় যেতে না পেরে, সোভিয়েত পতনের ধাক্কা সামলাতে না পেরে তারা যেন ফুরিয়ে গিয়ে শীর্ণ হয়ে পড়েছে।

কিন্তু উদারতাবিরোধী, মুক্তিযুদ্ধবিরোধী পরিসর তো শূন্য থাকতে পারে না। এই অবস্থায় দেশে জামায়াত-বিএনপির সঙ্গে জোরেশোরে উঠে এসেছে হেফাজতের মতো শক্তি। ক্ষমতাসীনদের ‘কৌশলের রাজনীতি’ তাদের পথটা আরও প্রশস্ত করে চলেছে। ধর্মনিরপেক্ষ দলের সমর্থকরা যদি নিজেদের মনোনয়ন বাণিজ্য আর পদ-বাণিজ্য করে চিহ্নিত মৌলবাদী কারও হাতে দলের নির্বাচনি টিকিট বা পদ তুলে দেয় তাহলে বলতেই হবে– এতদিন এই দল ও দলের নেতারা কোনও রাজনীতি করেননি, রাজনৈতিক চর্চার মধ্যেই ছিলেন না।

ক্ষমতার ময়দান চষা দল আসলে নিজের ঘরটাই মজবুত করতে পারেনি। এমন অবস্থা আমরা দেখেছি, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজত তাণ্ডবের সময়। খোদ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, বীর মুক্তিযোদ্ধা আল মামুন সরকারের বাড়ি ছাই হয়ে গেলো, এমপি মহোদয়ও অসহায় পড়লেন, কিন্তু ঘরে ঘরে আওয়ামী লীগের কেউ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারলো না।

সময়টা বুঝিয়ে দিচ্ছে যে, পুলিশি পাহারায় সাজানো গোছানো সমাবেশে, রঙিন মঞ্চে, ঝকঝকে গাড়ি থেকে নেমে চকচকে পাঞ্জাবি পরে গলা উঁচু করে বক্তৃতা দেওয়া এক জিনিস, আর মানুষের সর্বজন যে রাজনীতি চায় সেটা করা আরেক বিষয়।

কারণটা হলো মৌলিকত্ব নষ্ট হয়ে যাওয়া। রাজনৈতিক মঞ্চে ধর্ম-সাম্প্রদায়িকতার যত রমরমিয়ে বাড়ছে, ততই তার মোকাবিলায় একই রকম পথ নিচ্ছে শাসক দল। ফলে উৎসাহিত ও শক্তিশালী হচ্ছে সম্প্রীতি বিনষ্টকারীরা। অনেক ক্ষেত্রে এসব কৌশল সফল হলেও এর ফলে রাজনীতির মূল স্রোত বিপথগামী হয়। চার জাতীয় নেতা হত্যার দিনে আগামী দিনের রাজনীতির পক্ষে, দেশের পক্ষে এই প্রবণতাকে শুভ সংকেত বলতে পারছি না।

ধর্মব্যবসায়ীদের প্ররোচণার পাতা ফাঁদে পা দেওয়া সুবুদ্ধির পরিচয় নয়। বিপদঘণ্টা বাজছে, সচেতন হওয়া জরুরি।

লেখক: সাংবাদিক

/এসএএস/জেএইচ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ফরিদপুরে দুই শ্রমিক হত্যায় জড়িতদের গ্রেফতার দাবিতে খেলাফত মজলিসের মিছিল
ফরিদপুরে দুই শ্রমিক হত্যায় জড়িতদের গ্রেফতার দাবিতে খেলাফত মজলিসের মিছিল
মশা তাড়ানোর ৫ প্রাকৃতিক উপায়
মশা তাড়ানোর ৫ প্রাকৃতিক উপায়
মেলা থেকে অস্ত্রের মুখে দুই নারীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ
মেলা থেকে অস্ত্রের মুখে দুই নারীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ
তীব্র গরমে সিল্কসিটি ট্রেনে আগুন
তীব্র গরমে সিল্কসিটি ট্রেনে আগুন
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ