X
রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪
১৫ বৈশাখ ১৪৩১

যবিপ্রবিতে শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনায় ছাত্রলীগের সম্পৃক্ততার অভিযোগ

যশোর প্রতিনিধি
০৫ এপ্রিল ২০২৩, ১৩:০১আপডেট : ০৫ এপ্রিল ২০২৩, ১৩:০১

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) শিক্ষার্থী ইসমাইল হোসেনকে নির্যাতনের ঘটনায় ছাত্রলীগের কর্মীরা জড়িত। যে কক্ষে নিয়ে তাকে নির্যাতন করা হয়েছে সেটিও ছাত্রলীগের কক্ষ বলে চিহ্নিত। নির্যাতনের ঘটনায় বিচার দাবি করলেও শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগ ইস্যুতে প্রকাশ্যে কিছুই বলতে চাননি। তবে, এ ঘটনায় ছাত্রলীগের সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবি করেছেন সংগঠনটির বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সভাপতি।

যশোর প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের ঘটনায় মামলা

এদিকে, ঘটনায় অভিযুক্ত সালমান ও শোয়েবকে হল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

অভিযোগ পাওয়া যায়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মসিয়ূর রহমান হলের ৫২৮ নম্বরের কক্ষে ইসমাইল হোসেনকে ডেকে নিয়ে পাঁচ ঘণ্টা ধরে নির্যাতন চালান ছাত্রলীগ কর্মী হিসেবে পরিচিত সালমান ও শোয়েব। হলে নিজেদের প্রভাব বিস্তারের জন্য তারা এ কক্ষের দরজায় ছাত্রলীগের স্টিকার লাগিয়ে রেখেছিলেন। যে স্টিকার মঙ্গলবার দিবাগত রাতে কক্ষ সিলগালা করার আগ পর্যন্ত দরজায় সাঁটানো ছিল। সিলগালা করার ঠিক আগমুহূর্তে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সেক্রেটারির উপস্থিতিতে ওই স্টিকারটি ছিঁড়ে ফেলা হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে হলের কিছু শিক্ষার্থী জানান, ছাত্রলীগের একটি সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট আছে। যারা প্রশ্ন ফাঁস, প্রক্সি দিয়ে ছাত্র ভর্তি বাণিজ্য করে থাকে। পাশাপাশি এই গ্রুপটি বিভিন্ন সময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের ধরে নিয়ে প্রক্সিকাণ্ডে জড়িত বলে ভয়ভীতি দেখিয়ে মুক্তিপণ আদায় করে। যারা টাকা দেয় না তাদের উপরে নেমে আসে নির্যাতন। একাধিক ঘটনা ঘটলেও ভুক্তভোগীরা প্রাণভয়ে তা প্রকাশ্যে আনেননি। এইবারও একইভাবে ইসমাইলের কাছে চাঁদা দাবি করা হয়েছিল। টাকা না দেওয়ায় তার ওপরে পাশবিক নির্যাতন চালানো হয়।

নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থী ইসমাইল হোসেন দাবি করেছেন, সালমান ও শোয়েব তাকে ডেকে নিয়ে যাওয়ার পর তার কাছে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। টাকা না দিলে প্রক্সিকাণ্ডের কথা বলে ফাঁসানো হবে বলেও হুমকি দেয়। এক পর্যায়ে তাকে মারপিট করে ভিডিও স্বীকারোক্তি নেওয়ার চেষ্টা করে। দফায় দফায় মারপিট করে তারা ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত চাঁদা দাবি করে। তাকে মারপিটের সময় সালমান ও শোয়েব ছাড়াও আরও একজন ছিলেন। তবে তিনি তার নাম জানেন না।

তানভীর হোসেন নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘চাঁদাবাজির কারণেই মূলত ইসমাইলকে মারপিট করা হয়েছে। এ ধরনের একটি সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এ ধরনের বহু ঘটনার গুঞ্জন থাকলেও এই প্রথমবার বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছে।’

রুহুল আমিন নামে অপর এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা এই ক্যাম্পাসে এসেছি পড়াশোনার জন্য। এখানে সুষ্ঠু পরিবেশ থাকবে, সেটিই কাম্য। কিন্তু কিছু শিক্ষার্থী সিন্ডিকেট গঠন করে যে অত্যাচার নিপীড়ন চালাচ্ছে তা বন্ধ হওয়া জরুরি। আগে গুঞ্জন শুনতাম, এখন তা সত্যি হতে দেখছি। এটি বন্ধ না হলে লেখাপড়ার পরিবেশ থাকবে না বিশ্ববিদ্যালয়ে।’

জীবন নামে অপর শিক্ষার্থী বলেন, ‘ন্যক্কারজনক এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির প্রয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দাবি রাখবো, দ্রুততম সময়ের মধ্যে তদন্ত করে অভিযুক্তদের স্থায়ী বহিষ্কার করা হোক।’

তবে নির্যাতনে জড়িতদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সম্পৃক্ততার অভিযোগ উঠলেও তা অস্বীকার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. সোহেল রানা। তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ মিছিল-মিটিংয়ের জন্য ডাকলে সবাই চলে আসে। মিছিলের শেষ ব্যক্তিটিও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী। কিন্তু কারও ব্যক্তিগত অপরাধ কর্মকাণ্ডের দায় ছাত্রলীগ নিতে পারে না। তা ছাড়া যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তারা কখনোই ছাত্রলীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল না বা তাদের কোনও পদ-পদবিও নেই।’ তিনি এই ন্যক্কারজনক ঘটনার বিচারও দাবি করেন।

এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অভিযোগ শুনে আসছিলাম। কিন্তু কোনও তথ্য-প্রমাণ পাচ্ছিলাম না। একবার একটি মেয়ে অভিযোগ করলেও পরবর্তী সময়ে সে অভিযোগে উঠিয়ে নেয়। যে কারণে কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। এবার আমরা ঘটনার সত্যতা পেয়েছি, ভিকটিমকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেছি। তা ছাড়া হল প্রভোস্টসহ শিক্ষকরা যখন ওই কক্ষটি সিলগালা করতে যায় তখন সালমান শিক্ষকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে। আমি ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগেই সে সেখান থেকে পালিয়ে যায়। আজ সকালে এ ঘটনায় অভিযুক্ত সালমান ও শোয়েবকে হল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। পাশাপাশি তদন্ত কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। তদন্ত রিপোর্ট পেলে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

প্রসঙ্গত, নির্যাতনের শিকার ইসমাইল হোসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউট্রিশন অ্যান্ড ফুড টেকনোলজি (এনএফটি) বিভাগের চতুর্থ বর্ষের অনাবাসিক ছাত্র। কম্পিউটার সাইন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র সালমান এম রহমান ও শোয়েব আলী তাকে রবিবার দুপুর ২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত মসিয়ূর রহমান হলের ৫২৮ নম্বর কক্ষে আটকে রেখে নির্যাতন চালায়। 

/এমএএ/
সম্পর্কিত
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজেন্ট বোর্ড সদস্য হলেন কাজী নাবিল আহমেদ ও সেলিম মাহমুদ
৯ মে পর্যন্ত বন্ধ থাকবে চুয়েট, হলে থাকতে পারবেন শিক্ষার্থীরা
হলও ছাড়েননি আন্দোলনেও নামেননি চুয়েটের শিক্ষার্থীরা
সর্বশেষ খবর
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
‘ধর্ষণে’ অসুস্থ স্কুলছাত্রীকে স্বামী পরিচয়ে হাসপাতালে ভর্তি করে যুবকের পলায়ন
‘ধর্ষণে’ অসুস্থ স্কুলছাত্রীকে স্বামী পরিচয়ে হাসপাতালে ভর্তি করে যুবকের পলায়ন
সড়ক নিরাপদ করতে প্রযুক্তিনির্ভর সমন্বিত সমাধান প্রয়োজন: মেয়র আতিক
সড়ক নিরাপদ করতে প্রযুক্তিনির্ভর সমন্বিত সমাধান প্রয়োজন: মেয়র আতিক
সর্বাধিক পঠিত
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
ইমিগ্রেশনেই খারাপ অভিজ্ঞতা বিদেশি পর্যটকদের
ইমিগ্রেশনেই খারাপ অভিজ্ঞতা বিদেশি পর্যটকদের
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে