X
শুক্রবার, ০২ মে ২০২৫
১৯ বৈশাখ ১৪৩২

গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতা: জেলায় জেলায় ফুঁসে উঠেছে জনতা

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
০৭ এপ্রিল ২০২৫, ১৩:৪৫আপডেট : ০৭ এপ্রিল ২০২৫, ২০:২০

গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতা চলছেই। থামার কোনও নামগন্ধ নেই। প্রতিদিনই ঝরছে শত শত প্রাণ। বাদ যাচ্ছে না নারী-শিশুরাও। ওই দিকে বিশ্বমোড়লরা নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। তাদের ‘ঘুম ভাঙাতে’ বাংলাদেশের জেলায় জেলায় ফুঁসে উঠেছে জনতা। দিচ্ছেন ইসরায়েলি পণ্য বয়কটের ডাক।

যশোর

সোমবার (৭ এপ্রিল) বেলা ১১টায় যশোর শহরের প্রাণকেন্দ্র দড়াটানা ভৈরব শহীদ চত্বরে সমাবেশ করে ‘যশোরের সর্বস্তরের ছাত্র-জনতা’। ‘লাখো শহীদের রক্তের ঋণ, ফিলিস্তিন ফিলিস্তিন’ স্লোগানে স্লোগানে যশোর শহরের রাজপথ প্রকম্পিত করে ইসরায়েলের বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে মিছিল ও সমাবেশ করা হয়েছে।

সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘জায়নবাদী ইসরায়েল মুক্তিকামী ফিলিস্তিনি শিশু, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে গণহত্যা চালাচ্ছে। তারা ফিলিস্তিনকে একটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে।’

সমাবেশ থেকে ইসরায়েলের সব ধরনের পণ্য বয়কটের আহ্বান জানানো হয়।

যশোরে বিক্ষোভ

নরসিংদী

বিক্ষোভে ফেটে পড়েছেন নরসিংদীর ছাত্র-জনতা। সোমবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা অবধি শহরের প্রায় ১০ হাজার মানুষ বিক্ষোভে অংশ নেন।

সকাল থেকেই শহরের শিক্ষাচত্বর মোড়ে জড়ো হতে শুরু করেন বিক্ষোভকারীরা। ছাত্র-শিক্ষক, অভিভাবক ও অন্যান্য পেশাজীবীদের সমন্বয়ে বিক্ষোভ মিছিলটি নরসিংদী প্রেসক্লাব এলাকাসহ শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের জেলখানার মোড়ে গিয়ে অবস্থান নেয়।

পরে বেলা সোয়া ১১টা থেকে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা। এ সময় ইসরায়েলি পণ্য বর্জন, হামলার বিচার দাবিসহ অন্যান্য স্লোগানে মুখরিত হয় বিক্ষোভস্থল। গাজাকে রক্ষার পাশাপাশি দাবি ওঠে ইসরাইলের বিচারের। পরে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মহাসড়ক ছেড়ে যায় বিক্ষোভকারীরা।

ময়মনসিংহ

গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার প্রতিবাদে ময়মনসিংহে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকালে ময়মনসিংহের সর্বস্তরের জনগণের উদ্যোগে নগরীর টাউন হল মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন তারা।

এ সময় ইসরায়েলি বর্বরতার বিপক্ষে লেখা নানা প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে স্লোগান দেন বিক্ষোভকারীরা। পরে সেখান থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে রেলওয়ে কৃষ্ণচূড়া চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। মিছিলে শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন। তারা বলেন, ‘অনতিবিলম্বে এই হত্যা বন্ধ করতে হবে।’ এ সময় বাংলাদেশ সরকারকে ফিলিস্তিনের পক্ষে অবস্থান নেয়ার আহ্বান জানানো হয়।

ময়মনসিংহে বিক্ষোভ

রাজবাড়ী

সোমবার সকাল ১০টার দিকে গোয়ালন্দ বাসস্ট্যান্ডের ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পাশে গোয়ালন্দ সর্বস্তরের জনগণের ব্যানারে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলে শত শত ছাত্র-জনতার অংশগ্রহণে কর্মসূচি পালন করা হয়। মানববন্ধন শেষে বিক্ষোভ মিছিলটি মহাসড়ক হয়ে উপজেলা কোর্টচত্বর মাঠে গিয়ে শেষ হয়। পরে ফিলিস্তিনের নিহত ও আহতের স্মরণে দোয়া মোনাজাত করা হয়।

এ সময় বিক্ষোভকারীরা জানান, ইসরায়েলি পণ্য বয়কটের মাধ্যমে মুসলমানদের ওপর জুলুম অত্যাচারের তীব্র প্রতিবাদ শুরু করা উচিত। তা ছাড়া ফিলিস্তিনের গাজা ও রাফায় মুসলমানদের ওপর নারকীয় হত্যা বন্ধ করতে বিশ্ব মুসলিমদের একতাবদ্ধ হওয়ার বিকল্প কিছু নেই।

জীবনবাজি রেখে মুসলমানদের রক্ষায় যুদ্ধে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে বিক্ষোভকারীরা আরও জানান, যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে নিরীহ গাজাবাসীর উপর সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ইসরায়েল কর্তৃক বর্বরোচিত হামলা, গণহত্যা এবং ভারতে মুসলিমদের শ্লীলতাহানি ও হত্যার প্রতিবাদে সারা বাংলাদেশের মতো রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের রাজপথে বিক্ষোভে নেমে এসেছে। এরপর থেকে যদি বিশ্বের কোনও মুসলমানের ওপর হামলা করা হয় তাহলে বিশ্বের মুসলিমও বসে থাকবে না। মহান আল্লাহর সাহায্য অতি নিকটে তাই বিচলিত হওয়ার কিছু নেই।

বড়দের সঙ্গে রাস্তায় এক শিশু

কুড়িগ্রাম

সারা দেশের মতো আজ কুড়িগ্রাম জেলা শহরের শাপলাচত্বরেও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। তার আগে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে শহর প্রদক্ষিণ করে। ইসরায়েলি বর্বরতায় ফিলিস্তিনে গণহত্যার প্রতিবাদে হাজারো মুসলিম জনতা ও শিক্ষার্থী প্রতিবাদী স্লোগান নিয়ে মিছিলে অংশ নেয়।

‘ধর্মপ্রাণ মুসলমান’ ব্যানারে আয়োজিত এই বিক্ষোভ কর্মসূচিতে নির্বিচারে মানুষ হত্যার জন্য ইসরাইলের প্রতি ধিক্কার জানানো হয়। একই সঙ্গে নজিরবিহীন এই হত্যাযজ্ঞ ও আগ্রাসন বন্ধ করতে বিশ্ববাসীকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিবাদ জানানোর আহ্বান জানানো হয়। একই দাবিতে কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন। পরে তারা জেলা শহরে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নেন।

খাগড়াছড়ি

ইসরায়েলি পণ্য বয়কটের ডাক

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর অব্যাহত হামলা বন্ধের দাবিতে খাগড়াছড়ির জেলার নয় উপজেলায় বিক্ষোভ করেছে বিভিন্ন ইসলামি দল ও ধর্মপ্রাণ মুসলিমগণ। জেলার সদর উপজেলা, মাটিরাংগা, মানিকছড়ি, মহালছড়ি, দিঘিনালা, পানছড়ি, গুইমারা, রামগড়সহ বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়।

বিক্ষোভ সমাবেশ বক্তারা ইসরায়েলি হামলা বন্ধ, ফিলিস্তিন ভূমি দখলের আগ্রাসন বন্ধ করার দাবির পাশাপাশি ইসরায়েলের পণ্য বয়কটের দাবি জানান।

কিশোরগঞ্জ

ফিলিস্তিনে গাজায় ইসরায়েলের বর্বর আগ্রাসন, নারকীয় হত্যাযজ্ঞ ও গণহত্যার প্রতিবাদে কিশোরগঞ্জে ‘মার্চ ফর প্যালেস্টাইন’ বিক্ষোভ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে।

কিশোরগঞ্জে ‘মার্চ ফর প্যালেস্টাইন’

সোমবার (৭ এপ্রিল) দুপুর ২টায় শহীদী মসজিদ চত্বরে কিশোরগঞ্জ সর্বস্তরের ছাত্র-জনতার উপস্থিতিতে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সমাবেশ শেষে ‘মার্চ ফর প্যালেস্টাইন’ কর্মসূচিতে সকলের অংশগ্রহণে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলে বিভিন্ন ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যানারে হাজার হাজার মানুষ অংশ নেন। মিছিলটি শহীদী মসজিদ চত্বরে থেকে শুরু হয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।

এ কর্মসূচিতে কিশোরগঞ্জের সর্বস্তরের ছাত্র-জনতা সংহতি প্রকাশ করেছে। বিক্ষোভ মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা প্রতিবাদের অংশ হিসেবে নানা স্লোগানে ইসরায়েল, আমেরিকা ও ভারতের সকল পণ্য  বয়কটের ঘোষণা দিয়েছেন।

এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, রাজশাহী, গাইবান্ধা, বাগেরহাট, সিলেট ও সাতক্ষীরাসহ দেশের অন্যান্য জেলাতেও বিক্ষোভ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিক্ষোভে ইসরায়েলের এ বর্বর হামলায় তীব্র নিন্দা জানানো হয়।

সিলেট 

নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের বর্বরতম গণহত্যার প্রতিবাদে ডাকা বৈশ্বিক ধর্মঘটে সংহতি জানিয়ে সিলেটে বিক্ষোভ করেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান। ইসরায়েলি পণ্য বর্জনের ডাক দিয়ে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্লাস পরীক্ষাও বন্ধ রয়েছে। বিক্ষোভ মিছিলে মিছিলে পুরো সিলেট যেন একটা মিছিলের নগরীতে পরিণত হয়েছে।

এসব মিছিল থেকে গণহত্যার প্রতিবাদের পাশাপাশি ইসরায়েলি পণ্য বর্জনের আহ্বান জানানো হচ্ছে। ধর্মঘটের সমর্থনে সিলেটে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্লাস-পরীক্ষাও বন্ধ রয়েছে।

সোমবার সকাল থেকে নগরীতে ধাপে ধাপে এসব কর্মসূচি পালন করা হয়। এ ছাড়াও ছাত্র-জনতা, বিভিন্ন ইসলামি দল, সামাজিক সংগঠন বিক্ষোভ করেছে।

বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীরা জানান, ফিলিস্তিনে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে ইসরায়েল যে ধ্বংসযজ্ঞ ও গণহত্যা চালাচ্ছে, তা ইতিহাসের অন্যতম নিকৃষ্ট মানবাধিকার লঙ্ঘন। এই পরিস্থিতিতে জাতিসংঘ, ওআইসি এবং আরব লিগের নীরব ভূমিকা অত্যন্ত হতাশাজনক।

রাজশাহী

ফিলিস্তিনের মুসলিমদের ওপর ইসরায়েলের নৃশংস গণহত্যা, বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদ ও ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে রাজশাহীতে বিক্ষোভ সমাবেশ করা হয়েছে।

সোমবার (৭ মার্চ) সকাল থেকে নগরজুড়ে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। বিক্ষোভ শেষে ফিলিস্তিনিদের জন্য দোয়ার আয়োজন করা হয়।

সকাল থেকে পৃথকভাবে এ আন্দোলনে অংশ নেয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ, রাজশাহী কলেজ, রাজশাহী মুহাম্মদীয়া যুব সুন্নীর শিক্ষক-কর্মচারী-ছাত্রছাত্রীসহ মুসুল্লিরা।

বিক্ষোভ ও সমাবেশে অংশগ্রহণকারীরা বলেন, ‘অবিলম্বে গাজায় গণহত্যা বন্ধ করতে হবে। আমেরিকার মতো যেসব দেশ এমন গণহত্যা দেখেও নিশ্চুপ, তাদের বয়কট করতে হবে। পাশাপাশি মুসলিম দেশগুলো নীরবে গণহত্যার সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।’ অবিলম্বে মুসলিম দেশগুলোকে এককাতারে এসে এ গণহত্যার প্রতিবাদের আহ্বান জানান আন্দোলনকারীরা। ইসরায়েলকে বিশ্বের মানচিত্র থেকে গণহত্যার দায়ে মুছে ফেলার আহ্বানও জানান তারা।

এর আগে দেশজুড়ে সব প্রতিষ্ঠানের দাফতরিক কার্যক্রম বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়। এরই অংশ হিসেবে সোমবার দিনব্যাপী আন্দোলনে রাজপথে নামেন জনতা।

এদিকে, গাজায় চলমান জেনোসাইড ও ধ্বংসযজ্ঞে অসংখ্য নিরীহ নারী ও শিশু নির্মমভাবে প্রাণ হারাচ্ছে। মানবতার এই চরম বিপর্যয়ের পরিপ্রেক্ষিতে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গভীর শোক ও ক্ষোভ প্রকাশ করছে। ৭ এপ্রিল ২০২৫, ‘গ্লোবাল স্ট্রাইক ফর গাজা’ কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে রুয়েট পরিবার জানায়, গাজায় চলমান গণহত্যা বন্ধে বিশ্বের প্রতিটি বিবেকবান মানুষের জাগরণ এখন সময়ের দাবি। বিশ্ব যখন উন্নয়ন, বিজ্ঞান ও মানবকল্যাণে অগ্রসর হচ্ছে, তখন একটিমাত্র ভূখণ্ডে অবরুদ্ধ লাখ লাখ মানুষ, বিশেষ করে, নারী ও শিশু নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। এটি কোনও রাজনৈতিক ইস্যু নয়; এটি মানবিকতার প্রশ্ন।

অন্যদিকে, মৃত শিশুর লাশ কোলে নিয়ে কখনও আর্তনাদ আবার কখনেও শোকে স্তব্ধ ফিলিস্তিনি এক পিতা। আর তার গলায় বিশ্বমোড়লদের বাঁধা শেকল আর উপহাস। তার পাশেই আনেকটা তোষামোদি রূপে দাঁড়িয়ে মুসলিম নেতৃত্ব।  এমন দৃশ্যের আবতারণা করে ফিলিস্তিন পরিস্থিতি তুলে ধরেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তাতে বেলা ১১টা থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরো প্যারিসরোড যেন একখণ্ড ফিলিস্তিন হিসেবে ফুটে উঠলো। এ সময় ইজরাইলের এমন বর্বর হত্যাকাণ্ডের বিচার, প্রতিবাদ আর বয়কটে ফেটে পড়েন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা কর্মচারীরা।

ঘণ্টাব্যাপী চলা এ মানববন্ধন থেকে বিশ্ব মুসলিম নেতাদের একত্র হয়ে ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তারা। পাশাপাশি ইজরাইলের পণ্য বয়কটের আহ্বান আসে এই বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে। একই সাথে নগরীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন গুলো এর প্রতিবাদে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে।

এদিকে, সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা একই কর্মসূচি পালন করেছে ক্যাম্পসের গোল চত্বরে।

এ ছাড়াও রাজশাহীর প্রায় ১০টি স্থানে বিভিন্ন সংগঠন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একই কর্মসূচি পালন করছে।

নারায়ণগঞ্জ

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যার প্রতিবাদে উত্তাল নারায়ণগঞ্জ। জেলার শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনতা সড়ক অবরোধসহ বিক্ষোভ মিছিল করছেন। সকাল থেকে দুপুরে পর্যন্ত চাষাঢ়া শহীদ মিনার ও বিজয়স্তম্ভ এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছল করেন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। এতে পুরো শহরের সঙ্গে ঢাকা ও সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকার যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজন অংশগ্রহণ করেন।

অবরোধকালে শিক্ষার্থীরা গাজাবাসী ও ফিলিস্তিনের পক্ষে বিভিন্ন স্লোগান দেন। আন্দোলনকারীরা বলেন, ‘গাজায় নির্বিচারে গুলি করে, বোমা মেরে মানুষ মারা হচ্ছে। আমরা ইসরায়েলের শাস্তি চাই। সেই সঙ্গে বিশ্বের মুসলিম রাষ্ট্রগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই। ইসরায়েলি পণ্য বয়কট করার আহ্বান জানাই।’

শিক্ষার্থীদের এই কর্মসূচিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন সংহতি প্রকাশ করে। জাতীয় নাগরিক পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ছাত্র ফেডারেশনসহ বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠনের নেতাকর্মীদের অংশ নিতে দেখা গেছে। দুপুরে শহরের চাষাঢ়া বিজয়স্তম্ভের সামনের মূল সড়ক অবরোধ করে আন্দোলনকারীদের জোহরের নামাজ আদায় করতে দেখা গেছে।

বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্যসচিব আব্দুল্লাহ আল আমিন বলেন, ‘গাজাবাসীর ওপর বর্বরোচিত হামলা ও গণহত্যার ঘটনায় আমরা নিন্দা জানাচ্ছি। ইসরায়েলের বর্বরোচিত আগ্রাসনের প্রতিবাদে এই কর্মসূচি আহ্বান করা হয়েছে। জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দলে দলে লোকজন এই কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন।’

এদিকে, দুপুর ২টার দিকে নারায়ণগঞ্জ শহরের ডিআইটি এলাকায় সাধারণ মুসল্লিসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি শহরে প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এ সময় তারা স্লোগান দেয় ‘রক্তের বন্যায়, ভেসে যাবে অন্যায়’, ‘কারবালার হাতিয়ার, গর্জে ওঠো আরেকবার’।

বাগেরহাট

গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি আগ্রাসন এবং নিরীহ ফিলিস্থিনিদের ওপর চালানো বর্বরোচিত গণহত্যার প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে বাগেরহাট। বেলা ১১টায় বাগেরহাট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে ছাত্র ও জনতা একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে শহীদ মিনারে গিয়ে সমাবেশে মিলিত হয়।

বিক্ষোভ মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা ‘ফিলিস্থিনে হামলা কেন? জাতিসংঘ জবাব চাই’; ‘বিশ্ব মুসলিম ঐক্য গড়, ফিলিস্তিন স্বাধীন করো’; ‘নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবর’, ‘ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ডাইরেক্ট অ্যাকশন চাই’।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, ‘বিশ্ব বিবেক আজ নির্বিকার। কোথায় সেই মানবাধিকার? যেখানে শিশু, নারী, সাধারণ মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছে, সেখানে জাতিসংঘসহ বিশ্বশক্তি নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে।’

বক্তারা আরও বলেন, ‘আমরা মুসলমান, আমরা একটি দেহের মতো। একজন মুসলিম কষ্টে থাকলে অন্যদেরও সেটা অনুভব করতে হবে। আজ আমাদের লজ্জা হয়, আমরা এখনও ইসরায়েলি বর্বরতার বিরুদ্ধে সরাসরি প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারছি না।’

সমাবেশে বক্তারা মুসলমানদের ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আমরা আজ থেকেই ইহুদিদের পণ্য বর্জনের আন্দোলনে শরিক হব। ইসরায়েলি অর্থনীতিকে দুর্বল করতে হলে আমাদের বর্জনের আন্দোলনকে শক্তিশালী করতে হবে।’

গাইবান্ধা

ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের বর্বর গণহত্যার প্রতিবাদে গাইবান্ধা জেলা শহর ছাড়াও বিভিন্ন উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন সর্বস্তরের জনতা।

দুপুরে জেলা শহরের বড় মসজিদ এলাকা থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি শহরের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে ১নং রেল গেট এলাকায় এসে শেষ হয়। পরে সেখানে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেন তারা। এ সময় ইসরায়েলের বিচারের দাবিতে নানা ধরনের স্লোগান দেওয়া হয়।

এর আগে, বেলা ১১টায় শহরের পৌর পার্ক এলাকা থেকে সর্বস্তরের জনতার ব্যানারে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। এতে প্রতিবাদী নানা স্লোগান নিয়ে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ অংশ নেন।

এ ছাড়া ইসরায়েলের বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়েছে সাদুল্লাপুর, পলাশবাড়ী, সুন্দরগঞ্জ ও গোবিন্দগঞ্জসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলা শহরে। ছাত্র-জনতাসহ বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিলে অংশগ্রহণ করেন শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

এ সময় বিক্ষোভকারীরা বলেন, ‘অনতিবিলম্বে এই হত্যা বন্ধ করতে হবে। নজিরবিহীন এই হত্যাযজ্ঞ ও আগ্রাসন বন্ধ করতে বিশ্ববাসীকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বিকল্প নেই। একই সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারকে ফিলিস্তিনের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।’ এ সময় ইসরায়েলি সব ধরনের পণ্য বয়কটের বয়কটের ঘোষণা দেন তারা।

বগুড়া

ফিলিস্তিনের গাজায় মুসলমানদের নির্বিচারে হত্যার প্রতিবাদে ও ইসরায়েলি পণ্য বর্জনের দাবিতে বিপুলসংখ্যক ছাত্র-জনতা সোমবার দুপুরে বগুড়া শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন। মিছিল শেষে শহরের সাতমাথায় বাটার শো-রুমে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়েছে।

সোমবার সকাল থেকে বগুড়ার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে মিছিল নিয়ে ছাত্রছাত্রী ও জনতা ব্যানার, প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন নিয়ে শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথায় জড়ো হতে শুরু করেন। বেলা ১১টার দিকে মুক্তমঞ্চের সামনে থেকে মিছিল বের করা হয়। মিছিল থেকে ফিলিস্তিনে গণহত্যার প্রতিবাদ ও হামলাকারী ইসরায়েলি পণ্য বর্জনের বিভিন্ন স্লোগান দেওয়া হয়। মিছিল চলাকালে শহরের বিভিন্ন সড়কে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। মিছিল শেষে বিক্ষোভকারীরা সাতমাথায় ফিরে এসে ইসরায়েলি মালিকানাধীন বাটার শো-রুমে হামলা চালান। তারা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে শো-রুমের কাচের বেষ্টনী ভাঙচুর করেন।

গোপালগঞ্জ

ইসরায়েল ও ট্রাম্পবিরোধী স্লোগানে আজ সারা দিন উত্তাল ছিল গোপালগঞ্জ। গোপালগঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ, গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজের শিক্ষার্থীরা ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা আলাদা আলাদাভাবে বিক্ষোভ-মিছিল ও সমাবেশ করেন।

এ ছাড়া ওলামা পরিষদের আয়োজনে গোপালগঞ্জের প্রাণকেন্দ্র লঞ্চঘাট এলাকায় মানববন্ধন ও সমাবেশ করা হয়।

সাতক্ষীরা

গাজায় মুসলমানদের ওপর অব্যাহত গণহত্যার প্রতিবাদে সাতক্ষীরায় ছাত্র-জনতার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। কর্মসূচি চলাকালে বিক্ষোভকারীরা প্রতিবাদমূলক বিভিন্ন স্লোগান দেন।

বেলা ১১টায় সাতক্ষীরা শহরের খুলনা রোড এলাকায় গাজাবাসীর জন্য ‘নো ওয়ার্ক, নো স্কুল’ কর্মসূচির আওতায় সাতক্ষীরা-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন সর্বস্তরের ছাত্র-জনতা। কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন।

বিক্ষোভকারীরা প্রথমে খুলনা রোডে মহাসড়ক অবরোধ করেন। পরে মিছিল সহকারে নিউ মার্কেট মোড় সাতক্ষীরা-শ্যামনগর আঞ্চলিক সড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদ কর্মসূচি চালিয়ে যান। এতে সড়কের দুই পাশে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয় এবং জনসাধারণের মাঝে সাময়িক ভোগান্তি দেখা দেয়।

/কেএইচটি/এমএএ/
সম্পর্কিত
নেতানিয়াহুর ওপর বাড়ছে চাপগাজায় যুদ্ধের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি রিজার্ভ সেনাদের প্রতিবাদ
সাতক্ষীরা সীমান্ত থেকে ২০ লাখ টাকার স্বর্ণের বার উদ্ধার
গোপালগঞ্জ শহরে ছাত্রলীগের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ
সর্বশেষ খবর
পাকিস্তান সিরিজের আগে আমিরাতে বাংলাদেশের দুই টি-টোয়েন্টি
পাকিস্তান সিরিজের আগে আমিরাতে বাংলাদেশের দুই টি-টোয়েন্টি
শৃঙ্খলা ফেরাতে রাস্তায় নামলেন ওসি
শৃঙ্খলা ফেরাতে রাস্তায় নামলেন ওসি
আগে রওনা দিয়েও এড়ানো গেলো না ‘নোটাম’, শাহজালালের ফ্লাইট গেলো ওসমানীতে
আগে রওনা দিয়েও এড়ানো গেলো না ‘নোটাম’, শাহজালালের ফ্লাইট গেলো ওসমানীতে
রুয়ান্ডা ও কঙ্গোর সঙ্গে বিলিয়ন ডলারের খনিজসম্পদ চুক্তি করবে যুক্তরাষ্ট্র
রুয়ান্ডা ও কঙ্গোর সঙ্গে বিলিয়ন ডলারের খনিজসম্পদ চুক্তি করবে যুক্তরাষ্ট্র
সর্বাধিক পঠিত
অস্ত্র নিয়ে সাবেক এমপির ওপর হামলা, অল্পের জন্য রক্ষা
অস্ত্র নিয়ে সাবেক এমপির ওপর হামলা, অল্পের জন্য রক্ষা
টেকনাফে সরকারি বরাদ্দের মালামাল মিয়ানমারে পাচার
টেকনাফে সরকারি বরাদ্দের মালামাল মিয়ানমারে পাচার
সাপের কারণে জাপানে বুলেট ট্রেন চলাচল বন্ধ
সাপের কারণে জাপানে বুলেট ট্রেন চলাচল বন্ধ
চিন্ময়ের জামিন কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা না, ইন্টেরিম সাবধান: হাসনাত আব্দুল্লাহ
চিন্ময়ের জামিন কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা না, ইন্টেরিম সাবধান: হাসনাত আব্দুল্লাহ
কূটনীতিক সুফিউর রহমানের নিয়োগ নিয়ে হচ্ছে কী
কূটনীতিক সুফিউর রহমানের নিয়োগ নিয়ে হচ্ছে কী