X
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

হাতির জন্য নিরাপদ আবাসস্থল তৈরির তাগিদ

আবদুল আজিজ, কক্সবাজার
১২ আগস্ট ২০২২, ১০:৩২আপডেট : ১২ আগস্ট ২০২২, ১০:৩২

আজ বিশ্ব হাতি দিবস। আবাসস্থল ধ্বংস ও করিডোর বন্ধসহ নানা কারণে কক্সবাজার ও পার্বত্য বনাঞ্চলে সংকটাপন্ন এশিয়ান বন্য হাতি। এ কারণে দিবসটি উপলক্ষে হাতির জন্য জরুরি টেকসই পরিবেশ নিশ্চিতের তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

আবাসস্থল ধ্বংস ও করিডোর বন্ধসহ নানা কারণে সংকটাপন্ন বন্য হাতি রক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসার ওপর গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে। বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের কারণে কক্সবাজারের বিশাল বনভূমি ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর থেকে হাতির খাদ্য ও চলাচলে বাধা সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে মানুষের সঙ্গে এই বন্য প্রাণীর দ্বন্দ্ব বাড়ছে।

প্রতিবছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও হাতি দিবস পালিত হলেও এই প্রাণী রক্ষায় কার্যত কোনও উদ্যোগ নেই। প্রতিনিয়ত হাতির আবাসস্থল ধ্বংস ও করিডোর বন্ধসহ নানা কারণে কক্সবাজার ও পার্বত্য বনাঞ্চলে সংকটাপন্ন অবস্থায় পড়েছে বন্যহাতি। বিশাল বনাঞ্চলজুড়ে রোহিঙ্গা বসতি গড়ে ওঠায় ঘুমধুম হাতির করিডোর সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। তাই দেশে যে অবশিষ্টি এশিয়ান হাতি রয়েছে, তাদের রক্ষা ও সংরক্ষণের জন্য নানাভাবে ব্যবস্থা গ্রহণের তাগিদ দেওয়া হয়েছে। বিশ্ব হাতি দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) বিকালে কক্সবাজারের একটি হোটেলে ‘আইইউসিএন’ আয়োজিত এক সেমিনারে এই তাগিদ দেয়া হয়।

হাতি নিয়ে কাজ করছে ‘আইইউসিএন বাংলাদেশ’। এই প্রতিষ্ঠানের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ রাকিবুল আমিন বলেন, ‘বর্তমানে মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী ঘুমধুম আন্তর্জাতিক হাতির করিডোর বন্ধ রয়েছে। ফলে হাতি চলাচলের একটি বড় বাঁধা রয়েছে। সুতরাং কক্সবাজার বনাঞ্চল এলাকায় ৪০ থেকে ৪৫টি বন্য হাতির খাদ্যভাবসহ নানা কারণে সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে।’

কক্সবাজার বনবিভাগের দক্ষিণ বিভাগীয় কর্মকর্তা সারওয়ার আলম বলেন, ‘কক্সবাজার ও বান্দরবান এলাকায় ৭০ থেকে ৮০টি হাতি রয়েছে। এসব হাতি রোহিঙ্গাদের কারণে চলাচলে বাধা পাচ্ছে। ফলে মানুষ আর হাতির মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে। এছাড়া বনাঞ্চলের নানা স্থাপনা, জবর দখল, রাস্তাঘাট তৈরি হওয়ায় আবাসস্থল নষ্ট হয়ে গেছে। তাই, হাতির আগের অবস্থা ফিরিয়ে আনতে আবাসস্থল তৈরী করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘কক্সবাজারে হাতির নিরাপদ আবাসস্থল, খাদ্য ও করিডোর তৈরির কাজ চলছে। এর ফলে গত এক বছর ১৬টি হাতির বাচ্চা প্রসব হয়েছে কক্সবাজারের দক্ষিণ বন বিভাগের আওতাধীন বনাঞ্চলে।’

কক্সবাজারের অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ সামছু-দ্দৌজা বলেন, ‘২০১৭ সালের আগস্ট থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে মানুষ ও হাতির সংঘর্ষে ১২ জন রোহিঙ্গা প্রাণ হারিয়েছে। সংঘর্ষ প্রশমিত করার জন্য আইইউসিএন বাংলাদেশ, ইউএনএইচসিআর’সহ বেশকিছু সংগঠনের সমন্বয়ে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও আশেপাশে ‘‘জীব বৈচিত্র্য সুরক্ষার জন্য মানবিক-সংরক্ষণ কর্ম’’ নামে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।’

২০১৭ সালে বন বিভাগ ও আইইউসিএনের গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের আবাসিক হাতির বিচরণ বৃহত্তর চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে। দেশের বনাঞ্চলে আবাসিক বন্যহাতি আছে ২৬৮টি। এছাড়া দেশের সীমান্তবর্তী পাঁচটি বনাঞ্চলে ৯৩ থেকে ১০৭টি পরিযায়ী হাতির বিচরণ করে।

গবেষণায় ৯টি বিভাগীয় বন অফিসের আওতায় হাতি চলাচলের ১১টি রুট চিহ্নিত করা হয়েছিল, যার মোট দৈর্ঘ্য ১৫১৮ কিলোমিটার। কর্মকর্তারা বলছেন, দেশে হাতির বিচরণের পথ দ্রুত কমে আসছে। গত ছয় বছরে বন্ধ হয়ে গেছে হাতি চলাচলের তিনটি করিডোর। এসব কারণে নিয়মিত চলাচলের পথ ব্যবহার করতে পারছে না হাতি। কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে পাহাড়ি বনাঞ্চলে ছিল বেশকিছু হাতি চলাচলের করিডোর। কিন্তু রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে গিয়ে নষ্ট হয় এসব করিডোর।

কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ এবং বান্দরবানের ঘুমধুমের সীমান্তবর্তী এলাকায় হাতি চলাচলের ১১টি করিডোর রয়েছে। এসব করিডোরের বেশিরভাগেই এখন গড়ে উঠেছে রোহিঙ্গা ক্যাম্প এবং দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থার কার্যালয়। চলাচলের পথসহ হাতির অভয়ারণ্য রক্ষার পাশাপাশি জীববৈচিত্র সংরক্ষণে পরিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা থেকে রোহিঙ্গাদের সরিয়ে নেওয়ার কথা বলছেন অনেকেই।

/এসএইচ/
সম্পর্কিত
হাতির ওপর নির্যাতন বন্ধে জয়া আহসান ও পিএডব্লিউ’র রিট
বাড়িঘর ভাঙচুর করায় হাতির বিরুদ্ধে মামলা
পাহাড়ে বুনোহাতির আক্রমণে কৃষকের মৃত্যু
সর্বশেষ খবর
রাজধানী স্থানান্তর করছে ইন্দোনেশিয়া, বিশেষ মর্যাদা পাচ্ছে জাকার্তা
রাজধানী স্থানান্তর করছে ইন্দোনেশিয়া, বিশেষ মর্যাদা পাচ্ছে জাকার্তা
সড়ক আইনে শাস্তি ও জরিমানা কমানোয় টিআইবির উদ্বেগ
সড়ক আইনে শাস্তি ও জরিমানা কমানোয় টিআইবির উদ্বেগ
পিসিবি প্রধানের আস্থা হারালেও শ্বশুরকে পাশে পাচ্ছেন শাহীন
পিসিবি প্রধানের আস্থা হারালেও শ্বশুরকে পাশে পাচ্ছেন শাহীন
ইভ্যালির রাসেল-শামীমার বিচার শুরু
ইভ্যালির রাসেল-শামীমার বিচার শুরু
সর্বাধিক পঠিত
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
এবার চীনে আগ্রহ বিএনপির
এবার চীনে আগ্রহ বিএনপির
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
রাজধানীর ৫ জায়গায় তরমুজ বিক্রি হবে কৃষকের দামে
রাজধানীর ৫ জায়গায় তরমুজ বিক্রি হবে কৃষকের দামে