X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১
আদালতে জবানবন্দি

ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে স্কুলছাত্রীকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করেছে গৃহশিক্ষক

নোয়াখালী প্রতিনিধি
২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, ২০:২৪আপডেট : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, ২১:৩৩

নোয়াখালীতে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রীকে (১৪) হত্যার কথা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে গ্রেফতার সাবেক গৃহশিক্ষক আবদুর রহিম রনি। 

শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে নোয়াখালীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ এমদাদের আদালতে এ জবানবন্দি দেয় রহিম। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নোয়াখালীর পুলিশ সুপার মো. শহীদুল ইসলাম। গৃহশিক্ষক আবদুর রহিম (৩০) নোয়াখালী পৌর এলাকার লক্ষ্মী নারায়ণপুর এলাকার খলিল মিয়ার ছেলে।

স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির বরাত দিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, ‘ঘরে ঢুকে হাত-পা বেঁধে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা করেছিল গৃহশিক্ষক রহিম। তবে ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে ছাত্রীকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করেছে। এরপর রান্না ঘর থেকে ছুরি এনে হাতের রগ এবং গলা কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করে বাঁধন খুলে দেয়।’

এর আগে শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই স্পেসল্যাব চৌধুরী প্রমোজ নোয়াখালীর আদালতে আবদুর রহিমের ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। আদালতের বিচারক মোহাম্মদ এমদাদ তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

পুলিশ সুপার বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের ১২ ঘণ্টার মধ্যে আসামিকে গ্রেফতার এবং রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে রাজি হয় রহিম। আদালতে পুরো ঘটনার বর্ণনা দিয়েছে সে।’

আরও পড়ুন: নোয়াখালীতে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যা, গৃহশিক্ষক রিমান্ডে

পুলিশ সুপার মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে স্কুলছাত্রীর মা কর্মস্থল বেগমগঞ্জে যাওয়ার জন্য বের হন। এ সময় স্কুলছাত্রী বাসায় একা ছিল। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে বাসায় ফিরে ঘরের দরজা বাইরে থেকে তালা লাগানো দেখতে পান ছাত্রীর মা। নিজের কাছে থাকা চাবি দিয়ে দরজার তালা খুলে ঘরে ঢুকে দেখেন, ঘরের উত্তর পাশে মেয়ের শয়নকক্ষের দরজা ভেতর থেকে আটকানো এবং ভেতরে টিভি ও ফ্যান চলছে। তখন ঘরের বাথরুম থেকে পানি পড়ার শব্দ শোনা যাচ্ছিল। মেয়েকে অনেক ডাকাডাকি করে কোনও সাড়া-শব্দ না পেয়ে ঘরের পেছন দিকে যান। এরপর কক্ষের জানালার গ্লাস ভেঙে মেয়েকে রক্তাক্ত অবস্থায় বিছানায় পড়ে থাকতে দেখেন। বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়। পুলিশ লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি শেষে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়।’

তিনি বলেন, ‘ছাত্রীর গলা সামনের দিকে কাটা ছিল। বাঁ হাতের রগ কাটা এবং বিবস্ত্র অবস্থায় পড়েছিল। পুরো বিছানা রক্তে ভেজা এবং খাটের নিচে রক্তমাখা ছুরি পড়েছিল। ঘটনাটি ভিন্ন খাতে নেওয়ার জন্য ঘরের আলমারিতে থাকা জিনিসপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা হয়েছিল। এসব আলামত আমরা জব্দ করেছি। এরপর ছাত্রীর মায়ের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, রহিম একটি কোচিং সেন্টার পরিচালনা করে। কিছুদিন আগে ওই স্কুলছাত্রী রহিমের কাছে প্রাইভেট পড়া বন্ধ করে দিয়ে অন্য স্থানে প্রাইভেট পড়া শুরু করে। এতে রহিম ক্ষিপ্ত হয়। তবে স্কুলছাত্রীর বাসায় আসা-যাওয়া করতো। বৃহস্পতিবার রাতে রহিমকে আটক করা হয়। তার গলা ও ঘাড়ে সদ্য লাগা আঁচড়ের দাগ দেখা যায়। রহিমের গলায়, ঘাড়ে ও মাথায় আঁচড়ের দাগ দেখে তাৎক্ষণিক চিকিৎসকের কাছে নিলে চিকিৎসক আঁচড়টি সদ্য এবং নখের বলে জানান। আঁচড় কীভাবে লেগেছে জিজ্ঞাসা করলে দুই শ্যালিকা আঁচড় দিয়েছেন বলে দাবি করে রহিম। কিন্তু যাছাই করে ওই তথ্যের সত্যতা পাওয়া যায়নি। এরপর আঁচড়ের দাগের বিষয়ে কোনও জবাব দেয়নি রহিম। এতে আমরা নিশ্চিত হই, খুনের ঘটনায় রহিমই জড়িত। এ ঘটনায় মামলা করেন ছাত্রীর মা। ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে ঘটনার রহস্য উদঘাটনের জন্য রহিমকে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে হত্যার কথা স্বীকার করে রহিম।’ 

আরও পড়ুন: স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যা, গ্রেফতার ৩

পুলিশ সুপার আরও বলেন, ‘আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে রহিম জানিয়েছে গত বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ছাত্রীর বাসায় যায় রহিম। বাসায় গিয়ে নক করলে দরজা খুলে দেয় ছাত্রী। তখন বাসায় ঢুকে ছাত্রীর সঙ্গে গল্প করে। একপর্যায়ে ছাত্রীকে জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করে। এতে বাধা দেয়। জোর করে ধরতে গেলে নিজেকে রক্ষার জন্য রহিমের গলায়, ঘাড়ে ও মাথায় আঁচড় দেয় ছাত্রী। এ অবস্থায় ছাত্রীকে ওড়না দিয়ে হাত-পা বেঁধে ধর্ষণের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। ছাত্রী বিষয়টি সবাইকে জানিয়ে দেবে বললে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করে রহিম। পরে রান্না ঘর থেকে ছুরি এনে ছাত্রীর বাঁ হাতের রগ এবং গলা কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করে হাতের বাঁধন খুলে দেয়। এরপর ঘরের জিনিসপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে পালিয়ে যায়। জবানবন্দি গ্রহণের পর তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।’

সুধারাম মডেল থানার ওসি মো. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘আদালতে ধর্ষণের কথা স্বীকার করেনি রহিম। তবে মেডিক্যাল পরীক্ষার প্রতিবেদন পাওয়ার পর ধর্ষণের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে। তখন এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

/এএম/
সম্পর্কিত
কুমিল্লা শিক্ষা প্রকৌশল কার্যালয়ে ঠিকাদারকে মারধর২৫ দিনেও গ্রেফতার হয়নি কেউ, পুলিশ বলছে সিসিটিভির ফুটেজ পায়নি
ঢাবির জগন্নাথ হলে বসে প্রাথমিকের প্রশ্নের সমাধান!
উপজেলা নির্বাচনে পলকের হস্তক্ষেপ ঠেকাতে হাইকোর্টে রিট
সর্বশেষ খবর
তীব্র গরমে সিল্কসিটি ট্রেনে আগুন
তীব্র গরমে সিল্কসিটি ট্রেনে আগুন
দ্বিতীয় বিয়ে করায় স্বামীর অঙ্গহানি করলেন স্ত্রী
দ্বিতীয় বিয়ে করায় স্বামীর অঙ্গহানি করলেন স্ত্রী
প্রচণ্ড গরমেও ভোটকেন্দ্রে ভোটার, ভোটদানের হার ৬১ শতাংশ
ভারতে দ্বিতীয় দফায় ভোটপ্রচণ্ড গরমেও ভোটকেন্দ্রে ভোটার, ভোটদানের হার ৬১ শতাংশ
‘খেলাধুলার মাধ্যমে বেড়ে ওঠা ব্যক্তিরা দ্রুত নেতৃত্ব দিতে সক্ষম’
‘খেলাধুলার মাধ্যমে বেড়ে ওঠা ব্যক্তিরা দ্রুত নেতৃত্ব দিতে সক্ষম’
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!