নির্বাচনি আচরণবিধি ভঙ্গ করে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান। এ নিয়ে প্রশ্ন করায় এক সাংবাদিককে মারধর এবং আরও দুই সাংবাদিকের ওপর হামলা করেছেন এই সংসদ সদস্য ও তার অনুসারীরা।
বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দিয়েছেন সাংবাদিকরা।
নির্বাচন কমিশনের জাতীয় সংসদ নির্বাচন আচরণ বিধিমালা অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় কোনও প্রকার মিছিল কিংবা শোডাউন করতে পারবেন না কোনও প্রার্থী। এমনকি মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় পাঁচ জনের বেশি সমর্থক সঙ্গে রাখা যাবে না।
প্রত্যক্ষদর্শী ও গণমাধ্যমকর্মীরা জানিয়েছেন, নির্বাচনি আচরণবিধি ভঙ্গ করে শতাধিক নেতাকর্মীর শোডাউন ও গাড়িবহর নিয়ে বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে আসেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান। এ সময় তার পক্ষে স্লোগান দেন সমর্থকরা। পরে ১২-১৫ জন অনুসারীকে সঙ্গে নিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন তিনি। মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে বের হওয়ার পর নির্বাচনি আচরণবিধি ভঙ্গ হয়েছে কিনা তার কাছে জানতে চান ইনডিপেনডেন্ট টিভির চট্টগ্রামের নিজস্ব প্রতিবেদক রাকিব উদ্দিন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে রাকিবকে চড়-থাপ্পড় দেন এই প্রার্থী। তখন সেখানে উপস্থিত বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা এগিয়ে গেলে তাদের ওপর চড়াও হন তিনি। এ সময় তার অনুসারীরা বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের ক্যামেরা ও ট্রাইপড ছুড়ে ফেলেন, কয়েকজন সাংবাদিকের ওপর হামলা করেন। এতে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সিনিয়র সহসভাপতি এবং চ্যানেল আইয়ের ব্যুরোপ্রধান চৌধুরী ফরিদসহ দুই সাংবাদিক আহত হন। এই প্রার্থী ও তার অনুসারীদের এমন কর্মকাণ্ড দেখে হতভম্ব হয়ে পড়েন গণমাধ্যমকর্মী ও স্থানীয়রা।
মারধরের শিকার সাংবাদিক রাকিব উদ্দিন বলেন, ‘মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন হওয়ায় বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে অবস্থান করছিলাম আমরা গণমাধ্যমকর্মীরা। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শতাধিক নেতাকর্মীর শোডাউন ও গাড়িবহর নিয়ে এসে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন এমপি মোস্তাফিজুর রহমান। বের হওয়ার পর আমি প্রশ্ন করেছিলাম, এত নেতাকর্মী ও শোডাউন নিয়ে এসে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ায় নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘন হয়েছে কিনা। সঙ্গে সঙ্গে মোস্তাফিজুর রহমান তেড়ে এসে আমাকে চড়-থাপ্পড় দেন। পাশাপাশি তার অনুসারীরা আমার ওপর হামলা করেন। সহকর্মী সাংবাদিকরা এগিয়ে এলে তাদের ওপরও চড়াও হন তিনি। আমাদের ক্যামেরা ও বিভিন্ন জিনিসপত্র ছুড়ে ফেলে দেন তার অনুসারীরা। এতে আমরা তিন সাংবাদিক আহত হয়েছি। পরে বিষয়টি রিটার্নিং কর্মকর্তাকে জানিয়েছি আমরা। তিনি এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন।’
শোডাউন ও মিছিলের মাধ্যমে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, ‘তিনি (মোস্তাফিজুর রহমান) আমার অফিসে বেশি লোক নিয়ে এসেছিলেন। তখন ওনাকে বলেছি, শোডাউন করা যাবে না। বেশি সমর্থক সঙ্গে রাখা যাবে না। যেহেতু তিনি আচরণবিধি ভেঙে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন, আবার সাংবাদিকদের ওপর হামলা করেছেন; এজন্য তার কাছে ব্যাখ্যা চাইবো। একইসঙ্গে তাকে শোকজ করা হবে।’
সাংবাদিকদের ওপর হামলার বিষয়ে জানতে সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমানের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ করেননি।
এদিকে, সাংবাদিকদের ওপর হামলার বিচার দাবিতে দুপুর ১টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে আদালত চত্বরে প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছেন সাংবাদিকরা। সমাবেশ থেকে হামলায় জড়িত মোস্তাফিজুর রহমান ও তার অনুসারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়েছে।