কক্সবাজারের মোহাম্মদ ইদ্রিসের ইচ্ছে ছিল মালয়েশিয়ায় যাবেন। সেই ইচ্ছে বাস্তবে রূপ দিতে এলাকার বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে ধারদেনা করেন। তবু মালয়েশিয়ায় যাওয়ার মতো টাকা জোগাড় করতে ব্যর্থ হন। একদিকে বিদেশ যেতে না পারার হতাশা অন্যদিকে পাওনাদারের টাকা পরিশোধের চাপ। এমন পরিস্থিতিতে কোনও উপায় না পেয়ে নিজেকে অপহরণের নাটক সাজান।
রশি দিয়ে নিজের হাত-পা বাঁধা ছবি স্ত্রীর মোবাইলে পাঠিয়ে বলেন, তাকে অপহরণ করা হয়েছে। মুক্তিপণ হিসেবে ৩০ লাখ টাকা না দিলে তাকে হত্যা করবে অপহরণকারীরা। বিষয়টি পরিবারের পক্ষ থেকে পুলিশকে জানানো হয়। পুলিশ ওই ব্যক্তিকে উদ্ধার করে জানতে পারে, নিজেই সাজিয়েছেন এই অপহরণের নাটক। মুক্তিপণের টাকা আদায় করে ঋণ পরিশোধ এবং মালয়েশিয়া যাওয়ার ইচ্ছে ছিল ইদ্রিসের।
মঙ্গলবার বিকালে চট্টগ্রাম নগরের মোহরার বালুর টাল এলাকা থেকে ইদ্রিসকে উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি পেকুয়ার টইটং ইউনিয়নের সোনাইছড়ি মৌলভীপাড়া এলাকার বাসিন্দা।
পুলিশ জানায়, ২৪ জানুয়ারি রাত ৮টার দিকে পেকুয়ার টইটং বাজার থেকে আত্মগোপনে চলে যান ইদ্রিস। এরপর স্ত্রীকে ফোন করে অপহৃত হওয়ার কথা জানান। স্ত্রীকে বলেন, ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিতে হবে। নইলে অপহরণকারীরা তাকে মেরে ফেলবে। পরে পরিবারের সদস্যরা মুক্তিপণ হিসেবে তিন লাখ টাকা পরিশোধের সিদ্ধান্ত নেন। একই সঙ্গে বিষয়টি পুলিশকেও জানানো হয়। পুলিশ ইদ্রিসের মোবাইল নম্বরের সর্বশেষ অবস্থান ধরে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া ও নগরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালায়। তবে সন্ধান না পেয়ে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ইদ্রিসের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে—এমন একজন ব্যক্তিকে শনাক্ত করেন। ওই ব্যক্তি তার স্ত্রীর ছোট বোনের স্বামী নবী হোছেন। নবী হোছেনকে চট্টগ্রাম থেকে আটকের পরে তার সহায়তায় ইদ্রিসের সন্ধান পায় পুলিশ। অপহরণ নাটকের বিষয়টি নবী হোছেনকে আগেই জানান ইদ্রিস।
পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সিরাজুল মোস্তফা সাংবাদিকদের বলেন, বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে তার তিন লাখ টাকার মতো ঋণ রয়েছে। এই টাকা পরিশোধ করার প্রয়োজন ছিল। এ ছাড়া বেশি টাকা আদায় করতে পারলে তা দিয়ে মালয়েশিয়া চলে যাওয়ার ইচ্ছে ছিল। উদ্ধারের পর ইদ্রিস বলেছেন, দোকান থেকে রশি কিনে অন্য একজনের সহায়তায় নিজের হাত-পা বেঁধে ছবিটি স্ত্রীর কাছে পাঠান।
ইদ্রিস স্বীকার করেছেন যে, দোকান থেকে রশি কিনে অন্য এক ব্যক্তির সহায়তায় নিজের হাত-পা বেঁধে স্ত্রীর কাছে ছবিটি পাঠিয়েছিলেন। তিনি জানান, তার ঋণ পরিশোধের প্রয়োজন ছিল এবং অতিরিক্ত টাকা পেলে মালয়েশিয়া চলে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল। এ ঘটনার পর নিজের ভুল বুঝতে পেরে অনুতপ্ত হয়েছেন।
ওসি সিরাজুল মোস্তফা আরও বলেন, ‘ইদ্রিসকে বুধবার চকরিয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তোলা হবে। তার বিষয়ে আদালত যে সিদ্ধান্ত দেবেন, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’