X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

মায়ের পর এবার বাবাকেও হারালো ছোট্ট আছিয়া

বি কে সিকদার, ফরিদপুর
০৫ মে ২০২২, ১২:১৬আপডেট : ০৫ মে ২০২২, ১৩:০৬

দুই বছর বয়সী শিশু আছিয়া। কথা বলতে শেখেনি এখনও। প্রতিপক্ষের লোকজন কুপিয়ে হত্যা করেছে তার বাবাকে। কিন্তু কিছুই বুঝতে পারছে না আছিয়া। বাড়িতে শোকের মাতম, সে শুধু এদিক-ওদিক তাকাচ্ছে। ফুফু রহিমা বেগম তাকে কোলে করে রেখেছেন। আছিয়াকে জন্ম দিয়েই তার মা অমিতা বেগম চলে যান না-ফেরার দেশে। মায়ের মৃত্যুর পর একদিন বয়স থেকেই তাকে লালন-পালন করছেন রহিমা বেগম। 

জানা গেছে, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ঈদের দিন (৩ মে) দুপুরে ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার ঘোষপুর ইউনিয়নের চরদৈত্বেরকাঠি গ্রামের বাসিন্দা শিশু আছিয়ার বাবা আকিদুল মোল্লাকে (৪৬) গোহাইলবাড়ি বাজারের পাশে কুপিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষের লোকজন। আকিদুল গোহাইলবাড়ি বাজারে পাট ও ভুষি মালের ব্যবসা করতেন।

বাবাকে হারিয়ে কিছু বুঝে ওঠার আগেই অনাথ হয়ে গেলো আছিয়া। কোনোদিন মা-বাবা বলে ডাকতে পারবে না। শুধু আছিয়াই নয়, মা-বাবাকে হারিয়ে অনাথ হয়ে গেলো তার আরও চার ভাই। আছিয়া সবার ছোট। আছিয়ার বড় ভাই আজিজুল (১৫) গোহাইলবাড়ি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র; মেজো ভাই রিয়াজুল (১২) পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র; সেজো ভাই মুস্তাকিন (১০) চতুর্থ শ্রেণিতে এবং ছোট ভাই মমিন (৮) ব্র্যাকের শিশু শ্রেণিতে পড়ালেখা করে।

সরেজমিন দেখা যায়, শিশু আছিয়া তার ফুফু রহিমা বেগমের কোলে। বাড়িতে আহাজারি চলছে। নিহত আকিদুলের চার ছেলের কান্নাকাটিতে পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে। আকিদুলের বৃদ্ধা মা বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। শুধু পরিবারের মানুষরাই নয় আশপাশের মানুষও কান্নাকাটি করছে এমন নির্মম হত্যাকাণ্ডের ঘটনায়।

আকিদুলের বাড়িতে স্থানীয়দের ভিড় আজিজুল বলে, ‘বাবা ঈদের নামাজ শেষে বাড়ি আসে। তারপর দুপুরে বাড়ি থেকে দোকানের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। গোহাইলবাড়ি বাজারের কাছে আসতেই আগে থেকেই ওত পেতে থাকা প্রতিপক্ষের লোকজন বাবার ওপর হামলা চালিয়ে কুপিয়ে জখম করে। বাবা ওই স্থানেই মারা যান।

‘দুই বছর আগে ছোট বোনের জন্মের সময় মা মারা যান। বাবাকে নির্মমভাবে হত্যা করলো ওরা। আমরা এতিম হয়ে গেলাম। আমাদের আর দেখাশোনার কেউ থাকলো না। আমার বাবাকে হত্যার বিচার চাই।’

নিহত আকিদুল মোল্লার ছোট ভাই দবির মোল্লা বলেন, ‘আমার ভাইয়ের সঙ্গে কারও কোনও ঝামেলা ছিল না। গ্রাম্য দলাদলি থাকলেও ভাই কখনও ঝামেলায় জড়াতো না। খুব নিরীহ মানুষ ছিল। ওরা আমার ভাইকে নির্মমভাবে হত্যা করলো। মারপিটের সময় আমার ভাই ওদের বলেছিল, “আমার স্ত্রী বেঁচে নেই, আমাকে প্রাণে মারিস না। আমার ছেলেমেয়ে এতিম হয়ে যাবে। ওদের দেখার কেউ থাকবে না।” কিন্তু একথা শোনেনি তারা। ভাইকে এমনভাবে মেরেছে যে ওই স্থানেই মারা গেছে। হাসপাতালে নেওয়ারও সুযোগ হয়নি।

নিহত আকিদুল মোল্লার বোন রহিমা বেগম বলেন, ‘বড় ভাইয়ের স্ত্রী মারা যাওয়ার পর তার মেয়ে আছিয়াকে আমিই দেখাশোনা করি। মেয়েটার কপাল এতটাই খারাপ, জন্মের সময় মাকে হারালো, আবার কিছু বুঝে ওঠার আগেই বাবাকে হারালো। ওরা পাঁচ ভাইবোন এতিম হয়ে গেলো।’

নিহত আকিদুল মোল্লার বৃদ্ধা মা শাহিদা খাতুন বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। কথা বলতে পারছেন না। একটু কথা বলছেন আর মূর্ছা যাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলেকে যারা হত্যা করেছে তাদের বিচার চাই। আমার নাতি-নাতনিরা এতিম হয়ে গেলো। একজন মা বেঁচে থাকতে তার সন্তানের মৃত্যু কতটা কষ্টের, যে হারায় সেই বোঝে। আমার ছেলের বদলে আমাকে নিলে না কেনো আল্লাহ?’ বলে চিৎকার করে কান্নাকাটি করতে থাকেন তিনি।

জানা যায়, উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক মোস্তফা জামান সিদ্দিকী এবং গোহাইলবাড়ি এলাকার মৃত বজলুর রহমানের ছেলে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আরিফুজ্জামান পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন বিরোধ চলে আসছে। সম্প্রতি গোহাইলবাড়ি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নির্বাচনে আরিফের পক্ষকে পরাজিত করে মোস্তফা জামান সিদ্দিকী সভাপতি নির্বাচিত হন। এ ঘটনায় আরিফুজ্জামানের পক্ষের লোকজন ক্ষিপ্ত ছিল। ঈদের দিন দুপুরে গোহাইলবাড়ি বাজার সংলগ্ন এলাকায় মোস্তফা জামান সিদ্দিকীর সমর্থকদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায় আরিফের পক্ষের লোকজন।

হামলায় চরদৈত্বেরকাঠি গ্রামের মৃত হাসেম মোল্লার ছেলে আকিদুল মোল্লা, একই গ্রামের মৃত মোসলেম শেখের ছেলে খায়রুল শেখ (৪৭), মোস্তফা জামান সিদ্দিকীর দুই ভাই আলমগীর সিদ্দিকী (৫২) ও মাসুদ আহমেদ (৪০), রাজিবুল ইসলাম (৩০), কাদের মোল্লা (৪০), সোহেল শেখ (২০) গুরুতর আহত হন। তাদের বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে চিকিৎসক আকিদুলকে মৃত ঘোষণা করেন। অপর গুরুতর আহত খায়রুলকে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। তবে সাতৈর বাজারে পৌঁছালে পথিমধ্যে তিনি মারা যান।

গুরুতর আহত মোস্তফা জামান সিদ্দিকীর দুই ভাই আলমগীর সিদ্দিকী ও মাসুদ আহমেদকে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

বোয়ালমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল আলম বলেন, ‘আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ঈদের দিন দুপুরে প্রতিপক্ষের লোকজন আকিদুল ও খায়রুল নামে দুই ব্যক্তিকে কুপিয়ে হত্যা করে। এলাকায় ডিবি পুলিশ ও অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।’ এলাকা এখন শান্ত রয়েছে বলে জানান তিনি।

আরও খবর: ঈদের দিনে ফরিদপুরে সংঘর্ষে প্রাণ গেলো ২ জনের

 

 

/এমএএ/
সম্পর্কিত
পাকিস্তানে জাপানি নাগরিকদের লক্ষ্য করে জঙ্গি হামলা
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ধান শুকানোর জমি নিয়ে দুই গ্রামবাসীর সংঘর্ষ, আহত অর্ধশতাধিক
ক্রিমিয়ায় রুশ ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংসের দাবি ইউক্রেনের
সর্বশেষ খবর
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
লোকসভা নির্বাচন: মণিপুরে ভোটকেন্দ্রে সংঘর্ষ
লোকসভা নির্বাচন: মণিপুরে ভোটকেন্দ্রে সংঘর্ষ
ওঠানামা করছে মুরগির দাম, বাড়ছে সবজির
ওঠানামা করছে মুরগির দাম, বাড়ছে সবজির
শিশু হাসপাতালের আগুন নিয়ন্ত্রণে
শিশু হাসপাতালের আগুন নিয়ন্ত্রণে
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ