মেয়েদের জন্য সাতক্ষীরায় আলাদা মাঠ ও নারী ফুটবল একাডেমি তৈরির দাবি জানিয়েছেন সাফজয়ী বাংলাদেশ ফুটবল দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুন। শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টায় সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনের দেওয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এ দাবি তুলেছেন তিনি। অনুষ্ঠানে সাবিনা খাতুন ও তার মা মমতাজ বেগমকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের শুরুতেই স্থানীয় কোচ আকবর আলীকে স্মরণ করে সাফজয়ী সাবিনা বলেন, ‘আমাকে ঘর থেকে খেলার মাঠে নিয়ে গেছেন আকবর স্যার। অনুশীলনের সময় নানা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়েছে। সবকিছু মোকাবিলা করে স্যার আমাকে উৎসাহ দিয়েছেন, খেলোয়াড় হিসেবে তৈরি করেছেন। যেদিন থেকে জাতীয় দলে খেলছি সেদিন থেকেই সাফজয়ের আকাঙ্ক্ষা ছিল। সাফ ফুটবল কাপ দেশকে উপহার দেওয়ার প্রত্যাশা ছিল। প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে। শুরু থেকে সাবিনা হওয়ার জন্য যারা আমাকে সহযোগিতা করেছেন, তাদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।’
ধনী পরিবারের মেয়েরা ফুটবল খেলায় আসছে না উল্লেখ করে সাবিনা বলেন, ‘আপনারা লক্ষ্য করলে দেখবেন ধনী পরিবারের মেয়েরা ফুটবল খেলায় আসছে না। আমাদের মতো যারা আসছে, সবাই নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান। ফলে কারও আর্থিক সচ্ছলতা নেই। অনুশীলনের জন্য পরিবেশ, বিশেষ করে মেয়েদের জন্য প্রত্যেক জেলায় আলাদা মাঠ দরকার। আগের চেয়ে এখন মেয়েদের ফুটবল খেলাসহ অন্য খেলায় আগ্রহ বেড়েছে। মেয়েরা ফুটবলকে পেশা হিসেবে নিচ্ছে। ফলে মেয়েদের খেলার উপযোগী মাঠ দরকার। যাতে মেয়েরা ফুটবলের প্রতি আরও বেশি আগ্রহী হয়। এতে বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানদের নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবে না। মেয়েরাও স্বাচ্ছন্দ্যভাবে খেলাধুলা করতে পারবে। খেলাধুলার জন্য অনুশীলন ও প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই। এজন্য নারী ফুটবল একাডেমি তৈরি করতে হবে। এসব প্রতিষ্ঠা করতে পারলে নারী ফুটবলার বেড়ে যাবে।’
ফুটবল খেলা মেয়েদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে সাবিনা বলেন, ‘অধিকাংশ মেয়ে ফুটবলারের খেলার সামগ্রী কেনার সামর্থ্য নেই। সাতক্ষীরায় মেয়েদের মাঠ সংকট। জেলায় একটি স্টেডিয়াম আছে। কিন্তু সেখানেও সবসময় খেলার সুযোগ থাকে না মেয়েদের। সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ মাঠ ও পিটিআই মাঠ মেয়েদের খেলার জন্য উপযোগী নয়। তাই জেলার মেয়েদের জন্য আলাদা মাঠ প্রয়োজন।’
আরও পড়ুন: সাবিনা ও তার মাকে সংবর্ধনা দিলো জেলা প্রশাসন
শৈশবের কথা উল্লেখ করে সাবিনা বলেন, ‘সাতক্ষীরাসহ দেশের মানুষের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। তাদের ভালোবাসায় আমি মুগ্ধ। আমার বেড়ে উঠা সাতক্ষীরার মাটিতেই। এই মাটিতেই আমার শৈশব মিশে আছে। মনে আছে, আকবর স্যার যখন আমাদের প্র্যাকটিস করাতেন তখন একশ্রেণির মানুষ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতো। তখন আমার বয়স ১২-১৩ হবে। সেই প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে আমাদের গড়েছেন তিনি। এসব প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করতে হবে। সব বাধা পেরিয়ে সামনে যেতে হবে। তবেই আসবে সফলতা।’
সাবিনার দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়ে জেলা প্রশাসক ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি হুমায়ুন কবির বলেন, ‘নারী খেলোয়াড়দের খেলাধুলা এগিয়ে নিতে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে। ইতোমধ্যে ৩০ একর জমির ওপর ক্রীড়া কমপ্লেক্সের অনুমোদন করা হয়েছে। পাশাপাশি ফুটবল একাডেমি তৈরির জন্য সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করবো আমরা।’
আরও পড়ুন: ‘সবাই এভাবে বরণ করবে স্বপ্নেও ভাবিনি’
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাতক্ষীরা-২ আসনের সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ, জেলা প্রশাসক ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি হুমায়ুন কবির, সাবিনার বড় বোন সালমা খাতুন ও সেজো বোন হালিমা খাতুন ও স্থানীয় প্রয়াত কোচ আকবর আলীর স্ত্রী রেহেনা আক্তার।
অনুষ্ঠানে সাবিনাকে এক লাখ টাকা পুরস্কার দেন জেলা প্রশাসক। সেইসঙ্গে সাবিনা ও তার মাকে ফুল, ক্রেস্ট এবং উপহার দেওয়া হয়। পাশাপাশি সাবিনাকে তিন লাখ টাকা পুরস্কার দেওয়ার আশ্বাস দেন সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ।