১৫ বছর বয়সে বাবাকে সহযোগিতার মাধ্যমে প্রতিমা তৈরির কাজে হাতেখড়ি মন্টু চন্দ্র পালের। এরপর ২০ বছর বয়সে এই পেশায় পুরোপুরি নিযুক্ত হন। তার বয়স এখন ৮০ বছর। পাঁচ যুগ অর্থাৎ, দীর্ঘ ৬০ বছর ধরে বাপ-দাদার পেশা আঁকড়ে ধরে আছেন মন্টু চন্দ্র পাল। কাদা-মাটি দিয়ে নিপুণ হাতে গড়ে চলছেন দুর্গা প্রতিমা।
শেরপুর সদর উপজেলার ভাতশালা ইউনিয়নের বয়ড়া পরাণপুর গ্রামে মন্টু চন্দ্র পালের বাড়ি। সারাদেশে শারদীয় দুর্গাপূজার শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে। বৃদ্ধ মন্টু চন্দ্রও তাই এখন অনেক ব্যস্ত। সম্প্রতি তার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, কাদা-মাটি দিয়ে দেবী প্রতিমা গড়ছেন। এ কাজ করতে গিয়ে শরীরে ক্লান্তি এলেও মনের আনন্দ তাকে সব ক্লান্তি ভুলিয়ে দিচ্ছে।
আগামী ১ অক্টোবর শুরু হচ্ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। দেবীদুর্গার আগমন ঘিরে তাই মন্টু চন্দ্র পাল এবং তার ছেলে ও পুত্রবধূদের ব্যস্ত সময় কাটছে।
মন্টু পাল বলেন, ‘প্রতিমা গড়ার কাজটি আমি আনন্দ নিয়ে করি। তবে এখন শরীর ভেঙে পড়েছে। সেরকম পরিশ্রম করতে পারি না। এদিকে প্রতিমা তৈরির খরচও বেড়েছে। কিন্তু প্রতিমার দাম আগের মতোই আছে। তাই লাভ খুব কম। এই লাভে প্রতিমা তৈরি করে কোনোভাবেই পোষায় না। তবে এ পেশা পূর্বপুরুষের পরম্পরার পেশা। তাই ছাড়তেও পারি না। এই বুড়ো বয়সে অন্য কিছু তো করতেও পারবো না।’
প্রতিমা তৈরিতে মন্টু পালকে সহযোগিতা করছিলেন পুত্রবধূ রেখা রানী পাল। তিনি বলেন, ‘আমার শ্বশুর পাঁচ যুগ ধরে এই কাজ করছেন। তার মতো আমরা সবাই এই কাজ করছি। বাজারে সব জিনিসের দাম বেশি, এখন এ কাজ করে জীবিকা চালানো কঠিন। সরকারি সহযোগিতা প্রয়োজন।’
শেরপুরের অন্য কারিগরদেরও একই অভিযোগ। তারা বলছেন, প্রতিমা তৈরির বাঁশ, খড় ও মাটিসহ অন্যান্য সব উপকরণের দাম বাড়লেও বাড়েনি মজুরি। তবে বাপ-দাদার পেশা ধরে রাখতে এখনও এই কাজ করে যাচ্ছেন তারা।
প্রতিমা তৈরির কারিগর আদিত্য কুমার পাল বলেন, ‘আমরা অনেকদিন ধরে এ কাজ করছি। বাজারে সব জিনিসের দাম বেশি। যে মজুরি পাই, তা দিয়ে সংসার চালানো কঠিন। এর আগে যে মজুরিতে প্রতিমা তৈরি করতাম, এখনও একই মজুরিতে করতে হচ্ছে। কিন্তু বাজারে সব জিনিসের দাম তো বেড়ে গেছে। সেটা কেউ বোঝে না।’
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, এ বছর শেরপুরে ১৫৫টি মণ্ডপে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে। এর মধ্যে শেরপুর সদরে ৬৯টি, নালিতাবাড়ীতে ৩৬টি, নকলায় ২১টি, ঝিনাইগাতীতে ১৯টি ও শ্রীবরদী উপজেলায় ১০টি। ১ অক্টোবর মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে দুর্গোৎসব শুরু হবে।