যশোরে পৃথক দুই স্থানে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধ’ ও ‘গণপিটুনিতে’ নিহত চারজনের মধ্যে তিনজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। পুলিশের কাছে থাকা নিহতদের ছবি দেখে তাদের পরিবারের লোকজন লাশ শনাক্ত করেন।আঞ্জুমানে মুফিদুল ইসলামের লোকজন চারজনের দাফন সম্পন্ন করেছে বলে জানা গেছে। তবে পুলিশ বলছে, তাদের কাছে এ সংক্রান্ত কোনও তথ্য নেই।
নিহত চারজনের মধ্যে তিনজন হলেন, শার্শার গয়ড়া গ্রামের খোরশেদ আলম (৫০), দুর্গাপুর গ্রামের মনু মিয়া (৩৫) এবং সদর উপজেলার চাউলিয়া গ্রামের ফিরোজ বিশ্বাস (৩৪)।
গত বুধবার সকালে ঝিকরগাছা শহরের কাটাখাল বঙ্গবন্ধু পার্ক এলাকায় অজ্ঞাত তিন ব্যক্তির লাশ পড়ে থাকতে দেখেন এলাকাবাসী। তাদের দুজন হলেন খোরশেদ ও মনু মিয়া।
অন্যদিকে, মঙ্গলবার দিবাগত মধ্যরাতে যশোর-মনিরামপুর সড়কের কামালপুরে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন একজন। এরমধ্যে কামালপুরে নিহতের নাম ফিরোজ।
যশোরের রূপদিয়া এলাকার স্থানীয়রা বলছেন, ফিরোজ এলাকায় ডাকাত হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তার নামে থানায় আটটি ডাকাতি মামলা আছে। ক্ষমতাসীন দলের ছত্রছায়ায় থেকে ফিরোজ নানা ধরনের অপরাধমূলক কাজ করতেন বলে অভিযোগ আছে।
খোরশেদের বাড়ি শার্শার গয়ড়া হলেও তিনি তিন বছর ধরে যশোর সদরের রূপদিয়া এলাকায় থাকতেন। ওই বাজারে তার একটি চায়ের দোকান রয়েছে। গত শনিবার যশোর থেকে নাভারণে এক আত্মীয় বাড়িতে যাওয়ার পর থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন বলে জানান তার মেয়ে সুমি।
অন্যদিকে, মনু মিয়া ঢাকার মহাখালীতে ফ্যালকন সিকিউরিটি লিমিটেডে গার্ড হিসেবে চাকরি করতেন।
তার স্ত্রী পিয়ারী বেগম জানান, তারা যশোর শহরের শংকরপুরে টুলু মিয়ার বাড়িতে ভাড়া থাকেন। গত সোমবার সকালে বাসে বেনাপোল থেকে যশোর আসছিলেন মনু মিয়া। পথিমধ্যে নতুনহাট এলাকা থেকে পুলিশ পরিচয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা মনু মিয়াসহ কয়েকজনকে নামিয়ে নেয়। এরপর থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন।
তবে স্বজনরা এই তিন ব্যক্তিকে শনাক্ত করলেও পুলিশ তা নিশ্চিত করেনি।
কোতোয়ালী থানার ওসি ইলিয়াস হোসেন বলেন, এ সম্বন্ধে আমাদের কাছে কোনও তথ্য নেই।
হাসপাতালে দায়িত্বরত পুলিশ কনস্টেবল রুহুল আমিন জানান, খোরশেদের পরিবার নিহতের উপযুক্ত প্রমাণ দেখাতে না পারায় আজ আঞ্জুমানে মুফিদুল তার মরদেহ সমাহিত করে। অবশ্য, তার কাফনসহ আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র তার পরিবারের সদস্যরা সরবরাহ করে।
যশোর কোতোয়ালী থানার ওসি ইলয়াস হোসেন জানান, মরদেহগুলো আঞ্জুমানে মুফিদুলকে দেওয়া হয়েছিল। ওরা ব্যবস্থা নিয়েছে-এছাড়া আর কিছু বলার নেই।
উল্লেখ্য, লাশ উদ্ধারের পর পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, গত মঙ্গলবার (১৪ জুন) রাতে যশোর-মণিরামপুর সড়কের কামালপুরে অজ্ঞাত ডাকাতরা অবস্থান করছিল। সংবাদ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে ডাকাত দল পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি করে। পুলিশ পাল্টা গুলি করলে নিহত হয় অজ্ঞাত এক ডাকাত।
অন্যদিকে, পুলিশের দাবি, ঝিকরগাছার কাটাখাল এলাকায় ‘ডাকাতি’ করার সময় ‘গণপিটুনিতে’ নিহত হয় অজ্ঞাত তিনজন। যদিও এলাকাবাসী বলেছে, সেখানে মঙ্গলবার রাতে কোনও ডাকাতির ঘটনা ঘটেনি।
স্থানীয়দের ভাষ্য, পুলিশ তিনজনকে হত্যা করে সেখানে লাশ ফেলে রাখে। কারণ এর আগের রাতে ঝিকরগাছায় এক বাড়িতে ডাকাতি শেষে ফেরার পথে তাদের ছুরিকাঘাতে আহত হন পুলিশের এএসআই মোল্যা তরিকুল ইসলাম। সে কারণে পুলিশ উল্লিখিতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়।
তবে যশোরের পুলিশ তাদের এই অভিযোগ অস্বীকার করে এবং গণপিটুনিতে নিহত বলে জানায়।
আরও পড়ুন:
সাতক্ষীরায় র্যাব পরিচয়ে ব্যবসায়ীকে অপহরণের অভিযোগ
দামুড়হুদায় শিশুসহ ৪ জনকে কুপিয়ে জখম
/এআর/টিএন/
আপ - /এসএ/