X
শনিবার, ১৮ মে ২০২৪
৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

ঝন্টুর পরাজয়ের নেপথ্যে

জিল্লুর রহমান পলাশ, রংপুর থেকে
২২ ডিসেম্বর ২০১৭, ১২:৪০আপডেট : ২২ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৩:১৯

রসিক নির্বাচনে ভোট দেওয়ার পর আওয়ামী লীগ প্রার্থী ঝন্টু নির্বাচনি কাজে দলের সঙ্গে প্রার্থীর সমন্বয়ের অভাব আর জনগণের সঙ্গে প্রার্থীর দূরত্বের কারণেই রংপুর সিটি করপোরেশন (রসিক) নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী শরফ উদ্দিন আহমেদ ঝন্টুর এমন শোচনীয় পরাজয় হয়েছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা এমনটিই মনে করছেন। পাশাপাশি দলের ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতারা কাউন্সিলর পদ নিয়ে ব্যস্ত থাকায় মেয়র পদের নির্বাচনে দলের অবস্থান আরও সংকটে পড়েছে বলেও মনে করছেন তারা। রসিক নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা এভাবেই পরাজয়ের কারণগুলো চিহ্নিত করেছেন।
২০১২ সালে রংপুর সিটি কপোরেশনে প্রথম মেয়র নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। দলীয় প্রতীক ছাড়াই অনুষ্ঠিত ওই নির্বাচনে জয়ী হন বর্ষীয়ান আওয়ামী লীগ নেতা শরফ উদ্দিন আহমেদ ঝন্টু। মেয়র পদে পাঁচ বছর দায়িত্ব পালনের পর এবারে দলীয় প্রতীকের নির্বাচনে এসে প্রবীণ এই নেতার পরাজয়ে দলের নেতাকর্মীরাই এখন পরাজয়ের কারণ খুঁজে বেড়াচ্ছেন।
এ বিষয়ে রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আনারুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নির্বাচনকে নিয়ে দল আর প্রার্থীর মধ্যে সমন্বয়ের অভাব ছিল। তাছাড়া সিটি এলাকার ভোটার আর সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রার্থীর যে সম্পর্ক থাকা প্রয়োজন, তা ছিল না। এগুলোই আসলে এই নির্বাচনে তার (ঝন্টু) পরাজয়ের প্রধান কারণ।’
পরাজয়ের আরও কারণ তুলে ধরে অ্যাডভোকেট আনারুল বলেন, ‘এই নির্বাচনে বেশিরভাগ ওয়ার্ড পর্যায়ের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকই ছিলেন কাউন্সিলর প্রার্থী। অনেক ওয়ার্ডেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি ছিল না। ফলে ওয়ার্ড নেতারা নিজেদের নির্বাচন নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন। মেয়র প্রার্থীর জন্য তারা তেমন কোনও কাজ করতে পারেননি। এ কারণে সমস্যা আরও বেড়েছে।’
দলীয় প্রার্থীর পরাজয়ের পেছনে ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীর ভূমিকা খতিয়ে দেখার কথা জানালেন রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রেজাউল করীম রাজুও। তিনি বলেন, ‘দলের নেতাকর্মীরা যদি কাউন্সিলর পদে ভোট আদায়ে ব্যস্ত থাকাসহ প্রতিপক্ষের হয়ে কাজ করেছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হবে। কোনও নেতাকর্মীর ভূমিকায় অবহেলার প্রমাণ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
শরফ উদ্দিন আহমেদ ঝন্টুর পরাজয়ের কারণ হিসেবে ভোটাররা বলছেন, ঝন্টু কথা দিয়ে কথা রাখেন না। তিনি মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে রংপুর নগরীর উন্নয়নে উল্লেখ্যযোগ্য কোনও ভূমিকা রাখেননি। তাছাড়া সাধারণ মানুষের সঙ্গেও কোনও যোগাযোগ রাখতেন না ঝন্টু। ফলে তিনি দলের বাইরে সাধারণ ভোটারদের কাছে টানতে পারেননি বলেই তার এমন পরাজয়।
এদিকে, এই নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী কাওছার জামান বাবলা ফল প্রত্যাখ্যান করলেও নির্বাচনে তার ভরাডুবির নেপথ্যে দলের সাংগঠনিক ঘাটতিকেই দায়ী করছেন নেতারা।
বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও পীরগঞ্জ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নুর মোহাম্মদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত বিএনপির নেতাকর্মীরা মাঠে যেতেই পারেনি। আর তফসিল ঘোষণার পর সময় তো ছিল খুবই অল্প। এই অল্প সময়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া যায় না। তাছাড়া দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে কোনও সমন্বয় না থাকায় এমন পরাজয় হয়েছে।’
উল্লেখ্য, গতকাল বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) অনুষ্ঠিত রসিক নির্বাচনে প্রায় এক লাখ ভোটের বিশাল ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন লাঙল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ প্রার্থী শরফ উদ্দিন ঝন্টু পেয়েছেন ৬২,৪০০ ভোট। দু’জনের ভোটের ব্যবধান ৯৮ হাজার ৮৯। আর এই নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী কাওসার জামান বাবলা পেয়েছেন ৩৫,১৩৬ ভোট।

আরও পড়ুন-
রংপুরের নগরপিতা মোস্তফা
লাখো ভোটের ব্যবধানে লাঙলের জয়
রংপুরের যানজট নিরসনই হবে প্রথম কাজ: মোস্তফা

/টিআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বেলারুশ সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদারে বড় বিনিয়োগের পথে পোল্যান্ড
বেলারুশ সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদারে বড় বিনিয়োগের পথে পোল্যান্ড
বাজারে সংকট সৃষ্টি করতে মজুত করা এক লাখ ডিম উদ্ধার
বাজারে সংকট সৃষ্টি করতে মজুত করা এক লাখ ডিম উদ্ধার
কলেজশিক্ষককে পেটানোর ঘটনায় ছাত্রলীগ নেতা বহিষ্কার
কলেজশিক্ষককে পেটানোর ঘটনায় ছাত্রলীগ নেতা বহিষ্কার
‘শেখ হাসিনা দেশে ফিরেছিলেন বলেই স্বাধীনতার সুফল ভোগ করছি’
‘শেখ হাসিনা দেশে ফিরেছিলেন বলেই স্বাধীনতার সুফল ভোগ করছি’
সর্বাধিক পঠিত
মামুনুল হক ডিবিতে
মামুনুল হক ডিবিতে
৩০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবি তৃতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মচারীদের
৩০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবি তৃতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মচারীদের
যাত্রীর জামাকাপড় পুড়িয়ে পাওয়া গেলো সাড়ে চার কোটি টাকার স্বর্ণ
যাত্রীর জামাকাপড় পুড়িয়ে পাওয়া গেলো সাড়ে চার কোটি টাকার স্বর্ণ
সুপ্রিম কোর্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের স্থান পরিদর্শন প্রধান বিচারপতির
সুপ্রিম কোর্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের স্থান পরিদর্শন প্রধান বিচারপতির
আমেরিকা যাচ্ছেন ৩০ ব্যাংকের এমডি
আমেরিকা যাচ্ছেন ৩০ ব্যাংকের এমডি