টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ১২ পুলিশের বিরুদ্ধে কক্সবাজার আদালতে আরও একটি হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৭ আগস্ট) দুপুর ২টার কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হেলাল উদ্দিনের আদালতে মামলাটি দায়ের করেন টেকনাফ থানা হোয়াইক্যং ইউনিয়নের মৃত আব্দুল জলিলের স্ত্রী সানোয়ারা বেগম।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০১৯ সালের ৩ ডিসেম্বর তার স্বামী আব্দুল জলিলকে কক্সবাজার শহরের আদালতপাড়া থেকে আটক করে ডিবি পুলিশের ইন্সপেক্টর মানস বড়ুয়া। পরে হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মশিউরের মাধ্যমে তাকে টেকনাফ থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ক্রসফায়ার থেকে বাঁচাতে ওসি প্রদীপ গ্রেফতার আব্দুল জলিলের স্ত্রী সানোয়ারা বেগমের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা দাবি করেন। পরে স্বর্ণালঙ্কার বিক্রি করে সানোয়ারা বেগম স্বামীকে বাঁচাতে প্রদীপকে পাঁচ লাখ টাকা দেন বলে এজাহারে জানানো হয়।
এক পর্যায়ে দীর্ঘ আট মাস পর চলতি বছরের ৭ জুলাই জলিল ক্রসফায়ারে নিহত হন। এ ঘটনায় স্বামীর বিচার চেয়ে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মসিউরকে প্রধান আসামি করে ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন সানোয়ারা বেগম।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, এসআই আরিফুর রহমান, সুজিত চন্দ্র দে, ডিবি পুলিশের ইন্সপেক্টর মানস বড়ুয়া, এসআই অরুণ কুমার চাকমা, এসআই নাজিম উদ্দিন, এসআই নাজিম উদ্দিন ভূঁইয়, এএসআই রাম চন্দ্র দাস, কনস্টেবল রুবেল শর্মা ও দফাদার আমিনুল হক।
মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী মনিরুল ইসলাম জানান, শুনানি শেষে আগামী ১০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে এ ঘটনায় টেকনাফ থানায় কোনও মামলা হয়েছে কিনা তা জানানোর নির্দেশ দেন আদালত।
এদিকে বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ সিনহা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় র্যাবের দুই দফায় ১১ দিনের রিমান্ডে রয়েছেন।
এরআগে, ১৮ আগস্ট সাবেক ওসি প্রদীপসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অপর একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের মৌলভী বাজার এলাকার সুলতান আহমদের স্ত্রী গোল চেহের। মামলায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ছেলে হত্যার অভিযোগ আনেন গোল চেহের।
প্রসঙ্গত, গত ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফের মারিশবুনিয়া পাহাড়ে ভিডিওচিত্র ধারণ করে মেরিন ড্রাইভ দিয়ে কক্সবাজারের হিমছড়ি এলাকার নীলিমা রিসোর্টে ফেরার পথে শামলাপুর তল্লাশি চৌকিতে গুলিতে নিহত হন মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ। এসময় পুলিশ সিনহার সঙ্গে থাকা সিফাতকে আটক করে কারাগারে পাঠায়। পরে রিসোর্ট থেকে শিপ্রাকে আটক করা হয়। দু'জনই বর্তমানে জামিনে মুক্ত। ওই ঘটনায় ওসি প্রদীপসহ অন্য পুলিশ সদস্যরা এবং পুলিশের দায়ের করা মামলার তিন সাক্ষী কক্সবাজার জেলা কারাগারে রয়েছে।
আরও পড়ুন:
ওসি প্রদীপসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে আরও একটি হত্যা মামলা দায়ের
ওসি প্রদীপসহ ৩ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেবে র্যাব
দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে তদন্ত কাজ চলছে: র্যাব ডিজি
সিনহা হত্যা মামলা: আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি
গণশুনানি শেষ: ২৩ আগস্ট প্রতিবেদন জমা দিতে পারে তদন্ত কমিটি
সিনহাকে হত্যার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করলেন র্যাবের নতুন তদন্ত কর্মকর্তা
পাহাড় থেকে নামতে রাত হওয়ায় সিনহাদের ‘ডাকাত’ সন্দেহ করা হয়
আত্মসমর্পণকারী ইয়াবা পাচারকারীদের কাছেও আর্থিক সুবিধা নিয়েছেন ওসি প্রদীপ!
‘সেদিন দুপুর থেকেই ফোর্স নিয়ে মেরিন ড্রাইভে অবস্থান করছিলেন ইন্সপেক্টর লিয়াকত’