X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

লাঠিচার্জের জেরে হাসপাতালে ভাঙচুর, বললেন প্রত্যক্ষদর্শী

রাবি প্রতিনিধি
২০ অক্টোবর ২০২২, ২১:১৭আপডেট : ২০ অক্টোবর ২০২২, ২১:১৭

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কে জি এম শাহরিয়ারের মৃত্যুর ঘটনায় চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ করেছিলেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের আনসার সদস্যরা শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ শুরু করেন। এরই সূত্র ধরে হাসপাতালে ভাঙচুর চালিয়েছেন বলে দাবি করেছেন শিক্ষার্থীরা।

বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) দুপুরে এমন দাবি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী ও প্রত্যক্ষদর্শী। এর আগে বুধবার (১৯ অক্টোবর) রাত সাড়ে ৯টার দিকে হাসপাতালে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এ সময় হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক, আনসার সদস্য ও কর্মচারীদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন। 

আরও পড়ুন: কর্মবিরতি স্থগিত করেছেন রামেক হাসপাতালে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা

এদিকে, হাসপাতালে হামলা ও ভাঙচুরের প্রতিবাদে বুধবার রাতে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটের ডাক দিয়ে কর্মবিরতিতে যান ইন্টার্নরা। রাত ১১টার দিকে কর্মবিরতি দিয়ে হাসপাতালের সামনে অবস্থান নেন তারা। রাত ১২টার দিকে হাসপাতাল ত্যাগের আগে সাংবাদিকদের সামনে ধর্মঘটের ঘোষণা দেন ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ইমরান হোসেন। বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৪টায় হাসপাতাল প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা সভা শেষে কর্মবিরতি স্থগিত করেন ইন্টার্নরা। শুক্রবার (২১ অক্টোবর) সকাল থেকে তারা পুরো দমে কাজে ফিরবেন বলে জানিয়েছেন।

রামেক ও ক্যাম্পাস সূত্র জানায়, বুধবার রাত ৮টার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ হবিবুর রহমান হলের চারতলার ছাদ থেকে পড়ে আহত হন মার্কেটিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার। তাকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। রাত ৯টার দিকে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। 

আরও পড়ুন: রাবি শিক্ষার্থীর মৃত্যু: রামেক হাসপাতাল ভাঙচুর

এ সময় শাহরিয়ারের সহপাঠীরা চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ তুলে নার্স ও ইন্টার্নদের কক্ষের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। তখন আনসার সদস্যরা লাঠিচার্জ করলে শিক্ষার্থীরা ভাঙচুর শুরু করেন। 

এক রোগী নিয়ে ওই দিন সন্ধ্যা থেকে হাসপাতালের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থী মনুমোহন বাপ্পা। ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ওপরের তলায় ৮ নম্বর ওয়ার্ড। সেখানে শাহরিয়ারকে ভর্তি করা হয়েছিল। ফলে ঘটনার শুরু থেকে সেখানে ছিলেন বাপ্পা।

হাসপাতালে ভাঙচুর শুরুর বর্ণনা দিতে গিয়ে বাপ্পা বলেন, ‘শাহরিয়ারকে আনুমানিক রাত সোয়া ৮টার দিকে হাসপাতালের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে আনা হয়। সেখানে কোনও চিকিৎসক ছিলেন না। ইন্টার্ন চিকিৎসক তার পালস পাননি। তখন শিক্ষার্থীরা শাহরিয়ারকে আইসিইউতে নেওয়ার কথা বলেন। কিন্তু চিকিৎসক না থাকায় তা করেননি ইন্টার্ন। রাত ৯টার দিকে শাহরিয়ারকে মৃত ঘোষণা করা হলে সহপাঠীরা উত্তেজিত হয়ে ৮ ওয়ার্ডের ইন্টার্ন চিকিৎসক ও নার্সদের রুমের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। ১০-১৫ মিনিট পর হাসপাতালের এক কর্মকর্তার নেতৃত্বে ১০-১৫ জন আনসার সদস্য আসেন। তারা বাঁশি বাজিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ শুরু করেন। উত্তেজিত হয়ে শিক্ষার্থীরা হাসপাতালে ভাঙচুর শুরু করেন। ভাঙচুর শুরু করলে ৮ নম্বর ওয়ার্ডে ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। তখন তিন চিকিৎসক ও নার্স পোশাক পরিবর্তন করে চলে গেছেন।’

পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে

ঘটনাস্থলে থাকা আরেক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘শাহরিয়ারকে ৮ নম্বর ওয়ার্ডে নেওয়ার পর আমরা চিকিৎসকের খোঁজ করি। এ সময় এক ইন্টার্ন এসে চিকিৎসক পরিচয় দেন। তিনি রোগীর পালস পাচ্ছিলেন না। আমরা তাকে আইসিইউতে নিতে বললে তিনি বলেন, এটা আমার এখতিয়ারে নেই। চিকিৎসক চাইলে নিতে পারেন। তখন আমরা চিকিৎসককে ডাকতে বলি। কিন্তু ওই ইন্টার্ন বলেন, চিকিৎসককে ডাকতে পারবেন না। একপর্যায়ে আমাদের চাপে তিনি চিকিৎসককে ফোন করেন। তখন ফোনের অপরপ্রান্ত থেকে চিকিৎসক ওই ইন্টার্নকে চিকিৎসা দিতে বলেন। পরে ওই ইন্টার্ন আইসিইউ লিখে দেন। নার্সের রুমে গিয়ে কাগজপত্র নেওয়ার সময় শাহরিয়ারকে মৃত ঘোষণা করা হয়। তখন শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করলে লাঠিচার্জ শুরু করেন আনসাররা। এখান থেকেই হাসপাতালে ভাঙচুরের ঘটনার সূত্রপাত। উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা নার্সের কক্ষে ভাঙচুর চালান। সেইসঙ্গে লাঠিচার্জে কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন।’

আরও পড়ুন: রাজশাহী মেডিক্যালে ধর্মঘটে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা

এ বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র কীভাবে মারা গেছেন তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আনসার সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছেন। কারও ওপর হামলা কিংবা মারধর করেননি। শিক্ষার্থীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে হাসপাতালে ভাঙচুর চালিয়েছেন। যেহেতু হাসপাতালে হামলা এবং ভাঙচুর করা হয়েছে তাই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে একটি মামলা করা হয়েছে।’

হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি মো. ইমরান হোসেন বলেন, ‘রোগীদের চিকিৎসার বিষয় মাথায় রেখে কর্মবিরতি স্থগিত করেছি আমরা। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ইন্টার্নরা কাজে ফিরেছেন। তবে পুরো হাসপাতালে শুক্রবার সকাল থেকে কাজে ফিরবেন ইন্টার্নরা।’

ইমরান হোসেন বলেন, ‘হাসপাতালে হামলার ঘটনায় জড়িতদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আইনের আওতায় আনতে হবে। চিকিৎসকসহ সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবস্থা না নিলে শনিবার থেকে কর্মসূচি পালন করবো।’

/এএম/
সম্পর্কিত
ইউক্রেনে রুশ বিমান হামলায় দুই শিশুসহ নিহত ৮
পাকিস্তানে জাপানি নাগরিকদের লক্ষ্য করে জঙ্গি হামলা
ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগরমে বেড়েছে অসুখ, ধারণক্ষমতার তিন গুণ বেশি রোগী হাসপাতালে
সর্বশেষ খবর
১৬ বছর ধরে পুনরুদ্ধার করা ‘নেপোলিয়ন’ দেখাবে কান
১৬ বছর ধরে পুনরুদ্ধার করা ‘নেপোলিয়ন’ দেখাবে কান
পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস, সিপিআই-এম ইন্ডিয়া জোট নয়, বিজেপির এজেন্ট: মমতা
পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস, সিপিআই-এম ইন্ডিয়া জোট নয়, বিজেপির এজেন্ট: মমতা
‘আমাদের জন্য যারা বেইমান, ভারতের তারা বন্ধু’
‘আমাদের জন্য যারা বেইমান, ভারতের তারা বন্ধু’
টানেলে অপারেশনাল কাজে গেলে টোল দিতে হবে না জরুরি যানবাহনকে
টানেলে অপারেশনাল কাজে গেলে টোল দিতে হবে না জরুরি যানবাহনকে
সর্বাধিক পঠিত
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী