X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষ

শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা করলো কে?

রাবি প্রতিনিধি
১৪ মার্চ ২০২৩, ০০:৪২আপডেট : ১৪ মার্চ ২০২৩, ০০:৪২

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছিল স্থানীয় ব্যবসায়ীদের। এতে আহত হয়েছিলেন অনেকে। প্রথমদিনই এই পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসার পর কে বা কাদের উসকানি ও মদতে শিক্ষার্থীরা তিন দিন ধরে লাগাতার রেললাইন এবং সড়ক অবরোধ করলো, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বলছেন, আন্দোলনে বহিরাগতরা প্রবেশ করে দোকানপাট ও রেললাইনে অগ্নিসংযোগ করেছে। তবে প্রথমদিনের পর আন্দোলনে অংশ না নেওয়া কারও কারও অভিযোগ, প্রশাসনের এক-দুজনের অবস্থান শিক্ষার্থীদের উসকানি দিয়েছে। ফলে পরিস্থিতি এতদূর গড়িয়েছে।

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র অধ্যাপকরা বলছেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পেছনে তৃতীয় অশুভ শক্তি রয়েছে। এর মধ্যে বহিরাগতরা আছে। এজন্য প্রশ্ন উঠেছে, কারা এই বহিরাগত? কারা আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা করেছে?

এর আগে রবিবার রাতে ক্যাম্পাসের ক্রিয়াশীল সাত সংগঠন এই আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে দাবি করে আন্দোলন স্থগিত করে।

সংঘর্ষের ঘটনার পর মহাসড়ক অবরোধ করে অগ্নিসংযোগ শিক্ষার্থীদের

সোমবার (১৩ মার্চ) দুপুরে প্রেস ব্রিফিংয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলাম। শিক্ষার্থীরাও শান্ত ছিল। পরে কিছু বহিরাগত ঢুকে আন্দোলনকে সহিংস রূপ দেয়। তারা শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করেছে। পাশাপাশি মহাসড়ক ও রেললাইনে অগ্নিসংযোগ করেছে। তারা ঘটনাকে পুঁজি করে বড় কিছু করতে চেয়েছিল।’
 
বহিরাগতরা আন্দোলনকে বারবার ক্যাম্পাসের বাইরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে উল্লেখ করে উপাচার্য বলেন, ‘রেললাইনে অগ্নিসংযোগের সময় যারা ছিল, তাদের মধ্যে ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী নয়। তাদের কাছে যে ধরনের অস্ত্র ছিল, সেগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে থাকতে পারে না। আমাদের কাছে তথ্য আছে, একটি মহল এই আন্দোলনকে বড় ইস্যু করে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করতে চেয়েছিল। এর সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী নয়, এমন কিছু শিক্ষার্থীও যুক্ত ছিল।’

স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয় শনিবার রাতে। এতে অন্তত দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা রবিবার সকাল থেকে ক্যাম্পাসে আন্দোলন শুরু করেন। একপর্যায়ে তারা উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন। উপাচার্য ছাত্রলীগের সহযোগিতায় বাসভবনে প্রবেশ করলে আন্দোলন স্তিমিত হয়ে পড়ে। 

তবে রবিবার বিকালে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে অবস্থান নেয়। পরবর্তীতে সেখান থেকে কয়েকজন চারুকলা সংলগ্ন রেললাইন অবরোধ করে অগ্নিসংযোগ করেন। এ অবস্থায় পুলিশের বিশেষ টিম আসলে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ফিরে আসেন। এ ঘটনার পর আন্দোলনে অংশ নেওয়া সাতটি প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন মধ্যরাতে আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেয়। একইসঙ্গে অনেকে এই আন্দোলকে ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা চলছে বলে দাবি করেন।
 
সংগঠন সাতটি হলো বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ছাত্র ইউনিয়ন, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, ছাত্র অধিকার পরিষদ, বিপ্লবী ছাত্র যুব আন্দোলন ও নাগরিক ছাত্র ঐক্য।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি শাকিলা খাতুন বলেন, ‘আন্দোলনে বহিরাগত কেউ ছিল না। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। তবে একটি গোষ্ঠী সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করে প্রথম থেকেই রাজনৈতিক ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করেছে।’


  আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে এলে তোপের মুখে পড়েন উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার
কারা আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে নিতে চেয়েছিল এমন প্রশ্নের জবাবে এই নেত্রী বলেন, ‘রবিবার উপাচার্য তার বাসবভনে প্রবেশের পর শিক্ষার্থীরা বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু হঠাৎ একদল শিক্ষার্থীকে নিয়ে সরকারদলীয় ছাত্রসংগঠনের একজন নেত্রী রেললাইন অবরোধ করতে গেলেন। একই সময়ে ওই সংগঠনের কিছু নেতাকর্মী দেশি অস্ত্র নিয়ে পরিবহনে অবস্থান নেন। তারাই আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে নিতে চেয়েছিলেন।’

নাগরিক ছাত্র ঐক্যের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক মেহেদী হাসান মুন্না বলেন, ‘শনিবার সন্ধ্যায় যখন স্থানীয়দের সঙ্গে সংঘর্ষ লেগেছিল, তখন শিক্ষার্থী সংখ্যা কম ছিল। কিন্তু যখনই ছাত্রলীগ নেতাদের গাড়ি ভাঙচুর করলো স্থানীয়রা, তখনই হল থেকে রামদা, লাঠি ও রড নিয়ে ঘটনাস্থলে যান একদল শিক্ষার্থী। এ ছাড়া রবিবার উপাচার্য তার বাসভবনে প্রবেশের পর পরিস্থিতি শান্ত ছিল। পরবর্তীতে সন্ধ্যা বেলায় হঠাৎ করে ছাত্রলীগের এক নেত্রীর নেতৃত্বে একদল শিক্ষার্থী রেললাইন অবরোধ করেন। সেখানে তারা অগ্নিসংযোগ করেন। কাজেই এটি স্পষ্ট, কারা আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা করেছিল।’

তবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, আন্দোলনে ছাত্রদল ও শিবিরের উপস্থিতি অস্বীকার করলে মিথ্যা বলা হবে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘শুরু থেকে এদের কেউ যুক্ত হতে পারেনি। কিন্তু একদিন পরই তারা যেভাবে আন্দোলন পরিচালনা করতে চেয়েছে, তা টের পেয়ে অনেকে সরে গেছে। তারা সরকারদলীয় সমর্থন নিয়েই ক্যাম্পাসে টিকে আছে।’ 

ফেসবুকে দেওয়া বেশ কিছু পোস্ট দেখিয়ে এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘পুরো সময় এখানে প্রচারণা চালানো হয়েছে। এত এলোমেলো আন্দোলন এর আগে কেউ দেখেনি। শেষে কারও নিয়ন্ত্রণ ছিল না।’

যা বলছে ছাত্রলীগ
  
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘স্থানীয়দের হামলায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। যার প্রতিবাদে আন্দোলন করেছেন শিক্ষার্থীরা। এখানে বিভিন্ন মতের শিক্ষার্থী ছিলেন। তবে সবাই দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে শিক্ষার্থী হিসেবে আন্দোলন করেছেন। এখানে বহিরাগত কাউকে দেখিনি। তবে তৃতীয় পক্ষ প্রবেশ করলেও করতে পারে।’

উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা

শিক্ষকদের ভাষ্য 

শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনের পেছনে অশুভ শক্তি আছে উল্লেখ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মুসতাক আহমেদ। সেখানে তিনি দাবি করেন, ‘অশুভ শক্তি অস্থিরতা বাড়ানোর চেষ্টা করছে।’
 
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক মুসতাক আহমেদ বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে তৃতীয় শক্তি প্রবেশ করেছে। যারা দেশ ও দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না, যারা মুক্তিযুদ্ধকে বিশ্বাস করে না, তারাই এই তৃতীয় শক্তি। যার কারণে তারা দেশের সম্পদ রেললাইনে অগ্নিসংযোগ করেছে।’ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কারও কারও অদূরদর্শী পদক্ষেপ তৃতীয় শক্তিকে সুবিধা দিচ্ছে বলেও মনে করেন তিনি।
 
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বক্তব্য

ক্যাম্পাসে দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, আন্দোলনে ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের শিক্ষার্থীরা জড়িয়ে পড়ে। এখানে ছাত্রদল-শিবির যুক্ত ছিল। এ ছাড়া ছাত্রলীগের একটি অংশও চায় আন্দোলন চলুক।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এক সদস্য বলেন, ‘ছাত্রলীগের একটি অংশ চায়, আন্দোলন চলুক। যার সুযোগ নিয়েছে ভিন্ন মতাদর্শের শিক্ষার্থীরা। যার কারণে এই ইস্যু এতদূর গড়িয়েছে।’

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থীরা উগ্র নয়। রবিবার কিছু বহিরাগত তাদের মাঝে প্রবেশ করে উসকানি দিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে আমরা জানতে পেরেছি, এখানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের যোগসাজশ ছিল। যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী জড়িত; যারা রাজনৈতিকভাবে সক্রিয়।’  

/ইউআই/এএম/
সম্পর্কিত
বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে চাপা দেওয়া বাসটির ফিটনেস ছিল না
গাছে ধাক্কা লেগে উড়ে গেলো বাসের ছাদ, একজন নিহত
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও বেনাপোলে দুদকের অভিযান
সর্বশেষ খবর
হৃদয় বিদারক সেই ঘটনার ১১ বছর
হৃদয় বিদারক সেই ঘটনার ১১ বছর
মার্কিন কংগ্রেসে ইউক্রেনের বহুল প্রতীক্ষিত সহায়তা প্যাকেজ পাস
মার্কিন কংগ্রেসে ইউক্রেনের বহুল প্রতীক্ষিত সহায়তা প্যাকেজ পাস
এক্সপ্রেসওয়েতে বাস উল্টে প্রাণ গেলো একজনের, আহত ১০
এক্সপ্রেসওয়েতে বাস উল্টে প্রাণ গেলো একজনের, আহত ১০
বেসিস নির্বাচনে ১১ পদে প্রার্থী ৩৩ জন
বেসিস নির্বাচনে ১১ পদে প্রার্থী ৩৩ জন
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক