X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাজারে এলো হাঁড়িভাঙা আম, কেজি ৭০

লিয়াকত আলী বাদল, রংপুর
১৭ জুন ২০২২, ০৮:০০আপডেট : ১৭ জুন ২০২২, ২২:০৯

রংপুরের বিখ্যাত হাঁড়িভাঙা আম বাজারজাত শুরু হয়েছে। প্রতি কেজি আম বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা। মৌসুমের শুরুতেই আমের দাম ভালো পেয়ে খুশি চাষিরা। এবার ২০০ কোটি টাকার আম বিক্রির আশা করছেন তারা।

অন্যান্য বারের চেয়ে এবার হাঁড়িভাঙা আমের ফলন ভালো হয়েছে। একসময় বদরগঞ্জ উপজেলায় এই আমের ফলন হলেও এখন জেলার বিভিন্ন স্থানে হয়। আম চাষে অনেকের ভাগ্য বদলে গেছে। হয়েছেন স্বাবলম্বী। সারাদেশে রয়েছে হাঁড়িভাঙা আমের খ্যাতি। চাহিদাও বেশ। দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও রফতানি হচ্ছে। এই আমের বৈশিষ্ট্য হলো আঁশবিহীন ও মিষ্টি।

বুধবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে হাঁড়িভাঙা আম বাগান থেকে নামানো শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) থেকে বাজারে বিক্রি শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আড়তদাররা ভিড় করেছেন রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার খোড়াগাছ ইউনিয়নের পদাগঞ্জ এলাকায়। হাঁড়িভাঙা আমের জন্য খ্যাত পদাগঞ্জ এলাকা। দেশের বিভিন্ন স্থানে আম নিয়ে যাওয়ার জন্য ইতোমধ্যে ব্যাংকের অস্থায়ী বুথ, কুরিয়ার সার্ভিস ও মালবাহী ট্রাকসহ সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে স্থানীয় প্রশাসন। 

আম চাষি ও আড়তদাররা জানিয়েছেন, এবার ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা থেকে এক হাজার টন আমের অর্ডার এসেছে। এছাড়া পাকিস্তান, সৌদি আরব, কাতার ও কুয়েত থেকেও আমের জন্য যোগাযোগ করেছেন প্রবাসীরা।

পদাগঞ্জের আমের আড়তদার আফজাল হোসেন বলেন, ‘এবার অনেক দেশ থেকে আমের অর্ডার আসছে। অর্ডারের ওপর ভিত্তি করে বলা যায়, এ বছর ১০ হাজার টন আম রফতানি করা সম্ভব হবে।’

মৌসুমের শুরুতেই আমের দাম ভালো পেয়ে খুশি চাষিরা

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক কৃষিবিদ ওবায়দুর রহমান বলেন, ‘এবার রংপুরে এক হাজার ৮৮৭ হেক্টর জমিতে হাঁড়িভাঙা আম চাষ হয়েছে। যা গত বছরের চেয়ে ৫০ হেক্টর বেশি। প্রায় ৩০ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। উৎপাদিত আমে ২০০ কোটি টাকার ব্যবসা হবে।’

তিনি বলেন, ‘এবার আমের ফলন ভালো হয়েছে। হাঁড়িভাঙা আম চাষে কোনও ক্ষতিকর কীটনাশক ব্যবহার করা হয় না। ফলে দেশ-বিদেশের মানুষজন পুরোপুরি কীটনাশকমুক্ত আম খেতে পারবেন।’

আম চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অন্যান্য বারের তুলনায় এবার হাঁড়িভাঙা আমের দাম একটু বেশি। বাগানে প্রতি মণ আম ২৬০০ থেকে ২৮০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি ৬৫ থেকে ৭০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। 

খুচরা ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা বলছেন, বাগান থেকে উন্নত মানের প্রতি কেজি আম ৬৫-৭০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। ফলে বাজারে ৮০ টাকা কেজি বিক্রি করতে হচ্ছে। তবে খুচরা বাজারে ৬০-৭০ টাকাও কেজি বিক্রি হচ্ছে। সেগুলোর মান তেমন ভালো নয়। বলা যায় নিম্নমানের।

পদাগঞ্জ এলাকায় প্রথমে বাণিজ্যিকভাবে হাঁড়িভাঙা আম চাষ শুরু করেন আব্দুস সালাম। তার সফলতা দেখে ওই এলাকার চাষিরা আম চাষ শুরু করেন। এই এলাকার মাটি লাল ও কাদাযুক্ত হওয়ায় বছরে একবার ধান ছাড়া কোনও ফসল উৎপাদিত হতো না। সে কারণে এলাকার সবাই হাঁড়িভাঙা আম চাষ শুরু করেন। এই সুনাম ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। আব্দুস সালাম বলেন, ‘আমের ভালো ফলন হয়েছে। দামও ভালো পাচ্ছি।’

বর্তমানে বদরগঞ্জ, মিঠাপুকুর ও পীরগঞ্জ উপজেলার ৭০টি গ্রামে হাঁড়িভাঙা আমের বাণিজ্যিক চাষ হয়। আম চাষে এলাকার মানুষ এখন স্বাবলম্বী। চাষিদের ভাগ্য বদলে গেছে। গত কয়েক বছরে গ্রামের দৃশ্যও বদলে গেছে। এখন আম চাষেই পুরো বছর সংসার চলে চাষিদের।

চাষিরা বলছেন, মৌসুমের শুরুতে ভালো দাম পেলেও পরে পান না। যদি আম সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকতো তাহলে তারা আরও বেশি লাভবান হতেন। বড় বড় ব্যবসায়ীরা আগাম টাকা দিয়ে বাগান কিনে নেওয়ায় লাভবান হচ্ছেন। এক্ষেত্রে চাষিরা ন্যায্যমূল্য পান না।

সরেজমিনে পদাগঞ্জ এলাকার বিভিন্ন আম বাগান ঘুরে দেখা গেছে, শত একরজুড়ে আমের বাগান। প্রতি গাছে ঝুলছে আম। এরই মধ্যে পরিপক্ব হয়ে গেছে। এখন কমবেশি সবাই আম নামাতে শুরু করেছেন। সেইসঙ্গে বাজারজাত করছেন।

ওই এলাকার চাষি মমতাজ উদ্দিন, আয়েন উদ্দিন ও মোসলেমা বেগম জানিয়েছেন, ১০ বছর আগেও এসব এলাকার মানুষ অভাবী ছিলেন। তিন বেলা তো দূরের কথা একবেলাও ঠিকমতো খাবার খেতে পারতেন না। এলাকার মাটি লাল হওয়ায় এখানে বছরে একবার ধান উৎপাদন হতো। বাকি আট মাস জমি পড়ে থাকতো। পরে হাঁড়িভাঙা আম ভাগ্যের চাকা বদলে দিয়েছে। এখন ধানের বদলে সবাই আমের বাগান করেছেন। 

আম চাষি হোসনে আরা জানান, তার স্বামী পাঁচ বছর আগে মারা গেছেন। পাঁচ সন্তান নিয়ে অনেক কষ্টে দিন কাটতো। পরে স্বামীর রেখে যাওয়া চার বিঘা জমিতে আম বাগান করেন। এখন প্রতি বছর আম বিক্রি করে তিন-চার লাখ টাকা আয় হয়। ছেলেমেয়েকে বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করাচ্ছেন। 

তিনি বলেন, ‘মৌসুমের শুরুতে আমের দাম ভালো পাওয়া যায়। কিন্তু পরে দাম পাওয়া যায় না। আম সংরক্ষণের জন্য হিমাগার করা গেলে অনেক ভালো হতো। সেখানে আম সংরক্ষণ করে পুরো বছর বিক্রি করা যেতো।’

 

/এএম/ 
সম্পর্কিত
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম বাগানতীব্র গরমে ঝরছে আমের গুটি, উৎপাদন নিয়ে চাষিদের শঙ্কা
মন্ত্রণালয়ে সভা করে ধানের দাম নির্ধারণ করা হবে: কৃষিমন্ত্রী
সর্বশেষ খবর
কানের ধ্রুপদি বিভাগে শ্যাম বেনেগালের ‘মন্থন’
কানের ধ্রুপদি বিভাগে শ্যাম বেনেগালের ‘মন্থন’
থাইল্যান্ডের রাজা-রানির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সৌজন্য সাক্ষাৎ
থাইল্যান্ডের রাজা-রানির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সৌজন্য সাক্ষাৎ
আজকের আবহাওয়া: কোন জেলায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোন জেলায় কেমন গরম পড়বে
রাফায় আবারও ব্যাপক হামলা ইসরায়েলের
রাফায় আবারও ব্যাপক হামলা ইসরায়েলের
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ