X
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০
বিষপানে দুই সন্তান হত্যা

শেষবারের মতো দুই সন্তানের মুখ মাকে দেখতে দেয়নি গ্রামবাসী

দিনাজপুর প্রতিনিধি
২৬ নভেম্বর ২০২২, ১৯:১৬আপডেট : ২৬ নভেম্বর ২০২২, ১৯:১৬

দিনাজপুরের বিরলে বাবার হাতে বিষপানে হত্যার শিকার দুই শিশুসন্তানের মুখ শেষবারের মতো মাকে দেখতে দেয়নি গ্রামবাসী। স্থানীয়দের বাধার মুখে  সন্তানদের খাটিয়ার কাছেও যেতে পারেননি এই মা।

শনিবার (২৬ নভেম্বর) বেলা ২টায় জানাজা শেষে উপজেলার কেন্দ্রীয় কবরস্থানে দুই শিশুকে দাফন করা হয়। তারা হলো—উপজেলার শংকরপুর ঘোড়ানী গ্রামের শরিফুল ইসলাম-কুলসুম দম্পতির বড় ছেলে রিমন (৭) ও ছোট ছেলে ইমরান (৩)। বাবা-মায়ের ঝগড়ার জেরে গত বৃহস্পতিবার রাতে শীতের পোশাক কিনে দেওয়ার কথা বলে দুই সন্তানকে বাড়ি থেকে নিয়ে বিষপানে হত্যা করেন বাবা শরিফুল।

পুলিশ জানায়, এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। ওই মামলায় শরিফুলকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

স্থানীয় সূত্র ও প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে দুই শিশুর মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে দাদার বাড়ি শংকরপুর ঘোড়ানী গ্রামে নেওয়া হয়। সেখানে হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। কান্নায় ভেঙে পড়েন দাদি আছিয়া খাতুন ও বাকরুদ্ধ হন দাদা রফিকুল ইসলাম। তাদের কান্না দেখে প্রতিবেশীরাও কাঁদেন। সেইসঙ্গে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা। 

প্রতিবেশীরা বলছেন, এ ঘটনায় বাবার পাশাপাশি মায়ের অপরাধ রয়েছে। বাবা-মায়ের ঝগড়ার কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে। এজন্য দুজনেরই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত।

আরও পড়ুন: বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত কক্ষে ২ শিশুসন্তানের লাশ, বাবা ‘পলাতক’

এদিকে, জানাজার আগে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে দুই শিশুর মা কুলসুম বানু মরদেহ দেখতে এলে প্রতিবেশীরা বাধা দেন। শেষবারের মতো সন্তানদের মুখ দেখতে চাইলেও সুযোগ দেননি তারা। বারবার অনুরোধ করলে প্রতিবেশীরা তার দিকে তেড়ে যান। এ সময় কুলসুমকে ঘরের ভেতরে যান প্রতিবেশী সাইফুল ইসলাম। পরে ঘরের দরজা-জানালা লাগিয়ে দেন তিনি।

দাদি আছিয়া খাতুনকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন প্রতিবেশীরা

এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে কুলসুম বানু সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলবেন না বলেও জানান সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘কথা বলার পরিস্থিতি নেই। কুলসুম সন্তানদের বাবার কাছে রেখে ঢাকায় চলে যাওয়ার পর তালাকের নোটিশ দেওয়ায় এ ঘটনা ঘটেছে। এজন্য স্থানীয়রা তার ওপর ক্ষুব্ধ।’ 

দুই শিশুর চাচা রাশেদুল ইসলাম আশিক বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই দুই ভাতিজাকে সন্তানের মতো দেখতাম। এ ঘটনায় আমার ভাই যেমন দায়ী, ভাইয়ের স্ত্রীও দায়ী। পুলিশ আমার ভাইকে গ্রেফতার করেছে, তার সাজা হোক। একইসঙ্গে কুলসুমেরও সাজা হোক—এটাই আমাদের চাওয়া।’ 

তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে শরিফুল ও কুলসুমের পারিবারিক কলহ চলছে। একপর্যায়ে কুলসুম ঢাকায় গিয়ে তালাকনামা পাঠিয়ে দেয়। শরিফুল সন্তানদের নিয়ে ঢাকায় গিয়েছিল স্ত্রীকে বোঝাতে। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। বরং সেখানে নির্যাতনের শিকার হয়। পরে সন্তানদের নিয়ে বাড়ি ফিরে আসে। এরপর শরিফুল ভেঙে পড়ে। শেষ পর্যন্ত সন্তানদের বিষপানে হত্যা করলো।’

প্রতিবেশী মো. ফিরোজ বলেন, ‘স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া-বিবাদের কথা শুনেছি আমরা। কিন্তু বিষয়টি এতদূর গড়াবে বুঝতে পারিনি। দুজনের ঝগড়ার কারণে দুই শিশুর প্রাণ গেলো। এ ঘটনায় দুজনের শাস্তি চাই।’

প্রতিবেশী সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘এ ঘটনায় জড়িতরা যাতে কোনোভাবেই ছাড় না পায়। তাদের কঠিন শাস্তির দাবি জানাই। সন্তানদের বাবার কাছে রেখে না গেলে এমন ঘটনা ঘটতো না। তালাক দেওয়ার জের ধরেই ঘটনার সূত্রপাত। এজন্য সন্তানদের মুখ দেখতে দেওয়া হয়নি তাকে।’

স্থানীয় বাসিন্দা আজাহার আলী বলেন, ‘এমন ঘটনার জন্য দুজনের শাস্তি হওয়া দরকার। তাদের যেন ফাঁসি হয়। এ ধরনের ঘটনা যাতে আর ঘটে।’

প্রতিবেশী মকসেদ আলী বলেন, ‘আমরা বাবা-মা দুজনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। যাতে পারিবারিক বিরোধে আর কোনও শিশু প্রাণ না হারায়।’

প্রতিবেশী মুক্তা পারভীন বলেন, ‘একজন বাবা তার সন্তানদের এভাবে হত্যা করবে কেউ কল্পনা করেনি। কোনও মা যেন তার সন্তানকে কখনও একা ফেলে না যায়। এ ঘটনায় দুজনেরই শাস্তি চাই।’

এ ঘটনায় বাবা-মা দুজনেরই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়েছেন প্রতিবেশীরা

দিনাজপুর সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ মোহাম্মদ জিন্নাহ আল মামুন বলেন, ‘দুই শিশুকে হত্যার ঘটনায় মা কুলসুম বানু মামলা করেছেন। মামলায় শরিফুল ইসলামকে আসামি করা হয়েছে। তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। মামলার তদন্তে যদি কুলসুমের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায় তাহলে তাকেও আইনের আওতায় আনা হবে।’

আরও পড়ুন: ‘মুই খাই না খাই দুই নাতিক মানুষ করিছু, তারা কই গেলো’

প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন ধরে শংকরপুর ঘোড়ানী গ্রামের শরিফুল ইসলামের সঙ্গে স্ত্রী কুলসুমের পারিবারিক কলহ চলছিল। বিষয়টি সমাধানের জন্য একাধিকবার সালিশ-বৈঠক হয়েছে। কিন্তু কোনও সমাধান হয়নি। কয়েকমাস আগে কুলসুম ঢাকায় পোশাক কারখানার কাজে যোগ দেন। দুই সন্তানকে স্বামীর কাছে রেখে যান। এরই মধ্যে স্বামীকে তালাক নোটিশ দেন কুলসুম। কয়েকদিন আগে তালাকের নোটিশ আসে শরিফুলের কাছে। এ নিয়ে মোবাইলে তাদের বাগবিতণ্ডা হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার রাতে শীতের পোশাক কিনে দেওয়ার কথা বলে দুই সন্তানকে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন শরিফুল। যাওয়ার সময় তাদের দাদি আছিয়া খাতুনকে বিষয়টি বলে যান। ওই সময় দাদি নিষেধ করলেও শোনেননি শরিফুল। ওই দিন রাত থেকে তাদের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। পরদিন সকালে দুই শিশু ভবানীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আছে বলে তাদের দাদিকে জানান শরিফুল। সেখানে গিয়ে দুই শিশুর মরদেহ দেখতে পান দাদি। বিষয়টি পুলিশকে জানালে বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত ঘর থেকে দুই শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

/এএম/
সম্পর্কিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
বিএসএফের গুলিতে নিহত যুবকের মরদেহ হস্তান্তর
শিশু অপহরণ করে নিঃসন্তান দম্পতির কাছে বিক্রি করতো চক্রটি
সর্বশেষ খবর
নদীতে মাছ ধরার সময় জেলেদের ওপর ডাকাতের হামলা
নদীতে মাছ ধরার সময় জেলেদের ওপর ডাকাতের হামলা
ক্রিমিয়া উপকূলে রুশ সামরিক উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত
ক্রিমিয়া উপকূলে রুশ সামরিক উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত
হোয়াইট হাউজের বিড়াল নিয়ে বই প্রকাশ করবেন মার্কিন ফার্স্টলেডি
হোয়াইট হাউজের বিড়াল নিয়ে বই প্রকাশ করবেন মার্কিন ফার্স্টলেডি
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
সর্বাধিক পঠিত
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
মন্ত্রীর অপেক্ষায় তরমুজ বিক্রিতে দেরি, ক্ষুব্ধ ক্রেতারা
মন্ত্রীর অপেক্ষায় তরমুজ বিক্রিতে দেরি, ক্ষুব্ধ ক্রেতারা
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!