X
মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪
১৬ বৈশাখ ১৪৩১
নারী দিবস বিশেষ

সিনেমায় নারীর সংগ্রাম ও বাস্তবতার চিত্র

কামরুল ইসলাম
কামরুল ইসলাম
০৮ মার্চ ২০২৪, ১০:১৬আপডেট : ০৮ মার্চ ২০২৪, ১৬:৪৯

প্রায় সত্তর বছর ধরে ঢাকায় সক্রিয়ভাবে সিনেমা নির্মিত হচ্ছে। স্বাধীনতার পর তো রীতিমতো জোয়ার এসেছে ঢালিউডে। হাজারো সিনেমা নির্মিত হয়েছে, অনেক নায়ক-নায়িকা খ্যাতি পেয়েছেন, বিপুল বাণিজ্য হয়েছে। কিন্তু এই দীর্ঘ সময়ে অন্যসব ইন্ডাস্ট্রির মতো ঢালিউডও বরাবরই থেকেছে পুরুষের নিয়ন্ত্রণে। যার ফলে নারীকেন্দ্রিক সিনেমার সংখ্যা একেবারে হাতেগোনা! এর মধ্যে যেসব ছবি দর্শকের হৃদয় ছুঁতে পেরেছে, অতিক্রম করেছে সময়ের গণ্ডি, সেগুলো সম্পর্কে টুকরো তথ্যে জেনে নেওয়া যাক...
 
রূপবান

বলা যায়, ঢাকায় নির্মিত প্রথম নারীকেন্দ্রিক ছবি এটি। সালাউদ্দিন নির্মিত এই ছবির নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন সুজাতা। নারীর ত্যাগ ও সংগ্রামের অনন্য উপাখ্যান তুলে ধরা হয়েছে এতে। লোককাহিনি নির্ভর ছবিটিতে আরও রয়েছেন মনসুর, চন্দনা, সিরাজুল ইসলাম, আনোয়ার হোসেন, ইনাম আহমেদ প্রমুখ। ১৯৬৫ সালে মুক্তি পাওয়া ছবিটি ওই সময়ে বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। সত্য সাহার সংগীত পরিচালনায় সৃষ্ট এই ছবির গানগুলো গোটা দেশে মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে গিয়েছিল।
 
সারেং বউ

‘ওরে নীল দরিয়া, আমায় দে রে দে ছাড়িয়া’-গানটি শোনেনি, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না দেশে। যেই ছবির জন্য এই গানের সৃষ্টি, সেটার নাম ‘সারেং বউ’। ১৯৭৮ সালে মুক্তি পাওয়া ছবিটি শহীদুল্লাহ কায়সারের উপন্যাস অবলম্বনে পরিচালনা করেছিলেন আবদুল্লাহ আল মামুন। এতে জুটি বেঁধে অভিনয় করেন ফারুক ও কবরী। ছবিতে নবিতন নামের এক গৃহবধূর ভূমিকায় দেখা যায় কবরীকে; যে তার স্বামী, সংসার ও নিজের প্রতি সৎ ও নিষ্ঠাবান থাকার জন্য নানা সংগ্রাম অতিক্রম করে।
 
গোলাপী এখন ট্রেনে

কিংবদন্তি নির্মাতা আমজাদ হোসেনের অনন্য সৃষ্টি এই ছবি। মুক্তি পেয়েছিল ১৯৭৮ সালে। ছবিতে অভিনয় করেছেন ববিতা, ফারুক, আনোয়ার হোসেন, রোজী সামাদ, আনোয়ারা, রওশন জামিল, এটিএম শামসুজ্জামানের মতো নন্দিত তারকারা। ছবিটি মস্কো ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে পর্যন্ত প্রদর্শিত হয়েছিল। তৎকালীন সমাজের বাস্তবতায় একজন খেটে খাওয়া নারীর অসামান্য সংগ্রামকে তুলে ধরা হয়েছে ছবিটিতে। শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রসহ মোট ১১টি বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিল এই ছবি। অনেকের মতে, এটিই ববিতার ক্যারিয়ারের সেরা চলচ্চিত্র। 

সূর্য দীঘল বাড়ী

ঢাকার চলচ্চিত্রে অসামান্য এক নির্মাণ এটি। আবু ইসহাকের কালজয়ী উপন্যাস অবলম্বনে এটি বানিয়েছেন মসিউদ্দিন শাকের ও শেখ নিয়ামত আলী। এই ছবিতে দেখানো হয়েছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রকোপে ১৯৫০ সালে যে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল, তাতে কোনও মতে প্রাণ বাঁচাতে সক্ষম হয়েছিল স্বামী পরিত্যক্ত জয়গুণ। সঙ্গে তার প্রথম সংসারের ছেলে ও দ্বিতীয় স্বামীর কন্যা এবং মৃত ভাইয়ের স্ত্রী-পুত্র। সবাইকে নিয়ে জয়গুণ ফিরে আসে গ্রামে আর এমন জমিতে ঘর তোলে, যেটাকে সবাই বলতো অপয়া ভিটা। দুর্ভিক্ষ, দারিদ্র্য, মাতৃত্ব সর্বোপরি এক নারীর জীবন সংগ্রামের চিত্র দেখানো হয়েছে ছবিটিতে। এতে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলেন ডলি আনোয়ার। এছাড়াও এ ছবিতে আছেন রওশন জামিল, আরিফুল হক, এটিএম শামসুজ্জামানসহ অনেকে। ১৯৭৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর মুক্তি পেয়েছিল ছবিটি। 

ভাত দে

আমজাদ হোসেনের আরও এক কালজয়ী নির্মাণ এই ছবি। সেই সঙ্গে কিংবদন্তি নায়িকা শাবানার অভিনয় দক্ষতার উৎকৃষ্ট নিদর্শন। ১৯৮৪ সালে মুক্তি পাওয়ার পর এই ছবি নয়টি শাখায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিল। ছবিতে এক গরিব বাউলের মেয়ে জরির ভূমিকায় অভিনয় করেছেন শাবানা। একদিন ভাতের জোগাড় করতে গিয়েই মারা যায় জরির বাবা। এরপর জরির অভাব-অনটনের জীবন আরও দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। প্রেম ও করুণ পরিণতি তাকে ঠেলে দেয় চরম দুরবস্থায়। ভাতের জন্য জরির অবর্ণনীয় কষ্ট আর করুণ পরিণতির চিত্র তুলে ধরা হয়েছে ছবিতে। এতে অনবদ্য অভিনয় করে শাবানা পেয়েছিলেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।
 
হাঙর নদী গ্রেনেড

মহান মুক্তিযুদ্ধে একজন মায়ের অসামান্য ত্যাগের গল্পে নির্মিত ছবি এটি। নির্মিত হয়েছে সেলিনা হোসেনের উপন্যাস অবলম্বনে। পরিচালনা করেছিলেন চাষী নজরুল ইসলাম। ছবির মূল চরিত্র বুড়ির ভূমিকায় আছেন সুচরিতা। দুরন্ত শৈশব পেরিয়ে আসা বুড়ির বিয়ে হয় তার চেয়ে দ্বিগুণ বয়স্ক গফুরের সঙ্গে। গফুরের আবার আগের সংসারের দুই পুত্র রয়েছে। এরপর বুড়ি নিজেও মা হয়। কিন্তু তার সন্তান বাক ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। মুক্তিযুদ্ধের সময় বীর যোদ্ধাদের বাঁচাতে সেই সন্তানকেই পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে তুলে দেয় বুড়ি। স্বাধীনতার জন্য এক মায়ের এমন ত্যাগের দৃশ্য অশ্রুসিক্ত করেছিল দর্শককে। ১৯৯৭ সালে মুক্তি পাওয়া ছবিটি চারটি বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিল। 

খায়রুন সুন্দরী

২০০৪ সালে দেশজুড়ে রীতিমতো ঝড় তুলেছিল এই ছবি। এর গান যেন বাতাসের সঙ্গে মিশে গিয়েছিল! এ কে সোহেল নির্মিত ছবিটির গল্প লোকজ ধাঁচের। এতে তুলে ধরা হয়েছে স্বামীর প্রতি এক গ্রামীণ বধূর ভালোবাসা ও বিশ্বাসের উপাখ্যান। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে একজন নারী কেমন বঞ্চিত হয়, তার চিত্রও উঠে এসেছে এখানে। ছবিটিতে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন মৌসুমী। এতে আরও আছেন ফেরদৌস, দিলদার, এটিএম শামসুজ্জামান প্রমুখ।
 
নিরন্তর

বাণিজ্যিক ছবির সফল নায়িকা শাবনূরের ক্যারিয়ারে অনন্য ছবি এটি। কিংবদন্তি কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ‘জনম জনম’ উপন্যাস অবলম্বনে ছবিটি বানিয়েছেন আবু সাইয়ীদ। এতে তিথি নামের এক তরুণীর জীবনের গল্প উঠে এসেছে। নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারে যার জন্ম, বাবা অন্ধ, ভাই বেকার। সংসারের পুরো দায়িত্ব তিথির ওপর। উপায় না পেয়ে পতিতাবৃত্তি বেছে নেয় তিথি। এক পর্যায়ে ভাইয়ের সুবাদে পরিবারে সচ্ছলতা এলে তিথি তার কাজ ছেড়ে দিতে চায়। কিন্তু অন্ধকার এই জগত ছাড়ার কোনও পথ খুঁজে পায় না সে। ছবিটিতে শাবনূরের সঙ্গে আরও আছেন ইলিয়াস কাঞ্চন, আমিরুল হক চৌধুরী, ডলি জহুর, লিটু আনাম প্রমুখ। ২০০৬ সালে মুক্তি পাওয়া ছবিটি ভারতের কেরালা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে বিশেষ জুরি পুরস্কার এবং গোয়ায় অনুষ্ঠিত ভারত আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ফিপ্রেসি পুরস্কার জিতেছিল। 

গেরিলা

মুক্তিযুদ্ধ ও নারী; এই দুইয়ের অনন্য নিদর্শন ছবিটি। নাসির উদ্দীন ইউসুফ নির্মিত এই ছবি জয়া আহসানের ক্যারিয়ারেও একটি মাইলফলক। এতে তিনি প্রধান চরিত্র বিলকিসের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। ঘটনাক্রমে মুক্তিযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে বিলকিস এবং এক পর্যায়ে বীরের মতো নিজের প্রাণ বিলিয়ে দেয়। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে অংশ নিয়েছিল ২০১১ সালে মুক্তি পাওয়া ছবিটি। এছাড়া জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে এটি ১০টি শাখায় পুরস্কৃত হয়েছিল।
 
অগ্নি

এটি নারীকেন্দ্রিক গল্পে গেলো দশকের সফলতম ছবি। এর নাম ভূমিকায় মাহিয়া মাহি অভিনয় করে বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন। ইফতেখার চৌধুরী পরিচালিত ছবিটি বক্স অফিসেও সাড়া পেয়েছিল দারুণ। ছবিতে তানিশা নামের এক ছদ্মবেশীর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন মাহি; যে নিজের বুদ্ধিমত্তা আর দুর্ধর্ষ অভিযানে অপরাধ জগতের রাঘব-বোয়ালদের হত্যা করে। ২০১৪ সালের ভালোবাসা দিবসে মুক্তি পেয়েছিল ছবিটি। এতে আরও আছেন আরিফিন শুভ, আলীরাজ, মিশা সওদাগর, ড্যানি সিডাক প্রমুখ।
   
ন ডরাই

সার্ফিং নিয়ে দেশের প্রথম ছবি বলা হয় এটিকে। মুক্তি পেয়েছে ২০১৯ সালে। এর মূল ভূমিকায় অভিনয় করেছেন সুনেরাহ বিনতে কামাল। আয়েশা নামের সেই তরুণী সামাজিক বাঁধা অতিক্রম করে নিজেকে সার্ফার হিসেবে গড়ে তোলে। ছবিতে আরও আছেন শরিফুল রাজ, সাঈদ বাবু, নাসির উদ্দিন খান প্রমুখ। শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রসহ ছয়টি বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছে ছবিটি।
 
রেহানা মরিয়ম নূর

সাম্প্রতিক সময়ের অন্যতম আলোচিত এই ছবি নির্মাণ করেছেন আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ। এর নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন আজমেরী হক বাঁধন। এটি দেশের ইতিহাসে প্রথম ছবি হিসেবে বিখ্যাত কান উৎসবের ৭৪তম আসরের ‘আঁ সার্তে রিগা’ প্রতিযোগিতা বিভাগে নির্বাচিত হয়েছিল। এছাড়া আরও কিছু উৎসবে ছবিটি পুরস্কার পেয়েছে। ছবিতে এক বেসরকারি কলেজের শিক্ষিকার পেশা ও ব্যক্তিগত জীবনের নানা দিক তুলে আনা হয়েছে। ছবিটি মুক্তি পেয়েছে ২০২১ সালে।

/এমএম/
টাইমলাইন: নারী দিবস
০৮ মার্চ ২০২৪, ১২:০০
০৮ মার্চ ২০২৪, ১০:১৬
সিনেমায় নারীর সংগ্রাম ও বাস্তবতার চিত্র
সম্পর্কিত
নারীদের সম-অধিকার ও সমসুযোগ নিশ্চিতে বিনিয়োগ করতে হবে: স্পিকার
নারীদের সম-অধিকার ও সমসুযোগ নিশ্চিতে বিনিয়োগ করতে হবে: স্পিকার
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’ পালিত
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’ পালিত
আইইউবিতে ‘নেতৃত্বে নারী’ বিষয়ক আলোচনা অনুষ্ঠান
আইইউবিতে ‘নেতৃত্বে নারী’ বিষয়ক আলোচনা অনুষ্ঠান
সোনালী ব্যাংকে নারী দিবস উদযাপন
সোনালী ব্যাংকে নারী দিবস উদযাপন
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
কানাডার স্টেডিয়ামে রেকর্ড গড়লেন দিলজিৎ
কানাডার স্টেডিয়ামে রেকর্ড গড়লেন দিলজিৎ
আট গল্পের প্রদর্শনী ‘অল দ্যাট ওয়েদারস’
আট গল্পের প্রদর্শনী ‘অল দ্যাট ওয়েদারস’
অপু-বুবলীর ‘কথাযুদ্ধ’ চলমান, মাঝে শাকিবের বিয়ে গুঞ্জন!
অপু-বুবলীর ‘কথাযুদ্ধ’ চলমান, মাঝে শাকিবের বিয়ে গুঞ্জন!
ইরফান খান: জীবনের মোড় ঘুরেছিল ২০০ রুপির অভাবে!
প্রয়াণ দিনে স্মরণইরফান খান: জীবনের মোড় ঘুরেছিল ২০০ রুপির অভাবে!
চার বছরে আট ফ্লপ, আসছে আরও এক হালি!
চার বছরে আট ফ্লপ, আসছে আরও এক হালি!