ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে বেরিয়ে আসলে ব্রিটেনের ‘ঐক্য ভেঙে পড়তে পারে’ বলে আশঙ্কা করেছেন দুই সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার জন মেজর এবং টনি ব্লেয়ার। উত্তর আয়ারল্যান্ডে ব্রেক্সিট বা ব্রিটেনের ইইউ থেকে বেরিয়ে আসার বিপক্ষে প্রচারণা চালানোর সময় তারা এসব কথা বলেন।
ওই দুই সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভোটাররা ইইউ ত্যাগের পক্ষে ভোট দিলে, স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতার বিষয়টি আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারে। ঝুঁকিতে পড়তে পারে উত্তর আয়ারল্যান্ডের ভবিষ্যতও। আর এতে বর্তমান স্থিতিশীলতা হুমকির সম্মুখীন হবে।’ তবে উত্তর আয়ারল্যান্ডের সেক্রেটারি তেরেসা ভিলিয়ার্স অবশ্য এমন সম্ভাবনাকে নাকচ করে দিয়েছেন।
জন মেজর বলেন, ‘ইইউ ত্যাগের ভোটে আরেকটি স্বাধীনতার গণভোটের মারাত্মক ঝুঁকি আছে। ইইউ ত্যাগের ভোটে উত্তর আয়ারল্যান্ডে বর্তমান স্থিতিশীলতার মূলে যে জটিল সাংবিধানিক সিদ্ধান্ত আছে, তাও অস্থিতিশীল হয়ে পড়বে। আর এ পরিস্থিতি তৈরি হলে তা হবে এক ঐতিহাসিক ভুল।’
ব্লেয়ার বলেন, ‘উত্তর আয়ারল্যান্ডের সমৃদ্ধি এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনায় ইইউ ত্যাগের ভোটের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।’
ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে বরাবরই জনগণকে সতর্ক করে আসছেন। তিনি বলেছেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে যাওয়া মানে অন্ধকারে ঝাঁপ দেওয়া।’
ইইউ-তে থাকা না থাকার প্রশ্নে ২৩ জুনে যুক্তরাজ্যে গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। সেই দিনটিকে ইউরোপের ইতিহাসের বাঁক বলেও মনে করা হচ্ছে।
ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদদের অনেকেই বিশ্বাস করেন যে ইইউ থেকে বের হয়ে আসাটা যুক্তরাজ্যের অর্থনীতির জন্য খারাপ হবে। ১শ’ জনেরও বেশি প্রভাবশালী চিন্তাবিদের ওপর ফিনান্সিয়্যাল টাইমসের চালানো জরিপে দেখা গেছে ব্রেক্সিট হলে ২০১৬ সালে যুক্তরাজ্যের প্রবৃদ্ধি বাড়বে না। জরিপে অংশ নেওয়া প্রায় তিন-চতুর্থাংশ অর্থনীতিবিদ মনে করেন, ইইউ থেকে বের হয়ে আসলে বহির্বিশ্বে ব্রিটেনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে। মাত্র ৮ শতাংশ মনে করেন ইইউ থেকে আলাদা হলে ব্রিটেন লাভবান হবে। ২০ শতাংশেরও কম অর্থনীতিবিদ মনে করছেন ইইউ ছাড়লে খুব সামান্যই পরিবর্তন ঘটবে।
ইউরোপীয় ই্উনিয়নে যুক্তরাজ্যের থাকা না থাকার প্রশ্নে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া গণভোটকে সামনে রেখে চলছে ‘ভোট লিভ’ এবং ‘কনজারভেটিভস ফর ব্রিটেন’ নামে আলাদা দুটি ক্যাম্পেইন। ‘ভোট লিভ’ ক্যাম্পেইনটি চালাচ্ছে যুক্তরাজ্যের স্বাধীন ধারার বেশ কয়েকটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান। আর ‘কনজারভেটিভস ফর ব্রিটেন’ ক্যাম্পেইনটি চালাচ্ছেন ইইউবিরোধী রক্ষণশীল নেতারা, যারা ক্যামেরনের দলেরই লোক। ক্যামেরন সরকারের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকার পক্ষে সম্মতি জানালেও অনেকেই আবার ক্যামেরনের বিপক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন। লন্ডনের মেয়র বরিস জনসনও চান যুক্তরাজ্য ইইউ থেকে বেরিয়ে আসুক। শেষ পর্যন্ত কোন পক্ষের জয় হয়, সে জন্য অপেক্ষা করতে হবে ২৩ জুন পর্যন্ত।
সূত্র: বিবিসি।
আরও পড়ুন:
তিন কোটিরও বেশি টুইটার অ্যাকাউন্ট হ্যাকড!
/এসএ/