যুক্তরাষ্ট্রের পোর্টল্যান্ডের সংঘর্ষের ঘটনায় প্রকাশ্যেই অভিযুক্তদের পক্ষ নিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত শনিবার পোর্টল্যান্ডে ট্রাম্প সমর্থকদের সঙ্গে বর্ণবাদবিরোধী 'ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার' আন্দোলনকারীদের ওই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় একজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তবে ট্রাম্পের দাবি, সেদিন তার সমর্থকদের কার্যকলাপ ছিল রক্ষণাত্মক বা আত্মরক্ষামূলক। সোমবার হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে নিজের এমন মনোভাবের কথা জানান তিনি।
ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মেয়র ও গভর্নর রয়েছে এমন অঞ্চলগুলোতে সহিংসতার জন্য আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেন ও তার মিত্রদের দায়ী করেন ট্রাম্প।
সিএনএন-র একজন সাংবাদিক ট্রাম্পের কাছে জানতে চান, পোর্টল্যান্ডের ওই সহিংসতায় যুক্ত নিজের সমর্থকদের কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানাবেন কিনা?
উত্তরে ট্রাম্প বলেন, ঠিক আছে, আমি বুঝতে পারছি সেখানে আমার বিপুল সংখ্যক সমর্থক ছিল, তবে এটি ছিল শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ।
এ সময় কৃষ্ণাঙ্গদের সহিংসতার ঘটনা এড়িয়ে যাওয়ার জন্য সংবাদমাধ্যমগুলোর সমালোচনা করেন ট্রাম্প।
অন্য একজন সাংবাদিক ট্রাম্পের কাছে জানতে চান, তিনি কেনোসায় গুলিবর্ষণের নিন্দা করবেন কি না, যেখানে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ইতোপূর্ব ট্রাম্পের সমাবেশে দেখা গেছে। ১৭ বছরের ওই ব্যক্তি অন্তত তিনজনকে গুলিবর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত।
উত্তরে ট্রাম্প বলেন, আমরা পুরো বিষয়টি দেখছি। এটি তদন্তাধীন রয়েছে।
এর আগে নিজের শহরে 'মৃত্যু এবং ধ্বংসলীলা' চালাতে দেওয়ার জন্য পোর্টল্যান্ডের ডেমোক্র্যাটিক মেয়র টেড হোয়েলার-এর সমালোচনার করেন ট্রাম্প। তবে ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জো বাইডেন বলেছেন, 'বেপরোয়াভাবে সহিংসতায় উস্কানি দিয়েছেন' ট্রাম্প।
শনিবার ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটারস আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ট্রাম্পপন্থীদের মিছিলের সংঘর্ষ হলে গুলিতে একজন নিহত হয়। এরপরই নিজ সমর্থকদের পক্ষ নিয়ে বামপন্থী ও ডেমোক্র্যাটদের দায়ী করতে শুরু করেন ট্রাম্প।
পুলিশের গুলিতে আফ্রিকান-আমেরিকান জর্জ ফ্লুয়েডের মৃত্যুর পর থেকে পুলিশের নিষ্ঠুরতা এবং বর্ণবৈষম্যের প্রতিবাদে বিক্ষোভের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র হয়ে উঠেছে পোর্টল্যান্ড। মিনিয়াপোলিসে গত ২৫শে জর্জ ফ্লুয়েড নিহত হওয়ার ঘটনায় দেশে বিদেশে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়।
সামাজিক মাধ্যমে এ নিয়ে ব্যাপক লেখালেখির পর শহরে পাল্টা জমায়েত করতে না আসার জন্য সতর্ক করে দিয়েছেন মেয়র হোয়েলার। টুইটারে দেওয়া এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘আপনারা যারা আজ সকালে টুইটারে লেখালেখি করছেন যে, আপনারা প্রতিশোধ নিতে পোর্টল্যান্ড আসবেন, আমি আপনাদের আহ্বান জানাচ্ছি যে, দূরে থাকুন।’
ট্রাম্পের সমালোচনার পাল্টা জবাব দিয়ে তিনি বলছেন, ‘প্রেসিডেন্টই বরং বিদ্বেষ আর বিভেদ তৈরি করছেন।’
রবিবার বেশ কয়েকটি টুইট বার্তায় ট্রাম্প বলেছেন, 'একজন বোকা মেয়রকে নিয়ে পোর্টল্যান্ড কখনোই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারবে না।’ তিনি শহরে ফেডারেল ফোর্স পাঠানোরও পরামর্শ দিয়েছেন।
বাইডেনকে অভিযুক্ত করে ট্রাম্প বলেছেন, তিনি নেতৃত্ব দিতে অনাগ্রহী। পরে এক বিবৃতিতে জো বাইডেন বলেন, ‘ট্রাম্প হয়তো মনে করেন, আইনশৃঙ্খলা নিয়ে টুইট করলে তার অবস্থান শক্ত হবে। সংঘাত থেকে সমর্থকদের বিরত রাখতে তার ব্যর্থতাই বলে দেয় যে, তিনি আসলে কতটা দুর্বল।’
ডেমোক্র্যাটরা বলছে, একদিকে ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সির আওতায় সহিংসতা ঘটছে। অন্যদিকে নিজের উসকানিমূলক বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছেন।