ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ বন্ধের ফলে এবার স্লোভাকিয়ায় থাকা ইউক্রেনীয় শরণার্থীরা বিপদের ঝুঁকিতে পড়তে যাচ্ছেন। বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) স্লোভাকিয়ায় থাকা এক লাখ ৩০ হাজারের বেশি ইউক্রেনীয় শরণার্থীর জন্য আর্থিক সহায়তা কমানোর হুমকি দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী রবার্ট ফিকো। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
কিয়েভের পদক্ষেপকে নাশকতামূলক বলে নিন্দা জানিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ইউক্রেনে বিদ্যুৎ রফতানি বন্ধ ও স্লোভাকিয়ায় আশ্রয় নেওয়া ইউক্রেনীয়দের আর্থিক সহায়তা কমিয়ে আনার প্রস্তাব জানাবেন তিনি।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৬৮ লাখ ১৪ হাজার ইউক্রেনীয় বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে শরণার্থী হিসেবে জীবনযাপন করছেন। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর এর গত মাসের হিসাব অনুযায়ী, স্লোভাকিয়াতে তাদের মধ্যে অন্তত এক লাখ ৩০ হাজার ৫৩০ জন শরণার্থী অবস্থান করছেন।
রাশিয়ার প্রাকৃতিক গ্যাস দীর্ঘদিন ধরেই ইউক্রেনের পাইপলাইন হয়ে মধ্য ইউরোপে সরবরাহ করা হচ্ছিল। চুক্তি নবায়নে অস্বীকৃতি জানিয়ে গত পরশু (১ জানুয়ারি) থেকে এই পাইপলাইন বন্ধ করে দেয় কিয়েভ।
এই সরবরাহ ব্যবস্থার প্রধান প্রবেশদ্বার ছিল স্লোভাকিয়া। বর্তমান পরিস্থিতিতে কয়েক কোটি ইউরো আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে তারা।
ফিকো দাবি করেছেন, তারা ইতিমধ্যে বিকল্প ব্যবস্থা করে ফেলেছেন। ফলে, স্লোভাকিয়া গ্যাস সংকটে পড়তে যাচ্ছে না।
তবে তিনি অভিযোগ করেছেন, জেলেনস্কির সিদ্ধান্তের কারণে গ্যাস সরবরাহ ব্যবস্থায় যুক্ত থাকা অন্যান্য দেশ থেকে ট্রানজিট ফি আকারে পেয়ে আসা অর্থ থেকে বঞ্চিত হবে স্লোভাকিয়া। এতে তাদের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ হবে প্রায় ৫১ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলার।
তিনি আরও বলেছেন, ইউক্রেনে বিদ্যুৎ রফতানি বন্ধ ও ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের জন্য আর্থিক সহায়তা কমানোর বিষয়ে কথা বলতে তার দল প্রস্তুত। কেবল সরবরাহ চুক্তি নবায়ন অথবা তাদের আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে দিলেই তিনি এই অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিতে রাজি আছেন।
রাশিয়াকে অর্থায়ন ও ইউক্রেনকে দুর্বল করে পুতিনকে সহায়তা করার জন্য ফিকোকে দায়ী করে গত মাসে একটি বক্তব্য দিয়েছিলেন জেলেনস্কি। তিনি বলেছিলেন, রাশিয়ার ইচ্ছা মোতাবেক ইউক্রেনীয়দের ভোগান্তি বাড়াতে স্লোভাকিয়াকেও এই যুদ্ধে জড়িয়ে ফেলেছেন ফিকো।
স্লোভাকিয়ার বিদ্যুৎ রফতানি বন্ধের হুমকির পরেই অবশ্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে পোল্যান্ড। স্লোভাকিয়া তেমন কোনও পদক্ষেপ নিলে প্রয়োজনীয় সমর্থন দিয়ে পাশে থাকার কথা দিয়েছে তারা।
গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে রাশিয়াকে আরও কাবু করা গেছে বলে দাবি করেছে পোল্যান্ড। এদিকে, ইউরোপীয় কমিশনের দাবি, ইইউভুক্ত বেশিরভাগ দেশ পরিস্থিতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারবে।
ইইউ বহির্ভুত দেশ মলদোভা ইতোমধ্যে সংকটে পড়ে গেছে।
কৃষ্ণসাগরের টার্কস্ট্রিম পাইপলাইন দিয়ে হাঙ্গেরি, তুরস্ক ও সার্বিয়াতে এখনও গ্যাস সরবরাহ করতে পারবে রাশিয়া।