মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কর কমানো সংক্রান্ত বিল অনুমোদন করেছে কংগ্রেশনাল কমিটি। প্রস্তাবিত বিল নিয়ে রিপাবলিকান আইনপ্রণেতাদের দীর্ঘদিনের মতবিরোধের পর রবিবারের (১৮ মে) পার্লামেন্টারি বৈঠকে এটি অনুমোদিত হয়। এই প্রস্তাব পাস হলে ঝুঁকিতে থাকবেন নিম্ন আয়ের মার্কিনিরা। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
রবিবার রাতে আয়োজিত বৈঠকে কট্টরপন্থী চার রিপাবলিকান নেতা বিলের পক্ষে মত দিয়েছেন। অথচ শুক্রবার তারাই বাজেট কমিটির বৈঠকে প্রস্তাবটি আটকে দেন।সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বরাতে রয়টার্স জানিয়েছে, ট্রাম্প প্রস্তাবিত বিল অনুমোদনের পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় ব্যয় আরও কমানোর জন্য জোর দিয়েছেন তারা।
ওই চার আইনপ্রণেতার একজন সাংবাদিকদের বলেছেন, আমরা অনেকটা অগ্রগতি দেখছি, তবে সেটা মোটেও যথেষ্ট নয়।
আগের মেয়াদে ক্ষমতায় এসেও কর নিয়ে প্রায় তোলপাড় তোলা এক বিল উত্থাপন করেছিলেন ট্রাম্প। ২০১৭ সালের ওই বিলের সম্প্রসারিত রূপ হচ্ছে এবারের প্রস্তাবনা। ট্রাম্পের বাজেট পরিকল্পনায় কর হ্রাসের পাশাপাশি প্রতিরক্ষা খাত, সীমান্ত প্রহরা এবং অভিবাসন বিতাড়নে তহবিল বৃদ্ধি উল্লেখযোগ্য ক্ষেত্র।
নতুন প্রস্তাবনায় কট্টরপন্থিরা আরও চাইছেন, ডেমোক্র্যাটদের চালু করা মেডিকেইড হেলথকেয়ারে তহবিল সংকোচন এবং গ্রিন ট্যাক্স ক্রেডিট পুরোপুরি রহিতকরণে যেন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
নিম্ন আয়ের মার্কিনিদের জন্য স্বাস্থ্যসেবামূলক কর্মসূচি হচ্ছে মেডিকেইড। আর গ্রিন ট্যাক্সের আওতায় পরিবেশবান্ধব ব্যবসার ক্ষেত্রে কর মওকুফের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কট্টরপন্থী রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা রালফ নরম্যান বলেন, রিপাবলিকান নেতারা মেডিকেইড সংস্কারের আলোচনা করছেন। এছাড়া, শারীরিকভাবে সক্ষম নাগরিকদের জন্য রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা সহায়তা তহবিলে আরও বড় আকারের সংকোচন চান তিনি।
পার্লামেন্টে রিপাবলিকানরা ২১৩ ভোটের বিপরীতে ২২০ ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছেন। তবে কর কর্তনের খরচ মেটাতে ব্যয় কতটা কমানো যায় সেটা নিয়ে তারা বিভক্ত।
এদিকে, মেডিকেইড ও দরিদ্র মার্কিনিদের জন্য পুষ্টি সহায়তা কর্মসূচিতে ব্যাপক কাটছাঁটে আপত্তি জানিয়েছেন মধ্যপন্থি রিপাবলিকানরা। সিনেট ও হাউজের মধ্যপন্থি রিপাবলিকানরা বলছেন, এই পদক্ষেপে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে সেই ভোটাররা, যারা গত নভেম্বরে ট্রাম্পকে গদিতে বসিয়েছেন। ২০২৬ সালে কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য এই নিম্ন আয়ের জনগণেরই সমর্থনের প্রয়োজন হবে।
নতুন প্রস্তাবনা অনুযায়ী, প্রায় ৮৬ লাখ নিম্ন আয়ের মানুষ সরকারি কর্মসূচির সুবিধা বঞ্চিত হবেন। তবে কট্টরপন্থিদের দাবি, মার্কিন অর্থনীতির বেহাল দশার সামনে এটা কোনও সমস্যাই নয়।
নরম্যান বলেছেন, আমাদের দেশের অর্থনীতি ঋণ নিয়ে মারাত্মক সমস্যায় রয়েছে।
প্রস্তাবিত বিলের বিষয়ে সতর্ক করে নির্দলীয় বিশ্লেষকরা বলেছেন, প্রস্তাবনা অনুযায়ী কর কমানো হলে আগামী এক দশকে মার্কিন ঋণের বোঝা তিন থেকে পাঁচ ট্রিলিয়ন ডলার বৃদ্ধি পেতে পারে। ইতোমধ্যেই প্রায় ৩৬ দশমিক ৬ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণের ভারে ন্যুব্জ হয়ে আছে মার্কিন সরকার।
শুক্রবার মার্কিন ক্রেডিট রেটিং হ্রাস করেছে আন্তর্জাতিক আর্থিক পরিষেবা প্রতিষ্ঠান মুডিস। সংস্থাটি বলেছে, মার্কিন ঋণ যে হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে, ২০৩৫ সাল নাগাদ সেটা জিডিপির ১৩৫ শতাংশে পৌঁছে যেতে পারে।
কানেকটিকাটের ডেমোক্র্যাটিক মার্কিন সিনেটর ক্রিস মারফি বলেছেন, ক্রেডিট রেটিং হ্রাস মার্কিনিদের জন্য সমস্যা তৈরি করেছে। এটি একটি বড় ব্যাপার। এর অর্থ হল আমরা সম্ভবত মন্দার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। এই লোকগুলো বেপরোয়াভাবে অর্থনীতি পরিচালনা করছে।