ইরানি নারীদের হিজাব পরা বাধ্যতামূলক করতে একটি কঠোর আইন প্রণয়ন করতে যাচ্ছে দেশটির সরকার। আইনটির খসড়া অনুসারে, হিজাব না পরলে ১০ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে ইরানি নারীদের। কঠোর এই আইনটি কর্তৃপক্ষের চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এই আইনে হিজাব না নারীদের পরিচালিত ব্যবসা-বাণিজ্যও বন্ধ করার বিধান রাখা হয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এ খবর জানিয়েছে।
একজন ইরানি মানবাধিকার আইনজীবী হোসেইন রাইসি বলেন, হিজাব আইনের খসড়ায় শাস্তি ১০ বছর করার প্রস্তাব করা হয়েছে। যা হত্যা ও মাদক পাচারের মতো গুরুতর অপরাধের জন্য প্রযোজ্য। এটি একটি অযৌক্তিক আইন।
খসড়া আইনে শাস্তি হিসেবে ৬০টির বেশি বেত্রাঘাত, মোটা অঙ্কের জরিমানাসহ কারাদণ্ডের কথা বলা হয়েছে। এই আইন ‘অনুপযুক্ত পোশাক’ পরা নারীদের ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ করাসহ পরিণতি ভোগ করতে হবে।
একজন ইরানি সাংবাদিক এলনাজ (ছদ্মনাম) বলেন, সরকার বলছে নতুন আইনে হিজাব না পরলে ১০ বছর জেলে থাকতে হবে। কিন্তু এই আইন অমান্য করলে কী হবে? মৃত্যুদণ্ড?
গত বছর সেপ্টেম্বরে কঠোর পোশাকবিধি অমান্য করায় গ্রেফতার করা হয় মাহশা আমিনি নামের কুর্দি তরুনীকে। গ্রেফতারের পর নৈতিকতা পুলিশের হেফাজতে অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুর পর থেকে দেশটির পোশাকবিধির বিরোধিতা ও হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে ইরানে ছড়িয়ে পড়ে বিক্ষোভ। প্রতিবাদকারীরা সরকারের রক্ষণশীল পোশাকবিধির বিরোধিতা করেন। প্রকাশ্যে হিজাব খুলে আগুনে পোড়াতে থাকেন। সরকার কঠোরভাবে এই বিক্ষোভ দমন করে। কয়েক হাজার বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করা হয়। বিক্ষোভকালে শতাধিক নিহত হয়েছেন।
নৈতিকতা পুলিশের নজরদারি বাড়ানোর পর এই খসড়া আইনটি প্রস্তাব করা হলো। বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল, পার্ক ও কর্মক্ষেত্রে ‘লিঙ্গ বৈষম্য’ বাড়াবে। জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল-নিযুক্ত বিশেষজ্ঞদের একটি গ্রুপ বলেছে, এই আইন নারী ও মেয়েদেরকে সম্পূর্ণভাবে ঘর বন্দি করে রাখার প্রচেষ্টা।
তেহরানের একজন শিক্ষার্থী ফারাহ (ছদ্মনাম) বলেন, ধীরে ধীরে নারীদের অধিকার খর্ব করার দিকে এগোচ্ছে ইরান সরকার। তারা সমাজ থেকে নারীদেরকে মুছে ফেলতে চায়।
ইরানের মানবাধিকার কর্মী সংস্থা (এইচআরএ) বলেছে, নতুন আইনটি ইরানের গার্ডিয়ান কাউন্সিল দ্বারা পর্যালোচনা করা হচ্ছে। এটি ১২ জন পুরুষের সমন্বয়ে গঠিত একটি কাউন্সিল। এর প্রধান হিসেবে রয়েছেন ৯৭ বছর বয়সী আলেম আহমদ জান্নাতি। ১৯৮৮ সাল থেকে এর সভাপতি তিনি।