X
রবিবার, ২৬ মে ২০২৪
১২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

জাপানকে বদলে দিতে পারে আবে হত্যাকাণ্ড

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
০৮ জুলাই ২০২২, ১৮:৪৬আপডেট : ০৮ জুলাই ২০২২, ১৮:৪৬

জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহতের খবর ছড়িয়ে পড়তে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন: জাপানে কীভাবে এমন ঘটনা ঘটতে পারে। জাপানে বন্দুক সহিংসতার ঘটনা খুব বিরল এবং রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের কথা খুব একটা শোনা যায় না। মূলত দেশটির কঠোর অস্ত্র আইন থাকার পরও এমন হত্যাকাণ্ড অনেককেই হতবাক করেছে।

জাপানে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকা নেতা আবে। বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী না থাকলেও জাপানে এখনও তিনি একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। গত তিন দশকের মধ্যে দেশটির সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য নেতাও।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক মন্তব্য প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, জাপানের মানুষ সহিংস অপরাধের কথা প্রায় চিন্তাই করেন না। যদিও দেশটিতে ইয়াকুজার মতো কুখ্যাত সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র রয়েছে। কিন্তু এদের সংস্পর্শে আসতে চায় না খুব বেশি সংখ্যক মানুষ। এমনকি এই চক্রও আগ্নেয়াস্ত্র থেকে দূরে রাখে নিজেদের। কারণ অবৈধ অস্ত্র বহনে কঠোর সাজা ভোগ করতে হয়।

জাপানে আগ্নেয়াস্ত্রের মালিকানা পাওয়া খুব কঠিন। আগ্নেয়াস্ত্রের মালিকানা পেতে হলে কোনও অপরাধ করার তথ্য থাকা যাবে না, বাধ্যতামূলক প্রশিক্ষণ নিতে হয়, মানসিক পরীক্ষা এবং নিবিড় তথ্য যাচাই শেষে কেবল আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স পাওয়া যায়। ফলে দেশটিতে বন্দুক সহিংসতা কার্যত নেই। প্রতি বছর ১০টিরও কম বন্দুক সংশ্লিষ্ট মৃত্যু হয় জাপানে। ২০১৭ সালে এই সংখ্যা ছিল মাত্র তিনটি।

জাপানের সংবাদমাধ্যমের খবরে উল্লেখ করা হয়েছে, আবের সন্দেহভাজন হত্যাকারীর বয়স ৪১ বছর। তিনি দেশটির নৌবাহিনীতে তিন বছর কর্মরত ছিলেন। 

নিবিড় পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, আবে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত বন্দুকটি আগ্রহ উদ্দীপক। হামলার পর হামলাকারীর মাটিতে পড়ে যাওয়া একটি ছবি প্রকাশ পেয়েছে। এতে একটি অস্ত্রও দেখা গেছে। দৃশ্যত মনে হয়েছে এটি বাড়িতে বানানো। দুটি স্টিলের পাইপ টেপ দিয়ে আটকানো এবং হাতে তৈরি ট্রিগার যুক্ত। মনে হয়েছে, ইন্টারনেট থেকে ধারণা নিয়ে এটি তৈরি করা হয়েছে।
ফলে এটা ইচ্ছাকৃত রাজনৈতিক হামলা নাকি বিখ্যাত মানুষকে গুলি করে বিখ্যাত হতে চাওয়া কারও কোনও আবেগী কাজ তা নিয়ে সন্দেহ থেকে গেছে।

জাপানে রাজনৈতিক গুপ্তহত্যার ইতিহাস একেবারে নেই–এমনটি নয়। সবচেয়ে বিখ্যাত হত্যাকাণ্ড ঘটে ১৯৬০ সালে। ওই বছর জাপানের সোশালিস্ট পার্টির নেতা ইনেজিরো আসানুমার পেটে সামুরাই তলোয়ার চালিয়ে দেয় এক ডানপন্থী উগ্রবাদী। এখনও জাপানে ডানপন্থী উগ্রবাদী রয়েছে। তবে ডানপন্থী জাতীয়তাবাদী আবে তাদের লক্ষ্যবস্তু হবেন এটা অনেকেই ধারণা করতে পারছেন না।

গত কয়েক বছরে জাপানে আরেক ধরনের অপরাধ সাধারণ ঘটনা হয়ে উঠতে দেখা গেছে। শান্ত, একাকি পুরুষকে কারও বিরুদ্ধে কিংবা কোনও কিছুর বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে।

২০১৯ সালে এক পুরুষ কিয়োটোর একটি জনপ্রিয় অ্যানিমেশন স্টুডিও ভবনে আগুন ধরিয়ে দিলে ৩৬ জন মারা যায়। ওই পুরুষ পুলিশকে জানায় স্টুডিওর বিরুদ্ধে তার ক্ষোভ ছিল কারণ তার ‘কাজ কেড়ে নেওয়া হয়েছিল’।

২০০৮ সালে আরেক ঘটনায় এক হতাশ তরুণ টোকিওর আখিবারা জেলায় দোকানের ক্রেতাদের ওপর ট্রাক চালিয়ে দিয়ে বের হয়ে পথচারীদের ছুরিকাঘাত করতে থাকে। নিহত হয় সাতজন। হামলা চালানোর আগে ওই হামলাকারী অনলাইনে একটি বার্তা পোস্ট করে লেখে, ‘আমি আখিবারায় মানুষ মারবো’ আর ‘আমার একটাও বন্ধু নেই, আমাকে অবজ্ঞা করা হয় কারণ আমি কুৎসিত। আমি আবর্জনা থেকেও খারাপ’।

আবের হত্যাকারী কোন ধরনের তা অবশ্য এখনও স্পষ্ট নয়। তবে মনে করা হচ্ছে, এই হত্যাকাণ্ড নিশ্চিতভাবে জাপানকে বদলে দেবে।

নিরাপদ দেশ হলেও জাপানে নিরাপত্তা বেশ শিথিল। নির্বাচনি প্রচারণায় রাজনীতিবিদরা আক্ষরিকভাবে রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে ভাষণ দেন, মানুষের সঙ্গে হাত মেলান। এ কারণেই আবের হামলাকারী কাছাকাছি যাওয়ার সুযোগ পেয়েছে এবং অস্ত্র ব্যবহার করেছে। 
‘এই বাস্তবতা আজকের পর থেকে নিশ্চিতভাবে বদলে যাবে’ বলে বিবিসির মন্তব্য প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। 

/জেজে/এএ/
সম্পর্কিত
দিল্লির শিশু হাসপাতালে আগুন, সাত নবজাতকের মৃত্যু
রাশিয়া ও ইউক্রেনে পাল্টাপাল্টি হামলায় নিহত ১০
ভারতের রাজকোটে খেলার স্থানে আগুন, নিহত ৩২
সর্বশেষ খবর
রাজধানীতে গ্রেফতার ২২
রাজধানীতে গ্রেফতার ২২
দিল্লির শিশু হাসপাতালে আগুন, সাত নবজাতকের মৃত্যু
দিল্লির শিশু হাসপাতালে আগুন, সাত নবজাতকের মৃত্যু
তরুণদের বন্যপ্রাণীর ক্ষতি না করার শপথ করালেন প্রধান বন সংরক্ষক
তরুণদের বন্যপ্রাণীর ক্ষতি না করার শপথ করালেন প্রধান বন সংরক্ষক
অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে মোংলায় ট্রলারডুবি
অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে মোংলায় ট্রলারডুবি
সর্বাধিক পঠিত
ব্যক্তি পর্যায়ের কর হার বাড়বে
ব্যক্তি পর্যায়ের কর হার বাড়বে
‘তুফান’র গানে প্রীতম, আছেন পর্দায়ও!
‘তুফান’র গানে প্রীতম, আছেন পর্দায়ও!
এমপি আনার হত্যা: কে এই সিলিস্তা রহমান?
এমপি আনার হত্যা: কে এই সিলিস্তা রহমান?
সর্বজনীন পেনশন স্কিমে যুক্ত হলেন কেএসআরএমের ১ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী
সর্বজনীন পেনশন স্কিমে যুক্ত হলেন কেএসআরএমের ১ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী
রঙমিস্ত্রি থেকে যেভাবে এমপি আনার হত্যায় জড়ায় জিহাদ
রঙমিস্ত্রি থেকে যেভাবে এমপি আনার হত্যায় জড়ায় জিহাদ