গাজায় ইসরায়েলের ‘ক্ষুধা ও গণবিনাশ যুদ্ধ’ চলতে থাকলে যুদ্ধবিরতির আলোচনা অর্থহীন বলে মন্তব্য করেছে হামাস। ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গোষ্ঠীটির জ্যেষ্ঠ নেতা বাসেম নাইম এ কথা জানান। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ খবর জানিয়েছে।
মঙ্গলবার এএফপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নাইম বলেন, যতক্ষণ গাজা উপত্যকায় এই যুদ্ধ, ক্ষুধা ও পিপাসার অপরাধ চলতে থাকবে, ততক্ষণ যুদ্ধবিরতির আলোচনায় কোনও অর্থ নেই।
তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, নেতানিয়াহুর সরকারকে অবশ্যই এই অপরাধ থামাতে বাধ্য করতে হবে। ক্ষুধা, তৃষ্ণা ও হত্যাযজ্ঞ এখন নিয়মিত অপরাধে পরিণত হয়েছে।
এ বক্তব্য এমন এক সময়ে এলো, যখন সোমবার ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, গাজার জনগণকে ‘সরিয়ে দেওয়া হবে’ এবং সেখানে ইসরায়েল ‘সম্পূর্ণ দখল ও নিয়ন্ত্রণে’ যাবে বলে সামরিক পরিকল্পনা করা হয়েছে।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি আগ্রাসনে গাজার ২৩ লাখ মানুষের প্রায় সবাই একাধিকবার বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। ২ মার্চ থেকে ইসরায়েলের পূর্ণ অবরোধে খাদ্য ঘাটতি চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে।
গাজার মধ্যাঞ্চলীয় শহর দেইর আল-বালাহ থেকে আল–জাজিরার প্রতিবেদক জানিয়েছেন, বহু ফিলিস্তিনি শিশুদের খাওয়াতে পচা কিংবা মেয়াদোত্তীর্ণ খাবার খেতে বাধ্য হচ্ছেন। অনেকে কোনও খাবারই পাচ্ছেন না।
ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সর্বশেষ তথ্যে বলা হয়েছে, স্থানীয় বাজার ও মানবিক সহায়তা কেন্দ্র—কোথাও এখন আর খাবার নেই। দশ লাকের বেশি উদ্বাস্তু মানুষের ন্যূনতম চাহিদাও পূরণ সম্ভব হচ্ছে না।
এছাড়া ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব দ্য রেড ক্রস সতর্ক করে বলেছে, গাজার পরিস্থিতি চরম মানবিক বিপর্যয়ে পৌঁছেছে। সংস্থাটির মুখপাত্র ক্রিশ্চিয়ান কারডন বলেন, আন্তর্জাতিক মানবিক আইনে, ইসরায়েলের দায়িত্ব জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণ নিশ্চিত করা।
গাজা শহরের বাসিন্দা আয়া আল-স্কাফি জানান, তার চার মাস বয়সী মেয়ে গত সপ্তাহে অপুষ্টি ও ওষুধ সংকটে মারা গেছে। ওজন ছিল মাত্র ২.৮ কেজি। রক্তে অ্যাসিড বাড়ে, লিভার ও কিডনি নষ্ট হয়, চুল ও নখ পড়ে যায়। পুরোপুরি অপুষ্টিতে ভুগছিল সে।
খান ইউনিসের বাসিন্দা আওয়াদ বলেন, ইসরায়েল যুদ্ধ, বোমাবর্ষণ, অবরোধ, ক্ষুধা—একটাও বন্ধ করেনি। বরং এখন বলে যুদ্ধ আরও বাড়াবে! বিশ্ব যেন গাজার দুর্ভিক্ষ দেখুক।
ফাঁস হওয়া পরিকল্পনা অনুযায়ী, ইসরায়েল গাজায় খাদ্য বিতরণ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে চায় এবং জাতিসংঘ ও অন্যান্য সংস্থার বদলে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোম্পানির মাধ্যমে তা পরিচালনার প্রস্তাব দিয়েছে।
এ পরিকল্পনায়, ফিলিস্তিনিদের সপ্তাহে মাত্র একটি করে খাদ্য প্যাকেট নেওয়ার সুযোগ থাকবে, আর প্রতিদিন মাত্র ৬০টি ট্রাক প্রবেশ করতে পারবে গাজায়—যা প্রয়োজনের এক-দশমাংশ। জাতিসংঘের সংস্থাগুলো একে মানবিক ত্রাণকে রাজনৈতিক অস্ত্রে পরিণত করার চেষ্টা বলে প্রত্যাখ্যান করেছে।