গাজার ক্ষুধার্ত জনগণের খাদ্য সহায়তার খোঁজে যাওয়ার চেষ্টাই হয়ে উঠছে মৃত্যুর ফাঁদ। বৃহস্পতিবার ভোর থেকে দিনভর ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় গাজাজুড়ে নিহত হয়েছেন অন্তত ৮৪ জন ফিলিস্তিনি। তাদের মধ্যে ১৬ জন ত্রাণকেন্দ্রের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ খবর জানিয়েছে।
গাজা সিটি ও উত্তরের এলাকায় ৫৯ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। সালাহউদ্দিন সড়কের নেৎজারিম করিডোরে ত্রাণ নেওয়ার অপেক্ষায় থাকা মানুষজনকে টার্গেট করে হামলা চালানো হয় বলে জানিয়েছেন ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।
দক্ষিণ গাজার জাইতুন এলাকায় একটি বাড়িতে বিমান হামলায় মারা যান আরও আটজন। আল-মাওয়াসি শরণার্থী শিবিরে বাস্তুচ্যুতদের তাঁবুতে চালানো আরেক হামলায় নারী ও দুই শিশুসহ নিহত হন আরও আটজন।
মধ্য গাজার মাঘাজি শিবিরে এক পরিবারের স্বামী-স্ত্রী ও সন্তানসহ ১০ জন নিহত হন বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনি বার্তা সংস্থা ওয়াফা।
আল জাজিরার সঙ্গে কথা বলেন আহমেদ ঘাবেন নামের এক ফিলিস্তিনি। তিনি জানান, আমার ভাগ্নে তার সন্তানদের জন্য আটার ব্যাগ আনতে গিয়েছিল। এখন সে কেবল এক নিথর দেহ হয়ে ফিরে এসেছে। সে কোনও যোদ্ধা ছিল না, কেবল ক্ষুধার তাড়নায় গিয়েছিল।
আল জাজিরার সাংবাদিক তারেক আবু আজজুম দেইর আল-বালাহ থেকে জানান, ইসরায়েলি বাহিনী স্পষ্টভাবে সাধারণ মানুষদের টার্গেট করছে যারা কেবল খাদ্য সহায়তা নিতে গিয়েছিল। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ড্রোন, ট্যাংক এমনকি পাহাড়ের ওপরে বসানো স্নাইপার দিয়েও গুলি চালানো হয়েছে।
বুধবার আল জাজিরার আরেক প্রতিবেদনে বলা হয়, উত্তরে গুলিতে নিহত ২০ ফিলিস্তিনির মরদেহ রাস্তায় পাঁচ দিন পড়ে ছিল। ইসরায়েল জাতিসংঘের মানবিক সংস্থাকে উদ্ধার অভিযান চালাতে অনুমতি না দেওয়ায় সেগুলো পড়ে ছিল। পরে জাতিসংঘের সমন্বয়ের মাধ্যমে উদ্ধার অভিযান চালানো হয়।
হামাস এই হামলাকে বেসামরিক জনগণের ওপর পরিকল্পিত গণহত্যা বলে নিন্দা জানিয়েছে। এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, ক্ষুধার্তদের টার্গেট করা, বাস্তুচ্যুতি, তথাকথিত নিরাপদ এলাকার নামে ভণ্ডামি—সব মিলে এগুলো যুদ্ধাপরাধ। এটা প্রায় ২০ মাস ধরে চলমান গণবিনাশী যুদ্ধেরই অংশ।
ঘটনার কেন্দ্রে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ)। গত মে মাসের শেষ দিকে ইসরায়েল যখন তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা আংশিকভাবে তুলে নেয়, তখন সীমিত পরিসরে খাদ্য সহায়তা বিতরণ শুরু হয় এই সংস্থার মাধ্যমে। তবে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থাগুলো জিএইচএফ-এর সঙ্গে কাজ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। তাদের অভিযোগ, এই সংস্থা ইসরায়েলি সামরিক স্বার্থকে মানবিক প্রয়োজনের ওপরে স্থান দিচ্ছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৫ হাজার ৬৩৭। আহতের সংখ্যা ১ লাখ ২৯ হাজার ৮৮০।