X
শনিবার, ০১ এপ্রিল ২০২৩
১৮ চৈত্র ১৪২৯

গ্রহাণুর আঘাত থেকে পৃথিবীকে রক্ষার মিশনে নাসা

বিদেশ ডেস্ক
২৪ নভেম্বর ২০২১, ১৮:১৬আপডেট : ২৪ নভেম্বর ২০২১, ১৮:১৬

পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসছে এমন গ্রহাণুকে তার গতিপথ থেকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেওয়ার একটি প্রযুক্তি পরীক্ষার জন্য নাসার 'ডার্ট' নামে একটি যান বুধবার তার যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে। পরীক্ষাটি চালানো হবে ডাইমর্ফোস নামের একটি গ্রহাণুর ওপর। নাসার মহাকাশযানটি এর ওপর আঘাত হানবে এবং তারপর পরীক্ষা করে দেখা হবে, এর কক্ষপথ ও গতিবেগে কোনও পরিবর্তন হয়েছে কিনা।

এটিই মানুষের প্রথম পরীক্ষা যেখানে পৃথিবীকে রক্ষার উদ্দেশ্যে একটি গ্রহাণুর গতিপথ পরিবর্তনের চেষ্টা করা হবে।

মহাশূন্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে এমন বড় আকারের কোনও গ্রহাণু পৃথিবীতে আঘাত হানার আগেই তাকে মোকাবিলা করার এই প্রস্তাব বহুদিন ধরেই বিবেচনাধীন ছিল। এর কারণ, কয়েকশ' মিটার চওড়া কোন গ্রহাণু যদি পৃথিবীতে আঘাত হানে তাহলে যে ধ্বংসযজ্ঞ ঘটতে পারে, সেটা এতোই ব্যাপক মাত্রার হবে যে তা অনুভূত হবে একটি পুরো মহাদেশজুড়ে।

১৬০ মিটার চওড়া কোনও গ্রহাণু যদি বিস্ফোরিত হয় সেটা হবে একটি পারমাণবিক বোমার চাইতেও বহুগুণ বেশি প্রচণ্ড। এতে জনবসতি আছে এমন এলাকায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ হবে এবং হাজার হাজার মানুষ মারা যাবে। আর ৩০০ মিটার বা তার চেয়ে বেশি বড় কোনও গ্রহাণু পৃথিবীতে আঘাত করলে যে ধ্বংসযজ্ঞ ঘটবে তা হবে একটা পুরো মহাদেশের মতো বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে। যদি এক কিলোমিটারের চেয়ে বড় আকারের গ্রহাণুর সঙ্গে পৃথিবীর সংঘর্ষ হয়, তাতে ক্ষয়ক্ষতি হবে সারা পৃথিবীজুড়ে।

'ডাইমর্ফোস' কোনও হুমকি নয়

ডাইমর্ফোস নামে যে গ্রহাণুটির ওপর এই পরীক্ষা চালানো হবে সেটি অবশ্য এখন পৃথিবীর প্রতি কোনও হুমকি নয়। নাসার 'প্ল্যানেটরি ডিফেন্স' সংক্রান্ত সমন্বয়কারীর দফতরের কেলি ফাস্ট বলছেন, ডার্ট দিয়ে আঘাত হেনে ডাইমর্ফোসের গতিবেগ বা পথে যতটুকু পরিবর্তন করা যাবে তা হবে খুবই সামান্য। কিন্তু একটা গ্রহাণুকে আঘাতের আগেই যদি চিহ্নিত করা যায়, তাহলে সেটিকে এড়ানোর জন্য ওইটুকু পরিবর্তনই যথেষ্ট। এই 'ডার্ট' মহাকাশযান বহনকারী রকেট ফ্যালকন-নাইন নামে একটি রকেট বুধবার ভোরে ক্যালিফোর্নিয়ার ভ্যানডেনবার্গ স্পেস ফোর্স ঘাঁটি থেকে উৎক্ষেপণ করা হবে। এই মিশনে ব্যয় হচ্ছে ৩২ কোটি ৫০ লাখ ডলার।

মহাশূন্যে ঘুরে বেড়ানো এসব গ্রহাণু কী

এই গ্রহাণুগুলো হচ্ছে সৌরজগৎ যা দিয়ে সৃষ্টি হয়েছে সেই গ্রহ-উপগ্রহগুলোর রয়ে যাওয়া টুকরো। এগুলোও সূর্যের চারদিকে ঘুরছে, তবে এদের কক্ষপথ কখনও কখনও পৃথিবীর কক্ষপথের মধ্যে ঢুকে পড়তে পারে। দৈবক্রমে তারা এক বিন্দুতে এসে পড়লে পৃথিবী ও গ্রহাণুর মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটতে পারে। এই মিশনের একজন বিজ্ঞানী টম স্ট্যাটলার বলেন, ‘বড় গ্রহাণুর চেয়ে ছোট গ্রহাণুর সংখ্যা অনেক বেশি। তাই যদি পৃথিবীতে আদৌ কখনও গ্রহাণু আঘাত হানে তাহলে সেটা ছোট আকারের হওয়ার আশঙ্কাই বেশি।’

মার্কিন কংগ্রেস ২০০৫ সালে নাসাকে নির্দেশ দিয়েছিল যেন তারা পৃথিবীর কাছাকাছি থাকা ১৪০ মিটারের বেশি চওড়া গ্রহাণুগুলোর ৯০ শতাংশকে খুঁজে বের করে এবং সেগুলোর ওপর নজর রাখে। দেখা গেছে যে, এই শ্রেণির কোনও গ্রহাণু পৃথিবীর প্রতি কোনও আশু হুমকি হয়ে উঠবে না। তবে এ ধরনের গ্রহাণুগুলোর মাত্র ৪০ শতাংশ আসলে আবিষ্কৃত হয়েছে।

কত বিশাল এই ডাইমর্ফোস গ্রহাণু?

নাসার ডার্ট মহাশূন্যযানের লক্ষ্যবস্তু হচ্ছে এক জোড়া গ্রহাণু যাদের বলে 'বাইনারি'। কারণ এদের একটি অপরটির চারদিকে ঘুরছে। এদের মধ্যে বড়টির নাম ডিডাইমোস, যা ৭৮০ মিটার চওড়া। ছোটটির নাম ডাইমর্ফোস, এটি ১৬০ মিটার চওড়া। ডার্ট নামে যানটি উৎক্ষেপণের পর প্রথমত এটি পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ কাটিয়ে মহাশূন্যে যাবে এবং সূর্যের চারদিকে তার নিজ কক্ষপথে ঘুরতে শুরু করবে।

এরপর ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর নাগাদ ওই জোড়া গ্রহাণু যখন পৃথিবীর ৬৭ লাখ মাইলের মধ্যে আসবে তখনই তাদের একটির সঙ্গে সংঘর্ষ ঘটবে ডার্টের। ডার্টের গায়ে বসানো আছে একটি ক্যামেরা যার নাম ড্রাকো। এই ক্যামেরায় দুটি গ্রহাণুরই ছবি উঠবে। এটি যানটিকে নির্ভুলভাবে ডাইমর্ফোসের ওপর আঘাত হানতে সহায়তা করবে।

ঘণ্টায় প্রায় ১৫ হাজার মাইল বেগে ডাইমর্ফোসের গায়ে আঘাত হানবে ডার্ট। এতে গ্রহাণুটির গতি খুব সামান্য হলেও কমে যাবে। প্রতি সেকেন্ডে এক মিলিমিটারের ভগ্নাংশ পরিমাণ। এর ফলে এর কক্ষপথেও সামান্য পরিবর্তন হবে। এ পরিবর্তন সামান্য হলেও বিজ্ঞানীরা মনে করছেন পৃথিবীর সাথে ধাক্কা লাগা এড়াতে গতিপথের এতোটুকু পরিবর্তনই যথেষ্ট। ডার্টের এই গ্রহাণুতে আঘাত হানার দৃশ্যের ছবি পৃথিবীতে পাঠানোর কাজ করবে আরেকটি ছোট যান। এটির নাম লিসিয়াকিউব। এটি তৈরি করেছে ইতালি। আঘাত হানার ১০ দিন আগে এটি 'মোতায়েন' করা হবে।

এই আঘাতের ফলে ডাইমর্ফোসের গতিপথে কতটা পরিবর্তন হলো বা আদৌ হলো কিনা তা মাপা হবে পৃথিবী থেকে টেলিস্কোপের মাধ্যমে। মনে করা হচ্ছে এই গতিপথ পরিবর্তন হবে এক শতাংশের মতো, এবং তা মাপতে কয়েক সপ্তাহ বা মাস লেগে যাবে। ডার্টের আঘাতের ফলে ডাইমর্ফোসের গতিপথ পরিবর্তিত হবে কিনা - তা নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণ হলো, এই গ্রহাণুটির অভ্যন্তরীণ গঠন বিজ্ঞানীদের এখনও অজানা। পৃথিবীর জন্য বিপজ্জনক গ্রহাণুতে আঘাত হেনে তাকে সরিয়ে দেওয়ার এই পদ্ধতিকে বলা হচ্ছে কাইনেটিক ইমপ্যাক্টর টেকনিক। তবে অন্য আরও কিছু চিন্তাভাবনাও আছে। এর একটি হলো গ্রহাণুটিকে ধীরে ধীরে তার কক্ষপথ থেকে সরিয়ে দেওয়া। অপরটি হলো, গ্রহাণুটিকে পারমাণবিক বোমা দিয়ে আঘাত করা। এই বিকল্প নিয়ে হলিউডে 'আরমাগেডন' এবং 'ডিপ ইমপ্যাক্ট' নামে দুইটি সিনেমাও হয়েছে। সূত্র: বিবিসি।

/এমপি/
সম্পর্কিত
তাইওয়ান প্রণালীতে চীনের ৯ যুদ্ধবিমান ও ড্রোন অনুপ্রবেশ
যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে সিরিয়া-কেন্দ্রিক উত্তেজনা বাড়ছে
যুক্তরাষ্ট্রে এক রাতে ৪০ টর্নেডোর আঘাত, ৩ মৃত্যু
সর্বশেষ খবর
৪৫ লাখ টাকা সহায়তা পেলেন রোগীরা 
৪৫ লাখ টাকা সহায়তা পেলেন রোগীরা 
সাকিব-লিটনকে রেখেই আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট দল ঘোষণা
সাকিব-লিটনকে রেখেই আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট দল ঘোষণা
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার অঙ্গীকার ইরানের
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার অঙ্গীকার ইরানের
আপাতত আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা হচ্ছে না সাফজয়ী দলের
আপাতত আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা হচ্ছে না সাফজয়ী দলের
সর্বাধিক পঠিত
তামান্নাকে আবাসিক হোটেলে নিয়ে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে হত্যা করে  হুমায়ুন
তামান্নাকে আবাসিক হোটেলে নিয়ে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে হত্যা করে হুমায়ুন
চাকরি জীবনের প্রথম কাজে আসিফ পাস!
চাকরি জীবনের প্রথম কাজে আসিফ পাস!
প্রথম আলোর বিতর্কিত প্রতিবেদনটি মহান স্বাধীনতাকে হেয় করার শামিল: এডিটরস গিল্ড
প্রথম আলোর বিতর্কিত প্রতিবেদনটি মহান স্বাধীনতাকে হেয় করার শামিল: এডিটরস গিল্ড
২২০ টাকায় মুরগি বিক্রি করায় জরিমানা, অভিযান দেখে পালালেন ব্যবসায়ীরা
২২০ টাকায় মুরগি বিক্রি করায় জরিমানা, অভিযান দেখে পালালেন ব্যবসায়ীরা
ঢাবির ইতিহাসে প্রথম ট্রান্সজেন্ডার শিক্ষার্থী অঙ্কিতার গল্প
ঢাবির ইতিহাসে প্রথম ট্রান্সজেন্ডার শিক্ষার্থী অঙ্কিতার গল্প