ঈদে নাড়ির টানে বাড়ি ফেরেন অনেকে। সারা বছর অপেক্ষা করে থাকেন স্বজনদের কাছে যাওয়ার জন্য। কিন্তু কিছু মানুষ আছেন যারা বাড়ি ফিরবেন কিনা সেটা ইচ্ছে করে পরিবারের সদস্যদের ওপর। আর কিছু মানুষ আছেন যাদের বাড়ি থেকে দূরে রেখে আসা হয়, যাতে তাদের স্বজনেরা ভালো করে ঈদ করতে পারেন। যাদের কথা বলা হচ্ছে তারা হলেন সেই মানুষ, যারা মানসিকভাবে অসুস্থ।
মনোচিকিৎসকরা বলছেন, এই মানুষগুলো কাছের মানুষের সান্নিধ্য চায়। যারা সহিংস হয়ে যাননি, তাদের প্রতি পরিবার সংবেদনশীল হলে ভালো থাকা সম্ভব। উৎসবে বা বাড়ির বড় কোনও আয়োজনে এদের লুকিয়ে না রেখে, তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া জরুরি।
২২ বছর বয়সী কফিল বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াকালীন হঠাৎ মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। গত দুই বছর ধরে তার চিকিৎসা চলছে। কখনও কখনও হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়েছে। কিন্তু ঈদে তাকে অবশ্যই কোনও সেন্টারে রেখে আসার ব্যবস্থা করতে হয়।
পরিবারের একমাত্র বড় বোন সালেহা বলেন, ওর বেশি লোকজন পছন্দ না। আবার অনেক আত্মীয় এসে নানারকম প্রশ্ন করে। সেসবে সে বিরক্ত হয়। ফলে বাসায় বড় কোনও আয়োজন হলে বা ঈদের আগে আগে আমরা তাকে মানসিক চিকিৎসাকেন্দ্র কোনও একটায় দশ-পনেরো দিনের জন্য রেখে আসি। বা
সায় রেখে দেখেছেন কিনা প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি ছাড়া বাসার অন্য সদস্যরা তাতে রাজি হননি কখনও। কফিল এক-দুইবার থাকতে চেয়েছে। কিন্তু খুব বেশি জোর করতে হয়নি তাকে। তবে প্রতি অনুষ্ঠানের আগে তার জন্য এধরনের আয়োজন করতে বেশ বেগ পেতে হয়।
আবার যেসব স্বজন বাসায় ফিরিয়ে নিয়ে যান তারা যে খুব স্বস্তিতে থাকেন তা নয়। মিরপুরের বেনারসি পল্লীতে বাস রহমান সাহেবের। প্রথমে ডিমেনশিয়া এবং পরবর্তীতে সহিংস আচরণের কারণে তার পরিবারের লোকজন তাকে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে রাখতে শুরু করেন। ঈদের সময় সাত দিন করে বাসায় আনা হয় বটে। কিন্তু একঘরে বন্দি থাকেন এবং পরিবারের কেউ তাদের সময় দেন না।
বাবাকে বাসায় ছেড়ে রাখার বাস্তবতা নেই উল্লেখ করে তার ছেলে রায়হান বলেন, আমার ছেলে ভয় পায়, অন্য গেস্টরা যারা আসেন, তারা অস্বস্তিতে থাকেন। আমি চেষ্টা করি বাবার ঘরে গিয়ে তাকে সময় দেওয়ার। কিন্তু অনেকদিন পর পর দেখা হওয়ায় সবকিছু আগের মতো আর হয় না।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, স্বাস্থ্য অধিদফতর, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ যৌথ জরিপ অনুযায়ী দেশে অন্তত ৩ কোটি মানুষ কোনও না কোনোভাবে মানসিক সমস্যায় আছেন বা মানসিক রোগে আক্রান্ত। এর মধ্যে বয়স্কদের ক্ষেত্রে মানসিক সমস্যায় আক্রান্তের হার ১৬ দশমিক ৮ ভাগ, আর তরুণদের বেলায় তা ১৩ ভাগ।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক হেলাল উদ্দীন বলেন, যারা ভায়োলেন্ট রোগী তাদের ঈদের আগে একজন কেয়ারগিভারসহ হাসপাতালে রেখে যান পরিবারের সদস্যরা। আর যারা সহিংস আচরণ করেন না তাদের হাসপাতাল থেকে কিছু সময়ের জন্য বাসায় নিয়ে যান, দুরকমই আছে। যেকোনও উৎসব বা ছুটির সময় একইরকম ইমার্জেন্সি থাকে মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটেও। চিকিৎসকরা অন কল থাকেন, ইমার্জিন্সি খোলা থাকে। তবে জরুরি না হলে নতুন রোগী এসময় আসে না। বহির্বিভাগের ওপর চাপ কম থাকে।
তিনি জানান, যারা এসময় হাসপাতালে থাকেন তাদের জন্য সরকারি নিয়ম অনুযায়ী উন্নত খাবার পরিবেশন করা হয় বিশেষ দিনগুলোতে। তবে যদি সম্ভব হয়, কাছে মানুষদের কাছে কাছে রাখার ব্যবস্থা করা উচিত বলেও মনে করেন তিনি।