দেশের বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলো চরম শিক্ষার্থী সংকটে ভুগছে বলে জানিয়েছে মেডিক্যাল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজ অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএমসিএ)। বিপিএমসিএ এ জন্য অটোমেশন নীতিকে দায়ী করছে। তবে শুধু অটোমেশনকে শিক্ষার্থী না পাওয়ার কারণ হিসেবে মানতে নারাজ স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. রোকেয়া সুলতানা। বেসরকারি মেডিক্যালের মানোন্নয়নের তাগিদ দিয়েছেন তিনি।
শনিবার (২৫ মে) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে বিপিএমসিএ আয়োজিত ‘বেসরকারি স্বাস্থ্য শিক্ষার মানোন্নয়ন ও ভর্তি প্রক্রিয়ায় চলমান শিক্ষার্থী সংকটের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এ সব কথা বলেন আলোচকরা।
বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের মালিকরা বলছেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পদ্ধতিগত ভুলের কারণে বেসরকারি মেডিক্যালে ভর্তিতে চরম বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে। অটোমেশনের নামে প্রাইভেট মেডিক্যাল সেক্টর ধ্বংসের ষড়যন্ত্র চলছে। চলতি বছর বেসরকারি মেডিক্যালে কলেজগুলোতে ১ হাজার ২০০ সিট খালি রয়েছে। গত দুই বছর মেডিক্যালগুলোর ২০ শতাংশ ওপর সিট খালি ছিল। এমনকি গরিব ও মেধাবী কোটাতেও শিক্ষার্থী পাওয়া যাচ্ছে না। অটোমেশনের কারণে মেধাক্রম অনুসারে শিক্ষার্থীদের জন্য কলেজ স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্ধারিত হওয়ায় ভর্তি-ইচ্ছুকেরা পছন্দের কলেজে ভর্তি হতে পারছেন না। একই কারণে বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কমে গেছে।
তবে মালিক পক্ষের এ দাবির সঙ্গে পুরোপুরি একমত প্রকাশ না করে অটোমেশনের পাশাপাশি শিক্ষার্থী কমার অন্য কারণ রয়েছে বলেও মত দেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. রোকেয়া সুলতানা। তিনি বলেন, ‘এটি খতিয়ে দেখতে হবে। অটোমেশন নতুন কিছু নয়। এটি আগেও ছিল। আমি নিজে ঢাকা মেডিক্যালে আবেদন করতে পারিনি। কারণ আমার রেজাল্ট কিছুটা কম ছিল।’
ডা. রোকেয়া সুলতানা বলেন, ‘আমাদের মেট্রিক ও ইন্টারমিডিয়েটর রেজাল্টের ওপর ভিত্তি করে ভাইবা হতো। তাই শুধু অটোমেশনের জন্য শিক্ষার্থী আসছে না, তা হতে পারে না। এর অন্য কোনও কারণ রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে হবে। আমার অভিজ্ঞতা অনুযায়ী আমি তাদের ঘাটতিগুলো কাটিয়ে ওঠার জন্য কাজ করার পরামর্শ দেবো।’
মানোন্নয়নের তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, ‘বেসরকারিতে মানুষ কোয়ালিটি চিন্তা করে। কারণ তারা এখানে অর্থ ব্যয় করছে। কোয়ালিটি মেইনটেইন না হলে কাজ করার প্রয়োজন নেই। সেটা যে সেক্টরেই হোক না কেন। এই কোয়ালিটি আমি শিক্ষার্থী ও শিক্ষক দুই ক্ষেত্রেই চাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘একটি মেডিক্যাল করতে হলে আগে হাসপাতাল তৈরি করতে হবে। রোগীরা মেডিক্যাল শিক্ষার্থীর শেখার ল্যাবরেটরি। হাসপাতাল ঠিকমতো রান করলে পরে মেডিক্যাল কলেজের অনুমতি হওয়া উচিৎ। যাদের পড়াবো তারা মানসম্মত চিকিৎসক তৈরি হবে কিনা তা লক্ষ্য রাখতে হবে।’
এ সময় বেসরকারি মেডিক্যালে শিক্ষায় নানা সমস্যা ও করণীয় নিয়ে মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে এম আব্দুল মোমেন, বাংলাদেশ মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কাউন্সিলের প্রতিনিধি, বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ, বেসরকারি মেডিক্যাল মালিক ও সাংবাদিকরা।
এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘হাসপাতালের ওপর রোগীর আস্থা বাড়াতে হবে এবং প্রতিযোগিতা বাড়াতে হবে। প্রতিযোগিতার মধ্যে মান উন্নয়ন হবে। মান সম্পন্ন চিকিৎসক যাতে কাজ করতে পারেন সেটি দেখবেন বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের মালিকরা, মন্ত্রণালয় এ ক্ষেত্রে তাদের সহায়তা করতে পারে।’
আলোচনা সভাটি সঞ্চালনা করেন বিপিএমসিএর সেক্রেটারি এম এ মুবিন খান।