প্রশ্ন: আমাদের বিয়ে হয়েছে চার বছর হলো। একটা দুই বছরের সন্তানও আছে। আমার স্বামীর বিয়ের আগে একটা সম্পর্ক ছিল যেটা ভেঙে যায়। পরবর্তীতে আমরা পারিবারিকভাবে বিয়ে করি। সেই সম্পর্কের কথা বিয়ের আগেই স্বামী আমাকে জানিয়েছিল। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আমার বারবার এই ব্যাপারটা মনে পড়ে যায় এবং স্বামীর উপর খুব রাগ হয়। যদিও তাদের আর কখনোই যোগাযোগ হয়নি। আমার মুড সুইং হলেই এই ব্যাপারটা মনে পড়ে যায় এবং স্বামীর সঙ্গে আমি খারাপ ব্যবহার করি। বুঝতে পারি যে সমস্যাটা আমারই, স্বামীর ব্যাপারে আমি অতিরিক্তি পজেসিভ। কিন্তু কোনোভাবেই এটা থেকে বের হতে পারছি না। কী করবো?
উত্তর: সমস্যাটা আসলে কারোরই নয়। স্বামীর ব্যাপারে পজেসিভ হওয়াটাই স্বাভাবিক। আপনি নিজেকে অতিরিক্ত পজেসিভ মনে করছেন। আসলে আপনি সে রকম নন। একজন নার্সিসিস্ট ব্যক্তি (নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত এবং অন্যদেরকে নিয়ে অখুশি) যেমন নিজেকে নার্সিসিস্ট মনে করেন না, একজন অতিরিক্ত পজেসিভ মানুষ তেমনি নিজেকে অতিরিক্ত পজেসিভ মনে করেন না। আমরা যেমন আমাদের চোখ দিয়ে আমাদের চোখ দেখতে পারি না। আপনার বক্তব্য থেকে বোঝা যাচ্ছে: ১) আপনার বুদ্ধিমত্তা উঁচু পর্যায়ের। ২) এবং মেটাকগনিট্ভ স্কিল উঁচু পর্যায়ের। আপনি আপনার চিন্তা ও সন্দেহকে বিশ্লেষণ করতে পারেন এবং সন্দেহকেও সন্দেহ করতে পারেন। ৩) আপনার মরালিটি সেন্স উঁচু পর্যায়ের। ৪) আপনি ওপেন মাইন্ডেড। ৫) আপনার মাইন্ডসেট হচ্ছে গ্রোথ মাইন্ড সেট। এতসব গুণ থাকার কারণে কোনও সমস্যাই আপনাকে বিপর্যস্ত করতে পারে না এবং পারবেও না। আপনার আপাতত এটুকু জানলেই যথেষ্ট যে, আপনার উৎকন্ঠা এবং সন্দেহ স্বাভাবিক সীমার মধ্যেই আছে!।
প্রশ্ন: আমার ছেলের বয়স ৬ বছর। খেলতে গিয়ে পড়ে ওর সামনের দুটো দাঁত ভেঙে গেছে। এছাড়া শারীরিকভাবেও সে রোগা। এসব কারণে স্কুলে আমার শিশু বুলির শিকার হয়। এতে সে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। স্কুলে যেতে চায় না। কান্নাকাটি করে। স্কুলে অভিযোগ করেও ব্যাপারটির সুরাহা হয়নি। কীভাবে আমার ছেলের আত্নবিশ্বাস ফিরিয়ে আনবো?
উত্তর: মা-বাবার আত্মবিশ্বাস সন্তানের মধ্যে প্রতিফলিত হয়। সুতরাং আপনাদের নিজেদের আত্মবিশ্বাসে ঘাটতি থাকলে সেটা পূরণ করুন। আপনার ছেলের আত্মবিশ্বাস ফিরে আসবে। আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর উপায় হলো নিজেকে পরিবর্তনের চেষ্টা না করে নিজের ভালো-মন্দ সকল বৈশিষ্ট্যকে আপন করে নেওয়া। সন্তানের উদ্বেগ মোকাবিলা করা শিখাতে হবে এবং সেজন্য আপনাদেরকে আগে উদ্বেগ মোকাবিলা করা শিখতে হবে। উদ্বেগ মোকাবিলা করার উপায় হচ্ছে উদ্বেগকে এড়ানোর চেষ্টা না করে এটাকে জীবনের অপরিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে আপন করে নেওয়া। সেজন্য জীবনকে ভার্চুয়াল রিয়ালিটি গেম হিসেবে নিতে হবে এবং উদ্বেগকে এই গেমের ডিফিকাল্টি পয়েন্ট হিসেবে স্পোর্টিভলি নিতে হবে। ছেলের শিক্ষা যেন পাঠ্যপুস্তকনির্ভর না হয়, সেটা নিশ্চিত করুন। তাকে ইনোভেটিভ শিক্ষামূলক বই, খেলার সামগ্রী, শিক্ষা-উপকরণ, মোবাইল অ্যাপ বা ওয়েব-কনটেন্ট ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করুন। তাকে নিয়ে উদ্দীপনাময় সামাজিক পরিমণ্ডলে বা আত্মীয়-স্বজনের বাসায় অধিক সময় কাটান। স্কুলের বাইরে তার বয়সী মানবিক বোধসম্পন্ন শিশুদের সাথে তাকে বন্ধুত্ব স্থাপনে সাহায্য করুন, তাদের সাথে খেলাধুলা করতে উদ্বুদ্ধ করুন। তাকে ঠান্ডা মাথায় জীবনের বাস্তবতা বোঝান। তাকে বলুন যে, জীবনের সকল পর্যায়ে ভালো এবং মন্দ উভয় ধরনের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে সবাইকেই যেতে হয় এবং সেও এর ব্যতিক্রম নয়।