X
শনিবার, ১০ মে ২০২৫
২৬ বৈশাখ ১৪৩২

সুস্থ ও কর্মক্ষম জীবনযাপনে অর্গানিক ফাংশনাল ফুড

বাংলা ট্রিবিউন ডেস্ক
০৬ মার্চ ২০২২, ১৬:৪৩আপডেট : ১৩ জুলাই ২০২৩, ২৩:৩৪

সুস্থ শরীর, প্রশান্ত মন ভালো থাকার প্রধান শর্ত। শরীর সুস্থ রাখার উপায় নিয়ে যুগে যুগে সারাবিশ্বে নানামুখী গবেষণা হয়েছে। সঠিক খাদ্যাভ্যাস আর শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির ব্যাপারে প্রায় সব চিকিৎসা তত্ত্বেই জোর দেওয়া হয়েছে। কেননা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী না হলে সামান্য অসুখেই মানুষ দুর্বল হয়ে পড়তে পারে এবং জটিল সমস্যার মুখোমুখি হতে পারে।

কোভিড-১৯ সারাবিশ্বে অনিশ্চয়তা ও শঙ্কা সৃষ্টি করেছে। ভাইরাসটি দ্রুত সংক্রমণ ক্ষমতা সম্পন্ন হওয়ায় প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকেই উদ্বেগজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। ভাইরাল প্যান্ডেমিক যেভাবে ওয়েভ বা ঢেউয়ের মতো আসে, কোভিডের ক্ষেত্রেও তাই হচ্ছে। তাই গত কয়েকদিন ধরে সংক্রমণের হার নিম্নমুখী হলেও কোভিড পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে নিশ্চিন্ত হওয়ার মতো পরিস্থিতি এখনও তৈরি হয়নি। আমাদের এখনও সতর্কতা মেনে চলতে হবে। করোনার বিস্তার ঠেকাতে ও স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে ঘরের বাইরে গেলে মাস্ক পরিধান, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা ও ব্যক্তি পর্যায়ে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার ব্যাপারে নির্দেশনা দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। কোভিডের টিকা ও প্রতিষেধক ওষুধ নিয়েও চলছে নানান পরীক্ষা-নিরীক্ষা। ইতিমধ্যে আবিষ্কৃত করোনার টিকা গ্রহণে কিছুটা সুরক্ষিত থাকা গেলেও এখনও এমন কোনও টিকা আবিষ্কৃত হয়নি যা গ্রহণে মানুষ আর করোনা সংক্রমিত হবে না।

এসব ক্ষেত্রে প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম। অন্য সব ভাইরাস সংক্রমণের প্রতিরোধের মতোই করোনা প্রতিরোধে টিকা গ্রহণের পাশাপাশি চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করার ব্যাপারে পরামর্শ দিচ্ছেন। দেখা গেছে, যাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো, তারা তেমন কোনও সমস্যা বা ঝুঁকি ছাড়াই কোভিড-১৯ থেকে সেরে উঠছেন। এমনকি, করোনা থেকে সুস্থ হওয়ার পরবর্তী জটিলতাও তারা সহজে কাটিয়ে উঠতে পারছেন।

বর্তমান আধুনিক জীবনধারায় অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, কায়িক পরিশ্রম বা শরীরচর্চায় অনীহা এবং মানসিক চাপ, স্থূলতা এবং দীর্ঘস্থায়ী বিভিন্ন অসুখ সৃষ্টি করছে, যা মানুষের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলার মাধ্যমে কিছু ক্ষেত্রে করোনার দ্রুত বিস্তারকেও সহজতর করেছে। তাই, করোনার প্রাদুর্ভাবসহ অন্যান্য ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে সুরক্ষিত থাকতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর ব্যাপারে নজর দিতে হবে।

অর্গানিক ফাংশনাল ফুড

সুস্বাস্থ্যের জন্য পুষ্টির তাৎপর্য উপলব্ধি করে আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক হিপোক্রেটস বলেছেন, ‘খাদ্যকে ওষুধ হতে দিন আর ওষুধকে খাদ্য।’ এশিয়া বিশেষ করে ভারতবর্ষ, জাপান এবং চীন অনেক বছর ধরেই বিভিন্ন রোগ-ব্যাধি প্রতিরোধ, প্রশমন এবং নিরাময়ে বিশেষ ধরনের খাবারকে তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। সুস্থ জীবনযাপনে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি ও জটিল স্বাস্থ্যঝুঁকি হ্রাসের লক্ষ্যে আশির দশকে জাপানে প্রথম ‘ফাংশনাল ফুড’-এর ধারণা উদ্ভূত হয় এবং ১৯৯১ সালে এটি জাপানে আইনি ভিত্তি পায়। বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ ২০১৩ সালে ‘নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩’ পাস করে, যেখানে ৩১ নং ধারার অধীনে ‘ফাংশনাল ফুড’ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

ফাংশনাল ফুড বলতে মূলত প্রাকৃতিক ও নিরাপদ খাদ্যকে বোঝায়, যা আমাদের মৌলিক পুষ্টি চাহিদার ঊর্ধ্বে গিয়ে শরীরের একাধিক কার্যকারিতায় ভূমিকা রাখে এবং বিশেষ কিছু রোগ ও অন্যান্য স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে। ফাংশনাল ফুড বিভিন্ন বায়ো-অ্যাকটিভ উপাদানের মাধ্যমে শরীরে কার্যকর প্রভাব ফেলে। হলুদ, গোলমরিচ, আদা, মধু, অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার, চিয়াসিড, কাজুবাদাম, দারুচিনি ইত্যাদি ফাংশনাল ফুড হিসেবে পরিচিত। এগুলোর মধ্যে হলুদের অন্যতম সক্রিয় উপাদান কারকিউমিন হৃদরোগ, আলঝেইমার ও ক্যান্সার প্রতিরোধে অত্যন্ত উপকারী। পেটের অসুখ, মাথাব্যথা ও ইনফেকশন সারাতে বহু বছর ধরেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে আদা। স্বাদবর্ধক গোলমরিচে রয়েছে পিপেরিন নামের একটি বিশেষ উপাদান, যা স্কিন ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে ও ব্রেনের বেটা-এন্ডরফিন্স বৃদ্ধি করে। এন্ডরফিন্স প্রাকৃতিক ব্যথানাশক হিসেবে কাজ করতে পারে। এছাড়া গোলমরিচ সেরেটোনিন বৃদ্ধির মাধ্যমে ডিপ্রেশন কমাতেও কার্যকর ভূমিকা রাখে। বর্তমানে ইউরোপ, আমেরিকাসহ পৃথিবীর উন্নত প্রযুক্তি নির্ভর দেশেও মানুষ বায়ো-অ্যাকটিভসমৃদ্ধ খাদ্যের মাধ্যমে স্বাস্থ্যঝুঁকি কমানোর ব্যাপারে বিশেষ আগ্রহী হয়ে উঠেছে।

বর্তমান কর্মব্যস্ত জীবনে মানুষ প্রক্রিয়াজাত খাবারের ওপর বিশেষভাবে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। কিন্তু প্রক্রিয়াজাত খাবার খাদ্যের পুষ্টিমান হ্রাস করছে। এক্ষেত্রে ফাংশনাল ফুড নিরাপদভাবে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে আধুনিক খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে সুস্থ জীবনযাপনে সক্ষম করে তোলে।

বর্তমানে মানুষের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন ও স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়ায় ফাংশনাল ফুড প্রতিনিয়ত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী ফাংশনাল ফুডের বাজার ছিল ১৭০ দশমিক ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ২০২২ থেকে ২০২৭ সাল পর্যন্ত ৬ দশমিক ৭ শতাংশ সিএজিআরে বৃদ্ধি পাবে এবং ২০২৬ সালের মধ্যে ২৫১ দশমিক ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

অর্গানিক শব্দটি সারাবিশ্বেই এখন বেশ আলোচিত। বাংলাদেশেও অর্গানিক ফুডের ব্যাপারে মানুষের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হচ্ছে। কিন্তু অর্গানিক বলতে আসলে কী বোঝায় সেই বিষয়ে অনেকেরই তেমন স্পষ্ট ধারণা নেই। অর্গানিক ফুড হচ্ছে এমন খাবার, যা কোনও ধরনের রাসায়নিক সার বা কীটনাশক ছাড়া শতভাগ প্রাকৃতিক উপায়ে উৎপাদন করা হয় এবং এর রক্ষণাবেক্ষণেও কোনও ধরনের কৃত্রিম উপাদান ব্যবহার করা হয় না। পরিবেশবান্ধব এই উৎপাদন ব্যবস্থা মানুষের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করার পাশাপাশি দূষণ রোধ করে বলে এখন সারাবিশ্বেই এটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

অর্গানিক ফাংশনাল ফুড

বর্তমানে প্রায় সব ধরনের খাবার উৎপাদনের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় ক্ষতিকর রাসায়নিক সার ও কীটনাশক। এটি কোনোভাবেই শরীরের জন্য নিরাপদ নয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খাদ্য পণ্যে ক্ষতিকর রাসায়নিক ব্যবহারের কারণে মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ধীরে ধীরে বিকল হয়ে পড়ে এবং ব্রঙ্কাইটিসসহ শ্বাসযন্ত্রে বিভিন্ন জটিলতা দেখা দেয়। অনেকেই কিডনি ও লিভারের রোগে আক্রান্ত হয়। এছাড়া রাসায়নিক সার ও কীটনাশক পরিবেশ ও প্রতিবেশের ওপর প্রভাব ফেলে। এক্ষেত্রে অর্গানিক ফুড এমন প্রক্রিয়ায় উৎপাদন করা হয় যেখানে মানবসৃষ্ট সার ও কীটনাশক, বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রক, ফুড এডিটিভস, ইরেডিয়েশন, জেনেটিক্যালি মডিফাইড অর্গানিজম (জিএমও) পদ্ধতিতে বা এর মাধ্যমে উৎপাদিত পণ্য ব্যবহার করা হয় না।

অর্গানিক শব্দটি এখন যেভাবে ব্যাপক হারে ব্যবহৃত হচ্ছে, সবক্ষেত্রে খাবার বা পণ্যের মান যাচাই করে এই শব্দটি ব্যবহৃত হচ্ছে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে। শতভাগ খাঁটি অর্গানিক পণ্য হতে হলে ইউএসডিএ, নন-জিএমও, এফডিএ ও জিএমপি কর্তৃক প্রদত্ত সনদ থাকতে হয়। অর্গানিক ফুড বা পণ্য কেনার আগে এসব বিষয় মাথায় রাখতে হবে। 

ফাংশনাল ফুড যদি অর্গানিক হয়, তাহলে খাদ্যের মান ও পুষ্টিগুণ নিয়ে আর কোনও চিন্তার অবকাশ থাকে না।

বিশেষজ্ঞদের মতে, অর্গানিক ফাংশনাল ফুড অধিক নিরাপদ এবং মানুষকে সুস্থ ও কর্মক্ষম জীবনে সহায়তা করে। আর অর্গানিক উৎপাদন ব্যবস্থা পরিবেশ এবং প্রাণী উভয়ের জন্যই উত্তম। তাই স্বাস্থ্যকর পরিবেশে সুস্থ জীবনযাপনে অর্গানিক ফাংশনাল ফুড গ্রহণে আমাদের সবার উৎসাহিত হওয়া প্রয়োজন।

/জেএইচ/
সম্পর্কিত
তীব্র গরমে সুস্থ থাকতে মেনে চলুন ৭ টিপস
সুখে থাকার ৫ বৈজ্ঞানিক উপায়
সুস্থ থাকতে প্রতিদিন খাবেন যে ৫ সবুজ ফল
সর্বশেষ খবর
আ.লীগের নিষিদ্ধের বিষয়ে বিএনপি সুস্পষ্ট অবস্থান না নেওয়ায় ছাত্রদল নেতার পদত্যাগ
আ.লীগের নিষিদ্ধের বিষয়ে বিএনপি সুস্পষ্ট অবস্থান না নেওয়ায় ছাত্রদল নেতার পদত্যাগ
চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির নেতৃত্বে দুই শাহীন!
চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির নেতৃত্বে দুই শাহীন!
শনিবার সারা দেশে গণজমায়েতের ডাক হাসনাতের
শনিবার সারা দেশে গণজমায়েতের ডাক হাসনাতের
আ.লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ, ৭ কিলোমিটার যানজট
আ.লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ, ৭ কিলোমিটার যানজট
সর্বাধিক পঠিত
জার্সি পরেই যমুনার সামনে দায়িত্বে রমনার ডিসি মাসুদ আলম
জার্সি পরেই যমুনার সামনে দায়িত্বে রমনার ডিসি মাসুদ আলম
সাবেক শিবির নেতাদের নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ
সাবেক শিবির নেতাদের নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ
যেভাবে বানাবেন কাঁচা আমের টক-মিষ্টি-ঝাল আমসত্ত্ব 
যেভাবে বানাবেন কাঁচা আমের টক-মিষ্টি-ঝাল আমসত্ত্ব 
তিন শিক্ষক আর পাঁচ শিক্ষার্থী দিয়ে চলছে সরকারি বিদ্যালয়
তিন শিক্ষক আর পাঁচ শিক্ষার্থী দিয়ে চলছে সরকারি বিদ্যালয়
কলকাতায় যুদ্ধের প্রস্তুতি মমতা সরকারের
কলকাতায় যুদ্ধের প্রস্তুতি মমতা সরকারের