X
শনিবার, ১৮ মে ২০২৪
৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
৪০০তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

শেক্সপিয়ার এমনভাবে পাঠ করা উচিৎ ঠিক যেমনটি আমরা মঞ্চে দেখি : মালবিকা সরকার

অনুবাদ : দুপুরচন্দ্র
২৩ এপ্রিল ২০১৬, ১০:২৪আপডেট : ২৬ এপ্রিল ২০১৬, ১৪:২০

মালবিকা সরকার মালবিকা সরকার প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ভাইস চ্যান্সেলর এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক। তিনি জন মিল্টন বিশেষজ্ঞ। ২০১২ সালে শেক্সপিয়ার ইন বেঙ্গল নামে একটি ওয়েব ম্যাগাজিনে তাঁর এই সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়। আলাপচারিতায় উঠে এসেছে তাঁর ছাত্রাবস্থায় পশ্চিমবঙ্গে কীভাবে শেক্সপিয়ার পড়ানো হত এবং ক্যাম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর ধরন। সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন, পারমিতা চক্রবর্তী ও অভিষেক সরকার।  

 

 






প্রশ্ন : আপনার বিএ ও এমএ ডিগ্রি শেষ হয় কোন বছরে?

উত্তর : বিএ টা ১৯৬৮ এবং এমএ ১৯৭০ সালে।
প্রশ্ন : কোন প্রতিষ্ঠান?
উত্তর : প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বিএ। এমএ করেছি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এরপর পুনরায় বিএ ও এমএ করেছি ক্যাম্ব্রিজ ইউনিভার্সিটিতে।
প্রশ্ন : শেক্সপিয়ার পাঠের সঙ্গে প্রথম পরিচয়ের সূত্রতা জানতে চাই? স্কুলে নাকি কলেজে?
উত্তর : স্কুলে আমার ইলেকটিভ ইংলিশ ছিল। পরিচয়টা তখনই হয় টুয়েলভথ নাইট এর মাধ্যমে।
প্রশ্ন : স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাসের কোর্সগুলো কারা নিতেন?
উত্তর : প্রেসিডেন্সিতে আমরা বেশ কিছু চমৎকার শিক্ষক পেয়েছিলাম। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন- তারকনাথ সেন, প্রফেসর শৈলেন সেন, অরুণ সেনগুপ্ত এবং অমল ভট্টাচার্য। তোমরা কল্পনাও করতে পারবে না, শেক্সপিয়ার পড়ানোর জন্য কত ভালো শিক্ষক ছিলেন আমাদের। তাঁরা প্রত্যেকে এক একজন শেক্সপিয়ার বিষয়ে স্কলার।
প্রশ্ন : শেক্সপিয়ার কীভাবে পড়ানো হত?
উত্তর : টিচিংটা কখনো পারফরমেন্স রিলেটেড ছিল না। তারক বাবু ছিলেন একেবারেই ব্যতিক্রমী। আমরা সবাই তাঁর ক্লাসে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনতাম। তাঁর পছন্দের বিষয় ছিল শেক্সপিয়ারের শর্ট লাইনস। তিনি আমাদেরকে ম্যাকবেথ পড়াতেন। সবসময় ক্লাসে আসতেন দেরি করে। সাড়ে চারটের আগে তাঁকে কখনো আসতে দেখিনি। পড়াতেন সন্ধ্যা পর্যন্ত। সিঁড়ির নিচে ছোট্ট শয়নকক্ষের মতো একটি রুমে বসে পড়াতেন তিনি। পাশেই ছিল লাইব্রেরি। তাঁর ম্যাকবেথ পড়ানোর স্টাইল আজীবন মনে থাকবে আমার। দেশের বাইরেও অনেকের কাছে ম্যাকবেথ বিষয়ে পড়েছি কিন্তু ওই সময়ের পড়া আমার আজীবনের সঙ্গী হিসেবে রয়ে গেছে। কিন্তু যখন তিনি শেক্সপিয়ারের শর্ট লাইনস নিয়ে বলতেন, তখন বলতেন- এখানে অনেক গ্যাপ আছে। এটা শুধুমাত্র চরিত্ররা স্টেজে পূরণ করতে পারবে। দেশের বাইরে গিয়ে আমি তাঁর লেখা শেক্সপিয়ারের শর্ট লাইনস নিয়ে নিয়মিত পড়তাম। ক্যাম্ব্রিজে আমার সুপারভাইজার অ্যান বারটনকে একবার দেখালাম সে লেখা। তিনি সেটা দেখে বললেন, ‘তিনি (তারক বাবু) কখনো স্টেজে শেক্সপিয়ারের নাটক দেখেননি’ এটা শুনে আমি খুব মর্মাহত হয়েছিলাম। কিন্তু পরে এটা আমি অনুভব করি। আমাদের শেখানোর ক্ষেত্রে এটা একটা বড় গ্যাপ। অমল বাবু, শৈলেন বাবু, তারক বাবু এবং অরুণ দাসগুপ্ত এঁরা কেউই শেক্সপিয়ারের নাটক দেখেননি। কিন্তু তাঁরা প্রত্যেকে আলাদাভাবে শেক্সপিয়ারের অন্য জগতের সন্ধান দিয়েছিলেন আমাদের। তারক বাবু খুব সুন্দর গল্প বলতে পারতেন। ম্যাকবেথের বিভিন্ন দৃশ্য তিনি খুব সুন্দর করে বর্ণনা করতেন। লাইব্রেরি থেকে আমাদের জন্যে চমৎকার ইলাসট্রেশন করা বই নিয়ে আসতেন। ম্যাকবেথের স্লিপওয়াকিং দৃশ্যগুলো এমনভাবে বর্ণনা করতেন যেন আমরা শেক্সপিয়ারের জগতে ঢুকে যাই। লিটারি পারফরমেন্সের মাধ্যমে তিনি আমাদেরকে শেক্সপিয়ারের পৃথিবীতে নিয়ে গিয়ে চমৎকৃত করতেন। তিনি আমাকে খুব যত্ন করতেন। আমার গাইড টিচার ছিলেন তিনি। আর তারক বাবুর টিউটোরিয়াল হওয়া মানে প্রেসিডেন্সিতে বিশাল ব্যাপার। তিনি আমাকে তাঁর বাড়িতে ডাকতেন, এবং অ্যাজ ইউ লাইক ইট অথবা ম্যাকবেথ নিয়ে আলোচনা করে বোঝাতেন। ম্যাকবেথ আমাদের টেক্সট হওয়াতে সেটা সম্পর্কে ধারণা ছিল কিন্তু তারক স্যারের কথা ছিল শেক্সপিয়ারের সব জানতে হবে। তিনি আমাকে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করতেন। সেগুলোর উত্তর না দিতে পারলে খুব লজ্জা লাগতো। এসব কারণে পুরো শেক্সপিয়ার আমাকে আত্মস্থ করতে হয়েছিল। শৈলেন সেন স্যারের সুন্দর হাসি স্মরণযোগ্য। তিনি আমাদের অ্যাজ ইউ লাইক ইট পড়াতেন। টেক্সচুয়াল বিষয়াদি নিয়েই তাঁর আগ্রহ ছিল বেশি। অমল ভট্টাচার্য শেক্সপিয়ার পড়াতেন না। তিনি মূলত কার্লাইল পড়াতেন। এরপর তিনি দান্তে সম্পর্কে বলতেন, যদি তুমি দান্তে না পড়ো তাহলে ‘হিরোস এবং হিরো ওরশিপ’ বিষয়টি বুঝবে কেমনে? তাঁর পড়ানোর মধ্যে চারভাগের তিনভাগ থাকতো দান্তে একভাগ কার্লাইল। অমল বাবুর মেথডটা ছিল তারক সেন ও শৈলেন সেন এর থেকে আলাদা। তিনি থিম ও আইডোলজি নিয়ে কথা বলতেন। পুরো টেক্সট ফোকাস করতেন না তিনি। অরুণ দাসগুপ্ত এর বিষয় ছিল, সিনগি’র ‘রাইডারস টু দি সি’। অমল বাবুর মতো তাঁর পাঠদানের ভেতর থাকতো তিনভাগ পোয়েটিকস এবং গ্রিক ট্রাজেডি বাকি একভাগ রাইডারস টু দি সি। কিন্তু তাঁর পেশন ছিল হ্যামলেট। শেক্সপিয়ারের ভেতর বাড়ির অনেক খবরই তিনি আমাদেরকে জানাতেন। সুতরাং আমি মনে করি, এসব কিছু মিলে শেক্সপিয়ার সম্পর্কে আমরা গুরুত্বপূর্ণ অনেক কিছুই জানতে ও শিখতে পেরেছিলাম। যেটা আমাদের সারাজীবন ধরে কাজে দিয়েছে। এটাই ছিল প্রেসিডেন্সি।
প্রশ্ন : আর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়?
উত্তর : এখানে আমি মাত্র দুই বছর ছিলাম। এখানেও আমি শেক্সপিয়ার সম্পর্কে জেনেছিলাম। যখন আমি বিএ ডিগ্রিটা শেষ করলাম, তখন আমার সিদ্ধান্ত অক্সফোর্ডে যাওয়া। পরবর্তীতে ব্যক্তিগত কারণে সেখানে যাওয়া হয়ে ওঠেনি। এরপর তারক সেন আমাকে ডেকে বললেন, ‘এখন কী করছো?’ আমি বললাম এমএ করতে চাই। তিনি আমাকে বললেন, ‘তুমি সোজা যাদবপুর যাও, প্রফেসার সুবোধ (সুবোধ চন্দ্র সেনগুপ্ত) বাবুর ডিপার্টমেন্টে। কিন্তু আমি ভর্তি হবার পর তিনি চলে গেলেন। তাঁর ক্লাস আমি পাইনি। আমি নিশ্চিত সেখানে অনেক ভালো শিক্ষক ছিলেন কিন্তু প্রেসিডেন্সির মতো সেখানে আমি ঠিক মানিয়ে উঠতে পারিনি। আমি ক্লাসে যেতাম, শেক্সপিয়ার পড়তাম কিন্তু এটা খুব বেশি প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি আমার জীবনে। আজ যদি তুমি আমাকে জিজ্ঞেস করো, কে ক্লাস নিতো? সত্যিই মনে করতে পারবো না। প্রেসিডেন্সির অভিজ্ঞতাটা ছিল চমৎকার। পরবর্তীতে কোথাও সেটা পাইনি, এমনকি ক্যাম্ব্রিজেও না। অবশ্যই ক্যাম্ব্রিজের অভিজ্ঞতাটাও ছিল সুপার কিন্তু সেটা অন্যভাবে। যাহোক যাদবপুরে মিল্টন, ড্রাইডেন ও কিছু রোমান্টিক ক্লাস খুবই ভালো লেগেছিল। কিন্তু শেক্সপিয়ারের অভিজ্ঞতা তেমন ভালো ছিল না। এটাই হল মূল বিষয়। যাদবপুর এখন অনেক পরিবর্তিত হয়েছে কিন্তু আমি ছাত্র থাকাকালীন সময়ে তেমন ভালো লাগেনি। এখন যদি আমাকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করতে পারা শিক্ষকের নাম আলাদা করে জানতে চাওয়া হয়, তবে সেটা অবশ্যই তারক সেন।
প্রশ্ন : ক্লাসে শিক্ষকরা নাটকের দৃশ্যগুলো কী অভিনয় করে বোঝাতেন?
উত্তর : কখনো না।
প্রশ্ন : শিক্ষকরা আলাদা করে উচ্চারণের প্রতি জোর দিতেন কী?
উত্তর : মাঝে মাঝে, সবসময় না।
প্রশ্ন : অর্থহীন শব্দ এবং যৌন রেফারেন্স এড়িয়ে যেতেন কী?
উত্তর : ঠিক এড়িয়ে যাওয়া নয়। তবে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করতেন না। নির্দিষ্ট করে দেখানোর পর কখনো আমাদের মুখ লজ্জায় লাল হয়ে যেতো। ঠিক ফাঁকিবাজি নয়, তবে ব্যাখ্যা করা যেতো না। শেক্সপিয়ারের অভব্য বিষয়গুলো নিয়েও আলাপ করতাম আমরা। কিন্তু সেগুলো ক্লাসে কখনো ব্যাখ্যা করতাম না।
প্রশ্ন : নাটকের আর্থ-ঐতিহাসিক বিষয়টা কতটুকু আলোচনা হত?
উত্তর : আমাদের প্রত্যেক শিক্ষক আর্থ-ঐতিহাসিক বিষয়টা নিয়ে খুব যত্নবান ছিলেন। আর্থ-ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েই আমরা ক্লাসে টেক্সটে মনোযোগী হতাম। আমরা যখন ছাত্র ছিলাম তখন আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটটা ভিন্ন ছিল। সব সময় সেটা এক থাকেও না। তবে শেক্সপিয়ার পড়ার সময় আমরা ইংল্যান্ডের ডিটেইল ইতিহাসটা নিয়ে আলোচনা করতাম। এটা নিয়ে প্রচুর আলোচনা হতো ক্লাসে বসেই। কোন সময়ে কোন রাজা বা রানি ছিল এগুলো আমরা ভালো মতো পরিষ্কার ধারণায় রাখতাম।
প্রশ্ন : শ্রেণিকক্ষে শেক্সপিয়ারের সমসাময়িক অন্যান্য নাট্যকরদের কি সমান গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করা হত?
উত্তর : ওই সময়ের সবাই গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনায় আসতেন। তাঁদের সবার সম্পর্কে আমরা জানতাম। বিশেষ করে জেকোবেন পিরিয়ড পর্যন্ত আমরা ভালো ধারণা পোষণ করতাম। তবে শেক্সপিয়ারের সঙ্গে তেমন তুলনা করা হতো না।
প্রশ্ন : ছাত্ররা কী স্বাধীনভাবে চিন্তা করে শিক্ষককে চ্যালেঞ্জ করতে পারতো?
উত্তর : ছাত্ররা অবশ্যই স্বাধীনভাবে চিন্তা করতো, তবে শিক্ষকদের চ্যালেঞ্জ করতো না শ্রেণিকক্ষে। কিন্তু টিউটোরিয়ালে এটা সহজ হতো অনেক। আমরা স্বাধীনভাবে চিন্তা করে কিছু বের করলে সেটা আমাদের পরীক্ষায় ভালো মার্কস পেতে সাহায্য করতো। সুতরাং আমরা নিজেরা আলাদা আলাদা খুব হোমওয়ার্ক করতাম।
প্রশ্ন : কী ধরনের এডিশন ও সমালোচনামূলক উপাদান নির্ধারিত ছিলো আপনাদের জন্য? মানে কী ধরনের বই ব্যবহার করতেন আপনারা?
উত্তর : সবসময় ওল্ড অর্ডেন শেক্সপিয়ার। এটা সবসময় থাকতো আমাদের সঙ্গে। তবে এখানে আমরা খুব বেশি জার্নাল পেতাম না শেকসপিয়ার সম্পর্কে। সেই জন্যে আমরা নিজেদের ভেতর আলাপ করে ভাবতাম আমাদের জাতীয় গ্রন্থাগারে যাওয়া উচিৎ। ওখান থেকেই আমরা সব সংগ্রহ করতে পারবো। কলকাতাতে শেক্সপিয়ারের জার্নাল ও বই সম্পর্কে অনেক লিস্ট ছিল। এসব নাম আমাদেরকে খুব মোহিত করতো। সুতরাং আমরা বুঝতে পেরেছিলাম এগুলো ব্যবহার করতে হলে আমাদেরকে জাতীয় গ্রন্থাগার কিংবা প্রেসিডেন্সি লাইব্রেরিতে যেতে হবে।
প্রশ্ন : পরীক্ষা পদ্ধতি ও প্রশ্ন কাঠামো সম্পর্কে বলবেন কী?
উত্তর : দুই প্রকারের প্রশ্ন হতো। তার কারণ হল, প্রেসিডেন্সি কলেজ ছিল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশ। সেইজন্যে পরীক্ষার প্রশ্ন করতো কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। তারক, অমল, শৈলেন কিংবা অরুণ স্যার নন। তাঁরা মনে করতেন এটা খুব পোর স্টান্টার্ডের প্রশ্ন। কিন্তু কলেজে থাকাকালীন এসব আমাদের ফেইস করতে হতো। তবে কলেজে ক্লাস টেস্ট, হাফ ইয়ারলি পরীক্ষা এগুলোর প্রশ্ন আলাদা ছিল। এখানে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো হাত ছিল না। আমাদের পার্ট ওয়ানের আগে প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রশ্ন কাঠামো অনেক আলাদা ছিল। পার্ট টু তে এসে প্রফেসর তারক সেন পুরো ক্লাসে অনেকক্ষণ ধরে ক্লাস নিতেন। ৪.৩০ টা থেকে রাত ৯.৩০ পর্যন্ত। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্ন কাঠামো নিয়ে দীর্ঘক্ষণ আলাপ করতেন। প্রশ্নগুলো কীভাবে আয়ত্বে আসবে সে বিষয় নিয়ে তিনি আমাদের নানা রকমের পরামর্শ দিতেন। এর অর্থ এই নয় যে, তিনি আমাদেরকে পরীক্ষার প্রস্তুতি কিছুটা হতাশ করে দিতেন, তিনি ভিন্নভাবে এটা উপস্থাপন করতেন। আমরা সবসময় সেটা অনুসরণ করতে পারতাম না। তবে তিনি ফাইনাল পরীক্ষার আগে বরাবরই আমাদের জন্যে প্রচুর পরিশ্রম করতেন।
প্রশ্ন : তিনি কী প্রধান ছিলেন?
উত্তর : হ্যাঁ।
প্রশ্ন : শিক্ষকরা কী শেক্সপিয়ারের মঞ্চ ও চলচ্চিত্র নিয়ে কোনো আলোচনা করতেন কী?
উত্তর : অবশ্যই। সেটা তাঁরা করতেন। তাঁরা মঞ্চের ইতিহাস ও কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রোডাকশন নিয়ে আলাপ করতেন। তবে তাঁরা সবচেয়ে বেশি আলাপে গুরুত্ব দিতেন ক্লাসিককে।
প্রশ্ন : টেক্সটের সঙ্গে মঞ্চের সম্পৃক্ততা কতটুকু?
উত্তর : নেই। দুটোয় পৃথক। মঞ্চে ছেলেরা মেয়েদের পোশাক পরে মেয়ে সেজে অভিনয় করতো। মঞ্চে অভিনয়ের মাধ্যমে তারা সাধারণের মনোযোগ আকর্ষণ করতো বেশি।
প্রশ্ন : প্রতিষ্ঠানে শেক্সপিয়ারের নাটকের কোনো পারফরম্যান্স হতো কীনা?
উত্তর : আমার সময়ে হতো না। আমাদের সময় সহপাঠিদের মধ্যে যারা পরবর্তীতে নিজেদেরকে শিক্ষক কিংবা পারফরমার হিসেবে ভাবতো, তাদের মধ্য থেকে একজনই শিক্ষক হয়েছিল। তবে সে উনিশ শতকের সাহিত্য বিশেষজ্ঞ ছিল, শেক্সপিয়ার বিষয়ে নয়। আমি শুধু আমার এখানকার সহপাঠিদের কথা বলছি। যদি ক্যাম্ব্রিজের কথা বলি, ওখানে পিটার হল্যান্ড ছিল আমার সহপাঠি। আমরা খুব ছোট গ্রুপে ক্লাস করতাম। তবে এখানে একজন শিক্ষক হয়েছিল, তবে তার আগ্রহ শেক্সপিয়ার ছিল না। পারফরম্যান্সের দিকে কেউ যায়নি। অর্পণা সেন ছিল আমার এক বছরের সিনিয়র। আমরা পরস্পরকে খুব ভালো করে চিনতাম। কিন্তু আমি মনে করি, আমাদের শিক্ষকদের সঙ্গে তার একটা ঝামেলা হয়েছিল। তিনি বিএ টা শেষ করেননি। অশোক ঘোষকে চেনো? সে আর অর্পণা সেন একই বর্ষে ছিল।
প্রশ্ন : শেক্সপিয়ার অধ্যাপনা বিদ্যাতে উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন হয়েছে কি? কিংবা শিক্ষার্থীদের মধ্যে নতুন কোনো প্রতিক্রিয়া?
উত্তর : অবশ্যই। এই মুহূর্তে আমি প্রেসিডেন্সি কলেজে দি টেম্পেস্ট পড়াচ্ছি, এটা আমার আগ্রহের জায়গা। আমি প্রচুর পরিমাণে নতুন ইতিহাসবাদ বিষয় ব্যবহার করি। সৌভিক মুখার্জি শেক্সপিয়ার পড়ানোর সময় ডিজিটাল উপাদান ব্যবহার করে খুব নাটকীয়ভাবে উপস্থাপন করেন। এটা খুব কার্যকরী। ভিডিও গেমের মাধ্যমে তিনি হ্যামলেট পড়ান। আমি মনে করি এটা খুব আকর্ষণীয়ও বটে। সুতরাং বুঝতেই পারছো এখনকার পড়ানোর মধ্যে অনেক পরিবর্তন এসেছে।
প্রশ্ন : আপনি কী মনে করেন শেক্সপিয়ারকে অতি মূল্যায়ন করা হয়েছে?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : বর্তমানে শেক্সপিয়ারকে নিয়ে যে ডি-গ্লামারিজিং ও ডি-ক্যানোনিজিং (সিদ্ধপুরুষ বানানো) করা হচ্ছে সে বিষয়ে আপনার কী প্রতিক্রিয়া?
উত্তর : এটা আধুনিক সংস্কৃতির অংশ। লোকজন ভাবে, এটা খুব স্মার্ট বিষয়। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা যায় এই বিষয়টি সিদ্ধপুরুষকে নীচে নামিয়ে দিচ্ছে। এটা সবসময় নয়, তবে মানুষ এটা বিশ্বাস করে। কারণ এটা দেখা ও গ্রহণ করাটা তারা স্মার্ট মনে করে। এটা আমার নিজের মত।
প্রশ্ন : পশ্চিমে ছাত্রদের মধ্যে শেক্সপিয়ার সহজ ভাষায় কিংবা সারমর্ম আকারে পড়তে খুব উৎসাহী দেখা যায়, এ ধরনের চর্চাকে আপনি কী মনে করেন?
উত্তর : এখন এরকম কিছুটা হচ্ছে। কিন্তু এ পদ্ধতি আমার একেবারেই পছন্দ নয়। আমি খুবই পুরানো ঢঙের। সুতরাং আমি মনে করি, শেক্সপিয়ার এমনভাবে পাঠ করা উচিৎ ঠিক যেমনটি আমরা মঞ্চে দেখি। এটার নিজস্ব ভাষায় পাঠ করাই উত্তম।


এ সম্পর্কিত আরও লেখা পড়তে ক্লিক করুন-

জানা-অজানার শেক্সপিয়ার

শিক্ষকরা সক্রিয়ভাবে কোনো মন্তব্য বা প্রশ্ন করতো না : কায়সার হক

 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
খারকিভে হামলা আরও তীব্র করবে রাশিয়া, আশঙ্কা ইউক্রেনের
খারকিভে হামলা আরও তীব্র করবে রাশিয়া, আশঙ্কা ইউক্রেনের
যে জাদুঘরের পরতে পরতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস
যে জাদুঘরের পরতে পরতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস
৩০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবি তৃতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মচারীদের
৩০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবি তৃতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মচারীদের
কতটা এগোলো সৌদি-ইসরায়েল সম্পর্ক স্থাপনে মার্কিন উদ্যোগ?
কতটা এগোলো সৌদি-ইসরায়েল সম্পর্ক স্থাপনে মার্কিন উদ্যোগ?
সর্বাধিক পঠিত
অতিরিক্ত ডিআইজি মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ ইসির
অতিরিক্ত ডিআইজি মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ ইসির
যাত্রীর জামাকাপড় পুড়িয়ে পাওয়া গেলো সাড়ে চার কোটি টাকার স্বর্ণ
যাত্রীর জামাকাপড় পুড়িয়ে পাওয়া গেলো সাড়ে চার কোটি টাকার স্বর্ণ
ইসরায়েলগামী অস্ত্রের জাহাজ নোঙর করতে দেয়নি স্পেন
ইসরায়েলগামী অস্ত্রের জাহাজ নোঙর করতে দেয়নি স্পেন
দাম কমেছে সবজি-মাংসের, তবু পরিস্থিতি অস্বাভাবিক
দাম কমেছে সবজি-মাংসের, তবু পরিস্থিতি অস্বাভাবিক
সুপ্রিম কোর্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের স্থান পরিদর্শন প্রধান বিচারপতির
সুপ্রিম কোর্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের স্থান পরিদর্শন প্রধান বিচারপতির