X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১
পথে নেমে পথ খোঁজা

বিখ্যাত লেখক-বুদ্ধিজীবীদের চেনাজানার সুযোগ ।। পর্ব—৪

মঞ্জু সরকার
০২ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৯:৫৬আপডেট : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৯:৫৮

সমসাময়িক লেখকদের মধ্যে লেখালেখি তথা পেশাগত মিলের কারণে তাদের পারস্পরিক চেনাজানা থেকে ভাই-বন্ধুসুলভ সম্পর্ক থাকাটা স্বাভাবিক। এমন সম্পর্ক পারস্পরিক সহযোগিতা, সমর্থন, এমনকি বিরোধ সৃষ্টির মাধ্যমেও পরস্পরের সৃজনকর্মে প্রণোদনা সৃষ্টি করে। আবার কখনো-বা তা সংঘশক্তি হিসেবে সামাজিক কোনো দায় পালনেও সহায়ক হয়। সাহিত্যজগতে বিভিন্ন কালপর্বে এমন সম্পর্কের দৃষ্টান্ত খুঁজে পাওয়া যাবে। তবে লেখক-শিল্পীদের সংগঠিত শক্তির মূলে থাকে সামাজিক কোনো অঙ্গীকার পালনে দৃষ্টিভঙ্গির ঐক্য, অভিন্ন লক্ষ্য কিংবা আদর্শগত ভিত। সংঘশক্তির প্লাটফর্ম অথবা কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে কোনো সংগঠন, সাহিত্যপত্রিকা, ব্যক্তি-উদ্যোগ, এমনকি সাহিত্যের আড্ডাও। বর্তমান ডিজিটাল যুগে প্রধান প্লাটফরম বার্তা কেন্দ্র হিসেবে কাজ করছে যেমন ফেসবুক ও আরো কিছু সোস্যাল মিডিয়া। যেভাবে আর যে মাধ্যমেই হোক, সমাজ বিকাশের নানা পর্যায়ে লেখক-শিল্পীদের এমন সম্পর্ক ও সম্মিলন দেখা গেছে।

শুধুই লেখক হওয়ার অ্যাম্বিশন চূড়ান্ত করে ঢাকায় আসার আগে মূলত বই পড়েই আমি প্রিয় লেখকদের সান্নিধ্য ও প্রেরণা লাভ করেছি। তাদের সৃজনকর্ম ছাড়াও সাহিত্য সম্পর্কিত বই, লেখকদের স্মৃতিকথা, সাক্ষাৎকার ও আড্ডাবিষয়ক বইগুলি (যেমন কল্লোল যুগ, সম্পাদকের বৈঠকে, লেখকের কথা) ইত্যাদি সাগ্রহে পড়ে প্রিয় লেখকদের সঙ্গলাভের আনন্দ ও প্রেরণা পেয়েছি। বাস্তবে তারা অনেকেই তখন ছিলেন পরলোকের বাসিন্দা। জীবিত যারা, ভৌগোলিক ও সামাজিকভাবে এত দূরত্বে তাদের অবস্থান, চোখের দেখা দেখেও ধন্য হওয়ার উপায় ছিল না। জীবিতদের মধ্যে লেখক পরিচয়টি ছাড়াও অধ্যাপক, ডাক্তার, বিচারক, আমলা, সম্পাদক ইত্যাদি নানারকম পেশা ও পদবির পরিচয়েও প্রতিষ্ঠিত ছিলেন অনেকেই। কিন্তু লেখকদের এসব বাড়তি পরিচয় নিয়ে আমার আদৌ আগ্রহ ছিল না। ভাবতাম, লেখককে নিছক অভিজ্ঞতা যোগানোই এসব পেশা-পদবির কাজ। লেখালেখিটাই তাদের আসল ধ্যানজ্ঞান। এ কারণে কোনোরকম পেশা-পদবির তোয়াক্কা না করেই আমৃত্যু যারা শুধু লেখালেখির সাধনায় মগ্ন থাকেন, তাদেরকে মনে হতো প্রকৃত কবি-লেখক। তাদের মধ্যে রবীন্দ্র, নজরুল, শরৎ ও মানিক ছাড়াও, আমার যৌবনেও জীবিত তারাশঙ্কর এবং সমরেশ বসু প্রেরণা দিতেন বেশি। নিজেও তাদের মতো সার্বক্ষণিক লেখক হতে চেয়ছিলাম বলেই হয়তো।

কিন্তু সাহিত্যের চেয়ে জীবন অনেক বড়, বিচিত্র ও বহুমুখি তার চাহিদা। শুধু লেখক হওয়ার জন্য ঢাকায় এসে এ সত্য না মেনে উপায় ছিল না। লেখক ছাড়াও সামাজিকভাবে কত পরিচয়ে যে পরিচিত হতে হয়েছে! বছর খানেক বেকার, লজিং ও প্রাইভেট মাস্টার, লাইব্রেরিয়ান, কনট্রাকটারের অ্যাসিসটেন্ট ইত্যাদি ছোটখাটো নানা পেশার পরিচয়ে পরিচিত হওয়ার পর জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রে চাকরিটা পেয়ে মহাখুশি হলাম। খুশির একটা বড় কারণ ছিল, অফিসের বিক্রয় বিভাগে নতুন নতুন বই দেখার সুযোগ ছাড়াও বিখ্যাত লেখকদের কাছে থেকে দেখতে পাব। কবি কায়সুল ভাইকে তো রংপুরে থাকতেই জানতাম। কলকাতার বিখ্যাত অন্নাদাশঙ্কর রায়, বুদ্ধদেব বসু, আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ, জীবনানন্দ দাশ, শিবরাম চক্রবর্তীসহ বিখ্যাত অনেকের সঙ্গেই তার জানাশোনা ও পত্র যোগাযোগের কথা শুনেছিলাম। চল্লিশোর্ধ বয়সে পৌঁছেও তো তিনি শুধু সাহিত্য ও সাহিত্যিকদের নিয়ে রংপুরেই পড়ে ছিলেন। ঢাকায় তার কবিবন্ধু শামসুর রাহমানসহ অন্যদের সুপারিশে গ্রন্থকেন্দ্রের এই চাকরিতে যোগ দিয়েছেন। অন্যদিকে সরদার জয়েন উদ্দীন তো প্রবীণ কথাসাহিত্যিক। বিখ্যাত অন্য লেখকদের সঙ্গে তার যোযোযোগ আছে নিশ্চয়। কায়সুল ভাইয়ের মতো এসব লেখকও নিশ্চয় আমাকে পিচ্চি লেখক ভাই হিসেবে স্নেহের সঙ্গে নেবেন।

বই নিয়ে নানারকম আলোচনা-সেমিনার করা গ্রন্থকেন্দ্রের নিয়মিত কাজ ছিল। এসব অনুষ্ঠানে সভাপতি, প্রধান অতিথি, আলোচক এবং শ্রোতা হয়েও দেশের বিখ্যাত কবি, লেখক, বুদ্ধিজীবী, অধ্যাপক ও তরুণ কবি-লেখকও আসেন। পরিচালকের রুমে কি কায়সুল ভাইয়ের টেবিলেও নানা উপলক্ষ্যে এবং নিছক আড্ডা দিতেও আসেন অনেকে। আমি যেহেতু পরিচালকের কক্ষের দরজার কাছে এবং কায়সুল ভাইয়ের টেবিলের কাছেই বসতাম, হাপুস নয়নে সবাইকে চেয়ে চেয়ে দেখতাম শুধু। কান পেতে শোনারও চেষ্টা করতাম। এভাবে অল্পদিনের মধ্যে বিখ্যাত ও বিশিষ্টদের অনেককেই দেখা হলো।

বুদ্ধিজীবী-লেখক বদরুদ্দীন উমরের সঙ্গে আলাপরত লেখক বাংলাদেশ স্বাধীন হবার আগে থেকেই লেখক বুদ্ধিজীবী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন, স্বাধীনতার পর তারা উপাচার্য, উপদেষ্টা, অধ্যাপক, সম্পাদক বা পরিচালক ইত্যাদি সরকারি মদদপুষ্ট পেশা-পদবিতে আরো বেশি সুপ্রতিষ্ঠিত। আবুল ফজল, সৈয়দ আলী আহসান, কবীর চৌধুরী , শওকত ওসমান, আবু জাফর শামসুদ্দীন, আহমদ শরীফ, সরদার ফজলুল করিম, আব্দুল্লাহ আল মুতী শরফুদ্দিন, আবুল হোসেন, আব্দুল কাদির, কাজী মোতাহার হোসেন, শামসুর রাহমান, রশীদ করীম, মুহম্মদ এনামুল হক, জহুরুল হক, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, রাবেয়া খাতুন, রিজিয়া রহমান, কামরুল হাসান, কাইয়ুম চৌধুরী, সাংবাদিক জহুর আহমেদ চৌধুরী, ওবায়দুল হক, ফয়েজ আহমেদ প্রমুখ প্রবীণ থেকে নিয়ে বহু তরুণ কবি-লেখককে কাছে থেকে দেখে ও চিনে ধন্য হতে লাগলাম। পরিচালক বা কায়সুল ভাইয়ের টেবিলে বসে তাদের ঘরোয়া আড্ডায় যোগ দেওয়ার উপায় ছিল না। তবে অনুষ্ঠানে মাইকে যখন তারা দাঁড়িয়ে বক্তৃতা করেন, বলা যায় আমি ছিলাম প্রধান মনোযোগী শ্রোতা। তার কারণ এটা আমার চাকরিরও অংশ ছিল। নোটবুক নিয়ে বসে বাংলা শর্টহ্যান্ডে আলোচকদের বক্তব্য নোট নিতাম। প্রেস রিলিজ বানিয়ে সব পত্রিকায় পাঠানো এবং কেন্দ্রের মাসিক ‘বই’ পত্রিকায় বড় করে প্রতিবেদন দেওয়া ছিল আমার দায়িত্ব। এই কাজটায় লেখক-সাংবাদিকসুলভ প্রতিভা দেখানোর ফুরসত ছিল খানিকটা। তারপরও বছর কয়েকের মধ্যে বিখ্যাত বিশিষ্ট জনদের একঘেয়ে বক্তৃতা শুনে শুনে কান পচে গিয়েছিল। কিংবা বলা যায় ইন্টেলেকচুয়াল বক্তৃতায় এলার্জি রোগে ধরে গিয়েছিল আমার। বক্তৃতা শোনা দূরে থাক, কারো কারো মুখ দেখতেও ইচ্ছে করত না আর। কারণটা বোঝাতে নিজের তরুণ বয়সের মেজাজ-মর্জির আরো খানিকটা পরিচয় খোলাসা করা দরকার।

বই পড়ার মতো জনসভায় ভাষণ শোনাও হবি ছিল আমার কৈশোর-যৌবনে। হাইস্কুলে উঁচু ক্লাসের ছাত্র যখন, উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের সময়ে অভ্যাসটা গড়ে উঠেছিল। কিন্তু সেসব ছিল সরকারবিরোধী গরম গরম রাজনৈতিক বক্তৃতা। যার বক্তৃতা শুনে বেশি উত্তেজিত বোধ করতাম, তাকেই মনে হতো বড় নেতা। রংপুরে থাকতেই মওলানা ভাসানী, শেখ মুজিব ছাড়াও বহু নেতার ভাষণ শুনেছি। মনে হতো, সরকারি জেল-জুলুম ও ক্ষমতার তোয়াক্কা না করে সাধারণ মানুষের স্বার্থে এরা জীবন উৎসর্গ করার প্রস্তুতি নিয়েই জন্মেছেন। স্বাধীনতার পর ঢাকায় এসে, পল্টনে ও পল্টন মাঠ বন্ধ হওয়ার পর বায়তুল মোকাররাম কিংবা গুলিস্তানের রাজপথে বিরোধী দলের রাজনৈতিক জনসভা হবার খবর শুনলেও মিস করতাম না। স্টেডিয়ামের খেলা দেখার মতো বাদামের ঠোঙাসহ সামনের দিকেই বসতাম। বিশেষ করে, স্বাধীনতার অব্যাবহিত পর জাসদের জনসভায় তরুণ তুর্কি নেতাদের ভাষণ-স্লোগান শুনে উত্তেজিত বোধ করতেও ভালো লাগত। দলের কর্মী চেনা দু-একজন বন্ধুও সঙ্গে থাকত অনেক সময়।

তরুণ বয়সে স্বার্থপর ও সুবিধাবাদী শব্দ দুটিকে ঘৃণা মেশানো গালি হিসেবে দেখতাম। পরিণত বয়সে এসে মেনেছি, অস্তিত্ব রক্ষার মৌলিক নিয়মে ও জেনেটিক কারণেও মানুষমাত্রই স্বার্থপর, আর সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে চাওয়াটাও প্রতিটি মানুষের স্বাভাবিক প্রবণতা। তারপরও যারা সমাজের সাধারণ মানুষের সুবিধা-অসুবিধার তোয়াক্কা না করে শুধু নিজের সুখ-সুবিধা বাড়াতেই তৎপর থাকে, তাদেরকে তরুণ বয়সে যেমন, এই প্রবীণ বয়সেও খারাপ ও ঘৃণিত লোক হিসেবে দূরে রাখতেই সচেষ্ট থাকি। অন্যদিকে যারা অন্যের সুবিধা-অসুবিধার ব্যাপারে সচেতন ও সহানুভূতিশীল, তাদেরকে মনে হয় ভালো লোক। রাজনীতি, সাহিত্য থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রে এই নীতি প্রয়োগ করে ভালো ও মন্দ মানুষ চেনার চেষ্টা করেছি।

গ্রন্থকেন্দ্রের অনুষ্ঠানে লেখক-বুদ্ধিজীবীদের চিনতে গিয়ে তাদের বক্তৃতায় ক্ষমতাসীনদের বিরোধিতা কিংবা দেশ-জনতার স্বার্থ খুঁজে পেতাম কদাচিত। অফিসে পরিচালক এবং আরো কেউ কেউ যেমন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্রতি আনুগত্য ও ভক্তি-ভালোবাসা প্রকাশে এক পায়ে খাড়া থাকে, বুদ্ধিজীবীদের জ্ঞানগর্ভ আলোচনার মূলেও যেন তেমনি কাউকে খুশি রেখে নিজের কিছু স্বার্থ বা সুবিধা আদায়ের মতলব। এটা ঠিক যে, মুক্তিযুদ্ধের সময়ে প্রায় সব লেখক-বুদ্ধিজীবীই বাঙালির স্বাধীনতার পক্ষে ছিলেন। কিন্তু সেই পক্ষপাতের জোরে স্বাধীন দেশে বাংলা একাডেমি, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র কিংবা বিভিন্ন সরকারি শিক্ষা-সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে জড়িত থেকে তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে তৎপর, নাকি স্বাধীনতার সুফল নিজের ঘরে তুলতেই বেশি ব্যস্ত? মোটাদাগে এ প্রশ্নটার জবাব খুঁজতাম বলে দালাল সুবিধাবাদী ও ধান্ধাবাজ হিসেবে অধিকাংশ লেখক-বুদ্ধিজীবীকে খারিজ করতে লাগলাম। তাদের বক্তৃতাও আর তেমন আকৃষ্ট করত না। মনোযোগ দিয়ে নোটও নিতাম না।

আজ তিন-চার যুগ পরে পেছনের কথা ভাবতে বসে নিজেকে প্রশ্ন করি, কয়েক বছর ধরে নানারকম আলোচনা-অনুষ্ঠানে লেখক-বুদ্ধিজীবীগণের এত যে জ্ঞানগর্ভ বক্তৃতা শুনেছি, শ্রোতা হিসেবে তাতে আমার চেতনা কি সমৃদ্ধ হয়নি? সবাই তো ঢালাওভাবে সমান দালাল বা সুবিধাবাদী ছিলেন না। যাদের নাম উল্লেখ করেছি এবং করিনি যাদের, তাদের অনেকের সঙ্গেই পরবর্তীকালে আমার ব্যক্তিগত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক হয়েছে, সম্পর্কজাত অনেক স্মৃতিও আছে বিস্তর। পরে সময় পেলে তাদের কথা আলাদাভাবে লিখব হয়তো। সত্তর দশকে নানা অনুষ্ঠানে শোনা লেখক বুদ্ধিজীবীর গলাবাজি ঢালাওভাবে কেবলই কান-পচানো ভাষণ ছিল না অবশ্যই। মতলববাজরাও অনেক সময় ভালো বক্তৃতা দিতে পারে। কাজেই কেউ যদি আজ আমার অভিজ্ঞতায় স্মরণীয় কোনো অনুষ্ঠান কিংবা উল্লেখযোগ্য বক্তৃতার স্মৃতি শুনতে চান, কোনটা এবং কার কথাটা আগে বলব?

একদিন, রশীদ করীমের ‘আমার যত গ্লানি’ উপন্যাসের প্রকাশনা উৎসবে এক আলোচক সাহিত্যে যৌনতার ব্যবহার নিয়ে লেখকের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছিলেন। শ্রোতার আসনে তরুণ লেখক-কবিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কবি নির্মলেন্দু গুণও। তিনি বসে থেকেই প্রতিবাদ করলেন- এইটা কী বলেন, সমরেশ বসুর ‘বিবর’, ‘প্রজাপতি’ আছে না? অধ্যাপক বক্তার প্রশস্তিময় ভাষণ ভুলে গেছি, কিন্তু প্রতিবাদী শ্রোতার কথাটা আমারও সমর্থনযোগ্য মনে হয়েছিল বলে মনে আছে। অন্য একদিনের আলোচনায় রশীদ করীমও একটা ভালো কথা বলেছিলেন। অনেক সমালোচক বইয়ে কী নেই, যা লেখা হয়নি, তার ওপরে বেশি গুরুত্ব দিয়ে পাণ্ডিত্যপূর্ণ আলোচনা করেন। কিন্তু যা লেখা হয়েছে তার সম্পর্কে আলোচনা হয় কম। মনে হয়েছিল, এটা আমারও কথা। আর একটি অনুষ্ঠানে কবি হাসান হাফিজুর রহমান আমাদের সাহিত্য-সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে গতানুগতিক পুনঃপৌনিকতা প্রসঙ্গে ফরাসি নাট্যকার পল ভেলেরিকে কোট করে বলেছিলেন : অন্ধকার মঞ্চে যেখানে আলো পড়েছে, একজন হারানো চাবি খুঁজছিলেন সেই আলোতে। তাকে ঘুরেফিরে এক জায়গাতেই চাবিটা খোঁজার কারণ জিজ্ঞেস করলে সে জবাব দিয়েছিল, আলোটা এখানেই পড়েছে যে! আমাদের দেশেও কোনো ব্যক্তি বা ঘটনা যখন লাইম লাইটে আসে, সবাই হুজুগে-গুজবে সেই আলোতেই হুমড়ি খেয়ে পড়ে, অন্যত্র আলো ফেলে সত্য খোঁজার চেষ্টা হয় না। এমন পরিস্থিতি দেখলে হাসান ভাইয়ের ব্যাখ্যাটা নিজের কথার মতোই মনে পড়ে। সরদার ফজলুল করিমের অনুবাদে প্লেটোর ‘রিপাবলিক’ গ্রন্থের প্রকাশনা উৎসবেও আনেক ভালো কথা শুনেছিলাম। ‘মধ্যবিত্তের আত্মবিকাশ’ গ্রন্থটির প্রকাশনা উৎসবে গ্রন্থকার কমরুদ্দীন আহমদ বাংলাদেশ রাষ্ট্রের উদ্ভব ও স্বাধীন দেশের রাজনীতি ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নিয়েও চমৎকার আলোচনা করেছিলেন মনে আছে। কবীর চৌধুরীর বক্তৃতায় মার্ক টোয়েনের একটা কোটেশন শুনে খুব হেসেছিলাম, আত্মহাসির স্মৃতি মনে থাকলেও কোটেশনটা ভুলে গেছি। সৈয়দ আলী আহসানের শিল্পকলাবিষয়ক বক্তৃতা এত মুগ্ধ হয়ে শুনেছিলাম যে, আজ আর কিছু মনে নেই। আর প্রাবন্ধিক আবদুল হক, বক্তৃতা করতে গিয়ে কিছু বলতে পারছিলেন না, ভয়ে তার গলা শুকিয়ে পা কাঁপছিল। ফলে তার না বলা কথাগুলো জানার জন্য তার বই পড়ি এবং ভালো লেগেছিল লোকটাকে ও তার লেখাও। আবার সৈয়দ শামসুল হক ও হুমায়ুন আজাদের বক্তৃতা ও বাকভঙ্গি কৃত্রিম মনে হতো। মানে দাগ কাটত না অনেকের মনোযোগী আকর্ষণী চমকপ্রদ কথা। এভাবে, স্মৃতির কোঠায় আলো ফেলে আরো কিছু বিশিষ্ট ব্যক্তির কথাবার্তা মনে করা যাবে হয়তো। কিন্তু কী লাভ তাতে?

বিস্মৃতিপ্রবণ বাঙালিজাতি ইতিহাসের শিক্ষা ভুলে যায়। কথাটা অনেকেই বলেন। আমিও তো অতিশয় আবেগপ্রবণ বঙ্গসন্তান। বইয়ে পড়া কিংবা বক্তৃতা-আলোচনায় শোনো শিক্ষণীয় অজস্র ভালো কথা বেমালুম হয়েছি। এত যে বই পড়ি, জ্ঞানীগুণীজনের কথাবার্তা শুনি, অন্যদের মতো লেখায় বা কথায় কোট করে আপন বিজ্ঞতা জাহির করতে পারি না। নিজের এ দুর্বলতা ঢাকতে ম্যাক্সিম গোর্কির একটি কথা মুখস্থ করেছি, ‘আমার মধ্যে যা কিছু উত্তম আছে তার জন্য আমি বইয়ের কাছে ঋণী।’ আমারও কথা তাই। বই পড়ে এবং সমাজে জ্ঞানীগুণীজনের যেসব কথা মনে দাগ কেটেছে, সেগুলো প্রয়োজন বা গ্রহণক্ষমতা ক্ষমতা অনুযায়ী নিজের হয়েছে। অন্যদিকে হজম যারা করতে পারে না, তারাই বেশি কোট করে পাণ্ডিত্য দেখায় বলে সন্দেহ জাগে। যাহোক, পেছন ফিরে তাকালে মনে হয়, লোকান্তরিত হয়েও স্মৃতিসত্তায় জারিত হয়ে যারা নিজের মধ্যে জেগে আছেন এখনো, আনুষ্ঠানিক বক্তৃতা শুনে নয়, বরং ঘরোয়া আড্ডায় ঘনিষ্ঠভাবে পেয়েছিলাম তাদের।

সত্তর দশকে গ্রন্থকেন্দ্রে পরিচালক কিংবা কায়সুল ভাইয়ের টেবিলে বিখ্যাত লেখক-কবিদের ঘরোয়া আড্ডা-আলোচনায় শরিক হওয়ার ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায় ছিলাম নিজে এবং আমার টেবিলের টাইপ রাইটারটি। প্রকাশিত লেখক হওয়ার আগে, সাবালক হতে না হতেই চাকরিতে ঢুকেছি। তারপরও হবু লেখক হিসেবে আমিও লেখক-পরিচালককে সরদার ভাই ডাকতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পিএ হিসেবে তাকে স্যার ডাকাই উচিত আমার। কথাটা নিজেই একদিন কায়দা করে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। এরপর স্যারই ডাকতাম তাকে। ঘনিষ্ঠ আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি। রুমে ডেকে নিয়ে মাঝেমধ্যে ডিকট্রেশন দিতেন। আর বছর খানিক অফিসে দ্বিতীয় কোনো টাইপিস্ট ছিল না বলে অফিসের সব রকম টাইপের কাজ আমাকেই করতে হতো। কাজেই নবীন লেখক বা পাঠক হিসেবে নয়, গ্রন্থকেন্দ্রে আগত লেখক-বুদ্ধিজীবীরা আমাকে টাইপিস্ট হিসেবে দেখে দৃষ্টিতে অবজ্ঞার ভাব ফোটাতেন যারা, আমিও তাদের মোটেও পাত্তা দিতাম না। তাদের আড্ডাতে অংশ নেওয়ার প্রশ্ন উঠত না। কিন্তু গায়ে পড়ে কেউ তুচ্ছতাচ্ছিল্য করতে এলে সহ্য হতো না। পরিচালকের বন্ধুস্থানীয় অনেক লেখক-বুদ্ধিজীবী তার রুমে ডেকে আমাকে ব্যক্তিগত কাজ টাইপ করতে বললে বেশ বিরক্ত বোধ করতাম। বলতে ইচ্ছে করত- আমি কি তোর বাপের চাকর? কিন্তু পরিচালক বললে বা সমর্থন দিলে করে দিতে হতো। শুধু তাই নয়, মন্ত্রণালয়ে ভালো বাংলা টাইপিস্টের আকাল বলে তার নির্দেশে মন্ত্রণালয়ে গিয়েও কাজ করতে হয়েছে কয়েকদিন। একদিন পরিচালকের ঘনিষ্ঠ একজন আমার কাছে ব্যক্তিগত কাজের আদেশ দিতে এলে লিখিত প্রতিবাদ করেছিলাম : ‘অফিসে আপনার সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক নেই। কাজেই ব্যক্তিগত কাজের আদেশ দিলে প্রকাশ্যে ঘৃণা দেখাতে বাধ্য হব।’ আমার চিরকুটটি নিয়ে চলে গিয়েছিলেন, এরপর আর ব্যক্তিগত কাজের আদেশ দেননি কখনো। পরিচালককে কী অভিযোগ জানিয়েছিলেন জানি না। মোটকথা আমাকে যারা পাত্তা দিত না, অপছন্দ করত, আমার মনেও অনুরূপ ডবল প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতো তাদের জন্য।

অফিসের বিক্রয় বিভাগে নতুন বই দেখা ও পড়ার সুযোগটি গ্রন্থকেন্দ্রের ছোট চাকরির বড় বোনাস ছিল। লাইব্রেরিতে সময় কাটানোর পুরোনো অভ্যাসে বইয়ের মাধ্যমে প্রিয় লেখকদের সঙ্গ ও শিক্ষা নিয়ে নিজের লেখক সত্তাকেও অনুপ্রাণিত রাখার চেষ্টা করতাম। এ ছাড়া মন খুলে কথাবার্তা বলে হালকা হওয়া এবং নেশা করে ক্ষোভদুঃখ ভোলা এবং আনন্দোত্তেজনার স্রোতে ভাসার জন্য সমবয়সী বন্ধু জুটেছিল কয়েকজন। একাত্তরে মুক্তিযোদ্ধা ছিল, স্বাধীন দেশেও নতুন মুক্তিযুদ্ধ করতে চাইছে- এরকম কিছু বিপ্লবী তরুণের সঙ্গেও আলাপ-পরিচয় ও বন্ধুত্ব হয়েছিল। রাজনৈতিক বন্ধুদের বেশিরভাগই জাসদ রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিল। সিরাজ শিকদারের সর্বহারা পার্টির এবং আব্দুল হকের আন্ডারগ্রাউন্ট পার্টিরও ক্যাডার ছিল দুজন। আমার মধ্যে বিপ্লবের যে কী আগুন দেখেছিল তারাই জানে, দলে ভেড়ানোর জন্য প্রায়ই আসত অফিসে। অফিসে কথা বলার সুযোগ না পেলে বাইরে নিরালায় কোথাও বসে আমাকে বিপ্লবী রাজনীতির জ্ঞান দিত। এদের প্রোরচনাতেই ছোটদের রাজনীতি, অর্থনীতি থেকে শুরু করে মার্কস-লেনিন, মাও সেতুং পড়তে শুরু করেছিলাম। বইও সরবারহ করত অনেকে।

শুধু লেখক হওয়ার জন্য ঢাকা এসেছিলাম সত্য, কিন্তু দেশপ্রেম ও দুর্দশাগ্রস্ত দেশবাসীর প্রতি ভালোবাসার আবেগ তো মিথ্যে ছিল না। তাই দেশ ও বিপ্লবী রাজনীতিক বন্ধুদেরও বোঝার চেষ্টা করতাম। কখনো-বা তাদের হতাশ করতে ঠাট্টাচ্ছলে সত্যি কথা বলতাম, ‘আমার দ্বারা আসলে শ্রেণি-সংগ্রাম আর বিপ্লব হবে না রে ভাই। কারণ সুন্দরী মেয়ে দেখলে আমার প্রেম করতে ইচ্ছে করে। তারচেয়েও বড় সমস্যা, মেয়েদের প্রেমে পড়লে সব ভুলে যাই।’ কিন্তু ওরা হাল ছাড়ত না। নারী-পুরুষ সম্পর্কের স্বাভাবিকতা, পেটিবুর্জোয়া মানসিকতা, মধ্যবিত্তসুলভ দোদুল্যমনতা ইত্যাদি খারাপ জিনিস বোঝাত। অফিসে সারাদিন যান্ত্রিক কাজের পর বিপ্লবী তত্ত্ব কিংবা বিপ্লবের রক্ত-আগুন কাঁহাতক আর ভালো লাগে?

অফিস ফাঁকি দিয়েও মাঝেমধ্যে বায়তুল মোকাররাম মার্কেট ঘুরে সুন্দরী ললনা ও তাদের মার্কেটিং দেখতাম। এ ছাড়া সাহিত্য-শিল্পের অনুরাগী সমবয়সী কয়েকজন অখ্যাত বন্ধুর সঙ্গে আড্ডা দিতাম। মাঝে মাঝে নেশার আসরে ওদের সঙ্গে মন খুলে কথাবার্তা বললেও নিজেকে হালকা লাগত। গ্রন্থকেন্দ্রে কিংবা শরিফ মিয়ার ক্যান্টিনে দেখা বিখ্যাত কবি-লেখকদের চেয়ে ওই সময়ে আমার জীবনে এ বন্ধুদের ভূমিকা ও প্রভাব বেশি ছিল বলে সংক্ষেপে তাদের পরিচয় এখানে দিয়ে রাখি।

তপন মজুমদার ও আহামদ কফিলের সঙ্গে মতিঝিলে টাইপ-শর্টহ্যান্ড শেখার সময়ে আলাপ হয়েছিল। তপনও ওই কারিগরি বিদ্যা শিখছিল তাড়াতাড়ি চাকরি পাওয়ার আশায়। আসলে গান করে সে, বড় গায়ক হওয়ার জন্য কুষ্টিয়া থেকে ঢাকায় এসেছে। আর কফিল আমার মতো সর্বভুক পাঠক ও হবু-লেখক। সম্পর্কে মহসিন শস্ত্রপণি তার ভগ্নিপতি। এছাড়াও বাম ঘরানার অনেক লেখক সাহিত্যিককে চেনে। আমাকে একদিন বংশালের সংবাদে অফিসে নিয়ে গিয়ে রনেশ দাশগুপ্তের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিয়েছিল। বেকার অবস্থায় কফিলের নেতৃত্বে প্রেসে ও বোর্ড অফিসে গিয়েও প্রুফ ও কপি করার কাজ করে কিছু রোজগারের ধান্ধা করেছিলাম। সুইপার কলোনিতে নিয়ে গিয়ে আমাকে দেশি চোলাই মদ খাইয়েছিল কফিল। মাতাল হয়ে হম্ভিতোম্ভি করতেও ভালো লাগত আমাদের।

বুদ্ধিজীবী-লেখক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর সঙ্গে আলাপরত লেখক অন্যদিকে গ্রন্থকেন্দ্রে আমার চাকরি হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যে তপন স্টেনো টাইপিস্ট হিসেবে সরকারি চাকরি পায় সচিবালয়ে। মিরপুরের তুরাগ নদী তীরের আদি বাসিন্দা স্বপন চৌধুরীও ছিল একটি সরকারি অফিসের অভিজ্ঞ স্টেনোগ্রাফার। শিল্পসাহিত্যের অনুরাগী ও ভালোমানুষ হওয়ায় তপনও আমার ঘনিষ্ঠতম বন্ধু হয়েছিল। অফিস শেষে, কোনোদিন-বা অফিস ফাঁকি দিয়ে তিনজনই কোথাও বসে প্রায় আড্ডা দিতাম। আড্ডা জমানোর জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ যোগানোর পথ, এমনকি নিউমার্কেট-বায়তুল মোকারামে মেয়ে দেখতে ফিল্ডিং মারার বদলে পয়সা হলে যে মেয়েদের সর্বাঙ্গীন রূপ দেখারও জায়গা আছে, সেসব জায়গায় যাওয়ার নিষিদ্ধ অলিগলিও তপন ভালো জানত। চুয়াত্তরে কুষ্টিয়ার পরিচিত এক এমপির রেফারেন্সে কয়েক মাস এমপি হোস্টেলে থাকার ব্যবস্থা করেছিল তপন। তার সঙ্গে কয়েক মাস সেখানে বেশ আরামেই ছিলাম। নিজেরা খিচুড়ি রেঁধে খেতাম। তবে উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপনের জন্য বেতনের পয়সা ধারদেনা শোধ করে এক তারিখেই শেষ হয়ে যেত। পকেটে খাওয়ার পয়সা থাকত না বলে অনেক দিন এমপি হোস্টেল থেকে আজিমপুর পর্যন্ত হেঁটে গিয়ে আমার পরিচিত এক হোটেলে বাকি খেয়েছি। হেঁটেও অফিস যাতায়াত করেছি অনেকদিন। এমপি হোস্টেল থেকে উৎখাত হয়ে রায়েরবাজারের মার্কেটের দোতলায় ঝাপওয়ালা এক দোকানেও আস্তানা গেড়েছিলাম। বাজারের গণপায়খানা ব্যহারের স্মৃতি মনে করলে এখনো গা গুলায়।

আরেকজন, পাবনার সাহিত্য-পাগল ভালো ছেলে গোলাম কিবরিয়া খোকন। রংপুরে থাকায় আমার বড় লেখক হওয়ার পাগলামির খবর জেনেছিল। ঢাকায় আসার পর নিয়মিত আসত অফিসে। আমার প্রতিভায় আস্থাও জন্মেছিল তার। আমাকে সহযোগী হিসেবে পেয়ে দুটি লিটল ম্যাগাজিনও প্রকাশ করেছিল নিজের টাকায়। লেখকদের মধ্যে আহমদ ছফাকে আমি তখনো চিনি না শুনে, আলাপ করিয়ে দেওয়ার জন্য একদিন নিয়ে গিয়েছিল ইন্টারন্যাশনাল হলে। খোকন মদ্যপান দূরে থাক, সিগারেটের নেশাও ছিল না তার। আমাকেও উচ্ছৃখল জীবন থেকে সুশৃঙ্খল জীবনে ফেরাতে ঘর-সংসার ও বিয়ে করার পরামর্শ দিত। মেয়েদের দেখতে, তাদের সম্পর্কিত আলোচনা আমার সব সময়ে ভালো লাগত। এমনকি স্বপ্নে দেখার সুযোগ পেলেও সার্থক হতো রাত। সেখানে নিজের বিয়ে ও স্ত্রী বলে কথা। রবীন্দ্রনাথ বাইশ বছর বয়সেই বিয়ে করেছিলেন। গাঁয়ের ছেলেরা আরো কম বয়সে করে। আমি বাইশ পেরিয়ে তখন তেইশে, যত দোষ থাক, নিয়মিত বেতন পাওয়ার চাকরিটা তো আছে। অতএব আর দেরি করছি কেন? বিয়েপাগলা হয়ে অনিশ্চিত হবু স্ত্রীকে জানার ও দেখার জন্য ক্ষেপে উঠলাম। নানা কাণ্ডকীর্তি ও নাটকীয় ঘটনার পর, অবশেষে তিনি আমার ভাঙাঘরে এলেন। তারিখটা ছিল ৭ মে ১৯৭৬। বিয়ের পর, যুগ যুগ সংসারে বাঁধা থেকেও দীর্ঘ দাম্পত্য-জীবনের প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তির হিসাব ঠিকমতো মেলাতে পারে না অতি প্রাজ্ঞজনও। কাজেই আমি সেপথে যাব না। আত্মকথনের এ লেখাটায় লেখক এবং লেখালিখির বিষয়ে সীমিতি থাকি বরং।

উপরে যে চারজন হবু লেখক-শিল্পী বন্ধুর কথা বললাম, তাদের মধ্যে দুজন মারা গেছে। আমি গ্রন্থকেন্দ্রের চাকরিতে থাকতেই সিনেসাংবাদিক হিসেবে অকালমৃত্যু হয়েছে গোলাম কিবরিয়া খোকনের। আর গ্রন্থকেন্দ্রের চাকরি ছাড়ার পর ইত্তেফাকে চাকরি করতে গিয়েও কফিলকে সহকর্মী হিসেবে পেয়েছিলাম। প্রুফ সেকশনে অনেক বছর ধরে কাজ করছিল সে। ইত্তেফাকের ভাঙা-গড়ায় তার চাকরিটা চলে যাওয়ার পর বেশিদিন বাঁচেনি। অন্য দুজন তপন ও স্বপন বেঁচে আছে এখনো। তপন তার মামাতো বোন চন্দনা মজুমদারের মতো বিখ্যাত গায়িকা হতে পারেনি। তবে গানের মাস্টারি, লালনগীতি আর কাঙাল হরিনাথের গান নিয়ে আছে এখনো। আর মিরপুর এক নম্বরের আদি বাসিন্দা স্বপন অবসর জীবনেও আগের মতো নিপাট ভালো মানুষ। আমেরিকাপ্রবাসী ছেলের টাকায় চলে। তপন ও স্বপন স্মৃতির টানে মাঝেমধ্যে দেখা করতে আসে এখনো। আমি সিগারেট ছেড়েছি জেনেও জোর করে এক-আধটা সিগারেট দিয়ে বলে, খা, এ দুনিয়া আর কয়দিন? চলবে

লেখকের সহায়ক পেশা ।। পর্ব—৩

/জেডএস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
লোকসভা নির্বাচন: মণিপুরে ভোটকেন্দ্রে সংঘর্ষ
লোকসভা নির্বাচন: মণিপুরে ভোটকেন্দ্রে সংঘর্ষ
ওঠানামা করছে মুরগির দাম, বাড়ছে সবজির
ওঠানামা করছে মুরগির দাম, বাড়ছে সবজির
শিশু হাসপাতালের আগুন নিয়ন্ত্রণে
শিশু হাসপাতালের আগুন নিয়ন্ত্রণে
সর্বাধিক পঠিত
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?