সনদবিহীন চলচ্চিত্র দেখানোর সাজা নির্ধারণ করে দিয়ে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বিল জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। রবিবার (২৯ অক্টোবর) জাতীয় সংসদে বিলটি পাসের জন্য তোলেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
বিলের ওপর আনা বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের জনমত যাচাই-বাছাই কমিটিতে প্রেরণ ও সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি শেষে বিলটি কণ্ঠভোটে পাস হয়।
বিলের আলোচনায় সরকারি অনুদানের সিনেমার বিষয়ে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান বলেন, সরকারি অনুদানে চলচ্চিত্র নির্মাণে অনুদান নেওয়ার পর সে চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয় না।
তিনি একটি তথ্য তুলে ধরে বলেন, গত ১০ বছরে ৭৪টি সিনেমার জন্য অনুদান নেওয়া হয়। এর মধ্যে ৪৯টি সিনেমার কোনও খবর নেই। ১৯৭৬-৭৭ সাল থেকে চলচ্চিত্রে অনুদানপ্রথা চালু হয়েছিল। এ পর্যন্ত ১৪১টি সিনেমার অনুদান দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে অর্ধশতাধিক সিনেমা আলোর মুখ দেখেনি।
তথ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, চলচ্চিত্রের অনুদান নীতিমালায় আছে, প্রথম চেকপ্রাপ্তির ৯ মাসের মধ্যে ছবির কাজ শেষ করতে হবে। মন্ত্রী কি সঠিক মানুষের কাছে অনুদান দিচ্ছেন কি না? ১০ বছরেও ৪৯টি সিনেমা হলো না, জনগণের টাকা নিয়ে সিনেমা বানালো না, তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নিলেন? এদিকে সরকার অনুদান দিয়েই যাচ্ছে।
জাতীয় পার্টির আরেক সংসদ সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, সিনেমা হল সব বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সব সিনেমা হল মেশিনের (মোবাইল) মধ্যে। সিনেমা হলে যাবে কে? আগে এফডিসি জমজমাট ছিল, এখন সেখানে কেউ যায় না। আমার এলাকায় সিনেমা হল বন্ধ হয়ে মার্কেট হয়ে গেছে।
জবাবে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, হল কমে গিয়ে ৬০টিতে নেমে গিয়েছিল। সেখান থেকে বেড়ে ২০০টার বেশি স্ক্রিনে হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর বায়োপিক ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’ ২০০ টি স্ক্রিনে বাংলাদেশে মুক্তি পেয়েছে। এর বাইরেও স্ক্রিন বাংলাদেশে ছিল। অর্থাৎ হল বেড়েছে, ক্রামাগত বাড়ছে। আমাদের দেশেও সিনেপ্লেক্স বাড়ছে।
অনুদানের ছবি নিয়ে পীর ফজলুর রহমানের তথ্য পুরোপুরি সঠিক নয় মন্তব্য করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, অনুদানের নীতিমালা মানা হয়। গত পৌনে পাঁচ বছরে প্রধানমন্ত্রী আমাকে দায়িত্ব দেওয়ার পর অতীতে যারা অনুদানের টাকা নিয়ে সিনেমা বানায়নি, তাদের অনেকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এরপর মামলা কেন করা হয়েছে বলেও বিবৃতি দিয়েছেন এবং বর্তমানে অনুদানের অনেক ছবি বক্স অফিস হিট হয় বলেও জানান মন্ত্রী।
এদিকে বিলে বলা হয়েছে, সার্টিফিকেশনবিহীন বা বোর্ডের দেওয়া মূল্যায়ন প্রতীক দেখা যায় না, এমন কোনও চলচ্চিত্র কোনও স্থানে দেখানো হলে বা দেখানোর প্ররোচনা বা সহায়তা করলে তা হবে অপরাধ। এর সাজা হবে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড।
বিলে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশে নির্মিত চলচ্চিত্র, আমদানি করা বিদেশি চলচ্চিত্র, বাংলাদেশি কোনও ব্যক্তি কর্তৃক দেশে বা বিদেশে নির্মিত এবং যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত চলচ্চিত্র জনসাধারণের মধ্যে প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে পরীক্ষণ ও সার্টিফিকেশন দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বোর্ড নামে একটি বোর্ড গঠন করবে সরকার। তথ্যসচিব হবেন ১৪ সদস্যের এই বোর্ডের চেয়ারম্যান।
দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিল পাস
ঠাকুরগাঁওয়ে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য রবিবার জাতীয় সংসদে বিল পাস হয়েছে। বিলের ওপর আনা জনমত যাচাই-বাছাই কমিটিতে প্রেরণ ও সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি শেষে বিলটি কণ্ঠভোটে পাস হয়।
এ ছাড়া শরীয়তপুরে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য জাতীয় সংসদে আরেকটি বিল পাস হয়। ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শরীয়তপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় বিল–২০২৩’-এর ওপর আনা জনমত যাচাই-বাছাই কমিটিতে প্রেরণ ও সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি শেষে বিলটি সংসদে পাস হয়।