X
রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
২ ফাল্গুন ১৪৩১

দুর্নীতির ‘মচ্ছব’ বন্ধে বিশেষ কমিশন ও ট্রাইব্যুনাল গঠনের দাবি সংসদে

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২৪ জুন ২০২৪, ২১:১১আপডেট : ২৪ জুন ২০২৪, ২২:২৬

দুর্নীতির ‘মচ্ছব’ বন্ধ করতে এখনই বিশেষ কমিশন গঠন, দুর্নীতিবাজদের অর্থ-সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা এবং ঋণখেলাপি ও অর্থ আত্মসাৎকারীদের বিচারে ট্রাইব্যুনাল গঠনের দাবি জানিয়েছেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। সোমবার (২৪ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে এসব দাবি জানান তিনি।

রাশেদ খান মেনন বলেন, নিষ্ঠুর অলিগার্করা (নির্দিষ্ট কোনও গোষ্ঠীর শাসন) দেশের অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করছে। সেই অলিগার্কির স্বার্থ রক্ষার্থে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনা যায়নি। দ্রব্যের ক্রমবর্ধমান ঊর্ধ্বগতি, দুর্নীতি, অর্থপাচার, ব্যাংকিং খাতে লুট ও নৈরাজ্য, খেলাপি ঋণের বিশাল পাহাড় দেশের অর্থনীতিকে ভঙ্গুর অবস্থায় উপনীত করেছে। এর থেকে অর্থনীতির পুনরুদ্ধার, জন ও রাষ্ট্রীয় জীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনাই ছিল বর্তমান সময়ের জরুরি কর্তব্য। কিন্তু সেই লক্ষ্যে বাজেটে কোনও কার্যকর ব্যবস্থা দেখা যায় না। আওয়ামী লীগের যে নির্বাচনি ইশতেহারের কথা বাজেটে উল্লেখ করা হয়েছে, বাজেট প্রস্তাবনা তার থেকে যোজন যোজন দূরে, সাংঘর্ষিক।

মেনন বলেন, বাজার সিন্ডিকেট আগের মতো খেলা করছে। মানুষকে তার শিকারে পরিণত করছে। সরকার স্বীকার করছে সিন্ডিকেট রয়েছে। কিন্তু সিন্ডিকেট ভাঙার কোনও উদ্যোগ দেখি না।

তিনি বলেন, বিএনপি আমলে বাংলাদেশ দুর্নীতিতে পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আমরা লড়াই করেছি। আমি সে সময় বিভিন্ন লেখায় দেখিয়েছিলাম দুর্নীতি বন্ধ করতে পারলেই আমাদের প্রবৃদ্ধি ২.৫ ভাগ বাড়তো। বিএনপি আমলের দুর্নীতির বিশ্বসূচকে আমাদের সেই কলঙ্ক দূর হলেও ওই সূচকে বাংলাদেশ এখনও শীর্ষ দশের মধ্যে রয়েছে। বরং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্নীতির সম্প্রতি যে চিত্র বেরিয়ে আসছে, তা দেশের ভাবমূর্তি কেবল নয়, সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জনমনে অনাস্থা সৃষ্টি করছে।

রাশেদ খান মেনন বলেন, এ কথা এখন আর অস্বীকার করার উপায় নাই যে সাবেক পুলিশপ্রধান ও সেনাপ্রধানের দুর্নীতির চিত্র হিমশৈলের ক্ষুদ্র উপরিভাগ মাত্র। এখনই বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করে দুর্নীতির এই বিস্তার রোধ করা না গেলে হিমশৈলের ধাক্কায় দেশের উন্নয়ন অগ্রগতির সলিল সমাধি হবে। কিন্তু দুর্ভাগ্য, আমরা এখানে দেখলাম পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন থেকে দুর্নীতির খবর প্রকাশ করায় সাংবাদিকদের ধমক দেওয়া হয়েছে। অনেক মন্ত্রী এ তথ্যকে অনুমানভিত্তিক বলে অভিহিত করছেন।

মেনন বলেন, মার্কিন এক আর্থিক প্রতিষ্ঠান দেখিয়েছে যে বছরে ৭ বিলিয়ন ডলার বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়ে যাচ্ছে। এই অর্থ বিনিয়োগ হচ্ছে কানাডার বেগম পাড়ায়, মালয়েশিয়ার সেকেন্ড হোমে, সিঙ্গাপুর, দুবাইয়ের আধুনিক শপিং মল, রিয়েল এস্টেট ও হুন্ডি ব্যবসায়। এই টাকার লভ্যাংশও দেশে আসছে না। পাচারকৃত টাকা ফিরিয়ে আনার কোনও উদ্যোগ নাই। অথচ প্রবাসীরা বিদেশে হাড়ভাঙা খাটুনির যে আয় দেশে পাঠায় তার ওপর কর বসানো হচ্ছে। তাদের বিদেশযাত্রা নিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

মেনন বলেন, এই অর্থ সম্পদ উপার্জনের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে তা ফেরত না দেওয়া। ব্যাংক লুট ও দুর্নীতি। ২০০৯ সালে ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকার ঋণ এখন ১ লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকা। পুনঃতফসিলীকরণ ও অবলোপন ধরলে এর পরিমাণ ৪ থেকে ৫ লাখ হাজার কোটি টাকা দাঁড়াবে।

ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি বলেন, ব্যাংকিং খাতে সুশাসন ফিরিয়ে আনতে ‘ব্যাংক কমিশন’ গঠন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবদুল মুহিত। পরের অর্থমন্ত্রী তাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছেন। আর এখন ব্যাংক নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক তুঘলকি কাণ্ড করছে।

কালো টাকা সাদা করার সুযোগের বিরোধিতা করে মেনন বলেন, ‘লুটের টাকাকে যখন সাদা করার জন্য সৎ উপায়ে অর্জিত অর্থের চেয়ে অর্ধেক কর দিয়ে সাদা করার প্রস্তাব করা হয় তখন সেটা সততার জন্য তিরস্কার ও অসততার জন্য পুরস্কারের শামিল হয়ে দাঁড়ায়। এ সম্পর্কে যেসব যুক্তি দেওয়া হচ্ছে তা কেবল অসারই নয়, এ প্রসঙ্গে সরকারের অতীত অবস্থানের বিপরীত। খালেদা জিয়ার জন্য যেটা অনৈতিক, বর্তমানেও সেটা অনৈতিক। আশা করি অর্থমন্ত্রী এই প্রস্তাব প্রত্যাহার করে সংসদকে এর দায়ভার থেকে রেহাই দেবেন।

সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম খুনের ঘটনা প্রসঙ্গে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি মেনন বলেন, এই দুঃখজনক ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের স্বর্ণ—মাদক চোরাচালান ও অপরাধ জগতের যে চিত্র বেরিয়ে আসছে, যে খবর প্রকাশিত হচ্ছে তাতে সংসদের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। এ বিষয়টি আরও খতিয়ে দেখা দরকার। আত্মসমালোচনা দরকার।

রাশেদ খান মেনন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সফরে ভারত তিস্তার পানির প্রবাহ বৃদ্ধি ও সংরক্ষণের ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতার কথা বলেছে। কিন্তু তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি কোথায় গেলো আমরা জানি না। তিস্তার পানি চুক্তি না করে এই সহযোগিতা গাছের গোড়া কেটে ওপর দিয়ে পানি ঢালার শামিল। এই সফরে গঙ্গা চুক্তি নবায়নের কথা এসেছে। তার জন্য ধন্যবাদ। কিন্তু ওই চুক্তিতে গঙ্গার পানি প্রবাহ বৃদ্ধির জন্য সংকোচ থেকে খাল কেটে পানির প্রবাহ বাড়ানোর যে বিষয়টি ছিল তা ৩০ বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি। বরং এখন ফারাক্কার ওপরে আরেকটি ব্যারাজ তৈরির কথা এসেছে।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী সংসদে তিস্তা মহাপরিকল্পনার কথা বলেছেন। কিন্তু বাজেটে তার জন্য কোনও বরাদ্দ নাই। বাজেট বরাদ্দে প্রতিটি ক্ষেত্রেই রংপুর বিভাগ বঞ্চিত হয়েছে। এই আঞ্চলিক বৈষম্য দূর করে তিস্তাসহ উত্তরবঙ্গের জন্য সমবরাদ্দের ব্যবস্থা নিতে হবে। তিস্তা নিয়ে যেন আমরা ভূ-রাজনীতির দ্বৈরথের শিকার না হই। প্রয়োজনে পদ্মা সেতুর মতো নিজেদের অর্থায়নে তিস্তা কর্তৃপক্ষ গঠন করে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে।

/ইএইচএস/এফএস/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামানের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
নগদে ২৩০০ কোটি টাকার দুর্নীতি ও অর্থপাচারের তথ্য পেয়েছে দুদক
দুদক চেয়ারম্যানের নামে ভুয়া ফেসবুক-হোয়াটসঅ্যাপ আইডি খুলে প্রতারণা
সর্বশেষ খবর
আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য জুলাই সনদ তৈরি করা: প্রধান উপদেষ্টা
আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য জুলাই সনদ তৈরি করা: প্রধান উপদেষ্টা
বিনা মেঘে বজ্রপাত, শুকনো তিস্তায় হঠাৎ উজানের ঢল
বিনা মেঘে বজ্রপাত, শুকনো তিস্তায় হঠাৎ উজানের ঢল
অটোরিকশা ছিনতাই করতে ফালান মিয়াকে হত্যা করেছিল তারা
অটোরিকশা ছিনতাই করতে ফালান মিয়াকে হত্যা করেছিল তারা
কুয়েত যাচ্ছেন সেনাপ্রধান
কুয়েত যাচ্ছেন সেনাপ্রধান
সর্বাধিক পঠিত
কবি সোহেল হাসান গালিব কারাগারে
কবি সোহেল হাসান গালিব কারাগারে
ভালোবাসা দিবসে শহরের রাস্তায় উত্ত্যক্তের শিকার নারী সমন্বয়ক
ভালোবাসা দিবসে শহরের রাস্তায় উত্ত্যক্তের শিকার নারী সমন্বয়ক
ভারতের কাছে ট্রাম্পের যুদ্ধবিমান বিক্রির প্রস্তাবে ক্ষুব্ধ পাকিস্তান
ভারতের কাছে ট্রাম্পের যুদ্ধবিমান বিক্রির প্রস্তাবে ক্ষুব্ধ পাকিস্তান
আমরা চাই না অযোগ্য শাসক আমাদের শাসন করুক: হাসনাত আবদুল্লাহ
আমরা চাই না অযোগ্য শাসক আমাদের শাসন করুক: হাসনাত আবদুল্লাহ
বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের নাম পরিবর্তন
বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের নাম পরিবর্তন