মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে সেদেশের সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকাণ্ডে সৃষ্ট সহিংস পরিস্থিতির জন্য চরম উদ্বেগ জানিয়েছে বাংলাদেশ। একই সঙ্গে সেখানকার রোহিঙ্গাদের বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগ,লুটপাট ও নারী ধর্ষণ বন্ধেরও আহ্বান জানানো হয়। এছাড়াও বলা হয়, মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনীর এ কর্মকাণ্ডের কারণে সেখানকার লোকদের দুর্ভোগ যেমন বেড়েছে, তেমনি এর প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশে।
বুধবার বিকালে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত মিও মিন্ট থানকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয় এবং তার কাছে বাংলাদেশের উদ্বেগ জানিয়ে একটি পত্র হস্তান্তর করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দ্বিপক্ষীয় সচিব কামরুল আহসান।
মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকের পরে কামরুল আহসান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা সীমান্তের ওপারে যে ঘটনা ঘটছে, তার প্রতিবাদ করেছি। লোকজন যেন তাদের গ্রামে ফিরে যেতে পারেন, এমন একটি সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্যও আমরা আমরা দাবি জানিয়েছি।’
আমরা আরও বলেছি, ‘সেখানে যেন কোনও লুটপাট, ঘরবাড়ি পোড়ানো, ধর্ষণের ঘটনা না ঘটে এবং মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতেতে এটি বাংলাদেশের অবস্থান।’
তিনি জানান,‘পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে রাষ্ট্রদূতের কাছে একটি চিঠি হস্তান্তর করেছে।রাখাইন প্রদেশে শান্তিপূর্ণ অবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য বাংলাদেশ এই চিঠিতে মিয়ানমারকে আহ্বান জানিয়েছে।’
বাংলাদেশ মনে করে, রাখাইন প্রদেশে শান্তিপূর্ণ অবস্থা ফেরত আসলে, যারা এখন সীমান্ত অতিক্রম করেছে, যারা সীমান্ত অতিক্রম করার জন্য অপেক্ষা করছে এবং যারা রাখাইন প্রদেশে উচ্ছেদ হয়েছে, তারা সবাই কোনও ভয় ছাড়াই নিরাপদে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারবে।
রাখাইন প্রদেশে মুসলিম জনগোষ্ঠী যেন সীমান্তে আশ্রয় নিতে বাধ্য না হয়, সেজন্য বাংলাদেশ মিয়ানমারকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ করেছে।
মিয়ানমারের বিভিন্ন ঘটনার জন্য বাংলাদেশকে জড়িয়ে সেদেশের গণমাধ্যমে যেসব রিপোর্ট করা হচ্ছে তারও প্রতিবাদ করেছে বাংলাদেশ।
চিঠিতে রাখাইন প্রদেশ থেকে মুসলিম জনগোষ্ঠী যেন ব্যপকহারে বাংলাদেশে ঢুকতে না পারে এবং বাংলাদেশ সীমান্তের স্থিতিশীলতা রক্ষায় সহযোগিতার জন্য মিয়ামারকে অনুরোধ জানানো হয়।
রাখাইন প্রদেশে বাছবিচারহীনভাবে শক্তি প্রয়োগ এবং মিলিটারি অভিযানের কারণে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যে দাবি জানিয়েছে, তা বিবেচনা করার জন্য বাংলাদেশ মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেদেশের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের ঘড়বাড়ি লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও নারী ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে।।এ নিয়ে সেখানে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। অক্টোবর মাসের ৯ তারিখে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ এলাকায় সন্ত্রাসীদের সমন্বিত হামলায় নয় পুলিশ সদস্য নিহত হয়। দুই দিনের মাথায় ১১ অক্টোবর মঙ্গলবার মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম আরও ১২ জনের মৃত্যুর কথা জানায়। তারা দাবি করে, প্রায় ৩০০ মানুষ পিস্তল এবং ধারালো অস্ত্র নিয়ে সৈন্যদের উপর আক্রমণ করলে সেনাবাহিনী পাল্টা আক্রমণ করে।
স্যাটেলাইট ইমেজে অক্টোবর থেকে ১০ নভেম্বরের মধ্যে মংগদাউ জেলার তিনটি গ্রামের ৪৩০টি ভবন পুড়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছিল হিউম্যান রাইটস। আর ২১ নভেম্বর এসে তারা স্যাটেলাইট ইমেজ বিশ্লেষণ করে জানায়, ১০ নভেম্বর থেকে ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন সহিংসতায় নতুন করে মংগদাউ জেলার ৫টি গ্রামে ওই ৮২০টি ঘর-বাড়ি ও অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে। হিউম্যান রাইটসের হিসেব মতে, সবমিলে এক মাসে ধ্বংস হওয়া অবকাঠামোর সংখ্যা ১২৫০-এ দাঁড়িয়েছে।
জাতিসংঘের হিসেবে সাম্প্রতিক সংঘর্ষে সেখানে ৩০,০০০ মানুষ ঘর হারিয়েছেন। পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন আরও হাজার হাজার মানুষ। তবে রাজ্য থেকে পালিয়ে যেতে গিয়েও উগ্র জাতীয়তাবাদী বৌদ্ধদের বাধার মুখে পড়ছেন তারা।
এসএসজেড/এপিএইচ/