X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

কে-পপে কেন মজেছে টিনএজ মন?

উদিসা ইসলাম
২১ জুলাই ২০২১, ১৭:৪১আপডেট : ২১ জুলাই ২০২১, ১৮:৩০

সংগীত বিশ্বে এখন সবচেয়ে দ্রুত প্রসার হওয়া ঘরানা কে-পপ (কোরিয়ান পপ)। বাংলার ঘরে ঘরেও এখন বাজে কোরিয়ান গান। আচমকা কেন কিশোর-কিশোরীরা মেতে উঠেছে কোরিয়ান সংস্কৃতিতে? ১৩ থেকে ২১ বছর বয়সী অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেলো কিছু উত্তর।

কে-পপের গানগুলোর কথাই কিশোর-কিশোরীদের টানছে বেশি। আবার গায়ক-গায়িকাদের চেহারার গড়ন, জীবনাচার ও এর পাশাপাশি কোরিয়ান ড্রামা ঘরানার সিনেমাগুলো দেখেই মাতোয়ারা হয় তারা। কোরিয়ান নাটকের প্লটে এ দেশীয় প্রেমকাহিনির ছোঁয়া আর ‘সুন্দর’ চেহারার কলাকুশলীরাই মূলত কে-পপের প্রতি টান বাড়িয়েছে তাদের। ইদানীং আবার কে-পপ না শুনলে বন্ধুমহলে নিজেকে ‘আপ টু ডেট’ প্রমাণ করাও মুশকিল হয়ে পড়ছে বলে জানালো অনেক টিনএজার।

গত কয়েক বছর ধরে কে-পপ মুখে মুখে কেন ঘুরছে? এমন প্রশ্নে উত্তরদাতারা বলছেন, ট্রেন্ডের সঙ্গে থাকার জন্য অনেকে কোরিয়ান ড্রামা বা কে-পপ-এর আলোচনায় থাকতে চায়। কুশলীরা যেভাবে নিজেদের তৈরি করে, যেভাবে সৌন্দর্যচর্চা করে, সেটাও মূলত ওই টিনএজারদের আলোচনার বিষয়।

দক্ষিণ কোরিয়ার কে-পপ ব্যান্ড বিটিএস এখন দুনিয়াজুড়ে আলোচিত। সাত সদস্যের এ ব্যান্ডের জনপ্রিয়তা বিটলসকে ছুঁয়েছে দাবি করা হয়। ইউটিউব থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্ট্রিমিং প্লাটফর্মে নিয়মিত রেকর্ড গড়ছে ওদের গান। বিশ্বের নানা দেশের তরুণদের ওপর বিটিএসের প্রভাব বেশ শক্ত।

কোরীয় এই ব্যান্ড দলটি গানের বাইরেও অবশ্য নানা সামাজিক কাজ করে। সেই প্রচারণাও মুগ্ধ করছে ছেলেমেয়েদের। তবে এ তালিকায় মূলত অল্পবয়সী ইংলিশ মিডিয়াম পড়ুয়া কিংবা উচ্চবিত্তের টিনএজাররাই বেশি।

স্বভাবতই, এ জগতের বাইরে যারা থেকে যাচ্ছে তারা হয়ে পড়ছে বিচ্ছিন্ন। অর্থাৎ একই প্রজন্মের ভেতর মোটাদাগে একটি বিভাজন তৈরি হচ্ছে বলে শঙ্কা অভিভাবকদের।

রাজধানীর বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা রাতুল ইশতিয়াক তার মেয়ের প্রসঙ্গে বলেন, ‘কোচিংয়ে গিয়ে অন্য বন্ধুদের কাছে কে-পপ-এর কথা শোনে সে। কে-পপ ভালো লাগেনি বলার কারণে তাকে তার ব্যাচমেটরা বেশ হেয় করে একদিন। আবার একেকজন নিজেদের কে-পপ জগতের একেক তারকার মতো তৈরি করতে চায়। তারাও ট্রলের মুখে পড়ে।’

২১ বছর বয়সী আভেরী রোদসী তানভীর মনে করেন ‘অবসেশনটা’ ক্ষতিকর। একটা কিছু ভালো লাগতেই পারে। কিন্তু একজনের কেন ভালো লাগলো বা আরেকজনের কেন লাগলো না সেসব নিয়ে চ্যালেঞ্জ করাটা অসুস্থ মানসিকতা। বন্ধুরা কে-পপ বা কে-ড্রামার ফ্যান হলেও তিনি কখনও ভক্ত হয়ে ওঠেননি। তিনি বলেন, ‘এই যে আমি শুনছি দেখছি, কিন্তু পাগলামো বা ক্ষেপামো করছি না- এমন মানসিকতা তৈরিতে পারিবারিক স্কুলিং লাগে।’

কে-পপের বাজারে মেধার পাশাপাশি তথাকথিত ‘সুন্দর’ চেহারার কদর বেশি। বাজার ধরতে ও সর্বোচ্চ মুনাফা আদায়ের জন্য প্রশিক্ষণের সময় শিল্পীদের যে চাপে রাখা হয়, সেটাও মাঝে মাঝে অমানবিক মনে হতে পারে। একইসঙ্গে শিল্পীদের শেখানো হয় গান, র‌্যাপ, নাচ। শরীর গঠনে কৈশোর থেকেই চলে কঠোর ডায়েট। এ প্রক্রিয়ায় যারা টেকে তারাই হয় বড় তারকা। বাকিদের জীবন কাটে চরম হতাশায়, যাদের খবর কেউ রাখেন না।

আন্তর্জাতিকভাবে কোরিয়ান ড্রামা ও সিনেমাকে জনপ্রিয়তার উচ্চ শিখরে পৌঁছানোর প্রথম ধাপ হিসেবে ধরা হয় ‘অটাম ইন মাই হার্ট’কে। ২০০০ সালে এই ড্রামা সিরিজ মুক্তি পাওয়ার পর উন্মাদনা কোরিয়া থেকে ছড়িয়ে পড়ে সারা বিশ্বে। এ ঢেউ বাংলাদেশে পৌঁছায় আরও পরে।

কেন কে-ড্রামা দেখছো প্রশ্নে দশম শ্রেণির আশিস বললো, ‘আমাদের বয়সীরা এসব দেখে। কারণ তাদের গল্প আমাদের গল্পের সঙ্গে মিলে যায়। উপস্থাপন ভালো, একটানা দেখে ফেলা যায়। আর ওরা সবাই দেখতে সুন্দর। আমাদের সার্কেলে এসবের প্রতি মেয়েদের ঝোঁক বেশি। এর কারণ আমার জানা নেই।’

কে-পপ ও কোরিয়ান কালচার নিয়ে জাতীয় দৈনিকে নিয়মিত লিখছে দশম শ্রেণির রুমাইসা এম রহমান। কেন কে-পপ-এ ঝুঁকছে জানতে চাইলে সে জানালো, ‘কোরিয়ান এই পপ ও ড্রামা আগে থেকেই আলোচনায় ছিল। বিটিএস-এর গান দিয়ে ২০১৭ থেকে বাংলাদেশে উন্মাদনা শুরু। তারা নিজেরা বেশ ভালো নাচে, ভালো গায়। এসব কিন্তু অনেক ব্যান্ড পারে না। কে-পপের জন্য ছোট থাকতে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, তাদের ওই তৈরি হওয়ার গল্প শুনেও অনেকে রোমাঞ্চিত হয়। আবার এদের কনসেপ্টগুলোও আলাদা। তাদের গানে ইতিবাচক বার্তা থাকে। সেটাও এই বয়সীদের আগ্রহ ধরে রাখতে পারছে।’

এ প্রসঙ্গে মনোরোগ বিশ্লেষক অধ্যাপক তাজুল ইসলাম বলেন, ‘বয়ঃসন্ধিকালে নতুন ফ্যাশন, নতুন কালচার, বা যা কিছু চলছে তার সঙ্গী হওয়ার প্রবণতা থাকে। কিন্তু এর জন্য সেটাকেই জীবন, বাকি সব মিথ্যা জ্ঞান করলে বিপদ। কোনটা সংস্কৃতি, কোনটা অপসংস্কৃতি এই বোধ কিশোর-কিশোরীদের তৈরি হয় না। ফলে সেই দায়িত্ব অভিভাবকদের নিতে হবে। সন্তান কোনটা লালন করবে, কোনটা তার মানসিক বিকাশে মানানসই হবে সেটা শেখানো অভিভাবকদের দায়িত্ব। তবে এটা মনে রাখতেই হবে যে নতুন ধারণা লুফে নেওয়াটা বয়ঃসন্ধিকালের স্বাভাবিক প্রবণতা।’ 

/এফএ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
জয় বাংলা কনসার্ট শুরু
ভারতের পদ্মশ্রী সম্মাননা পাচ্ছেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা
‘নৌকার পালে জয়ের বাতাস’ গানে চলবে আ.লীগের নির্বাচনি প্রচারণা
সর্বশেষ খবর
তীব্র গরমে নির্বাচনি প্রচারণায় আ.লীগ নেতার মৃত্যু
তীব্র গরমে নির্বাচনি প্রচারণায় আ.লীগ নেতার মৃত্যু
দেশে আগ্রাসী শাসন চলছে: দিলারা চৌধুরী
দেশে আগ্রাসী শাসন চলছে: দিলারা চৌধুরী
বিকল্প অর্থনীতি ও গ্রাম্য কায়কারবার
উপন্যাসবিকল্প অর্থনীতি ও গ্রাম্য কায়কারবার
বিপুল পরিমাণ নকল জুস জব্দ, কারখানার মালিকের কারাদণ্ড
বিপুল পরিমাণ নকল জুস জব্দ, কারখানার মালিকের কারাদণ্ড
সর্বাধিক পঠিত
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
তাপপ্রবাহে যেভাবে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম
প্রাক-প্রাথমিক বন্ধই থাকছেতাপপ্রবাহে যেভাবে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম
যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া পেলো হামাস
যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া পেলো হামাস
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই
বিক্রি না করে মজুত, গুদামে পচে যাচ্ছে আলু
বিক্রি না করে মজুত, গুদামে পচে যাচ্ছে আলু