X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০
বইমেলায় সাদাত হোসাইন

‘কাগজের মূল্য বৃদ্ধির কারণে মানুষের বই কিনতে কষ্ট হচ্ছে’

আতিক হাসান শুভ
০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ২৩:৫৯আপডেট : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:১৭

দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক, গল্পকার ও লেখক সাদাত হোসাইন মনে করেন, কাগজের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বইয়ের দাম আগের তুলনায় বেড়েছে। কাগজ ও অন্যান্য জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধির কারণে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। বই তো আর কারও মৌলিক চাহিদা না। মানুষ আগে মৌলিক চাহিদা পূরণ করবে তারপর বই কেনার কথা ভাববে। চাল না কিনলে চলবে না কিন্তু বই না কিনলেও চলবে। কাগজের মূল্যবৃদ্ধি ও দ্রব্য মূল্যবৃদ্ধির কারণে মানুষের বই কিনতে কষ্ট হচ্ছে।

শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) অমর একুশে গ্রন্থমেলার চতুর্থ দিন মেলায় বাংলা ট্রিবিউনের মুখোমুখি হন তরুণ প্রজন্মের কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার ও লেখক সাদাত হোসাইন।

এ সময় তিনি চলতি বছর বইমেলায় তার প্রকাশিত বই, প্রত্যাশা, বইমেলার সার্বিক পরিস্থিতি, কাগজের মূল্যবৃদ্ধি, প্রকাশকদের ভর্তুকি দেওয়ার বিষয়সহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন।

বাংলা ট্রিবিউন: কেমন লাগছে এবারের বইমেলা?

সাদাত হোসাইন: আমার খুবই ভালো লাগছে। কারণ আমাদের গত দুইটা মেলা তো করোনার কারণে খুবই খারাপ গিয়েছে। এই মেলায় আমি গতকালই প্রথম এসেছি। দেখি পাঠকের উপচে পড়া ভিড়। পাঠকের ভিড়ে অন্য স্টলগুলো ব্লক হয়ে যাচ্ছিল। ইভেন এটা নিয়ে অন্যান্য স্টল অভিযোগ করেছে। আজ আসার পর থেকেই পাঠকদের অটোগ্রাফ ও সেলফি তোলার আবদার পূরণ করতে করতে এক সেকেন্ডও ঠিকমতো বসার সুযোগ পাইনি। পাঠকের এই পরিমাণ ভালোবাসা পেয়ে অনেক ভালো লাগছে।

বাংলা ট্রিবিউন: এবারের বইমেলায় আপনার কয়টি বই এসেছে এবং কী কী?

সাদাত হোসাইন: এবারের অমর একুশে বইমেলায় আমার দুটি নতুন উপন্যাস এসেছে। ‘শঙ্খচূড়’ এবং ‘সে এসে পাশে বসুক’। ‘শঙ্খচূড়’ পাওয়া যাচ্ছে বইমেলার ৩১ নম্বর প্যাভিলিয়নে এবং ‘সে এসে বসুক পাশে’ ৫৭-৬০ নম্বর স্টলে।

বাংলা ট্রিবিউন: বইমেলা নিয়ে আপনার প্রত্যাশা কী?

সাদাত হোসাইন: গত দুই বছরে মেলার লে-আউটটা অনেক দারুণ ছিল। খুবই আনন্দ নিয়ে ঘোরাফেরা করা গিয়েছে, নিশ্বাস নেওয়ার জায়গা ছিল। আমার অন্যধারা যে প্রকাশনীটা আছে, সেটা ছিল প্রথমা প্রকাশনের ওদিকে। কাল যখন আসছিলাম, দেখলাম যে এত পরিমাণ পাঠক এসেছিল, স্টলের পুরো জায়গাটা ব্লক হয়ে গিয়েছে। আশপাশে যে স্টলগুলো ছিল, তারা এ নিয়ে প্রকাশক সমিতির কাছে কমপ্লেন জানিয়েছে। এখন কথা হচ্ছে, এই জায়গাটা যারা নির্ধারণ করে, তাদের একটু বোঝা উচিত কোন প্রকাশনীকে কোন জায়গাটা দেবে। জায়গাটা এত সংকীর্ণ যে এখানে অল্পসংখ্যক মানুষ এলেই ভিড় হয়ে যায়। কিছু জায়গায় অনেক বেশি স্পেস রাখা হয়েছে আবার কিছু জায়গা খুবই সংকীর্ণ, এটার যুক্তিটা কী, আমি জানি না। জায়গা বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষেত্রে কোন প্রকাশনীর কেমন পাঠক হয়, সেদিকটা লক্ষ রাখা উচিত ছিল। 

আমার কাছে মনে হয়েছে যে এবারের মেলার যে লেআউট করা হয়েছে, সেটা পাঠক উপযোগী নয়। গত দুই বছর যে লেআউট ছিল, সেটা দারুণ ছিল। কারণ বইমেলায় তো সব মানুষ বই কিনতে আসে না, অনেকে ঘুরতে আসে। এটা তো একটা মিলনমেলার মতো। আমি আশা করেছিলাম এবারের লে-আউটটা আরও খোলামেলা হবে।

বাংলা ট্রিবিউন: এবারের বইমেলায় আপনার কী কী অসংগতি চোখে পড়েছে?

‘কাগজের মূল্য বৃদ্ধির কারণে মানুষের বই কিনতে কষ্ট হচ্ছে’

সাদাত হোসাইন: আমার আসলে মেলায় অসংগতি চোখে পড়ার বেশি সুযোগ নেই কারণ আমি মেলায় এসে স্টলে আসি আবার বের হয়ে যাই। এর বাইরে আমার আর কোথাও যাওয়ার সুযোগ হয় না। সো আমি আর অন্য কিছু বলতে পারবো না। আমার মনে হয়েছে কিছু স্টলগুলোর স্পেস দেওয়া উচিত কিংবা মেলার পরিধি আরও প্রশস্ত করা উচিত ছিল।

বাংলা ট্রিবিউন: নতুন লেখকদের প্রতি আপনার প্রত্যাশা কী?

সাদাত হোসাইন: আমার আসলে ওভাবে বলার কিছু নেই। লিখতে হলে প্রচুর জানতে হবে, প্রচুর পড়তে হবে। না জানলে তো লেখা যাবে না।

বাংলা ট্রিবিউন: কাগজের মূল্যবৃদ্ধির ফলে লেখক, প্রকাশক বা পাঠকের ওপর কোনও প্রভাব পড়েছে কি না?

সাদাত হোসাইন: নিশ্চয়ই একটা প্রভাব তো পড়বেই। মূল্যবৃদ্ধির ফলে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা তো হ্রাস পাবে। বই তো আর কারও মৌলিক চাহিদা না। আগে মৌলিক চাহিদা পূরণ করে তারপর বই কেনার কথা ভাবতে হবে। কারণ বই কারও কাছে অপরিহার্য কোনও পণ্য না। চাল না কিনলে আপনার চলবে না কিন্তু বই না কিনলেও আপনার চলবে। কাগজের মূল্যবৃদ্ধি ও দ্রব্য মূল্যবৃদ্ধির কারণে মানুষের বই কিনতে কষ্ট হচ্ছে।

কাগজের মূল্য তিন গুণ বেড়েছে। ৩০০ পৃষ্ঠার একটা বই ৭০০ টাকা। কিছু করার নেই। বইমেলায় সময় যদি সরকারের পক্ষ থেকে একটু মনোযোগ দেওয়া হতো তাহলে ভালো হতো কারণ আমি শুনেছি এটা একটা সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে। তবে আমি বলবো, মূল্যবৃদ্ধির পরও পাঠকের বই কেনার আগ্রহ বা তাদের উচ্ছ্বাস কমেনি। গত দুদিনে তা লক্ষণীয় ছিল।

বাংলা ট্রিবিউন: কাগজের মূল্যবৃদ্ধির ফলে অনেক প্রকাশক ভর্তুকি চেয়েছেন‌। এ ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে প্রকাশকদের কোনও ধরনের ভর্তুকি দেওয়ার প্রয়োজন আছে কি না?

সাদাত হোসাইন: আমি অবশ্যই এটা বিশ্বাস করি। কারণ বইয়ের মতো ও প্রকাশনার মতো একটা শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে নিঃসন্দেহে এটা প্রয়োজন। এটার কোনও বিকল্প নেই। কারণ সব জায়গায় যদি ভর্তুকি দেওয়া যায়, এই শিল্পেও দেওয়া উচিত। কারণ এটা অনেক ডিমান্ডেবল।

পাঠকদের উদ্দেশে সাদাত হোসাইন বলেন, আপনার সবাই বইমেলায় আসুন। দীর্ঘদিন পর বই মেলাটা আবার জমেছে। যতটুকু সম্ভব আপনারা এসে বই কিনুন। কারণ আপনাদের বই কেনার ওপর লেখকরা অনুপ্রাণিত বোধ করেন। এর ওপর আবার প্রকাশকদের জীবন-জীবিকা নির্ভর করে।

/এনএআর/
সম্পর্কিত
বইমেলা শেষ, কবে স্বরূপে ফিরবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান?
ব্রহ্মপুত্রপাড়ে পণ্ডিত বইমেলা, থাকবেন ক্ষুদ্র জাতি-গোষ্ঠীর সাহিত্যিক ও শিল্পী
সাঙ্গ হলো প্রাণের মেলা
সর্বশেষ খবর
এক সপ্তাহের মাথায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরেকজন নিহত
এক সপ্তাহের মাথায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরেকজন নিহত
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)