গত বুধবার (১২ জুন) থেকে ঈদুল আজহার ছুটিতে ট্রেনে বাড়ির পথে যাত্রা করেছিল রাজধানীবাসী। ঈদের আগ পর্যন্ত নগরবাসীর এই যাত্রা চলমান ছিল। পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে তারা ছুটেছেন বাড়ির পথে। আজ ঈদের দ্বিতীয় দিন বাড়ি ফেরা এসব মানুষের অনেকেই কাজের জন্য ফিরে আসছেন কর্মক্ষেত্র ঢাকায়।
ঢাকায় ফেরাদের বেশিরভাগেরই অফিস শুরু হবে আগামী দুই-একদিনের মধ্যে। অনেক শিক্ষার্থীর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে যাবে, তাই তারা ফিরে আসছেন রাজধানীতে। আবার কেউ ঢাকায় এসেছেন আত্মীয়ের বাসায় কোরবানির মাংস দিতে। তাদের এই আগমনেই নীরব হয়ে থাকা স্টেশন হয়ে ওঠে সরব।
মঙ্গলবার (১৮ জুন) ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনে সরেজমিন অবস্থান করে দেখা যায় এই চিত্র। গত এক সপ্তাহের তুলনায় সকাল থেকে প্রায় স্টেশন সুনশানই বলা চলে। যখন একটি ট্রেন প্ল্যাটফর্মে এসে পৌঁছায় তখনই যেন স্টেশন সরব হয়ে ওঠে।
ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনে কথা হয় ঢাকায় ফেরত আসা যাত্রীদের সঙ্গে। তাদের মধ্যে কেউ বলেছেন তাদের অফিস খুলবে আগামীকাল, কেউ বলেছেন তাদের অফিস খুলবে তারপরের দিন। তার আগে চলে এসেছেন বিশ্রাম নিতে। কেউ আবার আগে ফিরে এসেছেন ঈদের পরে ঢাকা ফেরার বাড়তি ভীড় এড়াতে।
পরিবারসহ টাঙ্গাইলে ঈদ উদযাপন করতে গিয়েছিলেন আবদুর রহমান। আজ ঈদের দ্বিতীয় দিনই ফিরেছেন ঢাকায়। তিনি বলেন, আমি টাঙ্গাইল মির্জাপুর থেকে এসেছি। স্ত্রী-বাচ্চাদের নিয়ে বাড়ি গিয়েছিলাম ঈদের দুই দিন আগে। আগামীকাল অফিস খুলে যাবে, তাই আজই চলে এসেছি। আর দুই একদিন বেশি ছুটি পেলে আরেকটু থেকে আসতাম।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাবিহা ঢাকা ফিরেছেন গফরগাঁও থেকে। তিনি বলছিলেন, বাড়িতে গিয়েছিলাম ঈদের চার দিন আগে। আজ চলে আসার কারণ পরে ভিড় বেড়ে যাবে। আমার ক্লাস শুরু হবে আগামী রবিবার থেকে। এখন একটু ফ্রেন্ডদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করবো। তারপর থেকে তো ক্লাস শুরু হয়ে যাবে।
ঈদ শেষে ঢাকায় ফেরা আরেক যাত্রী ফিরোজ বলেন, পরশু দিন অফিস খুলে যাবে, তাই আজকেই ফিরে এলাম। কালকের দিন রেস্ট নিয়ে পরশু থেকে আবার কাজে ফিরবো। ঈদের ছুটিতে এই যে বাড়ি যাওয়া-আসা এর মধ্যে অন্যরকম একটা আনন্দ আছে। বাচ্চাদের নিয়ে যাওয়া কিছুটা কষ্টের হলেও এটাই আসলে কোনও কষ্টই না। বাচ্চারাও গ্রামে গিয়ে আনন্দ পায়। তারা গ্রামে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করে।
মো. মতিউর রহমান ঢাকায় এসেছেন পাবনা থেকে। তিনি বলেন, আমি পাবনাতেই থাকি। ঢাকায় এসেছি ছেলের জন্য, নাতি-নাতনিদের জন্য কোরবানির মাংস নিয়ে। দুই দিন থেকে আবার চলে যাবো। আমার ছেলে এবার বাড়িতে যেতে পারেনি, সে কোরবানিও দেয়নি। তাই আমিই চলে এসেছি তাদের সঙ্গে দেখা করতে।
ঈদের দ্বিতীয় দিনে বাড়ি ফেরত মানুষ ঢাকায় ফিরলেও এর পরিমাণ খুব একটা বেশি নয়। বেশি প্রয়োজন বা তাড়া না থাকলে কেউ ফিরছেন না। তবে দুই-একদিনের মধ্যেই ঢাকা ফেরার মানুষের চাপ বাড়বে স্টেশনে। এমনটাই বলছেন রেলওয়ের কর্মকর্তারা।
এ সময় কথা হয় প্ল্যাটফর্ম স্টেশন মাস্টার মনিরুজ্জামান মনিরের সঙ্গে। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত চারটা ট্রেন এসেছে। এগুলো হচ্ছে- রাজশাহী কমিউটার, তিস্তা এক্সপ্রেস, উপকূল এক্সপ্রেস ও ব্রক্ষ্মপুত্র এক্সপ্রেস।
তিনি আরও বলেন, এসব ট্রেনে এখনও সেভাবে যাত্রীরা ফেরেনি। দুই-একদিনের মধ্যে ফেরা শুরু হবে। তবে ঈদের পরদিন হিসেবে যে পরিমাণ যাত্রী ফিরছে তাও কম না।