X
মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫
১৭ আষাঢ় ১৪৩২

কলকাতা বইমেলায় এবার যে কারণে বাংলাদেশ নেই

রঞ্জন বসু, দিল্লি
২৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১৪:৫৬আপডেট : ২৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১৪:৫৬

পঞ্চাশ বছরের ঐতিহ্যমণ্ডিত কলকাতা বইমেলার এবারের পর্বের উদ্বোধন হতে যাচ্ছে আজ মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি)। কিন্তু প্রায় সুদীর্ঘ তিন দশকের পরম্পরা ভেঙে এবারের বইমেলায় বাংলাদেশের কোনও প্রতিনিধিত্ব থাকছে না– যা দুই বাংলার পুস্তকপ্রেমীদেরই চরম হতাশ করেছে।

বিষয়টি নিয়ে দিল্লি ও কলকাতায় বিভিন্ন মহলে কথা বলে বাংলা ট্রিবিউন জানতে পেরেছে, মূলত ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সবুজ সংকেত না মেলার কারেণ কলকাতা বইমেলায় বাংলাদেশের কোনও প্রকাশনা সংস্থাকে আমন্ত্রণ জানাতে পারেননি আয়োজকরা।

ভারত সরকার মনে করছে, বাংলাদেশের পরিস্থিতি ‘স্বাভাবিক’ না হওয়া পর্যন্ত সে দেশের প্রকাশকদের বইয়ের সম্ভার নিয়ে ভারতের কোনও বইমেলায় না আসাই সমীচীন।

দিল্লিতে একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তার কথায়, ‘যে কারণে আমরা বাংলাদেশে আমাদের স্বাভাবিক ভিসা কার্যক্রম স্থগিত রেখেছি, বলতে পারেন অনেকটা একই কারণে বাংলাদেশকে এবারের কলকাতা বইমেলায় আমন্ত্রণ পাঠানো সম্ভব হয়নি।’

কলকাতা বইমেলার মূল প্রবেশপথ (ফাইল ছবি) বস্তুত, কলকাতা বইমেলায় বাংলাদেশ যোগ দিচ্ছে সেই ১৯৯৬ সাল থেকে, তারপর থেকে গত বছর (২০২৪) পর্যন্ত কখনও সেই যোগদানে ছেদ পড়েনি। এর মধ্যে একাধিকবার বাংলাদেশ এই বইমেলার ‘থিম কান্ট্রি’ হিসেবেও মনোনীত হয়েছে। অর্থাৎ ভারতের বাইরে যে দেশটি বইমেলায় মনোযোগের প্রধান কেন্দ্রবিন্দু থেকেছে, সেটি ছিল বাংলাদেশ।

কলকাতার বইমেলার বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নে বেসরকারি প্রকাশকদের যেমন স্বতঃস্ফূর্ত যোগদান থাকতো, তেমনই কলকাতার উপদূতাবাসের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারও এই মেলায় সক্রিয়ভাবে যোগদান করতো। বাংলাদেশ থেকে শীর্ষস্থানীয় প্রকাশকদের পাশাপাশি জনপ্রিয় লেখক, কবি, প্রাবন্ধিকরাও নিয়মিত কলকাতা বইমেলায় আসতেন, আলোচনা-আড্ডা-সেমিনারে অংশ নিতেন এবং পাঠকদের অটোগ্রাফ দিতেন।

বাংলাদেশে নতুন কী লেখালেখি হচ্ছে, কীরকম সাহিত্যচর্চা হচ্ছে সেটা জানার জন্যও কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গের কাছে সবচেয়ে বড় সুযোগ ছিল এই বইমেলা। কিন্তু এবার সেটা আর সম্ভব হচ্ছে না।

কলকাতা বইমেলার আয়োজন নিয়ে কথা বলতে কিছুদিন আগে দিল্লিতে এসেছিলেন এটির আয়োজক সংস্থা পাবলিশার্স অ্যান্ড গিল্ডের সভাপতি ত্রিদিব কুমার চট্টোপাধ্যায়। এবারে বইমেলার ‘থিম কান্ট্রি’ যেহেতু জার্মানি, তাই দিল্লিতে সে দেশের সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ম্যাক্সমুলার ভবনে জার্মান রাষ্ট্রদূতকে পাশে নিয়ে তিনি একটি সাংবাদিক সম্মেলনও করেন।  

বাংলাদেশ কেন বইমেলায় অনুপস্থিত, সে দিন ওই সাংবাদিক সম্মেলনেও তাকে সেই প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছিল। 

জবাবে ত্রিদিব কুমার চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘এটা ঠিকই যে ১৯৯৬ সাল থেকে বাংলাদেশ কলকাতা বইমেলায় আসছিল। এবারে যে ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি চলছে, সেই বিষয়ে আমাদের মন্তব্য করা উচিত নয়। কিন্তু আমরা সবাই জানি কী চলছে।’

ত্রিদিব কুমার চট্টোপাধ্যায় (ফাইল ফটো)

‘সেই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কলকাতা বইমেলার পবিত্রতা, নিরাপত্তা এবং অন্য কোনও স্তর যাতে বিপদগ্রস্ত না হয়, সেই জন্যই আমরা এবারে বাংলাদেশকে রাখতে পারছি না, যা খুবই দুর্ভাগ্যজনক।’

‘সাহিত্যের কোনও সীমান্ত হয় না। কাঁটাতারের বেড়া হয় না। বাংলাদেশ থেকে যারা আসতে চেয়েছিলেন, আমরা তাদের বলেছি—আপনারা ভারত সরকারের মাধ্যমে আসুন’, আরও বলেন তিনি।

আয়োজকদের কথায় ইঙ্গিত ছিল তারা বাংলাদেশের কোনও প্রকাশনা সংস্থাকে আমন্ত্রণ জানাতে পারছেন না ঠিকই, কিন্তু সে দেশের কোনও প্রকাশক যদি সরাসরি ভারত সরকারের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে মেলায় আসতে চান, তাহলে আয়োজকদের কোনও আপত্তি থাকবে না।

তবে কার্যক্ষেত্রে সেটা যে একরকম অসম্ভব, তা সংশ্লিষ্টরা সবাই জানেন।

এর আগে কলকাতা বইমেলায় বাংলাদেশের যোগদানে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন— সে দেশের এমন একটি কূটনৈতিক সূত্র বলছিলেন, ‘আসলে প্রতিবার বইমেলার কয়েক মাস আগেই প্রকাশক গিল্ডের পক্ষ থেকে কলকাতার উপদূতাবাসে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানিয়ে আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠানো হতো।’

‘আমরা সেই চিঠি সঙ্গে সঙ্গে ঢাকায় মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিতাম। তার পর বাংলাদেশ থেকে কোন কোন সংস্থা আসবে, কোন প্রকাশক মেলায় কত স্কয়ার ফিট জায়গা পাবে, কোন বই আসবে না আসবে, প্রকাশকদের সঙ্গে কথা বলে এগুলো স্থির করতো সাংস্কৃতিক মন্ত্রণারয়ের অধীন জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র।’

ফলে এবারে যেহেতু সেই আমন্ত্রণের চিঠিই আসেনি, তাই পদ্ধতিগতভাবে এর বাইরে গিয়ে বইমেলায় বাংলাদেশের যোগদানের কোনও সুযোগ ছিল না বলেই তিনি মনে করছেন।

বইমেলায় বাংলাদেশ যে এবারে যোগ দিতে পারছে না এবং কলকাতার পাঠকদের সে দেশের নতুন বই নেড়েচেড়ে বা পড়ে দেখার সুযোগ হচ্ছে না, তাতে কিছুটা হতাশ সে দেশে ভারতের সাবেক হাই কমিশনার ও সাবেক পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলাও।

হর্ষবর্ধন শ্রিংলা (ফাইল ফটো) হর্ষবর্ধন শ্রিংলার কথায়, ‘দুটো দেশের সরকারের মধ্যে সম্পর্ক যে এখন ঠিক স্বাভাবিক নয়, কিংবা এনগেজমেন্টও লিমিটে – তার কারণটা বোঝা কঠিন নয়। কিন্তু আমি মনে করি, দুটো সরকারের মধ্যে যাই চলুক, দুই দেশের মানুষের মধ্যে যে গভীর সাংস্কৃতিক বন্ধন – বা ‘পিপল টু পিপল কনট্যাক্ট’ – সেটা যেকোনোভাবে বজায় রাখাটা খুব জরুরি।’

সীমান্তের দুই পারের বাংলাভাষী গ্রন্থপ্রেমী মানুষের কাছে বিগত বহু বছর ধরে খুব বড় সাংস্কৃতিক বন্ধন ছিল এই কলকাতা বইমেলা– সেই সেতু যে আবার কবে জোড়া লাগবে, তা এখন পুরোটাই অনিশ্চয়তায় মোড়া। 

/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
কলকাতায় মধুসূদন দত্তের বাড়ি পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ
ভারতে ‘বাংলাদেশি এক যুবকের’ চার বছরের কারাদণ্ড
আজাদের বিরুদ্ধে ইডির চার্জশিটে বিস্ফোরক তথ্য
সর্বশেষ খবর
ক্রিকেটার নাসির-তামিমার মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থন শুনানি ১৪ জুলাই
ক্রিকেটার নাসির-তামিমার মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থন শুনানি ১৪ জুলাই
জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ‘জুলাই সনদ’ বাস্তবায়ন করেই ছাড়বো: নাহিদ ইসলাম
জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ‘জুলাই সনদ’ বাস্তবায়ন করেই ছাড়বো: নাহিদ ইসলাম
পদত্যাগ করে বৈষম্যবিরোধী নেতা লিখলেন ‘পদ ছেড়েছি প্রেম নয়’
পদত্যাগ করে বৈষম্যবিরোধী নেতা লিখলেন ‘পদ ছেড়েছি প্রেম নয়’
বেসরকারি শিক্ষকদের জ্যেষ্ঠতা যোগদানের দিন থেকে শুরু করতে হাইকোর্টের রুল
বেসরকারি শিক্ষকদের জ্যেষ্ঠতা যোগদানের দিন থেকে শুরু করতে হাইকোর্টের রুল
সর্বাধিক পঠিত
সঞ্চয়পত্রে কমলো মুনাফার হার, কার্যকর ১ জুলাই থেকে
সঞ্চয়পত্রে কমলো মুনাফার হার, কার্যকর ১ জুলাই থেকে
তিন বিমানবন্দরে ১৬ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ হচ্ছে
তিন বিমানবন্দরে ১৬ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ হচ্ছে
ইস্টার্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিবারের ব্যাংক হিসাব জব্দ
ইস্টার্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিবারের ব্যাংক হিসাব জব্দ
রূপপুর প্রকল্পের ১৮ প্রকৌশলী অপসারণ: হাইকোর্টের রুল
রূপপুর প্রকল্পের ১৮ প্রকৌশলী অপসারণ: হাইকোর্টের রুল
অন্তর্বর্তী সরকার ও প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা মুখোমুখি
প্রশাসনে থামছে না আন্দোলনঅন্তর্বর্তী সরকার ও প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা মুখোমুখি