সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিদিনই প্রাণ ঝরছে। গত ঈদুল ফিতরের ছুটিতে আগে ও পরে সারা দেশে আট দিনে ১১০টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১৩২ জন নিহত এবং ২০৮ জন আহত হয় বলে তথ্য প্রকাশ করে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। আর ঈদুল আজহার আগে ও পরে ১২ দিনে ২১৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২১৫ জন নিয়ত ও ২৭৮ জন আহত হন। দুর্ঘটনারোধে বহু পদক্ষেপ নেওয়ার পরও তা কমছে না। আসন্ন ঈদুল আজহায় দুর্ঘটনারোধে ৯ দফা সুপারিশ তুলে ধরেছে ঢাকা আহছানিয়া মিশন।
মঙ্গলবার (৬ মে) দুপুরে রাজধানীর শ্যামলীতে ঢাকা আহছানিয়া মিশন স্বাস্থ্য সেক্টর আয়োজিত ‘সড়ক নিরাপত্তা জোরদারকরণে গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক সভায় একটি সমন্বিত ‘সড়ক নিরাপত্তা আইন’ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নসহ ৯টি সুপারিশ তুলে ধরেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ইকবাল মাসুদ।
সুপারিশগুলো হলো–
১. সড়ক দুর্ঘটনা এড়াতে ঈদের মতো বড় উৎসবসহ সব সময় সড়কে নিরাপদ গতি নির্ধারণ করতে হবে। অতিসত্বর গতি নির্ধারণ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত গাইডলাইন প্রণয়ন করতে হবে।
২. চালকদের কর্মঘণ্টা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে; যাতে চালকরা পর্যাপ্ত বিশ্রাম পায়।
৩. ঈদযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও মহাসড়কে নছিমন, করিমন, টেম্পুসহ সব ধরনের ব্যাটারিচলিত যানবাহন ও ভটভটি চলাচল বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি অন্যান্য সড়কে ধীরগতির যান ও দ্রুতগতির যানের জন্য আলাদা লেনের ব্যবস্থা করতে হবে।
৪. পরিবহনের পাশাপাশি পথচারী পারাপার ও তাদের নিরাপদে চলাচলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। যেমন-ফুটপাত হকারমুক্ত করা, ফুটপাত ও ফুটওভারব্রিজ ব্যবহারে পথচারীদের উদ্বুদ্ধ করা, পারাপারের সময় মুঠোফোন ব্যবহার না করা এবং জেব্রাক্রসিং দিয়ে রাস্তা পার হওয়া বিষয়ে পথচারীদের সচেতন করতে হবে।
৫. ঈদযাত্রায় মোটরসাইকেল চালক-আরোহী উভয়েরই মানসম্মত হেলমেট ব্যবহার নিশ্চিত করাসহ গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও মহাসড়কে মোটরসাইকেলের জন্য আলাদা লেন করে দিতে হবে। মানসম্মত হেলমেট ব্যবহার করতে এ সংক্রান্ত ইনফোর্সমেন্ট গাইডলাইন প্রণয়ন করতে হবে।
৬. মেয়াদোর্ত্তীন গণপরিবহন ও দীর্ঘদিন ধরে ফিটনেসহীন যানবাহন অপসারণ করতে হবে।
৭. নেশা জাতীয় দ্রব্য সেবন করে মোটরযান পরিচালনা না করা সংক্রান্ত বিধি-বিধান বাস্তবায়ন করতে হবে।
৮. যানবাহনে চালকসহ সব যাত্রীর সিটবেল্ট ব্যবহার সংক্রান্ত গাইডলাইন প্রণয়ন করতে হবে। পাশাপাশি মোটরযানে (বিশেষ করে কার/জিপ/মাইক্রোবাসে) শিশু সুরক্ষার বিষয়টি বিবেচনায় এনে শিশুদের জন্য উপযুক্ত শিশু সুরক্ষিত আসন ব্যবস্থা প্রচলন সংক্রান্ত বিধি-বিধান জারি করতে হবে।
৯. সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাস এবং এ সংক্রান্ত টেকসই উন্নয়ন লক্ষমাত্রা অর্জনে সড়ক নিরাপত্তা আইন বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে কার্যকর সমন্বয় সাধনের জন্য একটি জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষ গঠন করতে হবে।
সভায় ইকবাল মাসুদ বলেন, ‘২০১৮ সালের সড়ক পরিবহন আইনে সড়কের নিরাপত্তা প্রাধান্য পাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু সেটি হয়নি। অথচ আমাদের দরকার সড়ক নিরাপত্তা আইন, যেখানে পরিবহন ও চালকদের পাশাপাশি যাত্রী ও পথচারীসহ সবার সুরক্ষার বিষয়টিকে সমানভাবে গুরুত্ব দেওয়া হবে।’