দেশের জন্য একসময় জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছেন, কিন্তু জীবনযুদ্ধে এসে হেরে যেতে বসেছেন লক্ষ্মীপুরের বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়ের। মাত্র ৫০ হাজার টাকার জন্য লাগাতে পারছেন না তিন বছর আগে গ্যাংগ্রিন হয়ে কেটে ফেলা একটি পা। চিকিৎসার অভাবে ধীরে ধীরে এখন হারিয়ে ফেলছেন চলার শক্তি। তাই কাঁদতে কাঁদতেই তিনি জানান, মৃত্যুর পর মুক্তিযোদ্ধার সম্মান আমি চাই না। বেঁচে থাকতেই আমি সেই সম্মান চাই, নিজ পায়ে চলতে চাই, সুচিকিৎসা পেতে চাই।
মুক্তিযুদ্ধো আবুল খায়ের বলেন,‘মুক্তিযোদ্ধাদের মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয় সম্মান দেওয়া হয় আর আমি টাকার জন্য চিকিৎসা করাতে পারি না। মৃত্যুার পর এ সম্মান দিয়ে কী হবে! মৃত্যুর পর সম্মান চাই না আমি।’
তিনি জানান, তিন বছর আগে পায়ে গ্যাংগ্রিন হলে তার ডান পা কেটে ফেলতে হয়। এরপর একটি নকল পা লাগাতে মাত্র ৫০ হাজার টাকার জন্য সমাজের বিভিন্ন ব্যাক্তির কাছে ধরনা দিয়েও কোনও লাভ হয়নি। কেউ সাহায্য করেনি তাকে।
বর্তমানে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ থানার পাঁচপাড়া গ্রামের দৈব পুকুর পাড়ে ১৯ শতক জমির ওপর থাকছেন আবুল খায়ের। ভিটাটুকু বাদে তার অন্য কোনও সম্পত্তিও নেই যে তা বিক্রি করে চিকিৎসার খরচ চালাবেন।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি জানান, ১৯৭১ সালে তিনি চাকরি করতেন সেনাবাহিনীর ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনিও অন্য বাঙালি সৈনিকদের সঙ্গে ক্যান্টনমেন্ট থেকে বের হয়ে চট্টগ্রাম কালুর ঘাটের মদিনা ঘাটে যুদ্ধ করেন। এপ্রিল মাসে ফেনীর বিলোনিয়া হয়ে ভারতে মেলাগড়ে গিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে ২ নং সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশারফের নেতৃত্বে ক্যাপ্টেন গাফফার, ক্যাপ্টেন কবির, শাফায়েত জামিল, কমরেড হায়দারের সঙ্গে আখাউড়ায় যুদ্ধ করেন তিনি।
সে দিনগুলোর কথা বলতে গিয়ে তিনি জানান, ভারতে মুক্তিযুদ্ধে প্রশিক্ষণ নেওয়ার সময় ভাতের সঙ্গে জুটতো কখনও চালকুমড়ার ঝোল, কখনও ডালের সঙ্গে সামান্য সবজি। এমন খাবার খেয়েই যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিতেন তিনি। তার নেতৃত্বে জুলাই মাসে আখাউড়ার সীমান্তবর্তী পাঁচটি গ্রামে মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ করে অঞ্চলটি হানাদার মুক্ত করে। যুদ্ধের বাকি সময়ে এসব গ্রামেই মুক্তিযোদ্ধারা ক্যাম্প স্থাপন করেন।
তিনি বলেন,‘১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হলে আমিসহ অন্যরা চট্টগ্রামে চলে যাই। ডিসেম্বরের শেষের দিকে খবর আসে ঢাকার মীরপুরে বিহারিদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হবে। আবার চলে আসি মীরপুরে বিহারিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে।’
আক্ষেপ নিয়ে এই মুক্তিযোদ্ধা বলেন, ‘দেশের জন্য প্রাণপণ যুদ্ধ করে এখন মাত্র ৫০ হাজার টাকার জন্য আমি একটি কৃত্রিম পা সংযোজন করতে পারছি না। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে দেশের কাছ থেকে এই-ই পেলাম!’
তিনি বলেন, ‘একটা কৃত্রিম পা লাগানোর জন্য অনেকের সঙ্গেই যোগাযোগ করেছি। কিন্তু, কারও কাছ থেকেই সাড়া পাইনি। যদি সরকার কিংবা কোনও দয়াবান ব্যক্তি আমাকে এইটুকু উপকার করতো তাহলে আবার স্বাধীনভাবে হাঁটাচলা করতে পারতাম। এমন কেউ কি আছে আমাকে এইটুকু সহযোগিতা দিতে পারে?’
/এসএম/টিএন/
আপ-এসটি