২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে কলমের ওপর প্রস্তাবিত কর প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন যশোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ। সোমবার (৫ জুন) সংসদে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি বিষয়টি বিবেচনার জন্য অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন। একই সঙ্গে তিনি রিটার্ন জমা দিতে ন্যূনতম ২০০০ টাকা কর প্রদানের বিষয়টি ৬৫ বছরের বেশি বয়স্কদের ক্ষেত্রে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য বিবেচনার অনুরোধ করেন।
গত ১ জুন সংসদে পেশ করা বাজেট প্রস্তাবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলপয়েন্ট কলমের ওপর উৎপাদন পর্যায়ে ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর আরোপের প্রস্তাব করেন। প্রস্তাবিত বাজেট অনুযায়ী, কারখানা থেকে বাজারে কলম সরবরাহের সময় এই কর আরোপ করা হবে। এর ফলে কলমের দাম বাড়বে।
সম্পূরক বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি কাজী নাবিল আহমেদ বলেন, চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট দেওয়া হয়েছিল। সংশোধিত আকারে এটি ৬ লাখ ৬০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা করা হয়েছে। তবে সম্পূরক বাজেটের ইতিবাচক দিক হচ্ছে রাজস্ব আয় কমানো হয়নি। অর্থমন্ত্রীর প্রত্যাশা ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৬৩ কোটি টাকা থাকবে। ফলে আমাদের ঘাটতি কমে ৫ দশমিক ১ শতাংশে দাঁড়াচ্ছে।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশ সারা বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে পরিচিত হয়েছে। ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব নেওয়ার সময় জিডিপির আকার ছিল ৬০ বিলিয়ন ডলার। বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০০৯ সালে মাথাপিছু আয় ৬০০ ডলার ছিল। বর্তমানে তা ২৭০০ মার্কিন ডলার পেরিয়ে গেছে।
সরকারি দলের এই এমপি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে অবকাঠামো উন্নয়ন করেছেন। তার স্বপ্নের পদ্মা সেতু একক প্রচেষ্টায় সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছি।
নতুন অর্থবছরের বাজেট সম্পর্কে তিনি বলেন, ২০২৩-২৪ বাজেটের মূল প্রতিপাদ্য—‘উন্নয়নের দীর্ঘ অগ্রযাত্রা পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমুখে’। এই বাজেটের আকার ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ কোটি টাকা। দুই লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি ধরা হয়েছে। বার্ষিক উন্নয়নের আকার ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। মূল্যস্ফীতি নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ শতাংশ। আগামী বছর মাথাপিছু আয় বেড়ে দাঁড়াবে ২৯৬১ মার্কিন ডলার।
কাজী নাবিল বলেন, বাজেটের অন্যতম একটি বিশেষ দিক হচ্ছে এখানে করমুক্ত সীমা করা হয়েছে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এই বাজেটে আরও বেশ কয়েকটি সুখবর আছে। এরমধ্যে অন্যতম হলো- প্রধানমন্ত্রীর দীর্ঘদিনের প্রতিশ্রুতি সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি চালুর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। বাজেটে এলপিজি গ্যাসের দাম কমানো হচ্ছে। প্রাণিজ মাংস, হিমায়িত মাছ, অপটিক্যাল ফাইবার, মিষ্টি, হাতে তৈরি কেকসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দাম কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের কলমের ওপর ট্যাক্স বাড়ানো হয়েছে। যেহেতু এটা শিক্ষা উপকরণ, সেটাকে পুনর্বিবেচনা করার জন্য অনুরোধ জানাই। রিটার্ন জমা দিতে গেলে ২০০০ টাকা ৬৫ বছরের ঊর্ধ্ব বয়সী ব্যক্তির ক্ষেত্রে বিবেচনার অনুরোধ জানাচ্ছি।
করনেট বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণের অনুরোধ করে কাজী নাবিল বলেন, বিশ্বের তুলনায় আমাদের ট্যাক্স টু জিডিপি এখনও কম। আমাদের এটি ৯ শতাংশ, পার্শ্ববর্তী অনেক দেশে সেটা ১৭ থেকে ২০ শতাংশ রয়েছে। এজন্য আমাদের করজালকে আরও বিস্তৃতির চেষ্টা করতে হবে। প্রয়োজনে আমাদের কর শুমারি করতে হবে।
বাজেটে খাতভিত্তিক বরাদ্দের প্রসঙ্গ টেনে কাজী নাবিল বলেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক অবকাঠামো খাতে এক লাখ ৯১ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ। মানবসম্পদ খাতে ১ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা, ভৌত অবকাঠামো খাতে ২ লাখ ২৪ হাজার কোটি টাকা। প্রধানমন্ত্রী অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে বিশ্বাস করেন বলেই এটা করা হয়েছে। তিনি সবসময় বাংলাদেশের প্রান্তিক মানুষের দুঃখ-দুর্দশা চিন্তা করেন বলেই তার চিন্তাপ্রসূত বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, যেমন- বিধবা ভাতা, দুস্থ ভাতার ব্যবস্থা করেছেন।
বিএনপি-জামায়াতের সমালোচনা করে যশোর-৩ আসনের এই এমপি বলেন, বিএনপি-জামায়াত কী কাজ করে বেড়াচ্ছে— তাদের চেয়ারম্যান খালেদা জিয়া ও ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান দুজনই দণ্ডিত ও সাজাপ্রাপ্ত আসামি। একজন এতিমের টাকা চুরি করে মুখে কুলুপ এঁটেছেন, অন্যজন পলাতক অবস্থায় মুখে বড় বড় কথা বলছেন। বিদেশিদের দ্বারে দ্বারে ধরনা দিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চক্রান্তে লিপ্ত আছেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতির প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, তারা (বিএনপি) মনে করেছিল একটি দেশের ভিসানীতি তাদের ক্ষমতায় এনে দেবে। কিন্তু বাস্তবচিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। যুক্তরাষ্ট্র স্পষ্ট বলে দিয়েছে—কোন দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলো বা না করলো সেটা তাদের বিষয় নয়। তাদের অগ্রাধিকার হলো নির্বাচনকে প্রতিহত করার হুমকি দিলো কিনা এবং নির্বাচনে সহিংস কিছু করলো কিনা? এখন বিএনপি নিজেদের জালে নিজেরাই ধরা খাচ্ছে। তাদের নির্বাচনে না এসে আর কোনও উপায় থাকবে না।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে। সেখানে সবাই অংশগ্রহণ করে তাকে অর্থবহ করে তুলবো। যারা এতিমের টাকা মেরে খায় তাদের দ্বারা কোনও ভালো কাজ করা সম্ভব নয়। আওয়ামী লীগই একমাত্র দল ১৯৫৪ সাল থেকে সব সময় নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছে। আওয়ামী লীগই দেশের মানুষের সেবা করে যাচ্ছে। শেখ হাসিনাকে সারা বিশ্ব একজন নেত্রী হিসেবে গ্রহণ করেছে। বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রপ্রধান তার কর্মসূচি নিয়ে সমাদর করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে চলছে। ২০২১ সালে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। তিনি ভিশন দিয়েছেন ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ একটি উন্নত ও স্মার্ট দেশে পরিণত হবে।