X
রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪
১৫ বৈশাখ ১৪৩১

আমরা বন্দি হয়ে গেছি, যেতে হবে একজনের কাছেই: জিএম কাদের

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট 
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৬:২৪আপডেট : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৭:১৩

জন্মদিনের আয়োজনে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় নেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জি এম কাদের) বলেছেন, ‘২০১৪ সালের পর থেকে আমরা বার্গেনিং করার শক্তি হারিয়ে ফেলেছি। এখন আমাদের বলা হয় গৃহপালিত রাজনৈতিক দল। আমাদের দলের মধ্যে সরকারি দলের এজেন্ট ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারা আমাদের দল করে কিন্তু রাজনীতি করে অন্য দলের।’

সরকারি দলের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘আমাদের দলে থেকে তারা (এজেন্ট) বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নেয় কিন্তু রাজনীতি তারা সরকারি দলের রাজনীতি করে। যখনই আমরা সঠিক রাজনীতি করতে চাই, তখনই আমাদের দলকে ভেঙে আরেকটি দল সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়। এটা সরকারই করে, যাতে আমরা স্বাধীনভাবে রাজনীতি করতে না পারি।’

শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বনানীর কার্যালয়ে নিজ জন্মদিনের আয়োজনে প্রধান অতিথির বক্তৃতার সময় এসব কথা বলেন গোলাম মোহাম্মদ কাদের।

আরও কিছুদিন পর নিজের সঠিক মূল্যায়ন হবে দাবি করে জাতীয় পার্টির এই শীর্ষ নেতা বলেন, ‘এখন যারা আমাকে মূল্যায়ন করছেন, সেটা হয়তো সঠিক হচ্ছে না। সময়ের ব্যবধানে সবকিছুই পরিষ্কার হয়ে যাবে। গেলো নির্বাচনে আমি অনেক কিছুই শিখেছি। দেখেছি...রাজনীতি কত বেশি নোংরা হতে পারে, আবার কত বেশি মহৎ হতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘দেখেছি, ক্ষুদ্র স্বার্থের জন্য মানুষ কত বেশি নিচে নেমে যেতে পারে। দেখেছি, দেশ ও জাতির জন্য মানুষ কত বেশি ত্যাগ স্বীকার করতে পারে। এগুলো আমার চলার পথে পাথেও হয়ে থাকবে। মহান আল্লাহ যেন এই শিক্ষাগুলো দেশ ও জাতির স্বার্থে কাজে লাগাতে দেন।’

‘১৯৯০ সালের পর জাতীয় পার্টি ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়েছে’ উল্লেখ করে জি এম কাদের বলেন, ‘ক্ষমতার বাইরে থাকলে আমাদের দেশের দলগুলো টিকতে পারে না। ক্ষমতাসীনরা জুলুম-নির্যাতন করে আমাদের রাজনীতি করতে দেয়নি। যারা ক্ষমতাসীন দল করতে এসেছিল, তারা নব্বই সালের পর দল ছেড়ে চলে গেছে। তারা দল বা দেশের স্বার্থ দেখেনি।’

তিনি বলেন, ‘২০০৮ সালে যখন আমরা মহাজোট করেছি, তখন অনেকেই বলেছে, আমরা পরজীবী হয়ে গেছি। তারা বলেছেন, আমরা নাকি অন্যের সহায়তা ছাড়া নির্বাজনে জয়ী হতে পারি না। দেশের বড় দুটি দলের নির্বাচনে অল্প ভোটের ব্যবধানে জয়-পরাজয় নির্ধারণ হয়। সেই অল্প ভোট তো আমরা দিতে পারতাম। আমরা যদি পরজীবী হইও, তারপরও আমাদের কাছে টানতে প্রতিযোগিতা ছিল। সেখানে আমাদের একটি বার্গেনিং পয়েন্ট ছিল, আমরা বার্গেনিং করে অনেক কিছু আদায় করতে পারতাম।’

‘সব সময় হুমকি দেওয়া হয়’ অভিযোগ করে জি এম কাদের বলেন, ‘আগে আমরা পরজীবী হলেও আমাদের একটা পছন্দ ছিল, আমরা যেকোনও পক্ষে যেতে পারি, আমাদের বার্গেনিং পয়েন্ট ছিল। এখন আমরা বন্দি হয়ে গেছি, একজনের কাছেই যেতে হবে। আমরা সঠিক রাজনীতি করতে গেলেই...একজন একটা ডাক দেবেন, সরকার মদদ দেবে, মিডিয়া কাভারেজ দেবে আর আমাদের দল ভেঙে এবং আইনের মাধ্যমে আমাদের লাঙ্গল নিয়ে নেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘দল বাঁচাই না রাজনীতি বাঁচাই— এই সমস্যায় জাতীয় পার্টি ভঙ্গুর হয়ে যাচ্ছে। কারণ, আমরা লোভ-লালসা থেকে দূরে থাকতে পারি না। আমাদের দলে থেকে যারা অন্য দলের রাজনীতি করে, তাদের আমরা দল থেকে বের করে দিতে পারি না। রাজনীতি বাঁচাতে আমাদের ঝুঁকি নিতে হবে। সরকার আমাদের দুর্বল করতে আমাদের মাঝেই একটি জোট বানিয়ে রাখছে।’

তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, ‘আমরা সঠিক রাজনীতি করতে গেলেই সরকার আমাদের দল ভেঙে দেওয়ার অপচেষ্টা করে। যারা জাতীয় পার্টি ব্যবহার করে অন্য দলের রাজনীতি করতে চায়, তাদের দল থেকে বের করে দিতে হবে। এটা করতে পারলেই জাতীয় পার্টি টিকবে। দেশ ও জাতির কাছে গৃহপালিত বিরোধীদলের প্রয়োজনীয়তা নেই। আমরা একটি দলের কাছে বন্দি হয়ে গেলে জনগণের কাছে আমাদের প্রয়োজন থাকবে না। আর জনগণ কেন এমন দলকে ভোট দেবে?‘

‘দলকে বাঁচাতে হলে গৃহপালিত অপবাদ থেকে বের হতে হবে’ জানিয়ে কাদের বলেন, ‘যারা গৃহপালিত হওয়ার জন্য দায়ী, তাদের বর্জন করতে হবে। আমাদের দলে থেকে অন্য দলের রাজনীতি করতে দেওয়া হবে না’ বলেও হুঁশিয়ারি করেন তিনি।

সরকারের প্রতি বিরোধীদলীয় নেতার মন্তব্য, ‘সরকারকে অনুরোধ করবো, দেশের রাজনীতি শেষ করবেন না। রাজনৈতিক দলগুলোকে রাজনীতি করতে দেন। সবাইকে ধংস করে সরকার একক রাজনীতি করবে, এটা দেশ ও জাতির জন্য ভালো হবে না।’

/এসটিএস/ইউএস/এনএআর/
সম্পর্কিত
পরাজয় ঢাকতে অভিযোগ তুলছে বিএনপিনির্বাচনে অংশ নিতে জাপার ওপর চাপ ছিল: জি এম কাদের
জাতীয় পার্টির বর্ধিত সভা শুরু
শনিবার জাতীয় পার্টির বর্ধিত সভানির্বাচনের সময় জাপায় কী হয়েছিল, জানাবেন জিএম কাদের
সর্বশেষ খবর
জ্যাকসের ব্যাটিং তাণ্ডবে গুজরাটকে উড়িয়ে দিলো বেঙ্গালুরু
জ্যাকসের ব্যাটিং তাণ্ডবে গুজরাটকে উড়িয়ে দিলো বেঙ্গালুরু
‘বিএসটিআইর হালাল সনদ নিয়ে রফতানিতে কেউ বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন না’
‘বিএসটিআইর হালাল সনদ নিয়ে রফতানিতে কেউ বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন না’
চট্টগ্রামসহ পাঁচ জেলার ৪৮ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহার
চট্টগ্রামসহ পাঁচ জেলার ৪৮ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহার
জাতীয় নির্বাচনের মতো উপজেলাতেও অবাধ-সুষ্ঠু ভোট হবে: ইসি রাশেদা সুলতানা
জাতীয় নির্বাচনের মতো উপজেলাতেও অবাধ-সুষ্ঠু ভোট হবে: ইসি রাশেদা সুলতানা
সর্বাধিক পঠিত
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
ইমিগ্রেশনেই খারাপ অভিজ্ঞতা বিদেশি পর্যটকদের
ইমিগ্রেশনেই খারাপ অভিজ্ঞতা বিদেশি পর্যটকদের
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
মিয়ানমারে গিয়ে সেনা ট্রেনিং নিলেন ২ রোহিঙ্গা, বাংলাদেশে ঢুকলেন বুলেট নিয়ে
মিয়ানমারে গিয়ে সেনা ট্রেনিং নিলেন ২ রোহিঙ্গা, বাংলাদেশে ঢুকলেন বুলেট নিয়ে