ময়মনসিংহে ফেডারেশন কাপ ফাইনালে রোমাঞ্চ ছড়াতে আর কী প্রয়োজন। আক্রমণ-প্রতি আক্রমণ। গোল-পাল্টা গোল। রেফারির সিদ্ধান্তে প্রতিবাদ জানিয়ে খেলায় ফিরতে অপারগতা। সবই ছিল আজকের শিরোপা নির্ধারণী লড়াইয়ে। প্রায় মাঠ ভর্তি দর্শকরা তুমুল উত্তেজনার সঙ্গী হয়েছেন। সবশেষ অচেনা এক জাহিদ হোসেন ম্যাচ জয়ের নায়ক! তাতে মোহামেডানকে অতিরিক্ত সময়ের গোলে হারিয়ে মৌসুমের ট্রেবল জয়ের স্বাদ নিয়েছে বসুন্ধরা কিংস। নির্ধারিত সময়ের খেলা ১-১ গোলে ড্র ছিল। তার পর জয়ের ব্যবধান ছিল ২-১।
অতিরিক্ত সময়ে প্রথমার্ধের শেষ মিনিটে গোল পায় কিংস। মিগেলের কর্নারে সুজন ফ্লাইট মিস করে পড়ে যান। দিয়াবাতেও পারেননি ভারসাম্য রাখতে। পেছনে ছিলেন বোবুরবেক। পাশে থাকা বদলি জাহিদ হোসেন আলতো শটে জাল কাঁপিয়েছেন। তবে গোলের আগে ফাউল হয়েছে দাবি করে প্রতিবাদ জানায় মোহামেডান। কিছুক্ষণ পর আলফাজের নির্দেশে মাঠ ছেড়ে চলেও যায় তারা। এ নিয়ে উত্তেজনা ছড়ালে খেলা বন্ধ ছিল বেশ কয়েক মিনিট। সেই উত্তেজনা ছড়ায় গ্যালারিতেও। তবে সাদা-কালোরা প্রতিবাদের পর একপর্যায়ে মাঠে ফিরেছে। তবে শেষ মিনিটে শাহরিয়ার ইমনের শট অল্পের জন্য পোস্ট ঘেঁষে গেলে সমতায় ফেরা হয়নি সাদা-কালোদের। গতবার শিরোপা জিতলেও এবার সেটি হারাতে হলো কিংসের কাছে।
বুধবার বিকালে ময়মনসিংহ রফিক উদ্দিন ভূঁইয়া স্টেডিয়ামে শুরু থেকে কিংসের দাপটের সামনে মোহামেডান সাবধানি ফুটবল খেলেছে। রক্ষণ জমাট রেখে প্রতি আক্রমণ করেছে। তবে এই অর্ধে কিংস আক্রমণে এগিয়ে থেকেও গোলের খাতা খুলতে পারেনি। পারেনি মোহামেডানও।
২৬ মিনিটে কিংস সুযোগ পায়। রাকিবের থ্রু পাসে বক্সে ঢুকে দোরিয়েলতন টাইট পজিশন থেকে লক্ষ্যে শট নিলেও গোলকিপারের হাতে প্রতিহত হয়েছে সেটি।
৩৬ মিনিটে রাকিবের কাটব্যাক থেকে সোহেল রানা বক্সের প্রান্ত থেকে এমন এক শট নিলেন, সেটি চলে যায় অনেক দূরে।
তিন মিনিট পর সানডেকে শরীর দিয়ে বাধা দেন বিশ্বনাথ। ফাউলের বাঁশি বাজলেও কোনও কার্ড দেখানো হয়নি। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন খেলোয়াড়রা। আগে বিশ্বনাথ একটি হলুদ কার্ডও দেখেছেন। তাই হয়তো রেফারি জসিম উদ্দিন এবার সেটি এড়িয়ে গেছেন!
শেষ ৫ মিনিটে মোহামেডান দাপট দেখিয়েছে। ৪০ মিনিটে দিয়াবাতের পাসে ইমানুয়েল সানডে কোনাকুনি শট নিলেও তা ক্রস বারের অনেক ওপর দিয়ে গেছে। ৪৩ মিনিটে আরিফের ক্রসে দিয়াবাতের প্রায় বাইলাইন থেকে নেওয়া শট দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় গোলকিপার মেহেদী হাসান শ্রাবন তালুবন্দী করেছেন। ঠিক এরপরই সানডের ক্রস দিয়াবাতে বলের নাগাল পাওয়ার আগেই ক্লিয়ার হয়েছে।
বিরতির পর আক্রমণ-প্রতি আক্রমণ নির্ভর ফুটবল চলতে থাকে। তবে সব উত্তেজনা এই অর্ধেই জমেছিল! ৪৮ মিনিটে তপুর ক্রসে অ্যাক্রোবেটিক শট নেওয়ার চেষ্টা করেন দোরিয়েলতন। কিন্তু বল ড্রপ খেয়ে ক্রস বারের ওপর দিয়ে গেলে হতাশ হন সমর্থকরা।
এরপরই মোহামেডানের সামনে চীনের প্রাচীরের মতো বাধা হয়ে দাঁড়ান গোলকিপার শ্রাবন। একের পর এক গোলের সুযোগ আটকে দিয়ে দলকে বাঁচান তিনি। ৬০ মিনিটে বদলি নামা শাহরিয়ার ইমনের জোরালো শট শ্রাবন প্রতিহত করেছেন। পরের মিনিটেও মোজাফফরভের জোরালো শট ঝাঁপিয়ে পড়ে রক্ষা করেছেন। দুই মিনিট পর কর্নার থেকে দিয়াবাতের হেড ঝাঁপিয়ে পড়ে কোনওমতে রক্ষা করেন তিনি।
তবে শ্রাবনকে আত্মসমর্পণ করতে হয়েছে ইমানুয়েল সানডের কাছে। ৬৩ মিনিটে দিয়াবাতের পাসে সোহেল রানাকে কাটিয়ে ইমানুয়েল সানডে বাঁপায়ের বুলেট গতির শটে পরাস্ত করেন গোলকিপারকে। মুহূর্তেই উৎসব শুরু করে দেন সমর্থকরা।
৬৮ মিনিটে মিগেলের ফ্রি-কিকে বোবুরবেক পোস্টের সামনে থেকে হেড করতে ব্যর্থ হলে সমতায় ফিরতে পারেনি কিংস। একটু পর মোহামেডানের প্রচেষ্টা শ্রাবন রুখে দিয়ে ব্যবধান বাড়তে দেননি।
৭২ মিনিটে অস্কার ব্রুজন মোরসালিন, জনি ও ইয়াসিন আরাফাতকে নামালে আক্রমণ ধার বাড়ে আরও।
৭৬ মিনিটে রবিনিয়োর থ্রু পাসে দোরিয়েলনের শট সুজন হোসেন পা দিয়ে রুখে দেন।
৮৪ মিনিটে দোরিয়েলতনের পাসে রবিনিয়োর শট গোলকিপার তালুবন্দী করেন। ভালো সুযোগ ছিল।
৮৬ মিনিটে সাদা-কালাদের থমকে দিয়ে সমতায় ফেরে কিংস। ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার মিগেল দারুণ দক্ষতায় চারজনকে কাটিয়ে দারুণ শটে সুজনকে হারিয়ে ম্যাচে নতুন করে প্রাণ ফেরান। তার পর ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।