X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিচারের দীর্ঘ প্রক্রিয়া

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা
২২ জানুয়ারি ২০২০, ১৫:২০আপডেট : ২২ জানুয়ারি ২০২০, ১৫:২২

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা একদিনে দুটি বড় রায়, ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ। দুটি রায় এসেছে সোমবার। ৩২ বছর পর চট্টগ্রামের লালদীঘি মাঠে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার জনসভায় গুলি চালিয়ে ২৪ জনকে হত্যা মামলায় পাঁচ জনকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রামের লালদীঘি মাঠে আওয়ামী লীগের জনসভা ছিল। ওই দিন বেলা ১টার দিকে শেখ হাসিনাকে বহনকারী ট্রাকটি আদালত ভবনের দিকে আসার সময় গুলিবর্ষণ শুরু হয়। পুলিশের গুলিতে ওইদিন ২৪ জন মারা যান। আট আসামির মধ্যে তিন জন আগেই মারা যাওয়ায় ৫ জনের আদেশ হলো।
অন্যদিকে, ১৯ বছর আগে রাজধানীর পল্টন ময়দানে বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সমাবেশে বোমা হামলা মামলার রায়ে ১০ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এ মামলায় দুই জনকে খালাস দেওয়া হয়েছে। ২০০১ সালের ২০ জানুয়ারি সিপিবির সমাবেশে দুর্বৃত্তরা বোমা হামলা করে। এতে পাঁচ জন নিহত এবং ২০ জন আহত হন।

বিচার মিললো ঠিকই। তবে একটি ঘটনায় সময় লাগলো তিন দশকের বেশি, আরেকটিতে প্রায় দুই দশক। অভিযুক্তদের সাজা ঘোষণার পর এটাই আক্ষেপ সর্বত্র, নিশ্চয়ই স্বজনদেরও। আদালতের রায়ে আক্রান্তদের কেউ কেউ খুশি হলেও বিচারের দীর্ঘ প্রক্রিয়া নিয়ে অধিকাংশই ক্ষুব্ধ।

সম্প্রতি  দুটি ঘটনায় যারা মারা গেছেন তাদের স্বজনদের এবং যারা গুরুতর আহত হয়েছিলেন তাদের সবার জীবনের সব ওলটপালট হয়ে গিয়েছিল। এটুকুই সান্ত্বনা যে, তবুও বিচার হয়েছে।

সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হলে দ্রুত বিচার এবং মৃত্যুদণ্ডের দাবি সরবে উচ্চারিত হয়। শাস্তি কী হবে সেটা আদালতের এখতিয়ার, তবে আমরা চাই বিচারটা হোক। সেটাই বেশিরভাগ ঘটনায় হচ্ছে না। সেই যে ১৯৭৫-এ বঙ্গবন্ধুকেও সপরিবারে হত্যার পর ইনডেমনিটি দিয়ে হত্যাকারীদের বাঁচিয়ে দেওয়া ও পুরস্কৃত করার রেওয়াজ চালু করেছিলেন মোশতাক ও জিয়া, সেটা থেকে বের হয়ে আসা একটি চ্যালেঞ্জিং কাজই রয়ে গেলো। 

সিপিবি সমাবেশে জঙ্গি হামলা ও শেখ হাসিনার চট্টগ্রাম সমাবেশে পুলিশি হামলা দুটোই রাজনৈতিক কারণে বিলম্বে বিচার হয়েছে। তাও হয়েছে নিম্ন আদালতে। এখনও অনেক পথ যেতে হবে। সিপিবি ঘটনার বিচারকে খালেদা জিয়ার সরকার অন্যদিকে মোড় ঘুরিয়ে দিতে চেয়েছিল, যেমনিভাবে জজ মিয়া নাটক করে একুশে আগস্টের বিচার কাজও বন্ধ করার পাঁয়তারা করেছিল সেসময়ের বিএনপি-জামায়াত।

সামগ্রিকভাবেই বিলম্বিত বিচারিক প্রক্রিয়া ন্যায়বিচারের পথকে রুদ্ধ করছে। তদন্ত প্রক্রিয়ায় শৈথিল্যে অনেক সময়ই মামলা দুর্বল হয়ে পড়ে। আইনের ফাঁক গলে অনেক সময় আসামিরা ছাড় পেয়ে যায়। তাই এখন দাবি উঠেছে স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ণ মামলাগুলো, বিশেষ করে নারী ও শিশুদের ওপর অত্যাচার, খুনের মতো ঘটনাগুলোর যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, তার জন্য উদ্যোগ নেওয়ার।

একটা ফাস্ট ট্র্যাক বিচারিক প্রথা বের করার সময় হয়েছে বলেই মনে করছি আমরা। মামলাগুলো কী অবস্থায় রয়েছে, কবে মামলার পরবর্তী তারিখ, সেই তারিখে কোন সাক্ষীকে আদালতে হাজির হতে হবে, কবে নথিপত্র জমা দিতে হবে, কবে থেকে শুনানি শুরু হচ্ছে, সব বিষয়ের ওপর নজর রাখার জন্য বিশেষ সেল গঠন জরুরি হয়ে পড়েছে। আমরা জানি সারাদেশে জেলায় জেলায় এমন বেশকিছু মামলা পড়ে রয়েছে, যেগুলো অনেক পুরনো। যথাসময়ে চার্জশিট জমা না দেওয়ার কারণে অনেক মামলা এখনও শুরুই করা যায়নি। সময়মতো চার্জশিট আদালতে জমা না দেওয়ার কারণে মামলা দুর্বল হয়ে পড়ে। আর এসব কারণেই মামলা দীর্ঘায়িত হয়।

একটা ভালো বিচারিক নজরদারির অভাবে মানুষ ন্যায্য বিচার পাচ্ছেন না বা বিচার পেতে দেরি হচ্ছে। একটি এলাকায় পুলিশ কর্মকর্তার ওপর পাহাড়-প্রমাণ মামলার চাপ থাকে। একই সঙ্গে এলাকার আইনশৃঙ্খলার দায়িত্ব তাকেই সামলাতে হয়। ফলে সবসময় মামলার খুঁটিনাটি মনে রাখা বা জমা রাখা সম্ভব হয় না। বিশেষ করে পুরনো মামলার ক্ষেত্রে অনেক কিছুই তাদের হাতড়ে বেড়াতে হয়। এই বিষয়টার একটা সুরাহা প্রয়োজন।

আরেকটি বড় সমস্যা কোনও মামলায় আসামিরা যদি অতি ক্ষমতাশালী হয়, তাহলে তারা উল্টো ভিকটিমের পরিবারকেই চাপের মধ্যে রাখতে সমর্থ হয়, তারা বিচার প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে।

স্বয়ং প্রধান বিচারপতি মামলাজট নিয়ে কথা বলেন। আদালতে অনেক মামলা ঝুলে থাকলে বুঝতে হবে বিচারব্যবস্থা ঠিকমতো সচল নয়, যা বিচারব্যবস্থার ওপর মানুষের ভরসা কমিয়ে দেয়। প্রায়ই বলা হয় বিচারকের সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। হ্যাঁ প্রয়োজন। কিন্তু একই সঙ্গে মনে রাখতে হবে, বিচারক নন কিন্তু বিচারব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত, এমন কর্মীদের সংখ্যা ও দক্ষতা বাড়ানোও অতি প্রয়োজনীয়। আদালতের কাজে দক্ষতা ও সক্রিয়তা বাড়াতে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোও প্রয়োজন। মধ্যস্থতা, আপস-মীমাংসা, সালিশির মাধ্যমে বিবাদ নিরসনের যেসব পথ চালু আছে সেগুলোকে আরও ত্বরান্বিত করাও দরকার।

একটা কথা সরকারকে মনে রাখতে হবে, আইনশৃঙ্খলাই সবার আগে, বাকি সব তারপর। সরকার আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখবে, এই আশাতেই তো মানুষ সরকার গঠন করে।

লেখা: প্রধান সম্পাদক, জিটিভি ও সারাবাংলা

 

/এসএএস/এমএমজে/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ