বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে আমানতের বিশাল অংশ—প্রায় ৪২ শতাংশ—মাত্র ০.১ শতাংশ হিসাবধারীর হাতে কেন্দ্রীভূত। প্রতি জনের হিসাবে এক কোটি টাকার বেশি জমা রাখা এই অতি-ধনী গোষ্ঠী দেশের আর্থিক সম্পদের বড় একটি অংশের মালিক।
বুধবার (২১ মে) রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) এই তথ্য প্রকাশ করে। ‘বাংলাদেশের আর্থিক খাতের ভৌগোলিক ও ঐতিহাসিক প্রবণতা’ শীর্ষক গবেষণাটি আন্তর্জাতিক গ্রোথ সেন্টারের (IGC) সহায়তায় বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য ব্যবহার করে সম্পন্ন করা হয়।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, দেশের মোট আমানতের ৩৫ শতাংশের বেশি শুধু দুটি জেলায়— ঢাকা ও চট্টগ্রামে কেন্দ্রীভূত। ঋণের ক্ষেত্রেও একই চিত্র। ব্যাংকিং খাতের মাত্র ১.২ শতাংশ ঋণ হিসাবের পরিমাণ এক কোটির বেশি, কিন্তু এসব হিসাব মিলিয়ে তারা মোট ঋণের প্রায় ৭৫ শতাংশ দখলে রেখেছে।
২০১৯ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে দেশের মোট ঋণের ৪০ থেকে ৪২ শতাংশ গেছে শিল্প খাতে, যেখানে কৃষি খাতে ঋণ ছিল মাত্র ৪ থেকে ৫ শতাংশের মধ্যে।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, “এই ধরনের বৈষম্যমূলক চিত্র সরকারের নীতিনির্ধারণে পুনর্বিন্যাসের দাবি রাখে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইতোমধ্যে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির ওপর গুরুত্ব দিয়ে কাজ শুরু করেছে।”
তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশে ব্যাংক শাখার ঘনত্ব বিশ্বে সর্বোচ্চ। এখন আর নতুন শাখা খোলার দিকে নজর নয়, বরং বিদ্যমান শাখার কার্যকারিতা বাড়ানোই মূল লক্ষ্য।”
গভর্নর জানান, গ্রামের গৃহস্থালি সঞ্চয় আনতে নারী ব্যাংকিং এজেন্ট নিয়োগে উৎসাহ দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ভবিষ্যতে এজেন্ট ব্যাংকগুলো যখন ঋণ বিতরণ শুরু করবে, তখন গ্রামে মাইক্রোক্রেডিটের সুদের হার প্রতিযোগিতার মাধ্যমে স্বাভাবিকভাবেই কমে আসবে।
তিনি বলেন, “কেন্দ্রীয় ব্যাংক কিউআর কোডভিত্তিক লেনদেনের পরিধি বাড়াতেও কাজ করছে, যাতে ডিজিটাল লেনদেন আরও সহজ হয়।”
এই গবেষণায় দেশের ব্যাংকিং খাতে আঞ্চলিক বৈষম্য এবং ধনসম্পদের কেন্দ্রীভবনের প্রকৃত চিত্র উঠে এসেছে, যা ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক নীতিনির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।